বাস্তুতন্ত্র : কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট পরিবেশে সজীব এবং নির্জীব উপাদানের সম্পর্ক ও পারস্পরিক ক্রিয়াকে বাস্তুতন্ত্র (Eco- system) বলে।
মিথষ্ক্রিয়া : প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং উভয় প্রকার জীব ও জড় পদার্থের মধ্যে শক্তি বন্ধু আদান-প্রদানকে বলা হয় মিথষ্ক্রিয়া। মিথষ্ক্রিয়ায় যথাযথ পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক বর্তমান ।
জড় উপাদান : বাস্তুতন্ত্রের প্রাণহীন সব উপাদান জড় বা অজীব উপাদান নামে পরিচিত। এই জড় উপাদান (ক) অজৈব এবং (খ) জৈব এ দুই ধরনের হয়। পানি, বায়ু এবং মাটিতে অবস্থিত খনিজ পদার্থ অর্থাৎ যেসব পদার্থ কোনো জীবদেহ থেকে আসেনি সেগুলো বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদান। আর সকল জীবের মৃত ও গলিত দেহাবশেষ জৈব উপাদান নামে পরিচিত
ভৌত উপাদান : যেসব উপাদান মিলে একটি অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ু গড়ে ওঠে সেসব উপাদানকে বলা হয় কোনো বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদান। সূর্যালোক, তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্প, বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ, উচ্চতা ইত্যাদি বাতুন্ত্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এগুলো বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদান ।
জীবজ উপাদান : পরিবেশের সব জীবন্ত অংশই বাস্তুতন্ত্রের জীবজ উপাদান। বাস্তুতন্ত্রে সব জীব যে ধরনের ভূমিকা রাখে তার ওপর ভিত্তি করে এসব জীবজ উপাদান (ক) উৎপাদক, (খ) খাদক এবং (গ) বিয়োজক এ তিনভাগে ভাগ করা হয়।
সবুজ উদ্ভিদ যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে তারা উৎপাদক নামে পরিচিত। যেসব প্রাণী উদ্ভিদ থেকে পাওয়া জৈব পদার্থ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে জীবনধারণ করে তারা খাদক বা ভক্ষক নামে পরিচিত। যেসব অণুজীবী মৃতদেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং মৃতদেহকে বিয়োজিত করে মাটি বা পানির সাথে মিশিয়ে দেয় তাদের বিয়োজক বলে।
খাদক স্তর : বাস্তুতন্ত্রে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ তিন স্তরের খাদক শ্রেণি রয়েছে।
উৎপাদক : উৎপাদক নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে পারে, অন্য কোনো জীবের ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভর করতে হয় না। স্বভোজী উদ্ভিদগুলোই উৎপাদ।
খাদ্যশিকল : একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত একজীব থেকে অপর জীবে শক্তি প্রবাহের ফলে উৎপাদক থেকে শুরু করে তৃতীয় স্তরের খাদক পর্যন্ত বিভিন্ন জীবের মধ্যে যে একটি শিকল সৃষ্টি হয় তাকে খাদ্যশিকল বলে।
শক্তি উৎপাদক থেকে ক্রমশ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্তরের খাদকদের মধ্যে শিকলের মতো স্থানান্তরিত হতে থাকে এবং খাদ্যশিকল গঠন করে। বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশিকল বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যথা:
১. শিকারজীবী খাদ্যশিকল: যে খাদ্যশিকলে খাদকগুলো শিকার ধরে খায় তাকে শিকারজীবী খাদ্যশিকল।
২. পরজীবী খাদ্যশিকল : পোষকদেহ থেকে যারা খাদ্য গ্রহণ করে তাদের পরজীবী খাদ্যশিকল।
৩. মৃতজীবী খাদ্যশিকল: জীবের মৃতদেহ যারা খাদ্যের উৎস হিসেবে বেছে নেয় তাদের মৃতজীবী খাদ্যশিকল বলে।
খাদ্যজাল : প্রকৃতিতে একটি বাস্তুতন্ত্রের জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো খাদ্যশিকল কার্যকরী না থেকে অনেক কয়টি খাদ্যশিকলে বিভক্ত দেখা যায়। অনেক খাদ্যশিকল বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা আন্তঃসম্পর্কযুক্ত অনেক খাদ্যশিকলকে একত্রে খাদ্যজাল বলে।
উদাহরণ হিসেবে কোনো একটি তৃণভূমির খাদ্যশিকলে ঘাস ইঁদুর, খরগোশ ও ঘাসফড়িং কর্তৃক ভক্ষিত হয়। ইঁদুর বাজপাখির দ্বারা অথবা সাপ দ্বারা ভক্ষিত হয়। সাপ আবার বাজপাখি দ্বারা ভক্ষিত হয়। ঘাসফড়িং ব্যাঙ অথবা পাখি এবং সাপ বাজপাখি দ্বারা ভক্ষিত হয়।
বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টিপ্রবাহ : উদ্ভিদ অজৈব বস্তু গ্রহণ করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে। তৃণভোজী প্রাণী এসব উদ্ভিদ খায় এবং পর্যায়ক্রমে মাংসাশী প্রাণীগুলো এসব তৃণভোজীদের খায়। জীবের মৃত্যুর পর বিয়োজক এদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে অজৈব বস্তুতে রূপান্তরিত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়। সবুজ উদ্ভিদ এসব অজৈব বস্তুগ্রহণ করে এবং পুনরায় খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করে থাকে। পুষ্টিদ্রব্যের এরূপ চক্রাকারে প্রবাহিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে পুষ্টিপ্রবাহ বলে।
বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ : বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রধান উৎস হলো সৌরশক্তি। এ শক্তি রূপান্তরিত হয়ে উৎপাদক থেকে বিভিন্ন খাদকদের মধ্যে সামান্তরিত হয়। রূপান্তরিত সৌরশক্তি এক জীবদেহ থেকে অন্য জীবদেহে স্থানান্তরকে শক্তিপ্রবাহ বলে।
কোনো বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক থেকে শক্তি প্রথম স্তরের খাদকে, প্রথম স্তরের খাদক থেকে দ্বিতীয় স্তরের খাদকে এবং দ্বিতীয় স্তরের খাদক থেকে তৃতীয় স্তরের খাদকে স্থানান্তরিত হয়। উৎপাদক থেকে সর্বোচ্চ খাদক পর্যন্ত শক্তি রূপান্তরের সময় শক্তি হ্রাস পায়। সৌরশক্তির সাহায্যে উদ্ভিদ প্রথম স্তরে যে পরিমাণ খাদ্য বা শক্তি উৎপন্ন করে তা ক্রমাগত প্রতি স্তরে কিছু হ্রাস পায়।
খাদ্যচক্র ছোট হলে তাতে শক্তির ব্যয় কম হবে। বিয়োজক যখন বিভিন্ন মৃত জীবে বিক্রিয়া ঘটায় তখন অজৈব পুষ্টিদ্রব্য পরিবেশে মুক্ত হয়ে পুষ্টিভাণ্ডারে জমা হয়, যা আবার সবুজ উদ্ভিদ কাজে লাগায়। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রে পুষ্টিদ্রব্য চক্রাকারে প্রবাহিত হয় এবং শক্তিপ্রবাহ একমুখী ।
ট্রফিক লেভেল : খাদ্যশিকলের প্রতিটি স্তরকে ট্রফিক লেভেল বলে। সে হিসেবে উৎপাদক, প্রথম স্তরের খাদক, দ্বিতীয় স্তরের খাদক ও চূড়ান্ত স্তরের খাদক প্রত্যেকেই এক একটি ট্রফিক লেভেল। বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক প্রথম বা সর্বনিম্ন ট্রফিক লেভেলের প্রতিনিধিত্ব করে।
কোনো খাদ্যশিকলের উৎপাদক বা সর্বনিম্ন ট্রফিক লেভেলে সূর্য থেকে যে শক্তি সংগৃহীত হয় পরবর্তী প্রতিটি ট্রফিক লেভেলে তার কিছু অংশ তাপ হিসেবে বেরিয়ে যায়। এজন্য খাদকস্তরে পর্যায়ক্রমিক ট্রফিক লেভেলে শক্তির পরিমাণ কমতে থাকে।
শক্তি পিরামিড : খাদ্যশিকলে যুক্ত প্রতিটি পুষ্টিস্তরের শক্তি সঞ্চয় ও স্থানান্তরের বিন্যাস ছককে শক্তি পিরামিড বলে। উৎপাদক পিরামিডের ভূমিতে এবং খাদক শীর্ষে অবস্থান করে। খাদ্যশিকল যত দীর্ঘ হবে ঊর্ধ্বতম ট্রফিক লেভেলে শক্তির পরিমাণ ততই কমতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে এসে কোনো শক্তিই অবশিষ্ট থাকবে না।
জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি : পৃথিবীতে বিরাজমান জীব, প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্রের সমষ্টিকে বলা হয় জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি । প্রতিটি প্রজাতি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য দিয়ে যেকোনো একটি প্রজাতি অন্যসব প্রজাতি থেকে ভিন্ন ও শনাক্তকরণযোগ্য।
আবার একই প্রজাতির সবাই হুবহু একই রকম নয়, কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্যে এরা পরস্পর পৃথক। অর্থাৎ একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মধ্যেও বৈচিত্র্য থাকে। জীববৈচিত্র্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ১. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species diversity), ২. বংশগতীয় বৈচিত্র্য (Genetical diversity) ও ৩. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem diversity)।
আন্তঃনির্ভরশীলতা : প্রকৃতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় জীবকুল একসাথে বাস করে একজন অপরজনের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাবকে আন্তঃনির্ভরশীলতা বা আন্তঃক্রিয়া বলে। পরিবেশ বিজ্ঞানী ওডাম বলেন যে, এ আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ক দুভাবে হতে পারে। যথা : ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া ও ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়া। যে আন্তঃক্রিয়াগুলোতে একটি জীব অপর একটি জীব দ্বারা উপকৃত বা উভয়ে উপকৃত হয়, সেসব আন্তঃক্রিয়াকে ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া বলে। মিউচুয়ালিজম ও কমেনসেলিজম এ ধরনের আন্তঃক্রিয়া। আর যেসব আন্তঃক্রিয়ায় একটি জীবের ক্ষতি অথবা উভয়ের ক্ষতি সেসব আন্তঃক্রিয়াকে ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়া বলে। শোষণ, প্রতিযোগিতা, অ্যান্টিবায়োসিস এ ধরনের আন্তঃক্রিয়া।
