জীববিজ্ঞান–চতুর্থ অধ্যায় সাজেশন
জীবনীশক্তি
Bio-Energetics
সালোকসংশ্লেষণ : সালোকসংশ্লেষণকে ইংরেজিতে ফটোসিনথেসিস (Photosynthesis) বলা হয়। ফটোসিনথেসিস শব্দটি ‘ফোটোস’ (Photos) অর্থাৎ আলো এবং সিনথেসিস (synthesis) অর্থাৎ সংশ্লেষ নিয়ে গঠিত। যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সাহায্যে পরিবেশ থেকে শোষিত পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সরল শর্করা (গ্লুকোজ) প্রস্তুত করে তাকে ফটোসিনথেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ বলে। এটি একটি জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সালোকসংশ্লেষণ একটি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া যা নিম্নরূপ :
- সালোকসংশ্লেষণের উপজাত দ্রব্য হলো অক্সিজেন ও পানি।
- এটি একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া।
- এ প্রক্রিয়ায় H2O জারিত হয় এবং CO2 বিজারিত হয়।
- ১৯০৫ সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ ব্ল্যাকম্যান (Blakman) সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন। যথা : আলোকনির্ভরপর্যায় ও আলোক নিরপেক্ষ বা অন্ধকার পর্যায়।
আলোকনির্ভর পর্যায় (Light dependent phase) :
- এ পর্যায়ে ATP ও NADPH + H+ উৎপন্ন হয়।
- ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন হতে শক্তি সঞ্চয় করে ADP ও অজৈব ফসফেট (Pi = inorganic phosphate) থেকে ATP তৈরি করে। এ প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে। এই বিক্রিয়াটি হলো :
সূর্যালোক অসংখ্য উচ্চ শক্তিসম্পন্ন কণিকা বা ফোটন নিয়ে গঠিত। ফোটনে আবদ্ধ শক্তি হলো কোয়ান্টাম ।
- সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের সহায়তায় পানির ফটোলাইসিস ঘটে। এ বিক্রিয়াটি ক্লোরোপ্লাস্টে ঘটে।
- পানির ফটোলাইসিসে উৎপন্ন ইলেকট্রন NADP কে বিজারিত করে NADPH + H+ উৎপন্ন করে।
- ATP ও NADPH+ H+ কে আত্মীকরণ শক্তি বলে।
এসএসসি সকল বিষয়ে সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
আলোক নিরপেক্ষ পর্যায় বা অন্ধকার পর্যায় (Light independent phase) :
- আলোক পর্যায়ে উৎপন্ন ATP ও NADPH + H+ এর সহায়তায় CO2 বিজারিত হয়ে কার্বোহাইড্রেট উৎপন্ন হয়। ।
- এ পর্যায়ে CO2 বিজারণের ৩টি গতিপথ শনাক্ত করা হয়েছে।
১. ক্যালভিন চক্র
২. হ্যাচ ও স্ন্যাকচক্র ও
৩. ক্রেসু লেসিয়ান এসিড বিপাক। এদের মধ্যে দুটি আলোচনা করা হলো :
C3 গতিপথ বা ক্যালভিন চক্র :
- এই চক্রের প্রথম স্থায়ী পদার্থ ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড।
- এই চক্রো আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানী ক্যালভিন ১৯৬১ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
- C3 গতিপথ বিশিষ্ট উদ্ভিদকে C3 উদ্ভিদ বলে। |
C4 গতিপথ বা হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র :
- এই চক্রের প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো ৪ কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড।
- C4 গতিপথ বিশিষ্ট উদ্ভিদকে C4 উদ্ভিদ বলে।
- C4 উদ্ভিদকে একই সাথে হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র এবং ক্যালভিন চক্র পরিচালিত হতে দেখা যায়।
সালোকসংশ্লেষণের প্রভাবকসমূহ :
প্রভাবকগুলো হলো :
i) বাহ্যিক প্রভাবক : আলো, পানি, কার্বন ডাইঅক্সাইড, তাপমাত্রা, অক্সিজেন, খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক পদার্থ।
ii) অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ : ক্লোরোফিল, পাতার বয়স ও সংখ্যা, শর্করার পরিমাণ, পটাসিয়াম, এনজাইম।
শ্বসন : যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোষস্থ খাদ্য জারিত হয়ে (অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে) খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি রাসায়নিক তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয় তাকে শ্বসন বলে।
শ্বসনের সামগ্রিক রাসায়নিক সমীকরণটি হলো :
শ্বসন কোথায় এবং কখন হয় : জীবদেহের প্রতিটি সজীব কোষে শ্বসন দিনরাত ঘটে। শ্বসনের প্রথম পর্যায় কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে এবং দ্বিতীয় পর্যায় কোষের কোষ অঙ্গাণু মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটে। শ্বসন দুই প্রকার। একটি হলো সবাত শ্বসন যা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ঘটে অপরটি অবাত শ্বসন বা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ঘটে। সবাত শ্বসন চারটি এবং অবাত শ্বসন দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়।
সবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় চারটি পর্যায়ক্রমিক ধাপে এক অণু গ্লুকোজ সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে সর্বমোট ছয় অণু CO2, ছয় অণু পানি এবং ৩৮ টি ATP উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াটি হলো :
অবাত শ্বসনের দুটি ধাপে গ্লুকোজ আংশিক জারিত হয়ে ইথাইল অ্যালকোহল ও CO2 অথবা শুধু ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন করে।
শ্বসনের গুরুত্ব :
- শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়া-বিক্রিয়া ও কাজকর্ম পরিচালিত হয়।
- অ্যালকোহল, রুটি, দই, পনির ইত্যাদি অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।
শ্বসনের প্রভাবকসমূহ:
- বাহ্যিক প্রভাবক : বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ হলো- তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পানি, আলো, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি শ্বসনের বাহ্যিক প্রভাবক।
- অভ্যন্তরীণ প্রভাবক : অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ হলো: খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণ ও ধরন, উৎসেচক, কোষের বয়স, অজৈব লবণ, কোষমধ্যস্থ পানি ইত্যাদি শ্বসনের অভ্যন্তরীণ প্রভাবক। সালোকসংশ্লেষণ এবং শ্বসন পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 গ্যাসের প্রয়োজন হয়। বায়ন্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের প্রধান উৎস জীবের শ্বসন প্রক্রিয়া। সুতরাং সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি CO2 এর জন্য শ্বসনের ওপর নির্ভরশীল। শ্বসনের সময় জীবের প্রয়োজন খাদ্য এবং অক্সিজেন। জীবের খাদ্য এবং অক্সিজেনের প্রধান উৎস সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া।
সুতরাং শ্বসন প্রক্রিয়াটি খাদ্য ও অক্সিজেনের জন্য সালোকসংশ্লেষণের ওপর নির্ভরশীল।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও।
উত্তর : যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে গৃহীত পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষণ করে এবং উপজাত হিসেবে পানি ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।
প্রশ্ন ॥ ২॥ সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামাল কী কী?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণের কাঁচামালগুলো হলো : ১. পাতার ক্লোরোফিল, ২. আলো, ৩. পানি এবং ৪. কার্বন ডাইঅক্সাইড।
এসএসসি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর pdf পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ৩॥ শ্বসন কাকে বলে? বিক্রিয়ার মাধ্যমে দেখাও।
উত্তর : যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীব কোষস্থ খাদ্যবস্তু অক্সিজেনের উপস্থিতিতে অথবা অনুপস্থিতিতে জারিত হয়ে খাদ্যস্থ শক্তি গতিশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পানি উৎপন্ন হয় তাকে শ্বসন বলে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া উৎপন্ন করে গ্লুকোজ এবং অক্সিজেন। আলোকশক্তিকে রূপান্তরিত করে গ্লুকোজের মধ্যে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে আবদ্ধ করে। শ্বসন প্রক্রিয়া নির্গত অক্সিজেনকে গ্রহণ করে কোষস্থ গ্লুকোজের মধ্যে আবদ্ধশক্তিকে গতিশক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত করে। এভাবে সবুজ উদ্ভিদে দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসন ক্রিয়া এক সঙ্গে চলতে থাকে। সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের এই সম্পর্কের ফলে বায়ুমন্ডলে O2 এবং CO2 এর ভারসাম্য রক্ষা হয়।
