এসএসসি বাংলা প্রথম
আম-আঁটির ভেঁপু
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৪–৪৯৫০]
লেখক সম্পর্কিত তথ্য
জন্ম : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ সালে চব্বিশ পরগনার মুরারিপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যু : তিনি ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঘাটশীলায় মৃত্যুবরণ করেন।
পিতা–মাতা : বিভূতিভূষণের পিতার নাম মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম মৃণালিনী দেবী। (দ্রষ্টব্য: পাঠ্যবইয়ে লেখকের পিতার নামের বানানে ভুল রয়েছে। শুদ্ধ রূপটি হলো ‘মহানন্দ’। তথ্যসূত্র- বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান; সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।)
শিক্ষা ও পেশা : তিনি স্থানীয় বনগ্রাম স্কুল থেকে ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতা রিপন কলেজ থেকে প্রথম আইএ পাস করেন এবং ডিস্টিংশনে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে হুগলী, কলকাতা ও ব্যারাকপুরের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
সাহিত্যিক পরিচয় : শরৎচন্দ্রের পরে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী। তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সহজ-সরল জীবনযাপনের অসাধারণ আলেখ্য নির্মাণ করে অমর হয়ে আছেন।
উল্লেখযোগ্য রচনা : উপন্যাস : পথের পাঁচালী, অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতি, দৃষ্টিপ্রদীপ।
গল্পগ্রন্থ: মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল।
পুরস্কার : ‘ইছামতি’ উপন্যাসের জন্য ১৯৫১ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।
গল্প সম্পর্কিত তথ্য :
উৎস ও পরিচিতি: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ গল্পে লেখক গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান রচনা করেছেন।
মূল কাহিনী : অপু ও দুর্গা হতদরিদ্র পরিবারের দুই শিশু। তাদের বাবা পৌরহিত্য করে কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চালান। মা সারাদিন সংসারের কাজ করেন। অপু, দুর্গা দুজনেই দুরন্ত। দুই ভাইবোনের মধ্যে মধুর সম্পর্ক। সংসারের দারিদ্র্যের কষ্ট তাদের জীবনে প্রধান বিষয় হয়ে ওঠেনি। অধিকন্তু গ্রামীণ ফলফলাদি আহারের আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের বিস্ময় ও কৌতুহল গল্পটিকে শাশ্বত মানুষের চিরায়ত শৈশবকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ গল্পের সর্বজয়া পল্লি-মায়ের শাশ্বত চরিত্র হয়ে উঠেছে।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র : অপু, দুর্গা, সর্বজয়া।
রূপশ্রেণি : ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ রচনাটি ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের অংশ। সংকলিত অংশটি একটি গল্প।
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
নামকরণ : রচনাটি সংকলিত অংশ বিধায় এটির ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে শিরোনামের সম্পর্ক অনুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবু অপু-দুর্গার প্রকৃতিঘনিষ্ঠ জীবনের সঙ্গে গ্রামীণ প্রকৃতির বিশেষ অনুষঙ্গ আম আঁটির ভেঁপুর তুলনা করা হলে তা অসংগত মনে হয় না। অপু, দুর্গার বাঁধাহীন গ্রামীণ জীবনের উচ্ছাস আম আঁটির ভেঁপু বাজিয়ে আনন্দ উপভোগের মতোই অকৃত্রিম। আম আঁটির ভেঁপুর মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই; সরল-সাধারণ এ বাঁশি থেকে যে আনন্দধ্বনি উদ্গত হয়, অপু-দুর্গার জীবনও তেমনি।
ভাষা ও গদ্যরীতি : গল্পটি সাধু ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। তবে চরিত্রসমূহের সংলাপে কথ্য ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
• জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর •
প্রশ্ন–১. অপুর দিদির নাম কী?
উত্তর: অপুর দিদির নাম দুর্গা।
প্রশ্ন–২. দুর্গার বয়স কত?
উত্তর: দুর্গার বয়স দশ-এগারো।
প্রশ্ন–৩. হরিহর কাজ সেরে কখন বাড়ি ফিরল?
উত্তর: দুপুরের কিছু পর হরিহর কাজ সেরে বাড়ি ফিরল।
প্রশ্ন–৪. আজকাল লক্ষ্মী কোথায় বাঁধা পড়েছে?
উত্তর: আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা পড়েছে।
প্রশ্ন–৫. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ শীর্ষক গল্পের রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পের রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন–৬. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ২৪ পরগনা জেলার মুরারিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন–৭. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম কী?
উত্তর: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম— মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন–৮. ‘দৃষ্টিপ্রদীপ‘ উপন্যাসের লেখক কে?
উত্তর: ‘দৃষ্টিপ্রদীপ’ উপন্যাসের লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন–৯. বিভূতিভূষণ কোন উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন?
উত্তর: বিভূতিভূষণ ‘ইছামতি’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রশ্ন–১০. টোল–খাওয়া টিনের ভেঁপু বাঁশির দাম কত?
উত্তর: টোল-খাওয়া টিনের ভেঁপু বাশির দাম চার পয়সা।
প্রশ্ন–১১. দুর্গা অপুকে তেল আর নুন আনতে বলল কেন?
উত্তর: দুর্গা অপুকে তেল আর নুন আনতে বলল আমের কুসি জারাবে বলে।
প্রশ্ন–১২. হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম কী?
উত্তর: হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতার নাম নীলমণি।
প্রশ্ন–১৩. হরিহরের বাড়ি থেকে ভুবন মুখুয্যের বাড়ি কত মিনিটের পথ?
উত্তর: হরিহরের বাড়ি থেকে ভুবন মুখুয্যের বাড়ি পাঁচ মিনিটের পথ।
প্রশ্ন–১৪. স্বর্ণ গোয়ালিনী অপুদের বাড়ি এলো কেন?
উত্তর: স্বর্ণ গোয়ালিনী অপুদের বাড়ি এলো গাই দোয়াতে।
প্রশ্ন–১৫. হরিহর রায়বাড়িতে কত টাকা বেতনে চাকরি করতেন?
উত্তর: হরিহর রায়বাড়িতে আট টাকা বেতনে চাকরি করতেন।
প্রশ্ন–১৬. ‘আম–আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর তাগাদার জন্য কোথায় গিয়েছিল?
উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর তাগাদার জন্য দশঘরা গ্রামে গিয়েছিল।
প্রশ্ন–১৭. আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে কোন গায়ে কোনো বামুন নেই?
উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দশঘরা গ্রামে কোনো বামুন নেই।
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–১৮, “আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে কোন গাইটাকে একেবারে রাক্ষস বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গাদের রাঙি গাইটাকে একেবারে রাক্ষস বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-১৯. আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়াকে কে দু বেলা তাগাদা দিতে শুরু করেছে? উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়াকে রাধা বোষ্টমের বৌ দু বেলা তাগাদা দিতে শুরু করেছে।
প্রশ্ন–২০. অপুর কোন খেলনাটি পিজরাপোলের আসামির মতো পড়ে আছে?
উত্তর: অপুর কাঠের ঘোড়া পিজরাপোলের আসামির মতো পড়ে আছে।
প্রশ্ন–২১. কার গায়ের রং অপুর মতো ফর্সা নয়?
উত্তর: দুর্গার গায়ের রং অপুর মতো ফর্সা নয়।
প্রশ্ন–২২. কাঁকুড়তলির আম গাছটি কাদের?
উত্তর: কাঁকুড়তলির আম গাছটি পটলিদের।
প্রশ্ন–২৩. বন্ধক ছাড়া ধার দেয় না কে?
উত্তর: বন্ধক ছাড়া ধার দেয় না সেজ ঠাকরুন।
প্রশ্ন–২৪. অপুর দাঁত টক হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর: আম খেয়ে অপুর দাঁত টক হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন–২৫. অপুর চোখ কেমন ছিল?
উত্তর: অপুর চোখ ছিল বেশ ডাগর ডাগর ।
প্রশ্ন–২৬. কে আমতলায় জামতলায় ঘুরে বেড়াত?
উত্তর: দুর্গা আমতলায় জামতলায় ঘুরে বেড়াত।
প্রশ্ন–২৭. কে হাসিমুখে নেচে বেড়াত?
উত্তর: অপু হাসিমুখে নেচে বেড়াত।
প্রশ্ন–২৮. রৌদ্রে বেরিয়ে মুখ রাঙা হয়ে উঠেছিল কার?
উত্তর: রৌদ্রে বেরিয়ে মুখ রাঙা হয়ে উঠেছিল দুর্গার।
প্রশ্ন–২৯. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পটির লেখক কে?
উত্তর: ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটির লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
• অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর •
প্রশ্ন–১. ‘আমার কাপড় যে বাসি’- অপু একথা কেন বলেছিল?
উত্তর: বাসি কাপড়ে তেলের ভাড় ছুঁলে মায়ের হাতে পিটুনি খেতে হতে পারে- এই আশঙ্কায় অপু প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে। আমের কুসি জারানোর (মাখানোর) জন্য দুর্গার তেল, নুন ও লঙ্কার প্রয়োজন ছিল। ছোট ভাইটিকে তাই সে তেল আর নুন নিয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু তৎকালীন গ্রামীণ সমাজে রান্নাঘরকে পবিত্র জ্ঞান করে রান্নার উপকরণ বিশেষ যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হতো। তাই বাসি কাপড়ে রান্নাঘরে গিয়ে তেলের ভাঁড় ছুঁলে তা এঁটো হয়ে যাবে বলে মা মারতে পারে এই ভয়ে অপু প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।
প্রশ্ন–২. ‘হাবা একটা কোথাকার, যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে।‘— দুর্গা একথা বলেছিল কেন?