মিউচুয়ালিজম ও কমেনসেলিজম : কতগুলো জীবের আন্তঃক্রিয়ায় দেখা যায় উভয়ই উপকৃত হয়। এ ধরনের আন্তঃক্রিয়াকে মিউচুয়ালিজম বলে। আবার যদি আন্তঃক্রিয়ায় একটি জীব উপকৃত হয়ে অপরটির কোনো ক্ষতি না করে, তখন সে ধরনের আন্তঃক্রিয়াকে কমেনসেলিজম বলে।
অ্যান্টিবায়োসিস : একটি জীবের নিঃসৃত পদার্থ দ্বারা অন্য জীবের বৃদ্ধি, দমন বা মৃত্যু ঘটানোর প্রক্রিয়াকে অ্যান্টিবায়োসিস বলা হয়। অণুজীব জগতে এ ধরনের সম্পর্ক অনেক বেশি দেখা যায়। অ্যান্টিবায়োসিস প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত রাসায়নিক পদার্থকে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পেনিসিলিন হচ্ছে প্রথম উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক।
পরিবেশ সংরক্ষণ : সৌরশক্তি, বায়ু, সমুদ্রের পানি এগুলো প্রকৃতির অফুরন্ত সম্পদ। এদের প্রকৃত ক্ষয় অথবা অপচয় খুব একটা ঘটে না। কিন্তু মিঠাপানি, মাটি, বন্য গাছপালা ও প্রাণী ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে এগুলো কমে যাচ্ছে। এসব সম্পদগুলোর সংরক্ষণ করা প্রয়োজন । ক্ষয়িষ্ণু সম্পদগুলোর ব্যবহার একেবারে বন্ধ করা সংরক্ষণের উদ্দেশ্য নয় এবং তা সম্ভবও নয়। সুষ্ঠুভাবে এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাকৃতিক সম্পদের সুচিন্তিত ব্যবহার করা, সব রকম অপচয় বন্ধ করা এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সম্পদের পুনঃআবর্তন করাকে পরিবেশ সংরক্ষণ বলা হয় ।
হস্টোরিয়া : হস্টোরিয়া হচ্ছে একধরনের চোষক অঙ্গ যার মাধ্যমে স্বর্ণলতা আশ্রয়দাতা উদ্ভিদ থেকে তার খাদ্য সংগ্রহ করে।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ সিমবায়োসিস কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জীবজগতে বিভিন্ন প্রকার গাছপালা ও প্রাণীদের মধ্যে বিদ্যমান জৈবিক সম্পর্কগুলোকে সিমবায়োসিস বা সহঅবস্থান নামে জৈবিক সম্পর্কগুলোকে সিমবায়োসিস বা সহঅবস্থান নামে আখ্যায়িত করা যায়।
একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ পরপরাগায়নের জন্য কীটপতঙ্গের ওপর এবং বীজ বিতরণের জন্য পশুপাখির ওপর নির্ভরশীল। প্রাণিকুল শ্বসনক্রিয়া দ্বারা যে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করে সবুজ উদ্ভিদকুল সালোকসংশ্লেষণের জন্য তা ব্যবহার করে। আবার সবুজ গাছগুলো দিবাভাগে যে অক্সিজেন গ্যাস ত্যাগ করে তা শ্বসনের জন্য প্রাণিকুল ব্যবহার করে। তাছাড়া ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। এ সম্পর্কযুক্ত জীবগুলোকে সহঅবস্থানকারী বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল কাকে বলে?
উত্তর : পরজীবী উদ্ভিদ ও প্রাণী অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের চেয়ে বড় আকারের পোষকদেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পরজীবীর উপর আরেক ধরনের ক্ষুদ্রতর পরজীবী তার খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল হয়। এক্ষেত্রে খাদ্যশিকলের প্রথম ধাপে সবসময় সবুজ উদ্ভিদ নাও থাকতে পারে। এ ধরনের শৃঙ্খলকে পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল বলে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ অ্যান্টিবায়োসিস কাকে বলে?
উত্তর : একটি জীব কর্তৃক সৃষ্ট জৈব রাসায়নিক পদার্থের কারণে যদি অন্য জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বাধাপ্রাপ্ত হয় অথবা মৃত্যু ঘটে তখন সেই প্রক্রিয়াকে অ্যান্টিবায়োসিস বলে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ মিউচুয়ালিজম কাকে বলে?
উত্তর : একাধিক জীবের আন্তঃক্রিয়ায় উভয়ই উপকৃত হলে সে আন্তঃক্রিয়াকে মিউচুয়ালিজম বলে।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ বিভিন্ন জীবের মিথস্ক্রিয়া ও আন্তঃনির্ভরশীলতার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সহঅবস্থানকারী জীবগুলোর মধ্যে যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে তাকে মিথষ্ক্রিয়া বলে। মিথস্ক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী জীবগুলো পরস্পর আন্তঃনির্ভরশীল, কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যেমন, একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ পরপরাগায়নের জন্য কীটপতঙ্গের ওপর এবং বিতরণের জন্য পশুপাখির ওপর নির্ভরশীল। প্রাণিকুল শ্বসনক্রিয়া দ্বারা যে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ত্যাগ করে সবুজ উদ্ভিদকুল সালোকসংশ্লেষণের জন্য তা ব্যবহার করে। আবার সবুজ উদ্ভিদ দিবাভাগে যে অক্সিজেন ত্যাগ করে শ্বসনের জন্য প্রাণিকুল তা ব্যবহার করে। তাছাড়া ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। অতএব বলা যায় যে, পারস্পরিক সংযোগ ও নির্ভরশীলতাই জীবন ক্রিয়া পরিচালনার চাবিকাঠি।
প্রশ্ন ॥ ১॥ শব্দদূষণ কাকে বলা হয়?
উত্তর : শব্দ যখন দৈহিক ও মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে তখন তাকে শব্দদূষণ বলা হয় ।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ জীব সম্প্রদায় কাকে বলা হয়?
উত্তর : একটি নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে যেসব জীব জন্মায় ও বাস করে, এদের একত্রে জীব সম্প্রদায় বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ প্ল্যাঙ্কটন বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : পানিতে ভাসমান জীবদের প্ল্যাঙ্কটন বলে। প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় ক্ষুদ্ৰ উদ্ভিদকে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বলে। অন্যদিকে প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় ক্ষুদ্র প্রাণীকে জুয়োপ্ল্যাঙ্কটন বলে।
প্ৰশ্ন ॥ ৪ ॥ জৈব উপাদান কী?
উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ বিশ্লিষ্ট হয়ে যে ইউরিয়া ও হিউমাস তৈরি হয় সেগুলোই জৈব উপাদান ।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ ইকোসিস্টেম শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন?
উত্তর : ইকোসিস্টেম শব্দটি আর্থার জর্জ টান্সলি (Arthur George Tansley), (1871 – 1955) নামক একজন ব্রিটিশ পরিবেশ বিজ্ঞানী ১৯৩৫ সালে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ দ্বিতীয় স্তরের খাদক কাকে বলে?
উত্তর : যেসব খাদক প্রথম স্তরের খাদককে ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে, তাদের দ্বিতীয় স্তরের খাদক বলে। যেমন : ব্যাঙ, নেকড়ে ইত্যাদি।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ তৃতীয় স্তরের খাদক কাকে বলে?
উত্তর : যেসব খাদক দ্বিতীয় স্তরের খাদককে ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে, তাদের তৃতীয় স্তরের খাদক বলে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ একটি খাদ্যজালে সর্বপ্রথম কোন জীবজ উপাদানটির আধিক্য দেখা যায়?
উত্তর : একটি খাদ্যজালে সর্বপ্রথম উৎপাদকদের আধিক্য দেখা যায়।
প্রশ্ন ॥ ৯॥ খাদ্য ও খাদকের মধ্যকার সম্পর্ককে কী বলা হয়?
উত্তর : খাদ্য ও খাদকের মধ্যকার সম্পর্ককে খাদ্যশৃঙ্খল বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ একটি বাস্তুতন্ত্রে সকল জীব পরস্পরের সাথে কীভাবে সংযুক্ত থাকে?
উত্তর : একটি বাস্তুতন্ত্রে সকল জীব পুষ্টি চাহিদার দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১১॥ বাস্তুতন্ত্রে শক্তির মূল উৎস কী?
উত্তর : বাস্তুতন্ত্রে শক্তির মূল উৎস সূর্য।
প্রশ্ন ॥ ১২॥ সৌরশক্তি বাস্তুতন্ত্রে কোন কোন জীবন্ত উপাদানে সঞ্চিত হয়?
উত্তর : সৌরশক্তি বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক, খাদক ও বিয়োজক এসব জীবন্ত উপাদানে স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শক্তিপ্রবাহ একমুখী ।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ বাস্তুতন্ত্রে শক্তি আর পুষ্টিস্তর কী হারে প্রবাহিত হয়?
উত্তর : বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহিত হয় অচক্রাকারে অর্থাৎ একমুখী হারে আর পুষ্টিস্তর প্রবাহিত হয় চক্রাকারে।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ প্রাকৃতিক ভারসাম্য কাকে বলে?
উত্তর : পরিবেশের অন্তর্গত অজীব উপাদান এবং জীব সম্প্রদায় পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত হয়ে যে ভারসাম্য বজায় রাখে তাকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৬ ॥ সংরক্ষণ কাকে বলে?