॥ ৫॥ অবাত ও সবাত শ্বসনের পার্থক্য লেখ।
উত্তর : অবাত ও সবাত শ্বসনের পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো :
অবাত শ্বসন | সবাত শ্বসন |
১. অবাত শ্বসন মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ঘটে। | ১. সবাত শ্বসন মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ঘটে। |
২. এ শ্বসনে গ্লুকোজের অসম্পূর্ণ জারণ হয়। | ২. এ শ্বসনে গ্লুকোজের সম্পূর্ণ জারণ হয়। |
৩. এরকম শ্বসনে শক্তির পরিমাণ অনেক কম। এ প্রক্রিয়ায় প্রতি অণু গ্লুকোজ দহনে মাত্র ৫৬ kcal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। | ৩. এরকম শ্বসনে শক্তির পরিমাণ অনেক বেশি। এ প্রক্রিয়ায় প্রতি অণু গ্লুকোজ দহনে ৬৮৬ kcal তাপশক্তি উৎপন্ন হয়। |
৪. এ শ্বসন প্রক্রিয়ায় CO2, পানি এবং অক্সিজেনযুক্ত অন্য যৌগ উৎপন্ন হয়। | ৪. এ শ্বসন প্রক্রিয়ায় CO2 এবং পানি উৎপন্ন হয়। অন্য কোনো যৌগ উৎপন্ন হয় না। |
৫. অবাত শ্বসন কেবলমাত্র কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে। | ৫. শ্বসন কোষের সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকন্ড্রিয়াতে ঘটে। |
রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥১ ॥ জীবের সালোকসংশ্লেষণের উপর নির্ভরশীলতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে ভাত, রুটি, ফলমূল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি যাই গ্রহণ করি না কেন, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। কাজেই খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণীকুল সবুজ উদ্ভিদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়।
কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের O2 ও CO2-এর ভারসাম্য রক্ষায়, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ পরিমাণের তারতম্য ঘটলে বায়ুমন্ডল জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। আমরা জানি, সব জীবেই (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সব সময়ের জন্য শ্বসন ক্রিয়া চলতে থাকে। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে। কেবল মাত্র শ্বসন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বায়ুমন্ডলে O2 গ্যাসের স্বল্পতা এবং CO2-গ্যাসের আধিক্য দেখা দিত। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 গ্রহণ করে এবং O2 বায়ুমন্ডলে। ত্যাগ করে বলে এখনও বায়ুমন্ডলে O2 ও CO2 গ্যাসের সঠিক অনুপাত রক্ষিত হচ্ছে। মানব সভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র, শিল্পসামগ্রী, ঔষধ, জ্বালানি কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা, বিলুপ্ত হবে জীবজগৎ।
প্রশ্ন ॥ ২॥ শ্বসনের গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়াবিক্রিয়া ও কাজকর্ম পরিচালিত হয়। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশোষণে সাহায্য করে, যা পরােক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে। কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি ও কিছু আনুষঙ্গিক পদার্থ শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে আসে। তাই এ প্রক্রিয়া জীবের দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন ক্ষার ও জৈব এসিড সৃষ্টিতে সহায়তা করার মাধ্যমে জীবের অন্যান্য জৈবিক কাজেও সহায়তা করে। অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ল্যাকটিক এসিড ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় দই, পনির ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। ইস্টের অবাত শ্বসনের ফলে অ্যালকোহল ও CO2 গ্যাস তৈরি হয়। CO2 গ্যাস এর চাপে রুটি ফঁপা হয়।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কয় অণু NADH2 উৎপন্ন হয়?
উত্তর : গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় দুই অণু NADH2 উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন ॥ ২॥ ATP এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর : ATP এর পূর্ণরূপ হলো- Adenosine Triphosphate
প্রশ্ন ॥ ৩॥ পাতার কোন কলায় সালোকসংশ্লেষণ ঘটে?
উত্তর : পাতার মেসোফিল কলার ক্লোরোফিল যুক্ত কোষে সালোকসংশ্লেষণ সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্র কাকে বলে?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়ে বায়ুমন্ডলের CO2 গ্যাস পাতার কোষে প্রবেশ করে কোষে অবস্থিত ৫ কার্বন বিশিষ্ট রাইবুলোজ ১, ৫ ডাইফসফেটের সাথে যুক্ত হয়ে প্রথমে ফসফোগ্লিসারিক এসিড পরে ফসফোগ্লিসারালডিহাইডে পরিণত হয়। এরপর আবার রাইবুলোজ ডাইফসফেট উৎপন্ন করে। ঘটনাটি অন্ধকার দশায় চক্রাকারে ঘটে। এ চক্রটি অধ্যাপক ক্যালভিন ও ব্যাশাম আবিষ্কার করেছিলেন বলে এই চক্রটিকে ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্রও বলা হয়।
রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ৫॥ সালোকসংশ্লেষণে অন্ধকার পর্যায়ের প্রথম স্থায়ী যৌগ কী?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণে প্রথম স্থায়ী জৈব যৌগ ৩ কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লিসারিক এসিড (PGA)।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ সালোকসংশ্লেষণের আলোক পর্যায়ে উৎপন্ন যৌগগুলো কী কী?
উত্তর : আলোক পর্যায়ে উৎপন্ন যৌগগুলো- NADPH2, ATP ও অক্সিজেন।
প্রশ্ন ॥৭॥ আত্মীকরণ শক্তি কাকে বলে?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার আলোক পর্যায়ে আলোকশক্তি ও রাসায়নিক শক্তি হিসেবে সঞ্চারিত ATP ও NADPH2 কে আত্মীকরণ শক্তি বলে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ শ্বসন কোথায় সংঘটিত হয়?
উত্তর : প্রতিটি সজীব কোষে শ্বসন সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন ॥৯॥ গ্লাইকোলাইসিস কাকে বলে?
উত্তর : শ্বসনের যে পর্যায়ে কয়েক রকম উৎসেচকের প্রভাবে ১-অণু গ্লুকোজ কোষের সাইটোপ্লাজমে আংশিকভাবে জারিত হয়ে ২-অণু পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন করে, তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ গ্লাইকোলাইসিস কোথায় হয়?
উত্তর : গ্লাইকোলাইসিস কোষের সাইটোপ্লাজমে হয়।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ ক্রেবস চক্রে এক অণু গ্লুকোজ থেকে কত অণু ATP উৎপন্ন হয়?
উত্তর : ক্রেবস চক্রে এক অণু গ্লুকোজ থেকে ২৪ অণু ATP উৎপন্ন হয়। প্রশ্ন ॥
১২ ॥ গ্লাইকোলাইসিসে কত অণু ATP উৎপন্ন হয়?
উত্তর : গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় মোট ১০ অণু ATP উৎপন্ন হয় এবং ২ অণু ব্যয় হয়। ফলে প্রকৃত লাভ হয় ৮ অণু ATP।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ এক অণু NADH2 থেকে কত অণু ATP উৎপন্ন হয়?
উত্তর : এক অণু NADH2 থেকে ৩ অণু ATP উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার পার্শ্ব উৎপন্ন দ্রব্য কী?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার পার্শ্ব উৎপন্ন দ্রব্য হচ্ছে অক্সিজেন ও পানি।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ কোন অবস্থায় সালোকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে?
উত্তর : অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে সালোকসংশ্লেষণ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।
প্রশ্ন ১৬ ॥ ক্রেবস চক্র নামটি কার নাম অনুসারে হয়েছে?
উত্তর : ক্রেবস চক্র নামটি হয়েছে ইংরেজ প্রাণ রসায়নবিদ স্যার হ্যানস অ্যাডলফ ক্রেবস এর নামানুসারে।
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো হলোক্লোরোফিল, আলো, পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড।
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ বায়ুমন্ডলে CO2 এর পরিমাণ কত?