উত্তর: মায়ের সামনে অপু আম খেয়ে দাঁত টক হয়ে গিয়েছে- এমন কথা বলায় দুর্গা অপুকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছিল। দুর্গা পটলিদের বাগানে পড়ে থাকা আম কুড়িয়ে এনে তেল আর নুন দিয়ে মাখিয়ে নিজে ও ছোট ভাই অপু মিলে মজা করে খায়। পরে মায়ের দেওয়া চালভাজা খেতে গিয়ে অপু মায়ের সামনে বলে ফেলে, উঃ চিবানো যায় না। আম খেয়ে দাঁত টক হয়ে গিয়েছে—”। একথা শুনে মা দুর্গাকে বকা দেয়। এতে দুর্গা ক্ষিপ্ত হয়ে অপুকে বলে, ‘হাবা একটা কোথাকার, যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে।’
প্রশ্ন–৩. দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে অপু দ্বিধা করছিল কেন?
উত্তর: তৎকালীন হিন্দুসমাজের সংস্কার অনুসারে বাসি কাপড়ে খাবার কিছু ছোঁয়া বারণ থাকায় এবং মায়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে অপু দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে দ্বিধা করছিল। কুড়িয়ে আনা আমের কুসিগুলো জারানোর জন্য দুর্গা অপুকে নুন ও তেল আনতে বলে। কিন্তু নুন ও তেল রাখা আছে রান্নাঘরে; আর বাসি কাপড়ে রান্নাঘরে যাওয়া যায় না বলেই শিক্ষা পেয়েছে অপু। তাছাড়া মায়ের হাতে মার খাওয়ার একটা ভয় আছে তার ভেতরে। তাই অপু দুর্গা তথা তার দিদির কথায় নুন ও তেল আনতে দ্বিধা করছিল।
প্রশ্ন–৪. ‘ঠাকুরের হাঁড়ি দেখচি শিকেয় উঠেচে’- কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ঠাকুরের হাঁড়ি দেখচি শিকেয় উঠেচে কথাটি দ্বারা পারিবারিক অভাব-অনটন সম্পর্কে মানুষের ভাবনার স্বরূপ সর্বজয়ার কাছে উপস্থাপন করেছে হরিহর।
রায়বাড়ির গোমস্তাগিরির কাজ ও এবাড়ি সেবাড়ি পুজো-আর্চা করে সংসার চলত হরিহরের। তাই সদগোপ সম্প্রদায়ের লোককে মন্ত্র দেওয়া ও জমিজমা পাওয়ার বিষয়টি তার কাছে নেহায়েত মন্দ বলে মনে হয় না । কিন্তু প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলে তারা হরিহরের প্রকৃত পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। এ কারণে সে মিথ্যে ভান দেখিয়ে একটু সময় নিয়েছে। সে বিষয়টি বোঝাতেই সর্বজয়াকে উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন–৫. ‘নীলমণি রায়ের ভিটা জঙ্গলাবৃত হইয়া পড়িয়া আছে।‘ কেন?
উত্তর: নীলমণি রায়ের মৃত্যু হওয়াতে তার স্ত্রী-সন্তানেরা সে ভিটা পরিত্যাগ করেছে; তাই ভিটাটি জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে আছে। হরিহর ও তার জ্ঞাতি-ভাতা নীলমণি রায় পাশাপাশিই বাস করত। কিন্তু সম্প্রতি নীলমণি রায় মারা গেছে। পরিবারে তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা ছিল । তার মৃত্যুর পরে তারা এ বাড়িতে আর থাকেনি; নিজের পিত্রালয়ে গিয়ে উঠেছে। এ কারণে বাড়িটি পরিত্যক্ত ও জঙ্গলাবৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
প্রশ্ন–৬. ‘তুই তো একটা হাবা ছেলে’ দুর্গা একথা বলেছে কেন?
উত্তর: ‘অপুকে সাবধান করতে গিয়ে দুর্গা বলেছে ‘তুই তো একটা হাবা ছেলে।’ আমের কুসি জারানোর জন্য দুর্গা অপুকে রান্নাঘরে তেল আর নুন আনতে পাঠাচ্ছিল। দুর্গা জানত মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলে মার খেতে হবে। তাই সে অপুকে সাবধান করে দিল যাতে রান্নাঘরে যেন তেল না পড়ে। অপু ভীতু প্রকৃতির বলে অঘটন ঘটাতে পারে ভেবে দুর্গা অপুকে হাবা ছেলে বলেছে।
প্রশ্ন–৭. ‘ও রকম একটা বড় মানুষের আশ্রয় এ গায়ে তোমার আছে কী?’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটি সর্বজয়া তার স্বামী হরিহরকে উদ্দেশ্য করে বলেন। হরিহর তাগাদায় গেলে একজন পয়সাওয়ালা লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি তাকে তার বাড়িতে মন্তর দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, তার গায়ে গিয়ে বামুন হতে এবং বলেন তাকে জমিভিটাও দেওয়া হবে। এতে তাৎক্ষণিক কোনো মত হরিহর তাকে দেননি। তাই স্ত্রী সর্বজয়া দুঃখ করে বলেন তুমি রাজি হলে না কেন? এখানে আছে কী? শুধু ভিটে কামড়ে পড়ে থেকে লাভ কী?
প্রশ্ন–৮. হরিহরের বাড়িটি দেখতে কেমন?
উত্তর: হরিহরের বাড়িটি তার দরিদ্রতার দিকটি স্পষ্টভাবেই তুলে ধরে। টাকা-পয়সার অভাবে তার বাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। বাড়ির সামনের দিকের রোয়াক ভাঙা, ফাটলে বন-বিছুটি ও কালমেঘ গাছের বন গজিয়েছে। ঘরের দরজা-জানালার কপাট সব ভাঙা, নারিকেলের দড়ি দিয়ে গরাদের সঙ্গে বাধা আছে। এক কথায়, হরিহরের বাড়িটি বেশ জীর্ণ ও ভাঙাচোরা ছিল।
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–৯. হরিহরের আর্থিক অবস্থা কেমন?
উত্তর: হরিহর অর্থনৈতিকভাবে একেবারেই সচ্ছল ছিল না। হরিহরের বাড়ি-ঘর, দৈনন্দিন জীবন তার দরিদ্রতার দিকটিকেই তুলে ধরে। সে ভীষণভাবে ঋণগ্রস্ত ছিল। সে তার ছোটো ছেলেমেয়েগুলোকে ভালোভাবে খাওয়াতে-পরাতেও হিমশিম খেত।
প্রশ্ন–১০. দুর্গা–অপুর পারস্পরিক সম্পর্কের দিকটি তুলে ধরো।
উত্তর: দুর্গা-অপুর পারস্পরিক সম্পর্ক ভাই বোনের চিরায়ত সুন্দর সম্পর্ককেই মনে করিয়ে দেয়। দুর্গা সারাদিন চঞ্চল ও দূরন্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, সাথে সঙ্গী হয়, তার ছোট ভাই অপু। নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা ফল দুই ভাইবোনে মজা করে খায়। দুর্গা মাঝে মাঝে রাগ করে বাঁদর, হাবা বলে অপুকে- তাও যেন ভালোবাসার আবেগ। তাদের দুই ভাইবোনের সম্পর্ক মানুষের চিরায়ত শৈশবকে জীবিত করে তোলে।
প্রশ্ন–১১. হরিহর দশঘরায় তাগাদার জন্য গিয়ে যে লোকটির সাক্ষাৎ পান তিনি হরিহরকে কীরকম অনুরোধ করেন?
উত্তর: হরিহর দশঘরায় তাগাদার জন্য গিয়ে যে লোকটার সাক্ষাৎ পান তিনি হরিহরকে তাঁর বাড়িতে মন্তর দিতে অনুরোধ করেন। পয়সাওয়ালা সেই লোকটির সাথে হরিহরের দেখা হলে তিনি হরিহরকে বলেন যে, তাঁর কর্তা বেঁচে থাকতে যখন তখন পূজার সময় আসতেন, পায়ের ধুলো দিতেন। তিনি হরিহরকে গুরুতুল্য আখ্যা দিয়ে তাঁর বাড়ি মন্ত্র দেবার জন্য বলেন। তিনি হরিহরকে আরও বলেন তাদের গ্রামের যেয়ে বামুন হতে। এতে করে তাঁকে জমিভিটে দিতেও তিনি রাজি।
প্রশ্ন–১২. হরিহর সর্বজয়াকে মন্ত্র দেবার ব্যাপারটা কাউকে বলতে নিষেধ করলেন কেন?