উত্তর : যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাকে সংরক্ষণ বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ বাস্তুতন্ত্রে খাদকের সংখ্যা কোন স্তরে কমতে থাকে?
উত্তর : বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তরে খাদকের সংখ্যা কমতে থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এর ব্যবহার কমাতে হবে কেন?
উত্তর : মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। উপকারী জীবাণু, স্থলজ পোকামাকড় ধ্বংস করে, জলজ ও মাটির বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে। এজন্য জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং পাশাপাশি কমাতে হবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
প্রশ্ন ॥ ২॥ স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক কারা?
উত্তর : বাসতন্ত্রে বিদ্যমান উৎপাদক বলতে সবুজ উদ্ভিদকে বুঝায়। স্থলজ বাসতন্ত্রে উৎপাদক হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ ও রোহিনী জাতীয় উদ্ভিদ।
প্রশ্ন ॥ ৩॥ বিনষ্ট শক্তি কী ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : জীবের শক্তির ব্যয় হয় রেচনজনিত কারণে। এ ছাড়া জীব তার অন্যান্য জৈবনিক কার্যক্রমের জন্যও শক্তি হারায়। মৃত্যুর মাধ্যমে জীবের জীবন চক্রের পরিসমাপ্তি ঘটে ও শক্তি অপচয় হয়। এ শক্তিকে বিনষ্ট শক্তি বলে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ প্রাথমিক উৎপাদককে স্বভোজী বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : যেসব উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম তারাই প্রাথমিক উৎপাদক (Primary Producer)। নিজেদের খাদ্য প্রস্তুত সক্ষম বলে এই জাতীয় উৎপাদকরা স্বনির্ভর। তাই এরা স্বভোজী (Autotrophs) নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ॥ ৫ ॥ বাস্তুতন্ত্রে কোনো জীবই এককভাবে বেঁচে থাকতে পারে না কেন?
উত্তর : জীবের বেঁচে থাকার জন্য তার চারপাশের সমস্ত উপাদান নানাভাবে তাকে প্রভাবান্বিত করে। এই পৃথিবীতে সকল শক্তির উৎস সূর্যের আলো, সবুজ উদ্ভিদ- ই হচ্ছে বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক। সকল জীব পুষ্টি চাহিদার দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ প্রাকৃতিকভাবে পুকুরের ভারসাম্য কীভাবে বজায় থাকে?
উত্তর : পুকুরের পানিতে বসবাসকারী উৎপাদকেরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বিভিন্ন অজৈব উপাদানের সাহায্যে সালোকসংশেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন করে। প্রথম স্তরের খাদকেরা এই উৎপাদককে ভক্ষণ করে জীবনধারণ করে। দ্বিতীয় স্তরের খাদক অর্থাৎ ছোট মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি প্রথম স্তরের খাদককে ভক্ষণ করে। এরপর বড় মাছ, বক ইত্যাদি দ্বিতীয় স্তরের খাদককে ভক্ষণ করে। উৎপাদক ও খাদকরা মারা গেলে বিয়োজক এদের দেহের জটিল যৌগ ভেঙে সরল পদার্থে পরিণত করে প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে পুকুরের বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ কীভাবে ঘটে একটি প্রবাহ চিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর : একটি স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে শক্তিপ্রবাহ যেভাবে ঘটে নিচে প্রবাহ চিত্রে দেখানো হলো-
সবুজ উদ্ভিদ → ঘাসফড়িং → ব্যাঙ → সাপ → চিল
(উৎপাদক) (প্রথম স্তরের খাদক) (দ্বিতীয় স্তরের খাদক) (তৃতীয় স্তরের খাদক) (সর্বোচ্চ স্তরের খাদক)
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে যদি বড় মাছের সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে কী ঘটবে এবং কেন?
উত্তর : পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে যদি বড় মাছের সংখ্যা বেড়ে যায় তাহলে পুকুরে কোনো ছোট মাছ থাকবে না এবং ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্ল্যাংকটনের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে যাবে। ফলে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে যাবে এবং অক্সিজেনের অভাব হয়ে বড় মাছগুলো মরে যাবে।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ পরিবেশে কীভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল থাকে?
উত্তর : পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আলোকশক্তি আসে সূর্য থেকে। এ পদ্ধতিতে উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং মাটি থেকে পানি নিয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। প্রাণী শ্বাসকার্যের জন্য অক্সিজেন এবং খাবারের উৎস হিসেবে উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। আবার উদ্ভিদ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও পরাগায়নের জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ॥ ১০॥ অজীব উপাদান জীবের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাটি, পানি, বায়ু, আলো, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, জলবায়ু ইত্যাদি বিভিন্ন অজীব উপাদান বিভিন্নভাবে পরিবেশের প্রতিটি জীবের স্বভাব এবং বিস্তৃতিকে প্রভাবিত করে। এসব উপাদানের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে পরিবেশের একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোন ধরনের জীব উপাদান থাকবে। সুতরাং অজীব বা জড় উপাদান জীবের বেঁচে থাকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ অজীব ও জীব উপাদানের নির্ভরশীলতা একটি প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।
উত্তর : নিচে প্রবাহচিত্রের মাধ্যমে অজীব ও জীব উপাদানের নির্ভরশীলতার একটি রূপরেখা দেখানো হলো-
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ ব্যাকটেরিয়া ও শিম জাতীয় উদ্ভিদ কীভাবে একে অপরকে সাহায্য করে?
উত্তর : রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে অবস্থান করে গুটি তৈরি করে এবং বায়বীয় নাইট্রোজেনকে সেখানে সংবন্ধন করে। এই নাইট্রোজেন সহযোগী শিম উদ্ভিদকে সরবরাহ করে এবং বিনিময়ে ব্যাকটেরিয়া সহযোগী উদ্ভিদ থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্য পেয়ে থাকে। এইভাবেই ব্যাকটেরিয়া ও শিম জাতীয় উদ্ভিদ একে অপরকে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলে কী কী ক্ষতি হবে ?
উত্তর : গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলে-
i. সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে ও উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে।
ii. আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে।
iii. বনাঞ্চল ধ্বংস হবে।
iv. বিভিন্ন রোগ বালাই এর প্রভাবে ফসলের ক্ষতি হবে।
v. ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এর তীব্রতা বেড়ে যাবে।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কী ক্ষতি হয়?
উত্তর : মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলে-
i. মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়।
ii. উপকারী জীবাণু, স্থলজ পোকামাকড় ধ্বংস হয় ।
iii. জলজ ও মাটির বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ অজীব এবং জীব উপাদানসমূহের পারস্পরিক ক্রিয়ার দ্বারা বাস্তুন্ত্র পরিচালিত হয়– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবীতে জীবকুল (উদ্ভিদ ও প্রাণী) বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে বাস করে। একটি নির্দিষ্ট স্থানের জীব সম্প্রদায় ও তার পরিবেশের মধ্যে নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিরাজ করে এবং এদের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়া অজীব ও জীব উপাদান এ দুইয়ের মধ্যে আছে আন্তঃসম্পর্ক। জীব তার জীবনধারণের সব উপাদান পরিবেশ থেকে পেয়ে থাকে। জীব কর্তৃক গৃহীত ঐসব উপাদান জীবদেহে নানা ক্রিয়া- বিক্রিয়ার পর আবার পরিবেশে ফিরে যায়। এভাবে জীব ও জড় পরিবেশের মধ্যে চলে পদার্থের বিনিময়। আর এভাবে একটি এলাকার বাস্তুতন্ত্র পরিচালিত হতে থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১৬ ॥ মিউচুয়ালিজম কাকে বলে? একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝাও।
উত্তর : মিউচুয়ালিজম জীবের মধ্যে একটি সহাবস্থা সম্পর্ক। এ ধরনের সম্পর্কে উভয় উভয়ের দ্বারা উপকৃত হয়। লাইকেন মিউচুয়ালিজম বা মিথোজীবিতার একটি উদাহরণ। মিউচুয়ালিজম হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে বসবাসকারী একটি শৈবাল ও একটি ছত্রাক সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ লাইকেন গঠন করে। এখানে শৈবাল খাদ্য উৎপাদন করে ছত্রাকের পুষ্টি সাধনে সাহায্য করে এবং ছত্রাক পানি ও খনিজ লবণ আহরণ করে শৈবালকে সরবরাহ করে।
প্রশ্ন ॥ ১৭ ॥ লাইকেনের পুষ্টি পদ্ধতি কী ধরনের আলোচনা কর ।
উত্তর : লাইকেনের পুষ্টি মিউচুয়ালিজম বা মিথোজীবীয় ধরনের। শৈবাল ও ছত্রাকের সমন্বয়ে গঠিত দেহকে লাইকেন বলে। এক্ষেত্রে ছত্রাক খাদ্য প্রস্তুতির কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং শৈবাল সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করে তা নিজে ব্যবহার করে ছত্রাকে সরবরাহ করে।
প্রশ্ন ॥ ১৮ ॥ রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি পদ্ধতি কী ধরনের?
উত্তর : রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি পদ্ধতি মিউচুয়ালিজম প্রকৃতির। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে অবস্থা করে গুটি তৈরি করে এবং বায়বীয় নাইট্রোজেনকে সেখানে সংবন্ধন করে। এই নাইট্রোজেন সহযোগী শিম উদ্ভিদকে সরবরাহ করে এবং বিনিময়ে ব্যাকটেরিয়া সহযোগী উদ্ভিদ থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্য পেয়ে থাকে।
প্রশ্ন ॥ ১৯ ॥ স্বর্ণলতা উদ্ভিদের হস্টোরিয়ার কাজ কী?