উত্তর : বায়ুমন্ডলে CO2 এর পরিমাণ শতকরা ০.০৩ ভাগ।
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অবশেষে শক্তি কিসে আবদ্ধ। হয়ে উদ্ভিদ দেহে সঞ্চিত হয়?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে গ্লুকোজে আবদ্ধ হয়ে উদ্ভিদের দেহে সঞ্চিত হয়।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের চারটি পার্থক্য উল্লেখ কর।
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের চারটি পার্থক্য :
প্রশ্ন ॥ ২॥ গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস চক্রের মধ্যে পার্থক্যগুলাে উল্লেখ কর।
উত্তর: নিম্নে গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস চক্রের মধ্যে পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো:
গ্লাইকোলাইসিস | ক্রেবস চক্র |
i) গ্লাইকোলাইসিস কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে। | i) ক্রেবস চক্র কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াতে ঘটে। |
ii) O2 -এর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে এটি ঘটে। | ii) O2 -এর উপস্থিতি ছাড়া এটি ঘটতে পারে না। |
iii) এতে সামান্য পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়। | iii) এতে অধিক শক্তি নির্গত হয়। |
iv) এটি অবাত ও সবাত শ্বসনের প্রথম ধাপ। | iv) এটি শুধু সবাত শ্বসনের দ্বিতীয় ধাপ। |
প্রশ্ন ॥ ৩॥ প্রাণিজগতের সঙ্গে উদ্ভিদের সম্পর্ক কী?
উত্তর : প্রাণিজগতের সাথে উদ্ভিদজগতের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ প্রাণীর শ্বাস-গ্রহণের প্রধান উপাদান O2। যা উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় দেয়। প্রাণীকে খাদ্যের জন্য উদ্ভিদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হয় কারণ উদ্ভিদ বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক।
জীববিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বসনের পার্থক্যগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর : প্রাণী ও উদ্ভিদের শ্বসনের পার্থক্য :
প্রাণীর শ্বসন | উদ্ভিদের শ্বসন |
১. বেশিরভাগ প্রাণীর শ্বাস গ্রহণ ও শ্বাস ত্যাগের জন্য শ্বাসযন্ত্র থাকে। | ১. উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্র নেই। |
২. প্রাণীদের রক্ত ও নাসিকা শ্বাসবায়ু পরিবহন করে। | ২. উদ্ভিদের এরকম কোনো বাহক মাধ্যম নেই। |
৩. প্রাণীতে বহিঃ, অন্তঃ ও কোষীয় শ্বসন ঘটে। | ৩. উদ্ভিদে শুধু কোষীয় শ্বসন ঘটে। |
প্রশ্ন ॥ ৫॥ দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে শুধু সালোকসংশ্লেষণ ঘটে, শ্বসন ঘটে না– কথাটা কি সঠিক? উত্তরের সপক্ষে ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : “দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে শুধু সালোকসংশ্লেষণ ঘটে শ্বসন ঘটে না” কথাটি সঠিক নয়। কারণ, প্রতিটি সজীব কোষে দিনরাত শ্বসন ক্রিয়া চলে এবং CO2 গ্যাস উৎপন্ন হয়। দিনের বেলায় সবুজ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসন একই সঙ্গে সংঘটিত হয়। সালোকসংশ্লেষণে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় শ্বসনে নির্গত CO2 ব্যবহার করে এবং শ্বসনে গ্লুকোজ জারিত হয় সালোকসংশ্লেষণে উৎপন্ন O2 দ্বারা।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ সবাত শ্বসনের পর্যায় দুটি কী কী এবং পর্যায়গুলাে কোথায় ঘটে?
উত্তর : সবাত শ্বসনের বিক্রিয়াগুলো দুটি পর্যায়ে ঘটে| একটিকে বলে গ্লাইকোলাইসিস অপরটিকে বলে ক্রেবস চক্র।
গ্লাইকোলাইসিস কোষের সাইটোপ্লাজমে এবং ক্রেবস চক্র কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় ঘটে।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ পাতার যে কলায় সালােকসংশ্লেষণ ঘটে সংক্ষেপে তার গঠন ও ভূমিকার বর্ণনা দাও।
উত্তর : পাতার উপরের ত্বক ও নিচের ত্বকের মাঝখানে অবস্থান করে মেসোফিল টিস্যু। মেসোফিল টিস্যু স্পঞ্জি ও প্যালিসেড প্যারেনকাইমা নিয়ে গঠিত। প্যালিসেড প্যারেনকাইমা কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানা ও স্ট্রোমা নামে দুটি অংশ থাকে। সালোকসংশ্লেষণের আলোক অধ্যায় গ্রানাতে ও অন্ধকার অধ্যায় স্ট্রোমাতে ঘটে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পাতার মেসোফিল টিস্যুর গুরুত্ব সর্বাধিক।
এ টিস্যুর ক্লোরোফিল-ই সূর্যালোক শোষণ করে। সালোকসংশ্লেষণের সময় পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড পাতায় প্রবেশ করে এবং অক্সিজেন বের হয়ে যায়। মেসোফিল টিস্যুর স্পঞ্জি প্যারেনকাইমার কোষ অবকাশগুলো কার্বন ডাইঅক্সাইডকে সালোকসংশ্লেষণের স্থানে পৌছিয়ে দিয়ে সালোকসংশ্লেষণে উৎপন্ন অক্সিজেনকে বাইরে নির্গত করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥শ্বসন সমস্ত জীবের জন্য অপরিহার্য কেন?
উত্তর : শ্বসনে খাদ্যবস্তুর জারণ হয় এবং খাদ্যে আবদ্ধ সৌরশক্তি তথা স্থৈতিক শক্তি গতীয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। শ্বসনে উৎপন্ন কিছু শক্তি | ATP-তে সঞ্চিত থাকে। এ শক্তির সাহায্যেই জীবদেহে চলন, গমন, | বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াগুলো সংঘটিত হয়। শক্তির বাকি | অংশ তাপশক্তি, রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে প্রকাশ ঘটে। এ সমস্ত কারণে সমস্ত সজীব জীবের জন্য শ্বসন একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ প্রাণিদেহে গ্লাইকোজেন এবং উদ্ভিদদেহে শর্করা সংশ্লেষকে শক্তি সঞ্চিত করার প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে– ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোজে আবদ্ধ করে, যা খাদ্য হিসেবে প্রাণী গ্রহণ করে। অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রাণীর শরীরে গ্লাইকোজেন হিসেবে এবং উদ্ভিদ দেহে শর্করা হিসেবে সঞ্চিত থাকে। সুতরাং উদ্ভিদ ও প্রাণীর শক্তির উৎস হলো সালোকসংশ্লেষণ। এজন্য প্রাণিদেহে গ্লাইকোজেন এবং উদ্ভিদদেহে শর্করা সংশ্লেষকে শক্তি সঞ্চিত করার প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ সালােকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে ATP উৎপাদনকে। ফটোফসফোরাইলেশন বলা হয় কেন?
উত্তর : সূর্যের আলো শোষণ করে উত্তেজিত ক্লোরোফিল অণু থেকে নির্গত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন তার শক্তির সাহায্যে ADP ও Pi কে যুক্ত করে ATP উৎপন্ন করে। এজন্য সালোক সংশ্লেষণের আলোক বিক্রিয়ায় ATP উৎপাদন পদ্ধতিকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ কৃত্রিম আলোকে সালোকসংশ্লেষণ ঘটবে কি? উত্তরের সপক্ষে ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণে ক্লোরোফিল কেবলমাত্র দ্রুত দৃশ্যমান আলোক বর্ণালির ৮০০ mm থেকে ৯০০ mm তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোক শোষণ করে। ফলে এর বাইরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতে সালোকসংশ্লেষণ সম্ভব নয়। ৮০০ mm থেকে ৯০০ nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট আলোকে সালোকসংশ্লেষণের সক্রিয় অংশ সংঘটিত হয়। কৃত্রিম আলো যদি আলোক বর্ণালির ৮০০ nm থেকে ৯০০ nm এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট হয় তাহলে সে কৃত্রিম আলোতে সালোকসংশ্লেষণ ঘটবে।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ আমরা কেন আম গাছকে C3 উদ্ভিদ এবং ভুট্টা গাছকে C4 উদ্ভিদ বলি?