উত্তর: হরিহর সর্বজয়াকে মন্ত্র দেবার ব্যাপারটা কাউকে বলতে নিষেধ করলেন লোকটি নিচু বর্ণের বলে। সর্বজয়া হরিহরকে মন্ত্র দিতে রাজি হতে বললেন এবং লোকটির কী জাত জিজ্ঞেস করলেন। হরিহর তখন কণ্ঠ নামিয়ে বললেন, সদ্গোপ। তোমাদের তো আবার গল্প করে বেড়ানোর স্বভাব। কাউকে বলো না।
*তথ্য কণিকা*
১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন – ১৮৯৪ সালে ।
২. বিভূতিভূষণের জন্মস্থান – চব্বিশ পরগনার মুরারিপুর গ্রাম।
৩. বিভূতিভূষণ মৃত্যুবরণ করেন – ১৯৫০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ।
৪. বিভূতিভূষণের পিতার নাম – মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৫. বিভূতিভূষণের মাতার নাম – মৃণালিনী দেবী
৬. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পেশা ছিল – শিক্ষকতা ।
৭. ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের রচয়িতা – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
৮. ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের রচয়িতা – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
৯. ‘ইছামতি’ উপন্যাসের রচয়িতা – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
১০. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন – ১৯৫০ সালে ।
১১. অপু খেলা করছিল – রোয়াকে বসে।
১২. হরিহর গোমস্তার কাজ করে – অন্নদারায়ের বাড়িতে ।
১৩. নাটা ফল কুড়িয়ে এনেছিল – দুর্গা ।
১৪. আমের কুসি জারানোর জন্য দুর্গা অপুকে আনতে বলেছিল – তেল ও নুন ।
১৫. ‘আম-আঁটির ভেপু’ গল্পে উল্লেখ আছে – লক্ষ্মীপূজার ।
১৬. হরিহর রায়ের জ্ঞাতি ভ্রাতা – নীলমণি রায় ।
১৭. গাই দুইতে আসে – স্বর্ণ গোয়ালিনী।
১৮. হরিহর বাড়ি ফেরেন – দুপুরের কিছু পরে।
১৯. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ রচনায় উল্লেখ আছে – লক্ষ্মীপূজার কথা।
২০. হরিহর তাগাদার জন্য গিয়েছিলেন – দশঘড়ায়।
২১. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’-এর রচয়িতা – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
২২. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ সংকলিত হয়েছে – ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস থেকে।
২৩. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি – উপন্যাসের সংকলিত অংশ ।
২৪. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের প্রধান দুটি চরিত্র – অপু ও দুর্গা।
২৫. ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পটির মূল বিষয় – প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান ।
২৬. ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পটি রচিত – গ্রামীণ জীবনের পটভূমিতে।
২৭. ‘আম-আঁটির ভেপু’ গল্পটি স্মরণ করিয়ে দেয় – মানুষের জীবনের শৈশবের সময়।
২৮. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শব্দগুচ্ছের অর্থ – আমের আঁটির তৈরি ভেঁপু বা বাঁশি ।
২৯. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি লিখিত হয়েছে – সাধু ভাষারীতিতে।
৩০. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সংলাপে ব্যবহৃত হয়েছে – কথ্য চলিত ভাষারীতি
৩১. ঘরের সামনের খোলা জায়গা বা বারান্দাকে বলা হয় – রোয়াক ।
৩২. চুপড়ি অর্থ – ছোট ঝুড়ি বা ক্ষুদ্র ধামা।
৩৩. নাটাফল অর্থ – করঞ্জ ফল।
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৩৪. খাপরার কুচি অর্থ – মাটির কলসি বা হাঁড়ির ভাঙা অংশ।
৩৫. আমের কুসি অর্থ – কচি আম ।
৩৬. জারা অর্থ – জীর্ণ করা বা কুচি কুচি করা।
৩৭. বন-বিছুটি – এক প্রকার বুনো গাছ।
৩৮. গরাদ শব্দের অর্থ – জানালার সিক।
৩৯. যকৃতের রোগে উপকারী এক প্রকার তিন্তু গাছ – কালমেঘ ।
৪০. রোসো রোসো অর্থ – থাম থাম ।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১. উঠানের কোন জায়গা থেকে দুর্গা অপুকে ডাকছিল?
ক. আমতলা খ. বটতলা
গ. কাঠালতলা ঘ. জামতলা
উত্তর: গ. কাঠালতলা
২. তেলের ভাঁড় ছূঁলে দুর্গাকে মারবে কেন? বা তেলের ভাঁড় ছুঁলে মা অপুকে মারবে কেন?
i. কুসংস্কারের কারণে
ii. অপচয়ের কারণে
iii. না জানানোর কারণে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i
উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
রিপন ও রুমা দুই ভাই-বোন। তাদের বয়সের পার্থক্য চার বছর। একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হলেও বিভিন্ন জিনিস একে অন্যকে তারা দেখাতে চায় না। রুমার খেলার সামগ্রী রিপন লুকিয়ে রাখে। রুমার বিভিন্ন আদেশ, আবদার রিপন জানতে চায় না। এই নিয়ে ওদের মাকে নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।
৩. উদ্দীপকটি ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের কোন দিককে প্রতিফলিত করেছে?
ক. ভাই-বোনের সম্পর্ক
খ. ভাই-বোনের বিরোধ
গ. ভাই-বোনের আবদার
ঘ. মায়ের চিন্তা
উত্তর: ক. ভাই-বোনের সম্পর্ক
৪. উদ্দীপকের ভাবনা ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের কোন উদ্ধৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. তাহার স্বর একটু সতর্কতা মিশ্রিত
খ. একটু তেল আর একটু নুন নিয়ে আসতে পারিস? আমের কুসি জারাবো
গ. দুর্গার হাতে একটি নারিকেলের মালা
ঘ. নারকেলের মালাটা আমায় দে
উত্তর: খ. একটু তেল আর একটু নুন নিয়ে আসতে পারিস? আমের কুসি জারাবো
৫. অপুর খেলনা পিস্তলটির দাম কত পয়সা?
ক. দুই খ. তিন
গ. চার ঘ. পাঁচ
উত্তর: ক. দুই
৬. কলের পুতুলের মতো অপু কী লুকিয়ে ফেলল?
ক. টিনের বাঁশিটা
খ. লক্ষ্মীর চুপড়ির কড়িগুলো
গ. দু’পয়সা দামের পিস্তলটা
ঘ. রং ওঠা কাঠের ঘোড়াটা
উত্তর: খ. লক্ষ্মীর চুপড়ির কড়িগুলো
৭. “আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাধা–ভদ্দর লোকেরাই হয়ে পড়েছে হা ভাত যো ভাত।”- হরিহরের এ উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে—
ক. হতাশা খ. বিরক্তি
গ. আক্ষেপ ঘ. ঘৃণা
উত্তর: গ. আক্ষেপ
৮. ‘আম–আঁটির ভেঁপ‘ গল্পে অপুর মায়ের নাম কী?
ক. স্বর্ণগোয়ালিনী খ. সর্বজয়া
গ. দুর্গা ঘ. লক্ষ্মী
উত্তর: খ. সর্বজয়া
৯. জয়গুণের সংসারে নিত্য আগুন-
নুন আনতে পান্তা ফুরায়
পান্তা আনতে নুন।
উদ্দীপকের জয়গুণের সংসারচিত্র ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের সর্বজয়ার কোন বক্তব্যকে সমর্থন করে?
ক. অতবড় মেয়ে, বলে বোঝাবো কত
খ. আর এদিকে রাজ্যের দেনা
গ. একলা নিজে কত দিকে যাব
ঘ. তোমাদের রাতদিন খিদে আর রাতদিন ফাই-ফরমাজ
উত্তর: খ. আর এদিকে রাজ্যের দেনা
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
১০. দুর্গা যখন অপুকে ডেকেছিল তখন অপু কোথায় অবস্থান করছিল?
ক. বারান্দায় খ. ঘরের ভেতরে
গ. নারকেল তলায় ঘ. কাঠাল তলায়
উত্তর: ক. বারান্দায়
১১. গঙ্গা–যমুনা খেলার জন্য অপু কী হাতে নিল?
ক. লাটিম খ. মার্বেল
গ. বাঁশি ঘ. খাপরা
উত্তর: ঘ. খাপরা
১২. গঙ্গা, যমুনা খেলতে কোনটি সযত্নে বাক্সে রাখা হয়েছে?
ক. দু’পয়সা দামের পিস্তল
খ. খানাকতক খাপরার কুচি
গ. রং ওঠা কাঠের ঘোড়া
ঘ. টোলখাওয়া টিনের ভেঁপু
উত্তর: খ. খানাকতক খাপরার কুচি
১৩. ‘রোয়াক’ অর্থ কী?
ক. জানালা খ. চেয়ার
গ. খেলার মাঠ ঘ. বারান্দা
উত্তর: ঘ. বারান্দা
১৪. পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপ ফুটে উঠেছে ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের কোন চরিত্রে?
ক. দুর্গা খ. নীলমনি
গ. স্বর্ণ গোয়ালিনী ঘ. সর্বজয়া
উত্তর: ঘ. সর্বজয়া
১৫. কোনটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্রন্থ?
ক. অপরাজিত খ. আরণ্যক
গ. মৌরীফুল ঘ. ইছামতি
উত্তর: গ. মৌরীফুল
১৬. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে টোল–খাওয়া ভেঁপু বাঁশিটার দাম কত?
ক. চার পয়সা খ.পাঁচ পয়সা
গ. ছয় পয়সা ঘ. সাত পয়সা
উত্তর: ক. চার পয়সা
১৭. দশঘরায় বসবাসের সিদ্ধান্তে হরিহর কার সঙ্গে পরামর্শ করতে চেয়েছিল?