উত্তর : স্বর্ণলতা উদ্ভিদে হস্টোরিয়া নামক চোষক অঙ্গ থাকে। এর মাধ্যমে এরা আশ্রয় দাতা উদ্ভিদ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে নিজে উপকৃত হয়। এটি জীবদের ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়ার শোষণের একটি উদাহরণ।
প্রশ্ন ॥ ২০ ॥ খাদ্যশিকল ও খাদ্যজালের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর ।
উত্তর : খাদ্যশিকল ও খাদ্যজানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ।
খাদ্যশিকল | খাদ্যজাল |
১. ছোট প্রাণী থেকে শুরু করে বড় প্রাণী পর্যন্ত শিকল আকারে শক্তি প্রবাহের যে সরল ধারাবাহিকতা দেখা যায়, তাকে বলা হয় খাদ্যশিকল। | ১. বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় প্রাণী দ্বারা পরস্পরের সম্পর্কযুক্ত সাথে অনেকগুলে খাদ্যশিকলকে একত্রে বলা হয় খাদ্যজাল। |
২. খাদ্যশিকল শুরু হয় ছোট প্রাণী দিয়ে আর এর সমাপ্তি ঘটে সবচেয়ে বড় প্রাণী দিয়ে। | ২. খাদ্যজাল শুরু হয় একটি খাদ্যশিকল দিয়ে আর এর সমাপ্তি ঘটে বেশ কয়েকটি খাদ্যশিকল দিয়ে। |
১. কোনটি মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল?
ক. ঘাস → হরিণ → বাঘ
খ. মৃতজীব → বিয়োজক → অ্যামিবা
গ. জুয়োপ্লাঙ্কটন → মাছ → বক
ঘ. সবুজ উদ্ভিদ → পাখি → শিয়াল
উত্তর: মৃতজীব → বিয়োজক → অ্যামিবা
২. কমেনসেলিজম এর মাধ্যমে প্রাণীরা-
i. সহযোগীদের মধ্যে একজন উপকৃত হয়
ii. সহযোগী সদস্য উপকৃত না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না
iii. সহযোগীদের উভয়ই উপকৃত হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
উপরের চিত্রের আলোকে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
৩. উপরিউক্ত চিত্রে কয়টি খাদ্যশৃঙ্খল আছে?
ক. ১ টি খ. ২টি
গ. ৩টি ঘ. 8 টি
উত্তর: ঘ. 8 টি
৪. উদ্দীপকের আলোকে দ্বিতীয় স্তরের খাদক কোনটি?
ক. ছোট মাছ খ. সাপ
গ. খরগোশ ঘ. ঘাস ফড়িং
উত্তর: খ. সাপ
৫. কমনসেলিজম অন্তর্ভুক্ত জীব কোনটি?
ক. ছত্রাক খ. সিম
গ. স্বর্ণলতা ঘ. রোহিনী
উত্তর: ঘ. রোহিনী
৬. বাস্তুতন্ত্রের জৈব উপাদান হলো–
ক. কার্বন ডাইঅক্সাইড, হিউমাস
খ. হিউমাস, ইউরিয়া
গ. নাইট্রোজেন, অক্সিজেন
ঘ. পটাসিয়াম, লৌহ
উত্তর: খ. হিউমাস, ইউরিয়া
৭. কোনটি জৈব জড় উপাদান?
ক. তাপমাত্রা খ. বিয়োজক
গ. হিউমাস ঘ. উৎপাদক
উত্তর: গ. হিউমাস
৮. মিউচুয়ালিজমে সহযোগীদের ক্ষেত্রে কোনটি ঘটে?
ক. একজন উপকৃত হয়
খ. উভয়েই উপকৃত হয়
গ. উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ঘ. একজন উপকৃত ও অন্যজন অপকৃত হয়
উত্তর: খ. উভয়েই উপকৃত হয়
৯. বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদকে কী বলা হয়?
ক. উৎপাদক
খ. প্রথম শ্রেণির খাদক
গ. দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক
ঘ. তৃতীয় শ্রেণির খাদক
উত্তর: ক. উৎপাদক
১০. সবুজ উদ্ভিদ কী জাতীয় খাদ্য প্ৰস্তুত করে?
ক. শর্করা খ. আমিষ
গ. স্নেহ ঘ. ভিটামিন
উত্তর: ক. শর্করা
১১. বাস্তুন্ত্রের জৈব উপাদান কোনটি?
ক. অক্সিজেন খ. ব্যাকটেরিয়া
গ. ইউরিয়া ঘ. কার্বন ডাই অক্সাইড
উত্তর: গ. ইউরিয়া
১২. নিচের কোনটি বিয়োজক?
ক. পেনিসিলিয়াম খ. TMV
গ. E. Coli ঘ. ক ও গ
উত্তর: ঘ. ক ও গ
১৩. বাস্তুতন্ত্রে সংযুক্ত প্রাণীর মৃতদেহ থেকে প্রাপ্ত জড়বস্তু উপাদান–
i. ইউরিয়া
ii. ক্যালসিয়াম
iii. উদ্ভিদের অঙ্গ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
১৪. গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ হলো–
i. CO2, CH4, O2
ii. CO, CH4, N2O
iii. CO, O2, N2O.
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii
১৫. কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কোন স্তরের খাদক ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
i. প্রথম স্তর
ii. দ্বিতীয় স্তর
iii. তৃতীয় স্তর
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii
১৬. সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে কারণ—
i. প্রচুর সূর্যালোক পায়
ii. পাতায় ক্লোরোফিল থাকে
iii. মাটি থেকে পানি গ্রহণ করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ১৭ ও ১৮ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
কিছু গ্যাসের অত্যধিক উৎপাদনের কারণে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে যাকে গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলে। এসব গ্যাসের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন ।
১৭. উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটির সাথে সম্পৃক্ত একটি গ্যাস হলো—
ক. হাইড্রোজেন খ. ক্লোরিন
গ. কার্বন ডাইঅক্সাইড ঘ. অক্সিজেন
উত্তর: গ. কার্বন ডাইঅক্সাইড
১৮. উদ্দীপকে সংশ্লিষ্ট গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিণাম কী হতে পারে?
i. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে
ii. উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে
iii. ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা বাড়বে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ১৯ ও ২০ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
জামাল সাহেব ১০ম শ্রেণির জীববিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বাসতন্ত্র সম্পর্কে পড়াতে গিয়ে পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন সজীব উপাদান যেমন : উৎপাদক, বিভিন্ন স্তরের খাদক ও বিয়োজক সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করেন।
১৯. জামাল সাহেবের আলোচিত পুকুরের বাস্তুসংস্থানের উৎপাদক হলো–
ক. ফাইটোপ্লাংকটন খ. ছোট মাছ
গ. জুয়োপ্লাংকটন ঘ. জলজ পতঙ্গ
উত্তর: ক.ফাইটোপ্লাংকটন
২০. উদ্দীপকে আলোচিত বাস্তুতন্ত্রের তৃতীয় স্তরের খাদক–
i. শোল, বোয়াল, বক
ii. বক, বোয়াল, ব্যাঙ
iii. ভেটকী, বক, শোল
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের খাদ্যশৃঙ্খল তিনটি লক্ষ কর এবং ২১ ও ২২ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
(P) ঘাস → হরিণ → বাঘ
(Q) ঘাস → ঘাস ফড়িং → কুনোব্যাঙ → সাপ → বাজপাখি
(R) মৃত জীবদেহ → ছত্রাক → কেঁচো
২১. P ও Q খাদ্যশৃঙ্খলে মিলের কারণ, উভয়ই–
i. পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খল
ii. শিকারজীবী খাদ্যশৃঙ্খল
iii. সম্পূর্ণ খাদ্যশৃঙ্খল
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
২২. শক্তি সবচেয়ে কম পাবে কে?
ক. হরিণ খ. কেঁচো
গ. সাপ ঘ. বাজপাখি
উত্তর: ঘ. বাজপাখি
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ২৩ ও ২৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
মি. করিম একজন কাঠ ব্যবসায়ী। তিনি প্রচুর পরিমাণে গাছ কেটে পরিবেশ দূষণ করছেন। এদিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কারণে বাংলাদেশ আজ হুমকীর সম্মুখীন।
২৩. মি. করিমের কৃতকার্যের ফলে—
i. মাটির গুণাগুণ নষ্ট হবে
ii. CO2 এর পরিমাণ বেড়ে যাবে
iii. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
২৪. উদ্দীপকে উল্লিখিত ধরনের হুমকি মোকাবিলায় –
i. পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে
ii. CO2, CO, CH4 গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস করতে হবে
iii. বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তিকে ব্যবহার করতে হবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
চিত্র থেকে নিচের ২৫ ও ২৬ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
২৫. চিত্রে কোনটি উৎপাদক?
ক. A খ. B
গ. C ঘ. D
উত্তর: গ. C
২৬. সৌরশক্তির সাহায্যে খাদ্য উৎপাদন করে—
i. C
ii. E
iii. A
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
২৭. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপায়—
i. জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা
ii. N2O এ উৎপাদন বাড়ানো
iii. পরিবেশনীতিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
আসিফ একদিন বাড়ির সামনের মাঠে ঘাসের উপর বসেছিল। সেখানে সে ব্যাঙ, ফড়িং, খরগোশ এবং আকাশে উড়ন্ত বাজপাখি দেখতে পেল।
২৮. আসিফের দেখা জীবগুলোর মধ্যে ১ম স্তরের খাদক–
i. ব্যাঙ
ii. ফড়িং
iii. খরগোশ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
২৯. মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে –
i. মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়
ii. উপকারী জীবাণু ও পোকা ধ্বংস হয়
iii. জলজ ও মাটির বাস্ততন্ত্র নষ্ট হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৩০. রাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়া শিম জাতীয় উদ্ভিদকে কী সরবরাহ করে?
ক. কার্বন খ. অক্সিজেন
গ. নাইট্রোজেন ঘ. হাইড্রোজেন
উত্তর: গ. নাইট্রোজেন
৩১. একটি ব্যাঙ এর ওজন ২০০ গ্রাম । সারাদিনে এটি কী পরিমাণ পোকামাকড় খেতে পারে?