উত্তর : আম গাছকে C3 উদ্ভিদ বলে কারণ, এই গাছে সালোকসংশ্লেষণের CO2 বিজারণে উৎপন্ন প্রথম স্থায়ী যৌগটি হলো 3-কার্বনযুক্ত ফসফোগ্লিসারিক এসিড (3PGA)। অপর দিকে ভুট্টা গাছকে C4 উদ্ভিদ বলে কারণ, এই গাছে সালোকসংশ্লেষণ CO2 বিজারণে উৎপন্ন প্রথম স্থায়ী যৌগটি হলো ৪-কার্বনযুক্ত অক্সালো এসিটিক এসিড।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ C3 উদ্ভিদ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার ক্যালভিন ও ব্যাশাম চক্রে বায়ুমন্ডলের CO2 ব্যবহার করে প্রথম স্থায়ী ৩ কার্বনবিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন হয়, যা থেকে পরবর্তীতে শর্করা তৈরি হয়। সালোকসংশ্লেষণে যে সমস্ত উদ্ভিদে প্রথম স্থায়ী পদার্থটি ৩ কার্বনবিশিষ্ট সে সমস্ত উদ্ভিদকে C3 উদ্ভিদ বলা হয়।
প্রশ্ন ১৪ ॥ গ্লাইকোলাইসিসকে শ্বসনের প্রথম পর্যায় কলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : গ্লাইকোলাইসিস এর পুরো বিক্রিয়া কোষের সাইটোপ্লাজমে ঘটে থাকে। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কোনো অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে না। তাই গ্লাইকোলাইসিসকে সবাত ও অবাত উভয় প্রকার শ্বসনেরই প্রথম পর্যায় বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : খাদ্য প্রস্তুতকরণে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা সূর্যালোক হতে আসে। সূর্যালোক ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। এই সূর্যের আলোর প্রভাবেই পত্ররন্ধ্র উন্মুক্ত হয়। পাতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে এবং খাদ্য প্রস্তুতকরণে অংশগ্রহণ করে। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আলোর পরিমাণ বেড়ে গেলে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণও বেড়ে যায়। অতএব, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রশ্ন ॥ ১৬ ॥ হ্যাচ–স্ল্যাক ও ক্যালভিন চক্রের প্রধান পার্থক্যগুলো লেখ।
উত্তর : হ্যাচ-স্ল্যাক চক্র ও ক্যালভিন চক্রের প্রধান পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ :
হ্যাচ–স্ল্যাক চক্র | কেলভিন চক্র |
i) অধিক আলোর প্রখরতায় হ্যাচ-স্ল্যাক চক্র চলতে পারে। | i) অধিক আলোর প্রখরতায় কেলভিন চক্র চলে না। |
ii) প্রথম স্থায়ী পদার্থ ৪-কার্বন বিশিষ্ট অক্সালো অ্যাসিটিক এসিড। | ii) প্রথম স্থায়ী পদার্থ ৩-কার্বন বিশিষ্ট ৩ ফসফোগ্লিসারিক এসিড। |
iii) ফসফোইনল পাইরুভিক এসিড হলো CO2এর প্রথম গ্রাহক। | iii) রাইবুলোজ ১, ৫-বিস ফসফেট হলো CO2 এর প্রথম গ্রাহক। |
প্রশ্ন ১৭ ॥ পাতাকে শর্করা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কারখানা বলা হয় কেন?
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণে শর্করা উৎপাদনের বেশির ভাগ প্রক্রিয়াই সবুজ পাতাতে ঘটে থাকে বলে পাতাকে শর্করা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কারখানা বলা হয়।
সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন পড়ে ক্লোরোফিলের। পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ খুব বেশি। তাই সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সবুজ পাতা খাদ্য তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে CO2 এবং H2O এর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করা (C6H12O6) উৎপন্ন হয় এবং প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। তাই, পাতাকে শর্করা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কারখানা বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ সবাত শ্বসনের কোন ধাপ কোথায় সংঘটিত হয় তা একটি ছকে উপস্থাপন কর।
উত্তর : সবাত শ্বসনের চারটি ধাপ রয়েছে। যথা:
ধাপ | সংঘটনের স্থান |
i) গ্লাইকোলাইসিস | i) সাইটোপ্লাজম |
ii) অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি | ii) মাইটোকন্ড্রিয়া |
iii) ক্রেবস চক্র | iii) মাইটোকন্ড্রিয়া |
iv) ইলেকট্রন প্রবাহ তন্ত্র | iv) মাইটোকন্ড্রিয়া |
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ গ্লাইকোলাইসিস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত উভয় শ্বসনের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কয়েক রকম উৎসেচকের প্রভাবে ১ অণু গ্লুকোজ কোষের সাইটোপ্লাজমে আংশিকভাবে জারিত হয়ে ২ অণু পাইরুভিক এসিড চার অণু ATP এবং দুই অণু NADPH + H+ উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন ॥ ২০ ॥ সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রভাবক কী কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণের প্রয়োজনীয় প্রভাবগুলো কিছু বাহ্যিক ও কিছু অভ্যন্তরীণ।
i. বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ : আলো, কার্বন ডাইঅক্সাইড, তাপমাত্রা, পানি, অক্সিজেন, খনিজ পদার্থ ও রাসায়নিক পদার্থ।
ii. অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ : ক্লোরোফিল, পাতার বয়স ও সংখ্যা, শর্করার পরিমাণ, পটাসিয়াম ও এনজাইম
প্রশ্ন ॥ ২১ ॥ উদ্ভিদে পরিবহন বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : উদ্ভিদে পরিবহন বলতে মাটি থেকে শােষিত পানি ও খনিজ লবণ এবং পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্যের চলাচলকে বুঝায়। | জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে পানি ও খনিজ লবণ উদ্ভিদের পৌছায়। পাতায় পানি পৌছালে সেখানে খাদ্য প্রস্তুত হয়। প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন এলাকায় ফ্লোয়েম টিস্যু দ্বারা পরিবাহিত হয়। এভাবে উদ্ভিদের বিভিন্ন অজৈব পদার্থগুলো জাইলেম দ্বারা এবং বিভিন্ন জৈব যৌগগুলো ফ্লোয়েম দ্বারা পরিবাহিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ২২ ॥ ফটোফসফোরাইলেশন কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় আলোক শক্তি ব্যবহার করে ATP তৈরির প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় ADP এর সাথে অজৈব ফসফেট মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে এবং ইলেকট্রন NADP-কে বিজারিত করে NADPH+H+ উৎপন্ন করে।
প্রশ্ন ॥ ২৩ ॥ রাফেজ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : শস্য দানার বহিরাবরণ, সবজি, ফলের খোসা, শাঁস, বীজ এবং উদ্ভিদের ডাটায় এক ধরনের আঁশ থাকে। এগুলোকে খাদ্য আঁশ বা রাফেজ বলে। এগুলো মূলত কোষ প্রাচীরের সেলুলোজ এবং লিগনিন । হাড় যেমন মানব দেহের কাঠামো গঠন করে, রাফেজ তেমনি উদ্ভিদের কাঠামো তৈরি করে। রাফেজ হজম হয় না। কিন্তু পানি শোষণ করে বৃহদন্ত্র থেকে মল নিষ্কাশনে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সারের আশঙ্কা হ্রাস করে।
তথ্য কণিকা:
১. Adenosine Triphosphate — ATP
২. ADP-র সাথে ফসফেট যুক্ত হওয়াকে বলে — ফসফোরাইলেশন।
৩. ফসফেট গ্রুপ বিচ্ছিন্ন হয় — ডিফসফোরাইলেশনে ।
৪. ৭.৩ কিলোক্যালরি সৌরশক্তি আবদ্ধ করে — ফসফেট বন্ধনীতে ।
৫. ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম বিদ্যমান — মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিডে ।
৬. “জৈবমুদ্ৰা” বা “শক্তিমুদ্রা” হলো— ATP.