ক. নীলমনি রায়ের স্ত্রী খ. ভুবন মুখার্জী
গ. সর্বজয়া ঘ. মজুমদার মহাশয়
উত্তর: ঘ. মজুমদার মহাশয়
১৮. অনেকদিন হরিহর রায়ের বাড়িটি –
ক. রং করা হয়নি
খ. ধোয়ামোছা হয়নি
গ. মেরামত করা হয়নি
ঘ. পরিস্কার করা হয়নি
উত্তর: গ. মেরামত করা হয়নি
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
১৯. ‘মা ঘাট থেকে আসেনি তো?’– দুর্গার এ কথায় প্রকাশ পেয়েছে –
ক. সতর্কতা খ. অভিমান
গ. সন্দেহ ঘ. ভয়
উত্তর: ক. সতর্কতা
২০. দুর্গা আঁচলের খুট খুলে কীসের বিচি বের করেছিল?
ক. নাটা ফলের খ. বৈচি ফলের
গ. রড়া ফলের ঘ. তেলাকুচার
উত্তর: গ. রড়া ফলের
২১. জরিনা ও জয়নাল দুই ভাইবোন সুরভী স্কুলে পড়ে। আর বাকি সময় ফুল বিক্রি করে। যা পায় তা দিয়ে কিছু কিনে খায়, আবার খেলতে চলে যায়। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে, বাবা রিকশা চালায়। সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফেরে ওরা। এত অভাবের মধ্যেও ওদের দু’ভাইবোনের মুখে কোনো কষ্টের ছাপ নেই।
উদ্দীপকের জরিনা ও জয়নালের সঙ্গে ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. সর্বজয়া ও নীলমণি খ. সন্ন ও হরিহর
গ. দুর্গা ও অপু ঘ. সর্বজয়া ও হরিহর
উত্তর: গ. দুর্গা ও অপু
২২. লেখক শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা কথাসাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী কে?
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় খ. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
গ. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ঘ. বনফুল
উত্তর: খ. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৩. ফটিক সারাক্ষণ মাঠে–ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। সব বিষয়ে তার জানার অসীম আগ্রহ। –ফটিক চরিত্রের সাথে অপু–দুর্গা যেদিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ তা হলো–
i. কৌতুহলপ্রবণ
ii. চঞ্চলতা
ii. প্রকৃতিঘনিষ্ঠ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ২৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘গনি মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে চাষ করে। তার দুঃখ, কষ্ট, অভাব দেখে স্থানীয় চেয়ারম্যান ভোলা মিয়া শহরে তার চামড়া শিল্পে কাজ করতে বলে এবং থাকা খাওয়াসহ মোটা অঙ্কের বেতন দেয়ার প্রস্তাব দেয়।
২৪. উদ্দীপকের গনি মিয়ার সাথে ‘আম–আঁটির ভেঁপু’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে?
ক. নীলমণি রায় খ. হরিহর রায়
গ. অন্নদা রায় ঘ. রাধা বোষ্টম
উত্তর: খ. হরিহর রায়
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ২৫ ও ২৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই।
মাগো আমার শ্লোক বলা কাজলা দিদি কই?
২৫. উদ্দীপকে ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের ফুটে উঠেছে –
ক. ভাইবোনের সম্পর্ক খ. গ্রামবাংলার দৃশ্য
গ. মায়ের শাশ্বতরূপ ঘ. রাতের প্রকৃতি
উত্তর: ক. ভাইবোনের সম্পর্ক
২৬. উদ্দীপকে অনুপস্থিত রয়েছে-
i. কৈশোরের চিত্র
ii. প্রকৃতিঘনিষ্ঠতা
iii. দারিদ্র্যের অবস্থা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
২৭. দুর্গা কেন অপুর পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিল?
ক. অপু মুখ ফসকে আম খাওয়ার কথাটা মায়ের সামনে বলে ফেলায়
খ. অপু দুর্গার কাছে মাখানো আমগুলোর সমান ভাগ চেয়েছিল বলে
গ. দুর্গার কথামতো অপু পাহারা দিতে রাজি হয়নি বলে
ঘ. তক্তার ওপর থেকে অপু লঙ্কা পাড়তে পারেনি বলে
উত্তর: ক. অপু মুখ ফসকে আম খাওয়ার কথাটা মায়ের সামনে বলে ফেলায়
২৮. সর্বজয়ার ছেলের কী নেই?
ক. খেলনা খ. কাপড়
গ. বই ঘ. হাতঘড়ি
উত্তর: খ. কাপড়
২৯. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে সর্বজয়াদের রায়বাড়ির কত টাকার ওপর নির্ভর করতে হয়?
ক. পাঁচ টাকা খ. ছয় টাকা
গ. সাত টাকা ঘ. আট টাকা
উত্তর: ঘ. আট টাকা
৩০. কোন লেখক ‘ইছামতি’ উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন?
ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
খ. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
গ. সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঘ. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর: ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩১. কোনটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্রন্থ?
ক. যাত্রাবদল খ. দৃষ্টিপ্রদীপ
গ. আরণ্যক ঘ. অপরাজিত
উত্তর: ক. যাত্রাবদল
৩২. কোন উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন?
ক. ইছামতি খ. পথের পাঁচালী
গ. আরণ্যক ঘ. মৌরীফুল
উত্তর: ক. ইছামতি
৩৩. সর্বজয়ার গা–গতর ব্যথা হয়েছিল কেন?
ক. অসুস্থতার কারণে খ. গাছ কাটতে গিয়ে
গ. ক্ষার কেঁচে ঘ. বাড়ি ঝাট দিয়ে
উত্তর: গ. ক্ষার কেঁচে
৩৪. ‘পথের পাঁচালী‘ কোন ধরনের রচনা?
ক. নাটক খ. উপন্যাস
গ. প্রবন্ধ ঘ. ছোটগল্প
উত্তর: খ. উপন্যাস
৩৫. টিনের ভেঁপু–বাঁশিটির দাম কত?
ক. এক পয়সা খ. দুই পয়সা
গ. তিন পয়সা ঘ. চার পয়সা
উত্তর: ঘ. চার পয়সা
৩৬. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
ক. ১৮৯৩ সালে খ. ১৮৯৪ সালে
গ. ১৮৯৫ সালে ঘ. ১৮৯৬ সালে
উত্তর: খ. ১৮৯৪ সালে
৩৭. দুর্গার বয়স কত?
গ. বারো-তেরো ঘ. নয়-দশ
উত্তর: খ. দশ-এগারো
৩৮. নিচের কোনটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগ্রন্থ?
ক. ইছামতি খ. দৃষ্টিপ্রদীপ
গ. আরণ্যক ঘ. মেঘমল্লার
উত্তর: ঘ. মেঘমল্লার
৩৯. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের মূল উপজীব্য কী?
ক. পল্লি প্রকৃতির চেতনা
খ. গ্রামীণ জনপদ
গ. মানুষের চিরায়ত শৈশব
ঘ.আহার আনন্দ
উত্তর: গ. মানুষের চিরায়ত শৈশব
৪০. দুর্গা অপুকে মুখ মুছতে বলেছিল কেন?
ক. ময়লা লেগে থাকায়
খ. আম কুচি লেগে থাকায়
গ. নুনের গুঁড়া লেগে থাকায়
ঘ. লঙ্কার গুঁড়া লেগে থাকায়
উত্তর: গ. নুনের গুঁড়া লেগে থাকায়
৪১. অপু ও দুর্গা আমাদের কী স্মরণ করিয়ে দেয়?
ক. দুঃখ-দুর্দশার কথা
খ. চিরায়ত শৈশবের কথা
গ. গ্রামীণ জীবনের সীমাবদ্ধতা
ঘ. শহর ও গ্রামের পার্থক্য
উত্তর: গ. গ্রামীণ জীবনের সীমাবদ্ধতা
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৪২. অপু তেলের ভাঁড় ছুঁলে মা মারবে কেন?
ক. তেল নষ্ট হবে বলে
খ. ঘর নোংরা হবে বলে
গ. বাসি কাপড়ের জন্য
ঘ. পেট খারাপ হবে বলে
উত্তর: গ. বাসি কাপড়ের জন্য
৪৩. ‘কুটোগাছটা ভেঙে দু খানা করা নেই।‘—বাক্যটিতে দুর্গার কোন স্বভাব প্রকাশ পেয়েছে?
ক. মায়ের অবাধ্যতা
খ. সংসারের কাজ না করা
গ. ঘুরে বেড়ানো
ঘ. অপরের জিনিস নেওয়া
উত্তর: খ. সংসারের কাজ না করা
৪৪. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে সর্বজয়ার চরিত্রে কোনরূপ শাশ্বত হয়ে উঠেছে?
ক. পল্লি-প্রকৃতির খ.পল্লি-জীবনের
গ. পল্লি-নারীর ঘ. পল্লি-মায়ের
উত্তর: ঘ. পল্লি-মায়ের
৪৫. ‘আম–আঁটির ভেঁপু’– শীর্ষক গল্পটি কোন উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে?
ক. পথের পাঁচালী খ. অপরাজিত
গ. আরণ্যক ঘ. ইছামতি
উত্তর: ক. পথের পাঁচালী
৪৬. দুর্গার মাথার চুল কী রকম ছিল?
ক. রুক্ষ খ. ভেজা
গ. ছোট ঘ. বড়
উত্তর: ক. রুক্ষ
৪৭. দুর্গার গায়ের রং কেমন ছিল?
ক. চাপা খ. কৃষ্ণ
গ. ফর্সা ঘ. শ্বেতকায়
উত্তর: ক. চাপা
৪৮. দুর্গা কোথা হতে আম কুড়িয়ে আনল?