ক. ৫০০ গ্রাম খ. ১০০ গ্রাম
গ. ১৫০ গ্রাম ঘ. ২০০ গ্রাম
উত্তর: ঘ. ২০০ গ্রাম
৩২. হরিণ এবং বাঘ কোন জীববৈচিত্র্যের অন্তর্ভুক্ত?
ক. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য
খ. বংশগতীয় বৈচিত্র্য
গ. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য
ঘ. পরিবেশগত বৈচিত্র্য
উত্তর: ক. প্রজাতিগত বৈচিত্র্য
৩৩. কোনটি শিকারজীবী শৃঙ্খল?
ক. মৃতজীবী → বিয়োজক → অ্যামিবা
খ. গোলপাতা → হরিণ → বাঘ
গ. শেওলা → মাছ → চিল
ঘ. মরিচ গাছ → পাখি → হাঙ্গর
উত্তর: খ. গোলপাতা → হরিণ → বাঘ
৩8. কোন প্রাণীগুলো প্রকৃতির জঞ্জাল সাফ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে?
ক. কাক, শালিক, পেঁচা
খ. শকুন, কাক, হায়েনা
গ. বক, ময়না, কাক
ঘ. শকুন, পেঁচা, মুরগি
উত্তর: খ. শকুন, কাক, হায়েনা
৩৫. “একটি গাছের মধ্যে একটি পাখির বাসা”— এদের মধ্যে কোন ধরনের আন্তঃক্রিয়া বিদ্যমান?
ক. মিউচুয়ালিজম খ. কমেনসেলিজম
গ. শোষণ ঘ. প্রতিযোগিতা
উত্তর: ক. মিউচুয়ালিজম
৩৬. লাইকেনে সহাবস্থান করে–
ক. ছত্রাক, ব্যাক্টেরিয়া
খ. ছত্রাক, শৈবাল
গ. পোষক, ব্যাকটেরিয়া
ঘ. শৈবাল, ব্যাক্টেরিয়া
উত্তর: খ. ছত্রাক, শৈবাল
৩৭. ব্যাঙ কোন স্তরের খাদক?
ক. প্রথম খ. দ্বিতীয়
গ. তৃতীয় ঘ. সর্বোচ্চ
উত্তর: খ. দ্বিতীয়
৩৮. কোনটি কার্বোহাইড্রেট তৈরি করতে সক্ষম?
ক. ফাইটোপ্লাঙ্কটন খ. রাইজোবিয়াম
গ. মাশরুম ঘ. ঘাস ফড়িং
উত্তর: ক. ফাইটোপ্লাঙ্কটন
৩৯. একটি বড় আমগাছে কুমড়া গাছ জড়িয়ে আছে। এটি কীসের উদাহরণ?
ক. মিউচুয়ালিজম খ. কমেনসেলিজম
গ. প্রতিযোগিতা ঘ. অ্যান্টিবায়োসিস
উত্তর: খ. কমেনসেলিজম
৪০. ছাগল কোন শ্রেণির খাদক?
ক. সর্বোচ্চ খ. তৃতীয়
গ. দ্বিতীয় ঘ. প্রথম
উত্তর: ঘ. প্রথম
৪১. যে ত্রিমাত্রিক বস্তুর শীর্ষদেশ সরু তাকে কী বলে?
ক. বাস্তুতন্ত্র খ. খাদ্যজাল
গ. পিরামিড ঘ. খাদ্যশৃঙ্খল
উত্তর: গ. পিরামিড
৪২. প্রথম শ্রেণির খাদক কোনটি?
ক. বাঘ খ. সাপ
গ. শিয়াল ঘ. হরিণ
উত্তর: ঘ. হরিণ
৪৩. ধাঙর কোনটি?
ক. গরু খ. ব্যাঙ
গ. বাঘ ঘ. শকুন
উত্তর: ঘ. শকুন
৪৪. “কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে এবং কাকের দ্বারাই ডিম ফোটায়”– কোন ধরনের আন্তঃক্রিয়া?
ক. প্রতিযোগিতা খ. অ্যান্টিবায়োসিস
গ. কমেনসেলিজম ঘ. শোষণ
উত্তর: ঘ. শোষণ
৪৫. ঋণাত্মক আন্তঃক্রিয়াকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
ক. ২ খ. ৩
গ. ৪ ঘ. ৫
উত্তর: খ. ৩
৪৬. নিচের কোন উদ্ভিদে শোষণ ঘটে?
ক. স্বর্ণলতা খ. রোহিনী
গ. রাইজোবিয়াম ঘ. শৈবাল
উত্তর: ক. স্বর্ণলতা
৪৭. হস্টোরিয়া দেখা যায় কোন উদ্ভিদে?
ক. পান খ. ছত্রাক
গ. শৈবাল ঘ. স্বর্ণলতা
উত্তর: ঘ. স্বর্ণলতা
৪৮. বাস্তুতন্ত্রে খাদ্যশিকল —
i. প্রতিটি স্তরে শক্তি অপচয় হয়
ii. ছোট হলে শক্তি অপচয় কম হয়
iii. বড় হলে শক্তি অপচয় বেশি হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৯. বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদান হলো—
i. হিউমাস
ii. সূর্যালোক
iii. বায়ুর চাপ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৫০. মৃতজীব থেকে খাদ্য গ্রহণ করে –
i. সায়ানোব্যাকটেরিয়া
ii. ব্যাকটেরিয়া
iii. ভাইরাস
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. i ও iii ঘ. ii ও iii
উত্তর: খ. ii
প্রশ্ন–১: নিচের ছকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. বিয়োজক কী?
খ. খাদ্যজাল কী? বুঝিয়ে লেখ ।
গ. উপরের খাদ্যজালের কোন খাদ্যশৃঙ্খলটিতে সবচেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় হয়, কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উপরিউক্ত খাদ্যজালে ছোট পাখির বিলুপ্তি ঘটলে বান্ত্রের কী পরিণতি ঘটবে তা বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিয়োজক হলো সেসব অতি ক্ষুদ্র জীব বা অণুজীব (ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া) যারা মৃত জীবদেহের পচন ঘটিয়ে পুষ্টি লাভ করে।
খ. খাদ্যজাল হলো বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা আন্তঃসম্পর্কযুক্ত অনেকগুলো খাদ্যশৃঙ্খল।
বাস্তুসংস্থানে অনেকগুলো খাদ্যশৃঙ্খল বিভিন্ন প্রজাতির দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। স্থলজ ও জলজ উভয় পরিবেশে অনেকগুলো খাদ্যশৃঙ্খল নিয়ে খাদ্যজাল তৈরি হয়।
গ. উপরের খাদ্যজালের সবচেয়ে বড় খাদ্যশৃঙ্খলটি হলো:
সবুজ উদ্ভিদ → সবুজ পোকা → মাংসাশী পতঙ্গ → ছোট পাখি → শিয়াল।
তাই এই খাদ্যশৃঙ্খলটিতেই সবচেয়ে বেশি শক্তি ব্যয় হয় । কারণ এ শৃঙ্খলটিতে সর্বোচ্চ ৫টি ধাপ আছে, যা উদ্দীপকের খাদ্যজালের অন্যান্য শৃঙ্খল থেকে বেশি।
আমরা জানি, খাদ্যশৃঙ্খল যত ছোট হয় শক্তি তত কম ব্যয় হয় এবং খাদ্যশৃঙ্খল যত বড় হয় শক্তি বেশি ব্যয় হয়। উক্ত শৃঙ্খলটির উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদ থেকে সবুজ পোকা যতটা শক্তি গ্রহন করে তার শরীরে ততটা শক্তি জমা হয় না। আবার দ্বিতীয় স্তরের খাদক মাংসাশী পতঙ্গ সবুজ পোকার দেহ থেকে যে পরিমাণ শক্তি গ্রহণ করে তার কিছুটা অপচয় হয়ে যায়। এভাবে তৃতীয় স্তরের খাদক ছোট পাখি যখন মাংসাশী পতঙ্গকে খাদ্য হিসেবে শক্তি গ্রহণ করে তখন সেখানেও কিছু শক্তির অপচয় ঘটে। আবার সর্বোচ্চ খাদক শেয়াল যখন ছোট পাখিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেখানেও কিছু শক্তির অপচয় হয়।
সুতরাং দেখা যায় যে, এ খাদ্যশৃঙ্খলটিতে খাদ্যস্তরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সর্বোচ্চ খাদকে শক্তি পৌঁছাতে মোট শক্তির ব্যয় বা অপচয়ও সবচেয়ে বেশি হয় ।
ঘ. উপরিউক্ত খাদ্যজালে ছোট পাখির বিলুপ্তি ঘটলে বাতুন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং বিপর্যয় দেখা যাবে।
একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হয় সেই বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক ও খাদকদের আন্তঃসম্পর্কের ওপর। প্রথমত, ছোট পাখিগুলো সবুজ পোকা ও মাংসাশী পতঙ্গগুলো খেত। ছোট পাখিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে সবুজ পোকা ও মাংসাশী পতঙ্গগুলোর কোনো খাদক না থাকার কারণে এদের সংখ্যা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সবুজ উদ্ভিদ ও ফসলাদির খাদক বেড়ে যাবে এবং উৎপাদকের সংখ্যার হ্রাস ঘটবে। ফলে খরগোশ এবং শামুকের খাদ্যাভাব দেখা দিবে এবং একসময় এদের বিলুপ্তি ঘটবে এই বাস্তুতন্ত্র থেকে ।
দ্বিতীয়ত, শিয়াল এই বাস্তুতন্ত্রের গৌণ খাদক। এই খাদ্যশৃঙ্খলে শিয়াল হচ্ছে ছোট পাখি ও খরগোশের খাদক। ছোট পাখি ও খরগোশের যদি বিলুপ্তি ঘটে তাহলে খাদ্যাভাবে শেয়ালেরও বিলুপ্তি ঘটবে এই বাস্তুতন্ত্র থেকে ।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, একটি বাস্তুতন্ত্রের খাদশৃঙ্খলের কোথাও যদি বিশৃঙ্খলা ঘটে তাহলে সে বাস্তুতন্ত্রের মাঝপথে থেমে যাবে, ফলশ্রুতিতে প্রাণীকুল ধ্বংস হবে এবং প্রাণীকুলের বিলুপ্তি ঘটবে।
প্রশ্ন–২: নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?