পদার্থ বিজ্ঞান সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৭. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান হলো পাতার — মেসোফিল টিস্যু।
৮. বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড আছে — ০.০৩%।
৯. বিজ্ঞানী ক্যালভিন নোবেল পুরস্কার লাভ করেন — ১৯৬১ সালে।
১০. C3 গতিপথের ১ম স্থায়ী পদার্থ — ফসফোগ্লিসারিক এসিড।
১১. C4 গতিপথের ১ম স্থায়ী পদার্থ — অক্সালে এসিটিক এসিড।
১২. সালোকসংশ্লেষণ হার ও উৎপাদন ক্ষমতা বেশি — C4 উদ্ভিদে।
১৩. সালোকসংশ্লেষণ হ্রাস পায় — এনজাইমের অভাবে।
১৪. সালোকসংশ্লেষণ সবচেয়ে ভালো হয় — লাল, নীল, কমলা আলোতে ।
১৫. ৬৮0 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোতে সবচেয়ে ভালো হয় — সালোকসংশ্লেষণ।
১৬. বায়ুমণ্ডল থেকে উদ্ভিদ CO2 ব্যবহার করতে পারে — শতকরা ১ ভাগ।
১৭. সালোকসংশ্লেষণের পরিমিত তাপমাত্রা — ২২-৩৫° সে.।
১৮. ক্লোরোফিলের প্রধান উপকরণ হলো — N2 ও Mg
১৯. জৈব রাসায়নিক কারখানা বলা হয় — সালোকসংশ্লেষণকে ।
২০. বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ — ২০.৯৫ ভাগ ।
২১. জীবদেহের প্রতিটি কোষে ২৪ ঘন্টাই চলে — শ্বসন।
২২. শ্বসন ক্রিয়ার হার বেশি উদ্ভিদের — বধিষ্ণু অঞ্চলে।
২৩. অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে শ্বসন — ২ প্রকার।
২৪. ৩৮টি ATP উৎপন্ন হয় — সবাত শ্ৰসনে।
২৫. সবাত শ্বসন সম্পন্ন হয় — ৪টি ধাপে।
২৬. গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো ঘটে কোষের — সাইটোপ্লাজমে ।
২৭, স্যার হেনস ড্রেস ছিলেন — প্রাণরসায়নবিদ।
২৮. ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র সংঘটিত হয় — মাইটোকন্ড্রিয়ায় ।
২৯. অবাত শ্বসনে পাইভিক এসিড় হতে উৎপন্ন হয় — ইথানল ।
৩০. শ্বসনের জন্য উত্তম তাপমাত্রা — ২০°-৪৫° সে.।
৩১. পাইরভিক এসিড ক্ষরিত হয়ে সবাত শ্বসনে উৎপন্ন হয় — CO2 ও H2O।
৩২. ল্যাকটিক এসিডের ফার্মেন্টেশনে তৈরি হয় — দই, পনির।
৩৩. রুটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় — অবাত শ্বসন ।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে নির্গত হয় কোনটি?
ক. পানি খ. শর্করা
গ. অক্সিজেন ঘ. কার্বন ডাইঅক্সাইড
উত্তর: গ. অক্সিজেন
২. শ্বসনের গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় কত অণু ATP তৈরি হয়?
ক. ৪ খ. ৬
গ. ৮ ঘ. ১৮
উত্তর: গ. ৮
উদ্দীপকটি লক্ষ কর এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
৩. A ও B উভয়েরই কাজ হচ্ছে-
i. O2 গ্রহণ
ii. H2O নির্গমন
iii. CO2 ত্যাগ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৪. চিত্রে X এ সংঘটিত প্রক্রিয়াটি–
i. পরিবেশকে শীতল রাখে
ii. সালোকসংশ্লেষণে সহায়তা করে
iii. শ্বসনে ব্যাঘাত ঘটায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
ICT প্রথম অধ্যায় বহুনির্বাচনি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৫. সালোকসংশ্লেষণের জন্য উত্তম তাপমাত্রা কোনটি?
ক. ২২°C-৩৫°C খ. ২২°C-৪৫°C
গ. ২২°C-৫০°C ঘ. ২২°C-৫৫°C
উত্তর: ক. ২২°C-৩৫°C
৬. কোথায় শ্বসন ক্রিয়ার হার অনেক বেশি?
ক. মূলের গোড়ায় খ. কাণ্ডের নিম্নভাগে
গ. কচি পাতায় ঘ. অঙ্কুরিত বীজে
উত্তর: ঘ. অঙ্কুরিত বীজে
৭. শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোন ধাপে ৪ গুণ কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়?
ক. গ্লাইকোলাইসিস খ.অ্যাসিটাইল কো-এ
গ. ক্রেবস চক্র ঘ. ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র
উত্তর: গ. ক্রেবস চক্র
৮. C3–উদ্ভিদের প্রথম স্থায়ী যৌগ কোনটি?
ক. ল্যাকটিক এসিড খ. পাইভিক এসিড
গ. ফসফোগ্লিসারিক এসিড ঘ. অক্সালোঅ্যাসেটিক এসিড
উত্তর: গ. ফসফোগ্লিসারিক এসিড
৯. ক্রেবস চক্রে কোনটির জারণ ঘটে?
ক. গ্লুকোজ খ. পাইরুভিক এসিড
গ. এডিনোসিন ট্রাইফসফেট ঘ. অ্যাসিটাইল Co-A
উত্তর: ঘ. অ্যাসিটাইল Co-A
১০. পানিতে শতকরা কত ভাগ CO2 থাকে?
ক. ০.০০৩% খ. ০.০৩%
গ. ০.৩% ঘ. ৩.০%
উত্তর: গ. ০.৩%
১১. অ্যাসিটাইল কো–এ সৃষ্টি ধাপটিতে যে কয়টি ATP উৎপন্ন হয় তার চারগুণ ATP উৎপন্ন হয় নিচের কোন ধাপে?
ক. গ্লাইকোলাইসিস খ. ক্রেবস চক্র
গ. ইলেকট্রন প্রবাহতন্ত্র ঘ. C3H4O3 এর অসম্পূর্ণ জারণ
উত্তর: খ. ক্রেবস চক্র
১২.অবাত শ্বসনে কোনটি উৎপন্ন হয়?
ক. C3HO3 খ. C2H5OH
গ) C6H12O6 ঘ) H2O
উত্তর: খ. C2H5OH
১৩. নিচের কোনটিতে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি?
ক. মুথা ঘাস খ. অ্যামারান্থাস
গ. দুর্বাঘাস ঘ. কচুরিপানা
উত্তর: ঘ. কচুরিপানা
১৪. ১ অণু FADH2 = কয় অণু ATP?
ক. ২ খ. ৪
গ. ৭ ঘ. ৮
উত্তর: ক. ২
১৫. কোন উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার অপেক্ষাকৃত বেশি?
ক. জলজ খ. স্থলজ
গ. মরুজ ঘ. মেরুজ
উত্তর: ক. জলজ
১৬. ব্লাকম্যান কত সালে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেন।
ক. ১৯০৫ খ. ১৯২৫
গ. ১৯৬৫ ঘ. ১৯৭৫
উত্তর: ক. ১৯০৫
১৭. ইস্টের অবাত শ্বসনে কোনটি তৈরি হয়?
ক. ইথাইল অ্যালকোহল ও অক্সিজেন
খ. ল্যাকটিক এসিড ও কার্বন ডাই অক্সাইড
গ. পাইরুভিক এসিড ও পানি
ঘ. ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই অক্সাইড
উত্তর: ঘ. ইথাইল অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই অক্সাইড
১৮. কত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে শ্বসনের হার কমে যায়?