ক. পটলিদের কলতলার গাছ হতে
খ. পটলিদের কাঁকুড়তলি হতে
গ. পটলিদের সিঁদুরকৌটোর তলা হতে
ঘ. ডোবার ধারের আমগাছ হতে
উত্তর: গ. পটলিদের সিঁদুরকৌটোর তলা হতে
৪৯. পিজরাপোলের আসামির ন্যায় কী পড়ে আছে?
ক. কাঠের ঘোড়া খ. নাটাফল
গ. টিনের বাঁশি ঘ. খাপরার কুচি
উত্তর: ক. কাঠের ঘোড়া
৫০. বাক্সের সমুদয় সম্পত্তি কথাটির অর্থ কী?
ক. অপুর নিজস্ব খেলনা খ. অপুর জমি
গ. অপুর বাড়ি ঘ. অপুর টাকাপয়সা
উত্তর: ক. অপুর নিজস্ব খেলনা
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৫১. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
ক. বিষ্ণুপুর খ. শিবপুর
গ. মুরারিপুর ঘ. হরিপুর
উত্তর: গ. মুরারিপুর
৫২. হরিহরের বাড়িটা –
i. সামনের দিকে রোয়াক ভাঙা
ii. ফাটলে বনবিছুটি ও কালমেঘ গাছের বন গজিয়েছে
iii. ঘরের দোরজা-জানালার কপাট সব ভাঙা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৫৩. দুর্গা ও অপু মাকে –
i. মেনে চলে
ii. ভয় পায়
ii. ঘৃণা করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৫৪. মায়ের ডাকে অপু ও দুর্গা সাড়া দিতে পারেনি –
i আমে মুখ ভর্তি ছিল বলে
ii তাদের ইচ্ছা ছিল না বলে
iii উত্তরের সুযোগ ছিল না বলে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৫৫. খেলনাগুলোকে অপুর সম্পত্তি বলা হয়েছে–
i. অপুর নিজের বলে
ii. অনেক দামি বলে
iii. আর কারো নেই বলে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৫৬. ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের হরিহরের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সমর্থনযোগ্য–
i. দরিদ্র
ii. ব্রাহ্মণ
iii. অকর্মা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৫৭ ও ৫৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
পরিশ্রমের কারণে রঘুনাথপুরের কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের এখন নিজস্ব জমিজমা আছে। এছাড়া গোলাভর্তি ধান ও গোয়ালে গরুও আছে। তারা পরিশ্রম দিয়েই তাদের অবস্থার উন্নতি সাধন করেছে।
৫৭. উদ্দীপকে ‘আম–আঁটির ভেঁপু’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে?
ক. দেশ গড়ায় মানুষের সচ্ছলতা
খ. হরিহরের উন্নতির ইঙ্গিত
গ. চাষাদের আর্থিক উন্নতি
ঘ. ধনিকশ্রেণির অধিক অবনতি
উত্তর: গ. চাষাদের আর্থিক উন্নতি
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৫৮. উক্ত দিকটি সমাজকে পরিবর্তন করতে পারে–
ক. শ্রেণিবৈষম্য দূর করে
খ. দৃষ্টিভঙ্গি প্রসার করে
গ. বাস্তবকে তুলে ধরে
ঘ. ধনিকশ্রেণির প্রভাব হ্রাস করে
উত্তর: ক. শ্রেণিবৈষম্য দূর করে
উদ্দীপকটি পড়ে ৫৯ ও ৬০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
নাঈমাদের বাড়ির পাশে বিশাল এক ফলের বাগান। সারাদিন সে বাগানে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে দিন কেটে যায় । এই জন্য সে সারাক্ষণ মায়ের বকুনি খায়।
৫৯. উদ্দীপকের নাঈমা ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের কার চরিত্র নির্দেশ করে?
ক. অপু খ. দুর্গা
গ. হরিহর ঘ. পটলি
উত্তর: খ. দুর্গা
৬০. উদ্দীপকের চরিত্র ও ‘আম–আঁটির ভেঁপু‘ গল্পের দুর্গাকে বাড়ির লোক কীভাবে নিয়েছে?
ক. দুষ্টুমি মেনে নিয়েছে
খ. শাসন করেছে
গ. দুষ্টুমিতে সাহায্য করেছে
ঘ. আদালতে নালিশ করেছে
উত্তর: খ. শাসন করেছে
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১: একই পরিবারের মকবুল, আবুল, সুরত সবাই বেশ পরিশ্রমী। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গাচাষ করে, লাকড়ি কাটে, মাঝিগিরি করে, কখনো কখনো অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের স্ত্রীরাও বসে নেই। ভাগ্যের উন্নতির জন্য পাতা দিয়ে পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় মরিচ, লাউ, কুমড়া ফলায়, বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে। কোনরকমে জীবন চলে যাচ্ছে তাদের।
ক. দুর্গার বয়স কত?
খ. বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের মূলভাবকে কতটুকু ধারণ করে? যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর।
খ. আর্থিক দুরবস্থার কথা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না। হরিহরকে দশঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের এক লোক একবার তাদের গায়ে চলে এসে বামুন হিসেবে সপরিবারে বসবাস করার প্রস্তাব দেয়। আর্থিক চরম দুরবস্থা সত্ত্বেও হরিহর প্রস্তাবটিতে সরাসরি সম্মতি দেয়নি। কারণ, এতে সদৃগোপ সম্প্রদায়ের লোকেরা হরিহরের দারিদ্র্যের বিষয়টি টের পেয়ে যাবে। অধিকন্তু, হরিহরের অনেক ধার-দেনা ছিল। আবাস পরিবর্তনের সংবাদ শুনে পাওনাদাররা এসে তার কাছে টাকা চাইবে। এসব কারণে | বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না।
গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে বর্ণিত হরিহর-সর্বজয়ার জীবিকা নির্বাহের দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর নিজ গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে। পাশাপাশি সে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পৌরহিত্য করে, দীক্ষা দেয়। বিনিময়ে যা পায় তা দিয়েই সংসার চালায়। তার স্ত্রী সর্বজয়াও নিজ হাতে সংসারের যাবতীয় কাজ করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত মকবুল, আবুল, সুরতের নিজস্ব জমি নেই। জীবিকার তাগিদে তারা অন্যের জমি বর্গাচাষ করে, কারো লাকড়ি কাটে, অন্যের নৌকায় মাঝিগিরি করে, আবার মাঝে মাঝে কামলা খাটে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে, পাটি বোনে, বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন সবজি ফলায়, শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে।
দেখা যাচ্ছে, ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর-সর্বজয়ার মতো উদ্দীপকের মকবুল-আবুলসুরত এবং তাদের স্ত্রীরা বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে।
ঘ. উদ্দীপকটি আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের মূলভাবকে আংশিক ধারণ করে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পটি প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাইবোনের আনন্দঘন জীবনকে ঘিরে আবর্তিত। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও অপু ও দুর্গার শৈশবে দারিদ্র্যের কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। গ্রামীণ ফলফলাদি আহারের আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের বিস্ময় ও কৌতূহল গল্পটির মূল উপজীব্য। পাশাপাশি এতে জীবিকার তাগিদে হরিহর-সর্বজয়ার জীবন-সংগ্রামের দিকটিও উঠে এসেছে।
উদ্দীপকে জীবন-সংগ্রামে নিয়োজিত কিছু মানুষের কথা বর্ণিত হয়েছে যারা দুমুঠো খাবারের জন্য অন্যের জমি বর্গাচাষ করে, লাকড়ি কাটে, মাঝিগিরি করে, কিংবা কামলা খাটে। অবস্থার উন্নতিকল্পে তাদের স্ত্রীরাও নানারকম কাজে নিয়োজিত থেকে দিন কাটায়। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহর-সর্বজয়ার জীবন-সংগ্রাম ছাড়াও অপু-দুর্গার আনন্দঘন শৈশবের কথা বর্ণিত হয়েছে।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে কেবল মকবুল, আবুল, সুরত এবং তাদের স্ত্রীদের জীবন সংগ্রামের দিকটিই ফুটে উঠেছে। কাজেই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের আংশিক প্রতিফলিত রূপ।
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২ : ছোট ছেলেটার কয়দিন থেকে ভীষণ জ্বর। বিধবা ফুলবানু হাঁসের কয়েকটা ডিম বেচে ছেলের চিকিৎসা করালেও এখন আর সে সামর্থ্যও নেই। প্রতিবেশি জরিনার কাছে ধার নেবে কেমন করে আগের ধারটাই যে শোধ হয়নি।
ক. অপুর দিদির নাম কী?
খ. ‘আমার কাপড় যে বাসি’- অপু একথা কেন বলেছিল?
গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের যে দিক ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ফুলবানু কি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার প্রতিচ্ছবি? তোমার মতামত উপস্থাপন করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. অপুর দিদির নাম দুর্গা।
খ. বাসি কাপড়ে তেলের ভাড় ছুঁলে মায়ের হাতে পিটুনি খেতে হতে পারে এই আশঙ্কায় অপু প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে। আমের কুসি জারানোর (মাখানোর) জন্য দুর্গার তেল, নুন ও লঙ্কার প্রয়োজন ছিল। ছোট ভাইটিকে তাই সে তেল আর নুন নিয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু তৎকালীন গ্রামীণ সমাজে রান্নাঘরকে পবিত্র জ্ঞান করে রান্নার উপকরণ বিশেষ যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হতো। তাই বাসি কাপড়ে রান্নাঘরে গিয়ে তেলের ভাড় ছুঁলে তা এঁটো হয়ে যাবে বলে মা মারতে পারে এই ভয়ে অপু প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।
গ. উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সংসারের হতদরিদ্র অবস্থার দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণ এক হতদরিদ্র পরিবারের আখ্যান বর্ণিত হয়েছে। হরিহরের সামান্য আয়ে সংসার চলে না বলে ধার-দেনা করায় সর্বজয়াকে প্রতিবেশীদের কথা শুনতে হয়। তাদের সংসারের এমন অভাব-অনটনের চিত্র আলোচ্য উদ্দীপকেও লক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে অসহায় বিধবা ফুলবানুর দারিদ্র্য ক্লিষ্ট সংসারের চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। ছোট ছেলেটা জ্বরে কাবু হলেও তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য তার নেই। তাছাড়া পূর্বের ধার শোধ করেনি বলে প্রতিবেশীর কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় অর্থসাহায্য সে পায় না। ফলে ছেলের চিকিৎসা করানোটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আলোচ্য ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়ার সংসারেরও একই অবস্থা। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে প্রায়শই তাকে ধার-দেনা করতে হয়। অবস্থা এমন যে, পাওনাদারদের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে স্বামীর ঘর ছেড়ে যাওয়ার কথা পর্যন্ত ভাবে সে। শত চেষ্টার পরও সর্বজয়া সন্তানদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিতে পারে না যা উদ্দীপকের ফুলবানুর সংসারের দৈন্যদশাকেই নির্দেশ করে।
অর্থাৎ উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সংসারের হতদরিদ্র অবস্থার দিকটিই ফুটে উঠেছে।
ঘ. সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, দারিদ্র্য এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার সূত্রে উদ্দীপকের ফুলবানু ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার প্রতিচ্ছবি।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহরের স্ত্রী। হরিহরের অভাবের সংসারে কষ্ট করে কোনোমতে দিন চলে তার ধারের টাকা ফেরত দিতে পারে না বলে পাওনাদাররা বাড়িতে হানা দেয়, কথা শোনায়। তবুও হাল ছাড়ে না সর্বজয়া, সন্তানদের মুখ চেয়ে কঠিন হাতে সংসারের হাল ধরে।
উদ্দীপকে ফুলবানুর জীবনযাতনার দিকটি ফুটে উঠেছে। স্বামী নেই বলে তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। সামান্য আয়ে অতিকষ্টে দিন কাটলেও ছেলের জ্বর হওয়ায় অকূল সাগরে পড়ে সে। নিরুপায় ফুলবানু হাঁসের কয়েকটি ডিম বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা শুরু করে। কিন্তু অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। এমনকি পূর্বের ধার শোধ হয়নি বলে প্রতিবেশীর থেকে অর্থসাহায্য নেওয়ারও উপায় থাকে না। তার এহেন দুরবস্থার দিকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সর্বজয়ার জীবনযাত্রায় লক্ষিত হয়।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়া এবং উদ্দীপকের ফুলবানুর মধ্যে শাশ্বত পল্লিমায়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। সর্বজয়া যেমন শত অভাবের মধ্যেও সন্তান দুটিকে আগলে রাখতে চেয়েছে, তাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে তৎপর হয়েছে, উদ্দীপকের ফুলবানুও তেমনি সন্তানের কথা ডেবে নিজেই। সংসারের হাল ধরেছে। অভাব তাদের দুজনেরই নিত্যসঙ্গী। অভাবের কারণে ছেলেমেয়েকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিতে পারে না বলে সর্বজয়ার আক্ষেপের যেন শেষ নেই।
অন্যদিকে অর্থাভাবে অসহায় ফুলবানু ছেলের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারে না। অর্থাৎ সন্তান বাৎসল্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং জীবনযাতনার ধরন এদের একই। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের ফুলবানু আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সর্বজয়ার প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন-৩ বাঁধন বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সে ভীষণ ডানপিটে। সারাক্ষণ টো টো করে ঘুরে বেড়ানোই তার প্রধান কাজ। তাকে দেখা যায় কখনো নদীর তীরে, কখনো বনেবাদাড়ে কার বাগানে আনারস পেঁকেছে, কলা হলুদ রং ধারণ করেছে, কোন গাছের আম খেতে ভারী মিষ্টি এ খবর বাঁধনের চেয়ে আর কেউ ভালো জানে না। তার উৎপাতে সবাই অতিষ্ঠ। তার বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের অভিযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। সবকিছু মিলিয়ে তার মা সারাক্ষণ ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।
ক. হরিহর কাজ সেরে কখন বাড়ি ফিরল?
খ. ‘হাবা একটা কোথাকার, যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে।’- দুর্গা একথা বলেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের বাঁধনের সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের আংশিক ভাব প্রকাশ করছে, সমগ্র ভাবটি আরও ব্যাপক যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখো।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. দুপুরের কিছু পর হরিহর কাজ সেরে বাড়ি ফিরল।
খ. মায়ের সামনে অপু আম খেয়ে দাঁত টক হয়ে গিয়েছে- এমন কথা বলায় দুর্গা অপুকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছিল। দুর্গা পটলিদের বাগানে পড়ে থাকা আম কুড়িয়ে এনে তেল আর নুন দিয়ে মাখিয়ে নিজে ও ছোট ভাই অপু মিলে মজা করে খায়। পরে মায়ের দেওয়া চালভাজা খেতে গিয়ে অপু মায়ের সামনে বলে ফেলে, “উঃ চিবানো যায় না। আম খেয়ে দাঁত টক হয়ে গিয়েছে”। একথা শুনে মা দুর্গাকে বকা দেয়। এতে দুর্গা ক্ষিপ্ত হয়ে অপুকে বলে, ‘হাবা একটা কোথাকার, যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে।
গ. দুরন্তপনার দিক থেকে উদ্দীপকের বাঁধনের সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
বাল্যবয়সে প্রায় ছেলেমেয়েদের মাঝে দুরন্তপনা লক্ষ করা যায়। এরা কোনো বাঁধা মানতে চায় না। স্বাধীনভাবে এর বাগানে, ওর বাগানে, অন্যদের বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। সাধারণত গ্রামীণ জীবনে এ দৃশ্য বেশি দেখা যায়। উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পে এমন দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে।
উদ্দীপকের বাঁধন ভীষণ ডানপিটে। সারাক্ষণ নদীর তীরে, বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোই তার প্রধান কাজ। প্রতিবেশীর বাগানের পাকা আনারস, কলা, আম প্রায়ই সে খেয়ে ফেলে। এতে প্রতিবেশীদের অভিযোগের অন্ত নেই। তাই তার মা সারাক্ষণ ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পেও এমন দুরন্ত চরিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় দুর্গা চরিত্রে। সে সারাক্ষণ গ্রামের নানা বাগানে, আমগাছ, জামগাছ তলায় ঘুরে বেড়ায়। আম জাম যা পায় কুড়িয়ে এনে খায়। তার মা তাকে বাড়িতে না পেয়ে প্রায়ই বকা-ঝকা করেন এবং অনেকটা উদ্বিগ্ন থাকেন।
তাই দুরন্তপনার দিক থেকে উদ্দীপকের বাঁধন আর ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা সমচরিত্রের অধিকারী।
ঘ. উদ্দীপকে শুধু একটি ছেলের দুরন্তপনার চিত্র উঠে এসেছে। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের একটি দরিদ্র পরিবারের জীবনচিত্র উদ্দীপকে নেই বলে এটি গল্পের আংশিক ভাব প্রকাশ করছে।
গ্রামের দরিদ্র মানুষদের জীবনচিত্র অত্যন্ত করুণ। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় আহারাদির ব্যবস্থা করতে পারে না। আদরযত্নও তেমন করতে পারে না। তাই তাদের ছেলেমেয়েরা বনেবাদাড়ে ঘুরে নানা ফল-পাকুড় খায়। এতে তারা অনেকটা দুরন্ত হয়ে ওঠে। দরিদ্র পিতামাতাও সন্তানদের চাহিদা মেটাতে না পেরে দুঃখভারাক্রান্ত জীবনযাপন করেন। দরিদ্র মানুষের এমন যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনচিত্র ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
উদ্দীপকের বাঁধন বিধবা মায়ের সন্তান। সে ভীষণ ডানপিটে। সারাক্ষণ নদীর তীরে, বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। মানুষের বাগানের আনারস, কলা, আম খেয়ে ফেলে। তার এমন দুরন্তপনার অভিযোগ যাকে প্রায়ই শুনতে হয়। বাঁধনকে নিয়ে মা উদ্বিগ্ন জীবন কাটান। ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পেও দুর্গা নামের এক বালিকার দুরন্তপনার চিত্র ভেসে ওঠে। সে গ্রামের মানুষের আম-জামতলায় ঘুরে বেড়ায়। কাঁচা-পাকা আম জাম খেয়ে সময় কাটায়। বাড়িতে বেশিক্ষণ থাকে না বলে তার মা ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।
উদ্দীপকে শুধু একটি বালকের দুরন্তপনার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। ‘আর আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুরন্ত বালিকার চিত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি এক দরিদ্র পরিবারের জীবনচিত্র অংকন করা হয়েছে। দুর্গার পিতার সামান্য আয়ে সংসার চলে না। ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় জামা-কাপড়, আহারাদির ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গার মা কেবল আহাজারি করে দিন কাটান। তাদের সংসারে বিরাট ঋণের বোঝা রয়েছে।
দরিদ্রক্লিষ্ট এমন গ্রামীণ সমাজের চিত্র উদ্দীপকে অনুপস্থিত বলে এটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের আংশিক ভাবকে প্রকাশ করছে। গল্পের ব্যাপক ভাব প্রকাশ করতে পারেনি। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।
প্রশ্ন–৪ : গল্পের চরিত্রই পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। চরিত্রের মুখ দিয়ে বলা কথাই একসময় তার নিজের কথায় পরিণত হয়। চরিত্রের মধ্যে পাঠক তখন নিজেকে খুঁজতে থাকে। বিশেষ ঐ চরিত্র তখন শুধু গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তা হয়ে ওঠে একজন ব্যক্তির সত্যিকারের মুখপাত্র। যখন ঐ চরিত্র আরও দশজনকে তার দিকে টেনে আনে, তখন তা কালকে অতিক্রম করে কালোত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
ক. দুর্গা কীসের ভেতরে কচি আমগুলো কেটে রেখেছিল?