খ. কমেনসেলিজম কী? বুঝিয়ে লেখ।
গ. চিত্রে তাপমাত্রা ভিন্নতার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রে প্রক্রিয়াটির প্রতিক্রিয়া পরিবেশে কী প্রভাব বিস্তার করে বিশ্লেষণ কর ।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবীতে বিরাজমান জীবসমূহের প্রাচুর্য ও ভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বলে।
খ. কমনসেলিজম এক ধরনের আন্তঃনির্ভরশীল ধনাত্মক আন্তঃক্রিয়া । কমেনসেলিজমে দুটি সহযোগীর মধ্যে একজন মাত্র উপকৃত হয়। অন্য সহযোগী সদস্য উপকৃত না হলেও কখনো ক্ষতিগস্ত হয় না, যেমন রোহিনী উদ্ভিদ মূলের সাহায্যে নিজেকে মাটিতে আবদ্ধ করে এবং অন্য বড় উদ্ভিদে আরোহণ করে উপরে উঠে, এখানে রোহিনী উদ্ভিদ খাদ্যের জন্য আশ্রয় দানকারী উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে না এবং তার কোনো ক্ষতিও করে না ।
গ. উদ্দীপকের চিত্রটি হলো একটি গ্রিনহাউসের।
শীতপ্রধান দেশে পরিবেশের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য গাছপালাকে গ্রিনহাউসের মধ্যে লাগানো হয়। এর ফলে সূর্যের আলো কাচের ঘরের মধ্যে ঢুকতে পারে। ঘরের ভেতরে গাছগুলো সূর্যের আলোতে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করা খাদ্য তৈরি করে বেঁচে থাকতে পারে। সূর্যের আলোতে ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রা থেকে বেশি থাকে। কাচ তাপ কুপরিবাহী বলে বাইরের ঠাণ্ডা ভেতরে ঢুকতে পারে না, ভেতরের গরমও বাইরে বের হতে পারে না। ফলে বাইরের তাপমাত্রা 10° সে. থাকলেও ঘরের তাপমাত্রা থাকে 25° সে. ।
একারণেই কাচের ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ও বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রার ভিন্নতা দেখা যায় ।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্রটি একটি গ্রিনহাউসের।
পৃথিবীকে একটি গ্রিন হাউসের সাথে তুলনা করা যায়। পৃথিবীকে ঘিরে এর চারপাশে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত আছে CO2 সহ বেশ কয়েকটি গ্যাস যাদের বলা হয় গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্রিনহাউসের কাচের দেওয়াল যেভাবে ভেতরের তাপ বাইরে বিকিরণে বাধা সৃষ্টি করে ঠিক সেভাবে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে শোষণ করে আবার পৃথিবীর পৃষ্ঠে পুনর্বিকিরিত করে দেয়। ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিনে দিনে উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে। একে বলা হয় গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ।
ব্যাপকহারে বনভূমি নিঃশেষ, শিল্প কলকারখানা স্থাপন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাতাসে CO2 গ্যাসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বায়ুমণ্ডলে যতই এই গ্যাস বাড়ছে ততই গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্রিনহাউস এফেক্ট এর কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ফলে উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে, আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। এর ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হবে, বিভিন্ন রোগবালাই এর প্রভাবে ফসলের ক্ষতি হবে, ঝড় জলোচ্ছ্বাস এর তীব্রতা বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বাড়ছে।
এভাবে উদ্দীপকের প্রক্রিয়াটির অনুরূপ প্রতিক্রিয়া পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
প্রশ্ন – ৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. মৃতজীবী খাদ্যশিকল কাকে বলে?
খ. খাদ্যজাল বলতে কী বুঝায়?
গ. উপরের প্রাণীগুলো কোনটি কোন স্তরের খাদক? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের প্রথম জীবটির অনুপস্থিতিতে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটবে – ব্যাখ্যা কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জীবের মৃতদেহ থেকে শুরু হয়ে একাধিক খাদ্যস্তরে বিন্যস্ত খাদ্যশিকলকে মৃতজীবী খাদ্যশিকল বলে ।
খ. খাদ্যজাল বলতে কোনো বাস্তুতন্ত্রে একাধিক খাদ্যশিকলের সমন্বয়কে বোঝায় ৷
অধিকাংশ বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশিকলে একই খাদককে বিভিন্ন খাদ্যশিকলে স্থান পেতে দেখা যায়। এভাবে বেশ কয়েকটি খাদ্যশিকল একত্রিত হয়ে একটি জালের মতো গঠন তৈরি করে। একে খাদ্যজাল বলে।
গ. উদ্দীপকের প্রাণীগুলো স্থলজ ও পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশিকল।
স্থলজ খাদ্যশিকলটিতে ঘাস উৎপাদক। কারণ ঘাস সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করে। ঘাস ফড়িং প্রথম স্তরের প্রাণী কারণ এরা উৎপাদক ঘাসকে ভক্ষণ করে। ব্যাঙ দ্বিতীয় স্তরের খাদক কারণ এরা ঘাসফড়িং ভক্ষণ করে। সাপ তৃতীয় স্তরের খাদক কিন্তু বাজপাখি সর্বোচ্চ স্তরের খাদক কারণ এরা দ্বিতীয় ও তৃতীয় উভয় স্তরের প্রাণীকে ভক্ষণ করে।
জলজ খাদ্যশিকলটিতে জুয়োপ্লাংকটন ও মশার শুককীট প্রথম স্তরের খাদক কারণ এরা জলজ উদ্ভিদকে খায়। মাছ দ্বিতীয় স্তরের খাদক কারণ এরা জুয়োপ্লাংকটন ও মশার শুককীট খায়। সাপ তৃতীয় স্তরের খাদক কিন্তু বাজপাখী তৃতীয় স্তর ও সর্বোচ্চ স্তরের খাদক কারণ এরা মাছ ও সাপকে ভক্ষণ করে।
ঘ. উদ্দীপকের ১ম জীবটি ঘাস। এর অনুপস্থিতিতে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটবে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নির্ভর করে সেই বাস্তুতন্ত্রে উৎপাদক ও খাদকের আন্তঃসম্পর্কের ওপর। শক্তি প্রবাহের মূল উৎস সূর্য। এই শক্তি উৎপাদক, খাদক (১ম স্তর, ২য় স্তর, ৩য় স্তর) ও বিয়োজকে প্রবাহিত হয়। বাস্তুতন্ত্রে এ প্রক্রিয়াতেই খাদ্যের মাধ্যমে শক্তি প্রবাহিত হয়। উৎপাদক অনুপস্থি থাকলে খাদ্যশিকল অসমাপ্ত থেকে যায়।
উৎপাদক যদি খাদ্য উৎপাদন না করে তবে অন্যান্য স্তরে খাদ্য প্রবাহিত হতে পারবে না। ফলে ১ম স্তর, ২য় স্তর, ৩য় স্তরে বা সর্বোচ্চ স্তরে খাদ্য যেতে পারবে না। ফলে সমস্ত শক্তিরই বিনাশ ঘটবে। সুতরাং জুয়োপ্লাঙ্কটন- এ শক্তি যাবে না বা প্রবাহিত হবে না যদি উৎপাদক অনুপস্থিত থাকে ।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা বোঝা যায় যে, উদ্দীপকের প্রথম জীব ঘাসের অনুপস্থিতিতে বাতুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটবে।
প্রশ্ন–৪: নিচের তথ্যের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
১. ফাইটোপ্লাঙ্কটন → ছোট মাছ → বড় মাছ
২. শৈবাল → ছোট মাছ → বড় মাছ → মানুষ
৩. ফাইটোপ্লাঙ্কটন → জুয়োপ্লাঙ্কটন → ছোট মাছ → বড় মাছ → বাজপাখি
ক. খাদ্যজাল কী?
খ. মিউচুয়ালিজম বলতে কী বোঝায়?