ক. ১৫° সে. খ. ২০° সে.
গ. ২৫° সে. ঘ. ৩০° সে.
উত্তর: খ. ২০° সে.
১৯. শ্বসনের জন্য উত্তম তাপমাত্রা কোনটি?
ক. ২০°-২৫° খ. ২৫°-৩০°
গ. ৩০°-৩৪° ঘ. ২০°-৪৫°
উত্তর: ঘ. ২০°-৪৫°
২০. নিচের কোনটি পাইরুভিক এসিডের সংকেত?
ক. C2H4O3 খ. C3H4O2
গ. C3H2O3 ঘ. C3H4O3
উত্তর: ঘ. C3H4O3
২১. কোনটিকে জৈব মুদ্রা বলা?
ক. NAD খ. ADP
গ. ATP ঘ. AMP
উত্তর: গ. ATP
২২. উদ্ভিদ কোষে এক অণু গ্লুকোজ জারিত হয়ে কত অণু ATP তৈরি করে?
ক. ৩৮ খ. ৩০
গ. ৩৬ ঘ. ২৪
উত্তর: ক. ৩৮
২৩. কোথায় আমরা সালোকসংশ্লেষণ ও শসন উভয়ই দেখতে পাই?
ক. ছত্রাক খ. ভাইরাস
গ. ব্যাকটেরিয়া ঘ. সবুজ উদ্ভিদ
উত্তর: ঘ. সবুজ উদ্ভিদ
২৪. উদ্ভিদের কাণ্ড অথবা মুলে কোন শর্কাটি সঞ্চিত শর্করা হিসেবে থাকে?
ক. গ্লুকোজ খ. সুক্রোজ
গ. স্টার্চ ঘ. গ্যালাক্টোজ
উত্তর: গ. স্টার্চ
২৫. সালােকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়ােজনীয় উপকরণ নয় কোনটি?
ক. ক্লোরোফিল খ. পানি
গ. শর্করা ঘ. আলো
উত্তর:
২৬. পাতার কোন টিস্যুতে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়।
ক. মেসোফিল টিস্যু খ. ক্লোরোফিল টিস্যু
গ্. জাইলেম টিস্যু ঘ. ফ্লোয়েম টিস্যু
উত্তর: ক. মেসোফিল টিস্যু
২৭. আত্মীকরণ শক্তি হলো—
i. NADP
ii. ATP
iii. NADPH2
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
২৮. শ্বসনে এক অণু অ্যাসিটাইল Co-A থেকে উৎপন্ন হয় —
i. ৩ অণু NADH2
ii. ১ অণু FADH2
iii. ২ অণু CO2
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
২৯. গ্লাইকোলাইসিসের জন্য প্রযোজ্য –
i. অক্সিজেন আবশ্যক
ii. দুই অনু পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন হয়
iii. সাইটোপ্লাজমে হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
বাংলা প্রথম পত্র সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৩০. বায়ুতে CO2 এর ঘনত্ব বেড়ে গেলে–
i. শ্বসন হার বাড়ে
ii. শ্বসন হার কমে
iii. শ্বসন হার কিঞ্চিত কমে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. iii
নিচের ছকটি লক্ষ করো এবং ৩১ ও ৩২ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
P-ক্লোরোফিল | R-পটাশিয়াম |
Q-ক্লোরোফর্ম | S-ক্যালসিয়াম |
৩১. উদ্দীপকের কোন অংশের উপাদানগুলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে?
ক. P খ. Q
গ. R ঘ. S
উত্তর: খ. Q
৩২. P এর খুব বেশি উপস্থিতি থাকলে কী হতে পারে?
i. এনজাইম-এর অভাব দেখা যায়
ii. এনজাইম-এর আধিক্য দেখা দেয়
iii. সালোকসংশ্লেষণ হার হ্রাস পায়।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের সমীকরণ অণুসারে ৩৩ ও ৩৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও।
CO2 + H2O → C6H12O6 + O2
৩৩. সমীকরণে দেখানো প্রক্রিয়াটি হলো—
ক. সালোকসংশ্লেষণ খ. ফটোরেসপিরেশন
গ. শ্বসন ঘ. অনুলিপন
উত্তর: ক. সালোকসংশ্লেষণ
৩৪.কোনটি উপরের প্রক্রিয়াটির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়?
ক. সূর্যালোক খ. প্লাস্টিড
গ. মূল ঘ. লোহা
উত্তর: গ. মূল
৩৫. নিচের কোনটি C4 উদ্ভিদ?
ক. আম খ. লিচু
গ.কলা ঘ. আখ
উত্তর: ঘ. আখ
৩৬. নিচের কোনটি C3 উদ্ভিদ?
ক. ভু্ট্টা খ. জাম
গ.মথা ঘাস ঘ. আখ
উত্তর: খ. জাম
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর – PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন –১ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. পাইরুভিক এসিডের সংকেত কী?
খ. অবাত শ্বসন বলতে কী বুঝায়?
গ. A উপাদানটি কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. A উপাদানটি উৎপন্নে ব্যাঘাত ঘটলে উদ্ভিদের উপর কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পাইরুভিক এসিডের সংকেত, C3H4O3 ৷
খ. যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে হয় তাকে অবাত শ্বসন বলে। অর্থাৎ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় কোনো শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষ মধ্যস্থ এনজাইম দ্বারা আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি), CO2 ও সামান্য পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে তাকে অবাত শ্বসন বলে।
গ. উদ্দীপকের A উপাদানটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার আত্মীকরণ শক্তি ATP ও NADPH + H+। এটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে।
আলোকনির্ভর পর্যায়ের জন্য আলো অপরিহার্য। এ পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরিত শক্তি ATP-এর মধ্যে সঞ্চিত হয়। ATP ও NADPH + H+ সৃষ্টিতে পাতার ক্লোরোফিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্লোরোফিল অণু আলোকরশ্মির ফোটন শােষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন হতে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) এর সাথে অজৈব ফসফেট (Pi = inorganic phosphate) মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন বলে।
সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের সহায়তায় পানি বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস বলা হয়। ফটোফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়ায় ATP উৎপন্ন হয় এবং পানির ইলেকট্রন NADP-কে বিজারিত করে NADPH + H+ উৎপন্ন করে। ATP এবং NADPH + H+ – কে আত্মীকরণ শক্তি বলা হয়।
এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র সাজেশন ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. A উপাদানটি হলো আত্মীকরণ শক্তি ATP ও NADPH + H+ যা উৎপন্নে ব্যাঘাত ঘটলে উদ্ভিদের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে সবুজ উদ্ভিদ CO2, H2O, খনিজ পদার্থ প্রভৃতি সরল উপাদানগুলো গ্রহণ করে সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে জৈব খাদ্যবস্তু সংশ্লেষ করে। সংশ্লেষিত প্রাথমিক শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তু থেকে উদ্ভিদ অন্যান্য সকল প্রকার খাদ্য- প্রোটিন, ফ্যাট ও ভিটামিন সংশ্লেষ করে। উদ্ভিদ নিজের বিপাকীয় কাজ চালানোর জন্য স্বল্প অংশ ব্যয় করে বাকি অংশ ফল, বীজ, দানা শস্য হিসেবে নিজের দেহাংশে জমা রাখে। এছাড়া এই খাদ্য বস্তুতে রাসায়নিক শক্তি ATP কে স্থৈতিক শক্তিরূপে সঞ্চিত করে রাখে যা তার বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে বিশেষ করে শ্বসনে ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং A উপাদানটির উৎপন্নে ব্যাঘাত ঘটলে উদ্ভিদের পক্ষে বেঁচে থাকা মোটেই সম্ভব হবে না। অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য। নষ্ট হয়ে যাবে এবং মানুষসহ জীবজগতের সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
প্রশ্ন –২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দশম শ্রেণির ছাত্রী বিপাশা গাজর খেতে পছন্দ করে। গাজরে গ্লুকোজ থাকায় এটা তার কাজ করার শক্তি যোগায়। তার ছোট বোন তাকে প্রশ্ন করে গাছ বড় হবার জন্য শক্তি কীভাবে পায়? সে তার বোনকে জানায়, গাছও শ্বসন প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজ থেকে শক্তি পায়।
ক. ফটোলাইসিস কী?