খ. মায়ের সামনে সম্মুখ দুয়ার দিয়ে বাড়ি ঢুকতে দুর্গার সাহস হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকের বিশেষ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অনুসারে দুর্গার চরিত্র ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে দুর্গাকে কালোত্তীর্ণ চরিত্র বলা যায় কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. দুর্গা নারকেলের মালার মধ্যে কচি আমগুলো কেটে রেখেছিল।
খ. সারাদিন বাড়ির বাইরে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোয় মায়ের সামনে সম্মুখ দুয়ার দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দুর্গার সাহস হলো না। দুর্গা দশ-এগারো বছরের এক কিশোরী। এ বয়সে মেয়েরা ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে। বাড়ির বাইরে বিশেষত যায় না। কিন্তু দুর্গা মায়ের চোখে ফাঁকি দিয়ে সকাল থেকে বাড়ির বাইরে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। এ কারণেই দুপুরে সে মায়ের সামনে দিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে সাহস পায়নি।
গ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা তার শৈশবের চপলতা দিয়ে পাঠকের চিত্তকে চঞ্চল করে তোলে।
দুর্গা দশ-এগারো বছরের চপল এক কিশোরী। প্রকৃতির বুকে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। গাছের আম কুড়িয়ে আনা এবং পাড়া বেড়ানো তার কৈশোরের বৈশিষ্ট্যকেই আমাদের সামনে উজ্জ্বল করেছে। মাথার রুক্ষ চুল উড়িয়ে প্রকৃতির দবদাহকে উপেক্ষা করে সে ছুটে বেড়িয়েছে মাঠে-ঘাটে-পথে-প্রান্তরে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, গল্পের চরিত্রই গল্প পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। চরিত্রের মুখ দিয়ে বলা কথাই একসময় তারই কথায় রূপান্তরিত হয়। চরিত্রের মধ্যে পাঠক তখন নিজেকে খুঁজতে থাকে। আর যদি খুঁজে পায় তখন সে চরিত্র হয়ে ওঠে পাঠ কৈশোরের দুরন্তপনা খুব সহজেই একজন মানুষের শৈশবকে তার সামনে হাজির করতে পারে। দুর্গার মধ্যে সে খুঁজে নিতে চায় নিজেকে।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে দুর্গাকে কালোত্তীর্ণ চরিত্র বলা যায়, কেননা দুর্গার কৈশোরের মধ্যে লুকিয়ে আছে হাজারো পাঠকের ফেলে আসা শৈশব ও কৈশোর।
গল্পে দুর্গা প্রকতির কোলে বেড়ে ওঠা এত দুরন্ত কিশোরী। তার চপলতা তার বয়সের বৈশিষ্ট্যকে আমাদের সামনে উন্মোচিত করে। প্রকৃতি যেন তার আপন সান্নিধ্যে দুর্গাকে করে তুলছে অনন্য। তার প্রতিটি পদক্ষেপের মধ্যেই রয়েছে কৈশোরের আনন্দঘন দিক।
উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে চরিত্র যখন কোনো ব্যক্তির জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়, তখন তা শুধু একটি চরিত্র হয়ে থাকে না। একটি মানুষের জীবনের সম্পূর্ণ প্রতিমূর্তিকে তখন সে উপস্থাপন করে।
গল্পে দুর্গার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যে শৈশব ও কৈশোর মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তার চরিত্র যেকোনো মানুষকেই ফিরিয়ে দিতে পারে ফেলে আসা শৈশব ও কৈশোরের আনন্দ। শুধু তাই নয়, মানুষের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিও পুনর্জাগরিত হতে পারে দুর্গার মধ্য দিয়ে।
আর তা শুধু সে সময়ে নয়, এ সময়েও মানুষের হৃদয়কে স্মৃতিভারাতুর করতে পারে। এদিক থেকে বিচার করলে দুর্গার চরিত্রকে নিঃন্দেহে কালোত্তীর্ণ চরিত্র বলা যায়।
প্রশ্ন–৫ উদ্দীপক–১: পাড়ার বালকদের সর্দার সুজন। সারাদিন বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, এর ওর গাছের ফল ছেঁড়া, নদীতে দাপাদাপি করাই তার কাজ। শত দুরন্তপনার মাঝেও ছোট ভাই সুমনকে আগলে রাখে সে। তাকে রেখে কোনো খাবারও মুখে তোলে না।
উদ্দীপক–২: সারাক্ষণ সংসারে নাই–নাই, নাই–নাই আর ভালো লাগে না শেফালীর। ঘর থেকে বের হলে পাওনাদারদের তাগাদা তাকে অতিষ্ঠ করে । ছেলেরা কবে নতুন জামা পরেছে মনে পড়ে না তার।
ক. আজকাল লক্ষ্মী কোথায় বাঁধা পড়েছে?
খ. ‘ঠাকুরের হাঁড়ি দেখচি শিকেয় উঠেচে’- কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপক-২-এ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত দিকটিকে ছাপিয়ে উদ্দীপক-১-এর বক্তব্য ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে মন্তব্যটির সাথে তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা পড়েছে।
খ. ঠাকুরের হাঁড়ি দেখচি শিকেয় উঠেচে— কথাটি দ্বারা পারিবারিক অভাব-অনটন সম্পর্কে মানুষের ভাবনার স্বরূপ সর্বজয়ার কাছে উপস্থাপন করেছে হরিহর। রায়বাড়ির গোমস্তাগিরির কাজ ও এবাড়ি সেবাড়ি পুজো-আর্চা করে সংসার চলত হরিহরের। তাই সদগোপ সম্প্রদায়ের লোককে মন্ত্র দেওয়া ও জমিজমা পাওয়ার বিষয়টি তার কাছে নেহায়েত মন্দ বলে মনে হয় না। কিন্তু প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলে তারা হরিহরের প্রকৃত পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। এ কারণে সে মিথ্যে ডান দেখিয়ে একটু সময় নিয়েছে। সে বিষয়টি বোঝাতেই সর্বজয়াকে উক্তিটি করেছে।
গ. উদ্দীপক-২-এ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সংসারে অভাবের ফলে সর্বজয়ার অভিব্যক্তির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বজয়ার অভাবের সংসার; এ অভাবকে সে বিবাহিত জীবনের শুরু থেকেই সঙ্গী করেছে বলে মনে হয়। কিন্তু সন্তানদেরজীবনে অভাবের এ তাড়না সে দেখতে চায় না। তাই বিভিন্নভাবে ধার-দেনা করে টাকার সংস্থান করে সে। স্বামীর অপ্রতুল রোজগারে ধারও ঠিকমতো শোধ দিতে পারে না সর্বজয়া। তাই পাওনাদারদের চোখ এড়িয়ে চলতে হয় তাকে। কিন্তু এত কিছু করেও অপুর গায়ে নতুন জামা ওঠে না।
উদ্দীপকে শেফালির সংসারে শুধু অভাবের তাড়না। চারদিকে শুধু নেই নেই রব; যা তার মনঃকষ্টের কারণ। সংসারের অভাব মেটানোর তাগিদে তাকে ধার করতে হয়। সে কারণে পাওনাদাররা তাগাদা দিয়ে তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। ছেলেদের পরনে বহুদিন সে নতুন জামা দেখেনি। শেফালির এ অবস্থা আমাদের সর্বজয়ার কথাকেই মনে করিয়ে দেয়।
তাই বলব, উদ্দীপক-২-এ ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সংসারে অভাবের ফলে সর্বজয়ার অভিব্যক্তির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. উদ্দীপক-১-এ চিরায়ত শৈশবের দিকটি ফুটে উঠেছে; এটিই ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের প্রধান দিক বলে আমি মনে করি।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে অপু ও দুর্গার মধ্য দিয়ে মানুষের চিরায়ত শৈশবকে দেখানো হয়েছে। তাদের দুরন্তপনা, পাড়াগাঁয়ে ঘুরে বেড়ানো, পরের গাছের ফল চুরি করে খাওয়া বা নানা অজাচিত কল্পনা আমাদের প্রত্যেককেই নিজ শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এ গল্পের লেখকের উদ্দেশ্যও ছিল তেমনটিই।
উদ্দীপকের সুজন ও তার ভাই সুমনের মধ্যে গল্পের অপু ও দুর্গার ছায়াপাত ঘটেছে। সুজন বালকদের সর্দার; বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, পরের গাছের ফল ছেঁড়া ও নদীতে দাপাদাপিই তার কাজ। তবে শত দুরন্তপনার মধ্যেও সে ছোট ভাইকে আগলে রাখে।
উক্ত আলোচনা থেকে বলতে পারি, উদ্দীপক-২-এ গল্পের সর্বজয়ার সংসারের অভাবের দিকটিকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও উদ্দীপক-১-এ গল্পের মূল বিষয় অর্থাৎ মানুষের চিরায়ত শৈশবের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। যা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি যে, উদ্দীপক-১-এ যে শৈশবের বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে তাকেই গল্পের প্রধান বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্ন–৬ স্বামী দুই সন্তান নিয়ে পুষ্পরানির সংসার। দিনমজুর স্বামীর সামান্য আয়ে অতিকষ্টে তার সংসার চলে। সন্তানদের ভালো খেতে–পরতে দিতে না পারলেও পরম মমতায় তাদের আগলে রাখেন। দুষ্টুমীর কারণে মাঝে মধ্যে বকাঝকা করলেও অন্তরে তাদের অতি গভীর মমতা অনুভব করেন।
ক. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পের রচয়িতা কে?