গ. ২নং খাদ্যশৃঙ্খলে পুষ্টিপ্রবাহ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ১নং হতে ৩নং পর্যন্ত খাদ্যশৃঙ্খলে শক্তি অপচয়ে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়— তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. খাদ্যজাল হলো কোনো বাস্তুতন্ত্রে একাধিক খাদ্যশিকলের সমন্বয় ।
খ. একাধিক জীবের আন্তঃক্রিয়ায় উভয়ই উপকৃত হলে সে আন্তঃক্রিয়াকে মিউচুয়ালিজম বলে। যেমন— একটি শৈবাল ও একটি ছত্রাক সহাবস্থান করে লাইকেন গঠন করে। ছত্রাক বায়ু থেকে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ এবং উভয়ের ব্যবহারের জন্য খনিজ লবণ সংগ্রহ করে। অপরদিকে শৈবাল তার ক্লোরোফিলের মাধ্যমে নিজের জন্য ও ছত্রাকের জন্য শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।
গ. ২নং খাদ্যশৃঙ্খল হলো, শৈবাল→ ছোট মাছ → বড় মাছ → মানুষ। এ খাদ্যশৃঙ্খলে শৈবাল থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত পুষ্টি প্রবাহিত হয়। নিচে এ পুষ্টিপ্রবাহটি ব্যাখ্যা করা হলো ।
শৈবাল উৎপাদক সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তু করে। শৈবালকে ছোট মাছ সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে শৈবালের দেহের সঞ্চিত পুষ্টি ছোট মাছের দেহে সঞ্চালিত হয়। বড়মাছ আবার ছোটমাছকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে সে পুষ্টি গ্রহণ করে। এই পুষ্টি আবার মানুষের দেহে সঞ্চালিত হয় যখন মানুষ খাদক হিসেবে বড় মাছকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
মানুষের মৃত্যুর পর বিয়োজকগুলো আবার মৃতদেহকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে অজৈব বস্তুতে রূপান্তরিত করে পরিবেশে পুষ্টি ফিরিয়ে দেয়। সবুজ উদ্ভিদ যেমন— শৈবাল জাতীয় উৎপাদক এসব অজৈব বস্তু মাধ্যমে পুষ্টি গ্রহণ করে এবং পুনরায় খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করে। এভাবে পুষ্টিদ্রব্য চক্রাকারে প্রবাহিত হয়।
উপরিউক্ত প্রক্রিয়ায় ২নং খাদ্যশৃঙ্খলে পুষ্টিপ্রবাহ চলে ।
ঘ. ১নং হতে ৩নং পর্যন্ত খাদ্যশৃঙ্খলে শক্তি অপচয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
খাদ্যশৃঙ্খলের এক স্তর থেকে অপর স্তরে শক্তি প্রবাহকালে শ্বসন, তাপ উৎপাদন ইত্যাদি কারণে প্রচুর শক্তি ব্যয় হয়। তাই খাদ্যশৃঙ্খলে স্তরের সংখ্যা যত বেশি হয় তত বেশি শক্তির অপচয় হয়। ফলে খাদ্যশৃঙ্খল ছোট হলে তাতে শক্তির ব্যয় সেই অনুপাতে কম হবে।
উদ্দীপকের ৩নং খাদ্যশৃঙ্খলটি বড়। এখানে ৫টি খাদ্যস্তর রয়েছে। ফাইটোপ্লাংক্টন থেকে জুয়োপ্লাংক্টন, যা শক্তি সঞ্চয় করছে, উদ্ভিদ দেহে অল্প অপচয় বা ব্যয় বাদে তার প্রায় পুরোটাই ভক্ষণের মাধ্যমে বড় মাছ থেকে পাচ্ছে বাজপাখি। ৩ বার বিভিন্ন খাদ্যস্তরে শক্তির স্থানান্তর ঘটে এবং প্রতিটি স্তরের শ্বসন, তাপশক্তি উৎপাদন ইত্যাদি কারণে শক্তি ব্যয় হচ্ছে। এখানে ফাইটোপ্লাংক্টন যে পরিমাণ সৌরশক্তি খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেহে শক্তির সংবন্ধন করেছেন, প্রতি স্তরে শক্তি হারানোর ফলে তার অল্প পরিমাণই ছোট মাছ থেকে বড় মাছ পায়।
২নং খাদ্যশৃঙ্খলাটি তুলনামূলক ছোট। এতে ৪টি খাদ্যস্তর রয়েছে। পক্ষান্তরে প্রথম খাদ্যশৃঙ্খলটি সবচেয়ে ছোট। এখানে ৩টি খাদ্যস্তর রয়েছে। কাজেই মাত্র দুইবার শক্তি স্থানান্তর হওয়ায় শক্তির অপচয় কম হবে।
উপরিউক্ত তুলনামূলক আলোচনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১নং হতে ৩নং পর্যন্ত খাদ্যশৃঙ্খলের শক্তির অপচয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
প্রশ্ন – ৫: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. বাস্তুসংস্থান কী?
খ. জুয়োপ্লাঙ্কটন বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের X চিহ্নিত অংশের জীবগুলোর সমন্বয়ে কীভাবে খাদ্যশৃঙ্খল গঠিত হবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. M অংশে নির্দেশিত জীবের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খল অসম্পূর্ণ যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জীব সম্প্রদায়ের সাথে পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কই হলো বাস্তুসংস্থান।
খ. জুয়োপ্ল্যাংকটন বলতে পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীকে বোঝায়। জুয়োপ্ল্যাংকটন সাধারণত আণুবীক্ষণিক প্রাণী। এরা উৎপাদক ভক্ষণ করে বেঁচে থাকে। জলজ বাস্তুতন্ত্রে এদের প্রথম স্তরের খাদক বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে X চিহ্নিত অংশের জীবগুলোর সমন্বয়ে একটি মৃতজীবী খাদ্যশৃঙ্খল গঠিত হবে ।
জীবের মৃতদেহ থেকে শুরু হয়ে যদি কোনো খাদ্যশৃঙ্খল একাধিক খাদ্যস্তরে বিন্যস্ত হয় তবে সেরূপ শিকলকে বলা হয় মৃতজীবী খাদ্যশিকল। এরূপ শিকল বাস্তুতন্ত্রের যাবতীয় মিথষ্ক্রিয়া বা আন্তঃসম্পর্কের অংশমাত্র তৈরি করে। পরজীবী ও মৃতজীবী খাদ্যশিকল সবসময়ই অসম্পূর্ণ থাকে।
কারণ এখানে কোনো উৎপাদক নেই । এই উভয় প্রকার খাদ্যশিকল তাদের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য শিকারকারী খাদ্যশিকলের প্রথম এক বা একাধিক স্তরের ওপর নির্ভরশীল।
উদ্দীপকে X খাদ্যশিকলটি হলো :
মরা ইঁদুর → ছত্রাক → কেঁচো, যা মৃতজীবী খাদ্যশিকল।
এভাবে X চিহ্নিত অংশের জীবগুলোর সমন্বয়ে মৃতজীবী খাদ্যশিকল গঠিত হবে।
ঘ. ছকের M অংশে নির্দেশিত জীবের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খল একটি পরজীবী খাদ্যশিকল। এ খাদ্যশিকলটিকে নিম্নরূপে দেখানো যায় ৷
মানুষ → মশা → ডেঙ্গু ভাইরাস
পরজীবী খাদ্যশিকলে পরজীবী উদ্ভিদ ও প্রাণীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের চেয়ে বড় আকারের শোষকদেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। উদ্দীপকের খাদ্যশিকলে দেখা যাচ্ছে, মানুষের ওপর মশা আবার মশার ওপর ডেঙ্গু ভাইরাস, এভাবে একটি পরজীবীর ওপর আরেক ধরনের ক্ষুদ্রতর পরজীবী খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। আবার দেখা যাচ্ছে, শিকলটিতে কোনো উৎপাদক তথা সবুজ উদ্ভিদ নেই। এজন্য এ শিকলটি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত পরজীবী খাদ্যশৃঙ্খলটি অসম্পূর্ণ। কারণ এখানে কোনো উৎপাদক নেই। এই প্রকার খাদ্যশিকল তাদের কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য শিকারজীবী খাদ্যশিকলের এক বা একাধিক স্তরের ওপর নির্ভরশীল।
অতএব, উপরিউক্ত যুক্তিসমূহ বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, M অংশে নির্দেশিত জীবের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খল অসম্পূর্ণ ।
প্রশ্ন–৬ : নিচের তথ্যের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
(i) ছোট মাছ → বড় মাছ → বাজপাখি
(ii) জুয়োপ্লাঙ্কটন → ছোট মাছ
(iii) শৈবাল → জুয়োপ্লাঙ্কটন → বড় মাছ → বাজপাখি
ক. বাস্তুতন্ত্র কী?
খ. বাস্তুতন্ত্রে অজৈব উপাদানসমূহের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
গ. (i) নং খাদ্যশিকলটি একটি অসম্পূর্ণ খাদ্যশিকল- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. (ii) ও (iii) নং খাদ্যশিকলের কোনটিতে শক্তির অপচয় কম হয় বলে মনে হয়— যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর।
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বাস্তুতন্ত্র হলো প্রাকৃতিক পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং উভয় প্রকার জীব ও জড় পদার্থের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক ।
খ. যেসব পদার্থ কোনো জীবদেহ থেকে আসেনি বরং জীবের উদ্ভবের আগেই পরিবেশে ছিল সেগুলো বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদান । যেমন : ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, লৌহ, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদি। আবার পানি, বায়ু এবং মাটি ইত্যাদিও বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদান । এসব অজৈব উপাদান না থাকলে বাস্তুতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটতো। সুতরাং বাস্তুতন্ত্রে অজৈব উপাদানসমূহের প্রয়োজনীয়তা অনেক।
গ. উল্লিখিত (i) নং খাদ্যশিকলটি হলো—
ছোট মাছ → বড় মাছ → বাজপাখি; যা একটি শিকারজীবী এবং অসম্পূর্ণ খাদ্যশিকল।
যখন শক্তি উৎপাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের খাদকদের মধ্যে প্রবাহিত হয়, তখন সেই প্রবাহকে একসাথে খাদ্যশিকল বলা হয়। এর সম্পূর্ণতা উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে।
অর্থাৎ যেকোনো বাস্তুতন্ত্রের জীব উপাদানগুলোর মধ্যে প্রথমে কাজে নামে উৎপাদক তথা সবুজ উদ্ভিদ। তারা খাদ্য তৈরি না করলে তৃণভোজী প্রাণী ও মাংসাশী প্রাণীরা খাদ্য সংকটে পড়ে মারা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে খাদ্যশিকলটি সম্পূর্ণ হয় না। কাজেই খাদ্যশিকলের প্রথম ধাপে সবুজ উদ্ভিদ বা উৎপাদক না থাকলে তা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
উদ্দীপকের (i)নং খাদ্যশিকলটি একটি শিকারজীবী খাদ্যশিকল যা শুরু হয়েছে ছোট মাছ থেকে যা বাস্তুতন্ত্রের প্রথম বা দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এর প্রথম ধাপে কোনো সবুজ উদ্ভিদ বা শক্তি উৎপাদক নেই ৷
অর্থাৎ এ শিকলে সালোকসংশ্লেষণ ও শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুপস্থিত । কাজেই শিকলটি অসম্পূর্ণ।
ঘ. (ii) নং ও (iii) নং খাদ্যশিকলের মধ্যে (ii) শৃঙ্খলটিতে শক্তির অপচয় কম হবে।
খাদ্যশৃঙ্খলের এক স্তর থেকে অপর স্তরে শক্তি প্রবাহকালে শ্বসন, তাপ উৎপাদন ইত্যাদি কারণে প্রচুর শক্তি ব্যয় হয়। তাই খাদ্যশৃঙ্খলে স্তরের সংখ্যা যত বেশি তত বেশি শক্তির অপচয় হয়। খাদ্যশৃঙ্খল ছোট হলে তাতে শক্তির ব্যয় সেই অনুপাতে কম হয় ।
উদ্দীপকে (ii) নং খাদ্যশৃঙ্খলটি ছোট। মাত্র দুইটি খাদ্যস্তরে একবার শক্তি স্থানান্তর হওয়ায় শক্তির অপচয় কম হবে। পক্ষান্তরে (iii) নং খাদ্যশৃঙ্খলটি তুলনামূলকভাবে বড়, এখানে চারটি খাদ্যস্তরে তিনবার শক্তির স্থানান্তর ঘটে এবং প্রতিটি স্তরের শ্বসন, তাপশক্তি উৎপাদন ইত্যাদি কারণে অনেক বেশি পরিমাণ শক্তি অপচয় হচ্ছে।
এখানে, শৈবাল যে পরিমাণ সৌরশক্তি খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেহে শক্তির সংবন্ধন করছে প্রতিটি স্তরে শক্তি হারানোর জন্য তার অল্প পরিমাণই বাজপাখি পাচ্ছে ।
অন্যদিকে (ii) নং খাদ্যশৃঙ্খলে জুয়োপ্লাঙ্কটন সৌরশক্তির মাধ্যমে যে শক্তি খাদ্যের মধ্যে সঞ্চয় করছে, তার দেহে অল্প অপচয় বা ব্যয় বাদে তার প্রায় পুরোটাই ভক্ষণের মাধ্যমে ছোট মাছ পাচ্ছে। তাই বলা যায় যে, (ii) নং ও (iii) নং এর ভিতরে তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খল ছোট হওয়াতে (ii) নং শৃঙ্খলটিতে শক্তির অপচয় অনেক কম
হবে।
প্রশ্ন–৭: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
ক. প্লাংকটন কী?