খ. সালোকসংশ্লেষণকে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বলা হয় কেন?
গ. বিপাশার গৃহীত খাদ্য উপাদানের ২ অণু থেকে ক্রেবস চক্রে কী পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় ছকের মাধ্যমে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হলে উদ্ভিদের মধ্যে কী প্রভাব ফেলবে তা বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সূর্যের আলোয় ক্লোরোফিলের সাহায্যে পানি বিয়োজিত হওয়া হলো ফটোলাইসিস।
খ. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পানি জারিত হয়ে অক্সিজেন মুক্ত করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বিজারিত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। তাই সালোকসংশ্লেষণকে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বলা হয়।
গ. আমরা জানি, ATP কে জৈব মুদ্রা বা শক্তি মুদ্রা বলে। ATP গ্লুকোজ শক্তি হিসাবে জমা থাকে। বিপাশার গৃহীত খাদ্য উপাদানে আছে গ্লুকোজ। ১ অণু গ্লুকোজ থেকে ক্রেবস চক্রে যে পরিমাণ শক্তি অর্থাৎ ATP উৎপন্ন হয় তা নিচে ছকে দেখানো হলো :
চক্র | উৎপাদিত বস্তু | নিট উৎপাদন |
ক্রেবস চক্র | ৬ অণু NADH2 | ১৮ অণু ATP |
২ অণু FADH2 | ৪ অণু ATP | |
২ অণু GTP | ২ অণু ATP | |
মোট | ২৪ ATP |
ছক থেকে দেখা যায় ১ অণু গ্লুকোজ থেকে ক্রেবস চক্রে ২৪ অণু ATP উৎপন্ন হয়।
উল্লেখ্য যে, ১ অণু NADH2 = ৩ অণু ATP
১ অণু FADH2 = ২ অণু ATP
১ অণু GTP =১ অণু ATP
সুতরাং ২ অণু গ্লুকোজ থেকে (২৪ x ২) বা ৪৮ অণু ATP উৎপন্ন হয়।
ঘ. উক্ত প্রক্রিয়াটি হলো শ্বসন যা বাধাগ্রস্ত হলে উদ্ভিদে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। জীবদেহে জীবনের অস্তিত্ব আছে এটি প্রমাণ করে শ্বসন। জীবদেহে আমৃত্যু দিবারাত্র শ্বসন চলে। এটি জীবতথা উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রক্রিয়া কারণশ্বসন প্রক্রিয়ায় খাদ্যস্থ শক্তিকে তাপশক্তি ও গতিশক্তিরূপে মুক্ত করে জীবের বিভিন্ন বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় কার্যে যেমন : পুষ্টি, বৃদ্ধি, রেচন, জনন, চলন ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া উদ্ভিদের দৈহিক বৃদ্ধিতে ও জননকোষ তৈরিতে শ্বসন ক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং আলোচ্য বিষয়গুলো থেকে সহজেই বুঝা যায় শ্বসন প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হলে উদ্ভিদে বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হবে। সংক্ষেপে এর প্রভাব উপস্থাপন করা হলাে :
i) শ্বসন প্রক্রিয়ার অভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হবে।
ii) উদ্ভিদের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ ঘটবে না।
iii) উদ্ভিদদেহে খাদ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় CO2 এর সরবরাহ কমে যাবে।
iv) উদ্ভদের কোষ বিভাজন তথা জনন কোষ তৈরি বাধাগ্রস্ত হবে।
v) সকল শারীরবৃত্তীয় কাজকর্ম ব্যাহত হওয়ায় একসময় উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটতে পারে।
সুতরাং যদি উদ্ভিদের দেহে শ্বসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তার যাবতীয় বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় কার্যগুলো দারুণভাবে ব্যাহত হবে। এবং পরবর্তীতে উদ্ভিদটির মৃত্যু ঘটতে পারে।
প্রশ্ন –৩ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. জৈব মুদ্রা কী?
খ. গ্লাইকোলাইসিস বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের আলোকে শর্করা তৈরির এ প্রক্রিয়াটি বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটি জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া”—উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. শক্তি সরবরাহকারী যৌগ ATP হলো “জৈব মুদ্রা”।
খ. গ্লাইকোলাইসিস সবাত ও অবাত উভয় শ্বসনের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কয়েক রকম উৎসেচকের প্রভাবে ১ অণু গ্লুকোজ কোষের সাইটোপ্লাজমে আংশিকভাবে জারিত হয়ে ২ অণু পাইরুভিক এসিড চার অণু ATP এবং দুই অণু NADPH + H+ উৎপন্ন হয়।
গ. উদ্দীপকের বিক্রিয়াটি –
এটি সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার আলোক নিরপেক্ষ বা অন্ধকার পর্যায়ে ঘটে। আলোক নির্ভর পর্যায়ে উৎপন্ন ATP ও NADPH + H’ কে আত্মীকরণ শক্তি বলা হয়। ATP ও NADPH + H+ এর সহায়তায় CO2 তিনটি গতিপথে বিজারিত হয়ে শর্করা উৎপন্ন করে। বিক্রিয়ার গতিপথগুলো-
(১) ক্যালভিন চক্র
(২) হ্যাচ ও স্ন্যাক চক্র
(৩) ক্রেসুলেসিয়ান এসিড় বিপাক।
অধিকাংশ উদ্ভিদে ক্যালভিন চক্রের দ্বারা শর্করা তৈরি হয় তাই নিচে এই চক্রটি আলোচনা করা হলাে : ক্যালভিন চক্রে কোষে অবস্থিত ৫-কার্বনবিশিষ্ট রাইবুলোজ-১, ৫ডাইফসফেট এর সাথে CO2 মিলিত হয়ে ৬-কার্বনবিশিষ্ট অস্থায়ী কিটোএসিড তৈরি হয়। এটি সাথে সাথে ভেঙ্গে তিন কার্বনবিশিষ্ট ৩-ফসফোগ্লিসারিক এসিড (3PGA) উৎপন্ন করে। এ সময় ATP ও NaDPH + H+ ব্যবহার করে 3PGA, ৩ফসফোগ্লিসারালডিহাইড ও ডাইহাইড্রোক্সি এসিটোন ফসফেট তৈরি হয়। পরবর্তীতে ৩-ফসফোগ্লিসারালডিহাইড ও ডাইহাইড্রোক্সি এসিটোন ফসফেট থেকে বিভিন্ন বিক্রিয়ার মাধ্যমে একদিকে শর্করা এবং অপরদিকে রাইবুলোজ-১, ৫-ডাইফসফেট তৈরি হতে থাকে। পুনঃসংশ্লেষিত রাইবুলোজ-১, ৫-ডাইফসফেট পুনরায় এক অণু CO2 গ্রহণ করে ক্যালভিন চক্রে প্রবেশ করে।
অতএব, ৬-অণু CO2 থেকে এক অণু গ্লুকোজ তৈরি হওয়ার সময় ক্যালভিন চক্র ছয়বার ঘুরবে। হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্রে প্রথম স্থায়ী পদার্থ হলো ৪-কার্বনবিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড বাকী বিক্রিয়াগুলো ক্যালভিন চক্রের মতো।
ঘ. উদ্দীপকে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া কারণ এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক ও জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। জীবজগতের সমস্ত শক্তির উৎস হলো সূর্য। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ করতে পারে। কোনো প্রাণীই তার নিজের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণীকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। কাজেই বলা যায়, পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্য প্রস্তুত হয়। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বিশেষ করে O2 ও CO2-এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শুধু তাই নয় মানব সভ্যতার অগ্রগতিও অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। অন্ন, বস্ত্র , শিল্পসামগ্রী (যেমন নাইলন, রেয়ন, কাগজ, সেলুলোজ, কাঠ, রাবার), ঔষধ (যেমন কুইনাইন, মরফিন), জ্বালানি কয়লা, পেট্রোল, গ্যাস প্রভৃতি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে ধ্বংস হবে মানব সভ্যতা, বিলুপ্ত হবে জীবজগত। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটি জীবজগতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন –৪ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
দশম শ্রেণির ছাত্রী বিভা তার বান্ধবীকে সালোকসংশ্লেষণের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিল। বিভা বলল যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় পানির সালোক বিভাজন ঘটে এবং CO2 বিজারিত হয়ে শর্করা উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রভাবকের গুরুত্ব আছে।
ক. গ্লাইকোলাইসিস কী?
খ. সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রভাবক কী কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বিভার আলোচিত প্রক্রিয়ায় পানির সালোক বিভাজন ও ATP উৎপাদন প্রক্রিয়া যুগপৎ ঘটে
বিশ্লেষণ কর।
ঘ. জীবজগতের উপর উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটির প্রভাব বর্ণনা কর।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্লাইকোলাইসিস শ্বসনের একটি পর্যায়, যেখানে ১ অণু গ্লুকোজ থেকে ২ অণু পাইরুভিক এসিড উৎপন্ন হয়।
খ. সালোকসংশ্লেষণের প্রয়োজনীয় প্রভাবগুলো কিছু বাহ্যিক ও কিছু অভ্যন্তরীণ।
বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ : আলো, কার্বন ডাইঅক্সাইড, তাপমাত্রা, পানি, অক্সিজেন, খনিজ পদার্থ ও রাসায়নিক পদার্থ।
ii. অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ : ক্লোরোফিল, পাতার বয়স ও সংখ্যা, শর্করার পরিমাণ, পটাসিয়াম ও এনজাইম।
এসএসসি বাংলা দ্বিতীয় পত্র সাজেশন ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
গ. উদ্দীপকে বিভার আলোচিত প্রক্রিয়া হলো সালোকসংশ্লেষণের আলোক নির্ভর পর্যায়। আলোকনির্ভর পর্যায়ে সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এ পর্যায়ে পাতার ক্লোরোফিল আলোকরশ্মির ফোটন কণা শোষণ করে এবং শোষণকৃত ফোটন হতে শক্তি সঞ্চয় করে ADP (অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট) এর সাথে অজৈব ফসফেট (Pi = inorganic phosphate) মিলিত হয়ে ATP তৈরি করে। ATP তৈরির এই প্রক্রিয়াকে ফটোফসফোরাইলেশন (photophosphorylation) বলে।।
সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের সহায়তায় পানি বিয়ােজিত হয়ে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন ও ইলেকট্রন উৎপন্ন হয়। এ প্রক্রিয়াকে পানির ফটোলাইসিস বা পানির সালোক বিভাজন বলা হয়। ফটোফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়ায় ATP এবং পানির ইলেক্ট্রন NADP- কে বিজারিত করে NADPH2 উৎপন্ন করে।
অতএব, উপরিউক্ত প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা যায় উদ্দীপকের আলোচিত প্রক্রিয়ায় পানির সালোকবিভাজন ও ATP উৎপাদন প্রক্রিয়া যুগপৎ ঘটে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি হলো সালোকসংশ্লেষণ; জীবজগতে যার প্রভাব অপরিসীম। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সূর্যালোক ও জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়। সমস্ত শক্তির উৎস হলোসূর্য। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে খাদ্যের মধ্যে আবদ্ধ রাখে। জীব নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আমরা খাদ্য হিসেবে যা গ্রহণ করি তা সবই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে পেয়ে থাকি। খাদ্যের জন্য সমগ্র প্রাণীকুল সবুজ উদ্ভিদের উপর। সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, আর সবুজ উদ্ভিদ এ খাদ্য প্রস্তুত করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। বায়ুতে অক্সিজেনের গ্যাসের পরিমাণ ২০.৯৫ ভাগ এবং CO2 এর পরিমাণ ০.০৩৩ ভাগ। শ্বসন প্রক্রিয়ায় জীব O2 গ্রহণ করে ও CO2 ত্যাগ করে। কিন্তু সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় CO2 গ্রহণ করে এবং O2 বায়ুমন্ডলে ত্যাগ করে। এভাবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ করে O2 ও CO2 এর সঠিক অনুপাত রক্ষায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় মানব সভ্যতার অগ্রগতি অনেকাংশে সালোকসংশ্লেষণের উপর প্রত্যক্ষ বা পলোক্ষভাবে নির্ভরশীল। তাই সালোকসংশ্লেষণ না ঘটলে ধ্বংস হবে মানবসভ্যতা, বিলুপ্ত হবে জীবজগত। তাই বলা যায় জীবজগতের উপর সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন– ৫ : নিচের সমীকরণ থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
ক. জীবনী শক্তি কী?
খ. C4 উদ্ভিদ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি A এর অনুপস্থিতিতে কীভাবে ঘটে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় কী ধরনের ভূমিকা রাখে? মতামত দাও।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জীব কর্তৃক তার দেহে শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহারের মৌলিক কৌশলই হচ্ছে জীবনী শক্তি।
খ. বিজ্ঞানী হ্যাচ ও স্ন্যাক সালোকসংশ্লেষণের অন্ধকার পর্যায়ে CO2 বিজারণের একটি বিশেষ গতিপথ আবিষ্কার করেন। যেখানে প্রথম স্থায়ী যৌগ ৪-কার্বন বিশিষ্ট অক্সালো এ্যাসিটিক এসিড উৎপন্ন হয়। যেসব উদ্ভিদে এই ধরনের চক্র দেখা যায় তাদেরকে C4 উদ্ভিদ বলা হয়। সাধারণত, ভুট্টা, আখ, অন্যান্য, ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, মুথা ঘাস, অ্যামারান্থাস ইত্যাদি C4 উদ্ভিদ।
গ. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটি হলো শ্বসনের সামগ্রিক রূপ এবং A হলো অক্সিজেন (O2) যার অভাবে প্রক্রিয়াটি অবাত শ্বসনে পরিণত হয়। সাধারণভাবে বলা হয় যে শ্বসন প্রক্রিয়া অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে হয় তাকে অবাত শ্বসন বলে। অবাত শ্বসনে কোনো শ্বসনিক বস্তু অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়াই কোষমধ্যস্থ এনজাইম দ্বারা আংশিকরূপে জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব যৌগ (ইথাইল অ্যালকোহল, ল্যাকটিক এসিড ইত্যাদি), CO2 সামান্য পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে।
এখানে কোষের এনজাইমগুলো প্রধান ভূমিকা পালন করে। এভাবেই উদ্দীপকের প্রক্রিয়া A অর্থাৎ অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ঘটে।
ঘ. উদ্দীপক প্রক্রিয়াটি হলো শ্বসন যা জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শ্বসনের সময় জীবদেহে বর্তমান স্থৈতিক শক্তি তাপরূপে উদ্ভূত হয়ে রাসায়নিক শক্তিরূপে (ATP) মুক্ত হয় এবং জীবের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়। শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তু ব্যতীত প্রোটিন, ফ্যাট এবং বিভিন্ন জৈব এসিড শ্বসনিক বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। শ্বসনের সামগ্রিক সমীকরণটি নিম্নরূপ :
শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়াবিক্রিয়া ও কাজকর্ম পরিচালিত হয়। শ্বসনে নির্গত CO2 জীবের প্রধান খাদ্য শর্করা উৎপন্নের জন্য সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশোধনে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে। কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি ও কিছু আনুষাঙ্গিক পদার্থ শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে আসে। তাই এ প্রক্রিয়া জীবের দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপক্ষার ও জৈব এসিড সৃষ্টিতে সহায়তা করার মাধ্যমে জীবনের অন্যান্য জৈবিক কাজেও সহায়তা করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে। তাদের শক্তি উৎপাদনের একমাত্র উপায় হলো অবাত শ্বসন।
উপরিউক্ত বর্ণনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, উদ্দীপকের শ্বসন প্রক্রিয়াটি জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।