খ. হায়েনাকে ধাঙর বলা হয় কেন?
গ. প্রবাহচিত্রের খাদ্যশৃঙ্খলগুলি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রবাহচিত্রের জুয়োপ্লাংকটন অনুপস্থিত হলে বাস্তুতন্ত্রের কী পরিণতি ঘটবে?
৭নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্ল্যাংকটন হলো পানিতে ভাসমান ক্ষুদ্র জীব ।
খ. হায়েনা একটি বিশেষ শ্রেণির প্রাণী। এরা মৃতদেহ ও আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে। কাক, শকুন ও শিয়ালের মতো এরাও জীবন্ত প্রাণীর চেয়ে মৃত প্রাণীর মাংস বা আবর্জনা খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই একে ধাঙর বলে ।
গ. প্রবাহচিত্রে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল রয়েছে যেগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
প্রবাহচিত্রে দেখা যায়, ফাইটোপ্ল্যাংকটন ছোট চিংড়ি, জুয়োপ্ল্যাংকটন ও মলা মাছকে সরাসরি খাদ্য সরবরাহ করে। ছোট চিংড়ি, জুয়োপ্ল্যাংকটন ও মলামাছ সবগুলোকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে শোল মাছ। আবার ছোট চিংড়িও জুয়োপ্ল্যাংকটনকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ঈগল মলা মাছ এবং শোল মাছের একই প্রজাতির একটু ছোট সদস্যদের সহজেই খেতে পারে। এখানে ছয়টি জীব বিভিন্নভাবে বেশ কয়েকটি খাদ্যশিকল তৈরি করে। প্রবাহচিত্রে মোট চারটি খাদ্যশিকল পাওয়া যায়। যথা—
১. ফাইটোপ্ল্যাংকটন → ছোট চিংড়ি → শোল মাছ → ঈগল
২. ফাইটোপ্ল্যাংকটন → মলা মাছ → শোল মাছ → ঈগল
৩. ফাইটোপ্ল্যাংকটন → জুয়োপ্লাংকটন → শোল মাছ → ঈগল
৪. ফাইটোপ্ল্যাংকটন → জুয়োপ্লাংকটন → ছোট চিংড়ি→ শোল মাছ → ঈগল
ঘ. প্রবাহচিত্রে জুয়োপ্ল্যাংকটন অনুপস্থিত হলে, খাদ্যশৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিণতিতে ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে।
একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় সেই বাস্তুতন্ত্রের প্রাকৃতিক উৎপাদক ও খাদকের আন্তঃসম্পর্কের ওপর। শক্তি প্রবাহের মূল উৎস সূর্য, এই শক্তি উৎপাদক, খাদক (১ম স্তর, ২য় স্তর, ৩য় স্তর) ও বিয়োজকে প্রবাহিত হয়। এই শিকলগুলো স্বাধীন বা পৃথকভাবে অবস্থান করে না। এসব খাদ্যশিকল এক বা একাধিক শিকলের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এর মধ্যে জুয়োপ্ল্যাংক্টন অনুপস্থিত হলে খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে। উৎপাদক ঠিকই খাদ্য উৎপাদন করবে কিন্তু জুয়োপ্ল্যাংকটন না থাকলে শোল মাছ সরাসরি উৎপাদক বা ফাইটোপ্ল্যাংকটন খেতে পারবে না। আবার শোল মাছ থেকে ঈগলও সঠিক পরিমাণ থাকবে না। সুতরাং উৎপাদক থেকে খাদ্য উৎপাদন সঠিক হলেও ১ম স্তরের খাদ্য, ২য় স্তরের খাদ্য, সর্বোচ্চ স্তর বা ৩য় স্তরের খাদকের মধ্যে শক্তিপ্রবাহ সঠিক পরিমাণে থাকবে না। ফলে সমস্ত শক্তিই বিনষ্ট হবে ।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, প্রবাহচিত্রে জুয়োপ্লাংকটন অনুপস্থিত থাকলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং পরিণতিতে ধীরে ধীরে সে বাস্তুতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটবে।
প্রশ্ন–৮: নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
উন্নত দেশগুলোর ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। শীঘ্রই এর সমাধান করা না গেলে আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীটা এক সময় প্রাণহীন হয়ে যাবে।
ক. আবর্জনাভুক কাকে বলে?
খ. বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদানগুলো কী কী?
গ. উদ্দীপকের ঘটনাটির প্রভাব কী হতে পারে বর্ণনা কর ।
ঘ. উদ্দীপকের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে করণীয় পদক্ষেপগুলো উল্লেখ কর ।
৮নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে সকল প্রাণী মৃত প্রাণীর মাংস এবং আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে তাদেরকে আবর্জনাভুক বলে।
খ. জীবসম্প্রদায়, পরিবেশের জড় পদার্থ এবং ভৌত পরিবেশ মিলেই কোনো স্থানের বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে। বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সূর্যালোক, তাপমাত্রা, জলীয়বাষ্প, বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ। ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের গভীরতা এবং উচ্চতা এসব ভৌত উপাদান বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ।
গ. উদ্দীপকের প্রভাবটি হচ্ছে গ্রিনহাউস প্রভাব ।
গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে তাপমাত্রা ২°-৫° সে. বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের প্রাকৃতিক ভারসাম্য সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এর প্রভাবগুলো নিম্নরূপ :
১ . সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ।
২. অনেক মহাদেশের অভ্যন্তর ভাগ শুষ্কহয়ে যাবে।
৩. মেরু অঞ্চলের হিমশৈল গলে যাবে।
৪ . কৃষিকাজে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিবে।
৫. উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের বনভূমির বিনাশ হবে।
ঘ. উদ্দীপকের প্রভাবটি গ্রিনহাউস প্রভাব যা মানবসৃষ্ট একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।
সুতরাং আঞ্চলিকভাবে এর কোনো সমাধান সম্ভব নয়। গ্রিনহাউস প্রভাব নিয়ন্ত্রণে চাই বিশ্বব্যাপী সমন্বিত পদক্ষেপ। গ্রিনহাউস সৃষ্টিকারী নিয়ামকসমূহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে প্রশমন ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব:
১. বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও নিয়মিত বনায়নের মাধ্যমে নতুন বন সৃষ্টি করা ।
২. কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ।
৩. CO2 উৎপন্নকারী জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করা।
8. নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে সৌর, পানি, বায়ু ও পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করা।
৫. CFC ব্যবহার বন্ধ করা ।
৬. গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা এবং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৭. অপ্রয়োজনে কাঠ, বন পোড়ানো বন্ধ করা ।
৮. গণমাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমে গ্রিনহাউস প্রভাবের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে ।
৯. স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।
এসএসসি-ভূগোল ও পরিবেশ সাজেশন অধ্যায়-০৬ : বারিমণ্ডল Hydrosphere পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি এইচএমএস চ্যালেঞ্জার :…
এসএসসি আইসিটি (ICT)-বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর পঞ্চম অধ্যায় মাল্টিমিডিয়া ও গ্রাফিক্স আশা করি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আমাদের এই…
এসএসসি বিজ্ঞান নোট দ্বাদশ-অধ্যায় প্রাত্যহিক জীবনে তড়িৎ পাঠ সম্পর্কিত গুরত্বপূর্ণ বিষয়াদি ব্যাটারি : ব্যাটারি হলো…
নবম দশম শ্রেণি-বাংলা ১ম পত্র সাজেশন উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) পাঠ সম্পর্কিত…
এসএসসি বিজ্ঞান সাজেশন অধ্যায়– একাদশ জীবপ্রযুক্তি BIOTECHNOLOGY প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুরা, এসএসসি বিজ্ঞান একাদশ অধ্যায় জীবপ্রযুক্তি থেকে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক,…
বাংলা দ্বিতীয় পত্র-সাজেশন অধ্যায়-৪ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর কাল, পুরুষ এবং কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ *তথ্যকণিকা* ১. ক্রিয়া…