খ. নীলমণি রায়ের ভিটা জঙ্গলাবৃত হইয়া পড়িয়া আছে।’- কেন?
গ. উদ্দীপকের পুষ্পরানির সংসারের সঙ্গে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সংসারের সাদৃশ্যগত দিক তুলে ধরো।
ঘ. পুষ্পরানি ও সর্বজয়া উভয়েই পল্লিমায়ের শাশ্বত চরিত্র উদ্দীপক ও ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পের আলোকে একথার উপযুক্ত বিচার করো।
৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ শীর্ষক গল্পের রচয়িতা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
খ. নীলমণি রায়ের মৃত্যু হওয়াতে তার স্ত্রী-সন্তানেরা সে ভিটা পরিত্যাগ করেছে; তাই ভিটাটি জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে আছে। হরিহর ও তার জ্ঞাতি-ভ্রাতা নীলমণি রায় পাশাপাশিই বাস করত। কিন্তু সম্প্রতি নীলমণি রায় মারা গেছে। পরিবারে তার স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা ছিল। তার মৃত্যুর পরে তারা এ বাড়িতে আর থাকেনি; নিজের পিত্রালয়ে গিয়ে উঠেছে। এ কারণে বাড়িটি পরিত্যক্ত ও জলাবৃত অবস্থায় পড়ে আছে ।
গ. উদ্দীপকের পুস্পানির সংসারের সঙ্গে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার সংসারের অর্থনৈতিক ও মানবিক দিকের সাদৃশ্য রয়েছে।
সর্বজয়ার সংসারে অভাব নিত্যদিনের ব্যাপার। হরিহরের অনিয়মিত রোজগারে তার সংসার ঠিকমতো চলে না। ছেলেমেয়েদের গায়ে শেষ কবে নতুন কাপড় উঠেছে তা সে মনে করে বলতে পারে না। কিন্তু তাতে তার সংসারে সুখের কোনো কমতি হয়নি। ওই অভাবের মধ্যে ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি ফোটায় সর্বজয়া। তাদের নানা আবদারের কথাও শোনে এবং কোনো কোনোটি পূরণও করে। মায়ের এইটুকু স্নেহ পেয়ে ছেলেমেয়েরাও খুশিতে নেচে ওঠে।
উদ্দীপকে স্বামীর সামান্য আয়ে অতিকষ্টে পুষ্পরানির সংসার চলে। তবে সন্তানদের ভালোমতো খেতে দিতে না পারলেও তাদের পরম স্নেহে ভরে রাখে পুষ্পরানি। তারা দুষ্টুমি করলে মাঝে মাঝে বকাবকিও করে সে; কিন্তু তাদের জন্য অন্তরের গভীরে থাকা মমতার কোনো কমতি হয় না তাদের। পুষ্পরানির এ বৈশিষ্ট্যগুলো ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়ার কথাকেই মনে করিয়ে দেয়।
তাই বলব, সংসারের অর্থনৈতিক ও মানবিক দিকের বৈশিষ্ট্যের বিচারে সর্বজয়ার সঙ্গে পুষ্পরানির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘ. পুষ্পরানি ও সর্বজয়া উভয়েই পল্লিমায়ের শাশ্বত চরিত্র- মন্তব্যটি যথার্থ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে সর্বজয়ার মধ্যে চিরায়ত মাতৃত্বের ছায়া লক্ষ করা যায়। সংসারে তার নিত্য অভাব লেগেই থাকে। কিন্তু তাতে সন্তানদের প্রতি স্নেহের কোনো কমতি হয় না। বরং তাদের সামান্যতম আবদার রক্ষা করতে পারলে মা হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করে সর্বজয়া। হরিহরের অনিয়মিত রোজগারে প্রায়ই সংসারে বেশ টানাটানি পড়ে; সর্বজয়া যেকোনোভাবে তার সুরাহা করে সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে দেয়।
উদ্দীপকে পুষ্পরানির বৈশিষ্ট্য অনেকটা সর্বজয়ার মতোই। স্বামীর সামান্য আয়ে তার সংসার চলে। সন্তানদের সে ভালোমতো খেতে-পরতে দিতে পারে না। কিন্তু তাতে করে তাদের প্রতি স্নেহের কোনো কমতি হয় না তার। তারা দুষ্টুমি করলে সে তাদের বকাবকিও করে; তবে তারপরও হৃদয়ে তাদের জন্যে গভীর স্নেহ অনুভব করে সে।
উদিষ্ট আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বজয়া এবং পুস্পানি দুজনেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে মাতৃত্বের সাক্ষর রেখেছে। সংসারের প্রতি তাদের যেমন অপরিমেয় ভালোবাসা ছিল তেমনি সন্তানদের প্রতি তাদের ছিল সীমাহীন অপত্যস্নেহ। তাই তাদের উভয়কেই পরিমায়ের শাশ্বত চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
প্রশ্ন–৭ : বুদ্ধদেব বসুর নদীর স্বপ্ন কবিতায় কানাই ও ছোকানু নামে দুই ভাইবোনের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে কানাই তার ছোট বোন ছোকানুর প্রতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল আচরণ করে। নৌকা ভ্রমণে গিয়ে সে সবসময় ছোকানুকে চোখে চোখে রাখে। এছাড়া ছোকানু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলে সে মাঝিকে অনুরোধ করে তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য।
ক. দুর্গা আঁচলের খুঁট খুলে কী বের করল?
খ. অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটল কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সম্পৃক্ততা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কানাই ও দুর্গাকে কি পরস্পরের প্রতিবিম্ব বলা যায়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. দুর্গা আঁচলের খুঁট খুলে কতকগুলো শুকনো রড়া ফলের বিচি বের করল।
খ. মা ক্ষার কেচে ঘাট থেকে চলে আসায় অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটল। পটলিদের বাগান থেকে আম এনে খুব সাবধানে খাচ্ছিল অপু ও দুর্গা। মায়ের বাড়িতে ঢোকার ওপর তাদের তীক্ষ দৃষ্টি ছিল। তারপরও মনের আনন্দেই চলছিল তাদের আম খাওয়া। কিন্তু হঠাৎ করেই মা বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। ফলে অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
গ. ছোটদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার বিষয়ে উদ্দীপকের কানাই ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
গল্পে আমরা লক্ষ করি, দুর্গা তার ভাই অপুকে অত্যধিক স্নেহ করে। ভাইকে ছাড়া সে কোনোকিছুই খায় না। তারা উভয়েই মাকে খুব ভয় পায়। মায়ের কাছে আম খাওয়ার কথা বলে ফেলায় দুর্গার কাছে অপু বকুনি খায়। কিন্তু তারপরও ভাইয়ের প্রতি তার স্নেহশীল আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় না।
উদ্দীপকে কানাইও তার বোনের প্রতি স্নেহশীল ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করেছে। বোনকে সে সবসময় চোখে চোখে রেখেছে। এছাড়া নৌকাভ্রমণের সময় মাঝিকে অনুরোধ করেছে বোনকে দেখে রাখার জন্য। কানাইয়ের এ আচরণের সঙ্গে গল্পের দুর্গার আচরণ সম্পূর্ণ না মিললেও সহোদরের প্রতি স্নেহ প্রদর্শনের দিক থেকে তারা একসূত্রে বাঁধা। এদিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে গল্পটি সম্পৃক্ত তা পাওয়া যায় ।
ঘ. কানাই ও দুর্গা দুজনেই ছোট ভাই-বোনের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহশীল আচরণ করেছে। এ বিবেচনায় তাদের একে অপরের প্রতিবিম্ব বলা যায়।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গা তার ছোট ভাই অপুকে নির্বুদ্ধিতার জন্য বারবার বকুনি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ভাইয়ের প্রতি তার স্নেহের কোন ঘাটতি হয়নি। শুকনো রড়া ফলের বিচিগুলো কুড়িয়ে সে ভাইয়ের জন্য আলাদা করে রেখেছে। এতে ভাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।
উদ্দীপকে কানাইও তার বোনের প্রতি স্নেহশীল আচরণ করেছে। বোনকে সে সবসময় চোখে চোখে রেখেছে। বোনের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকেই সে মাঝিকে অনুরোধ করেছে যেন ছোটবোনটিকে সে দেখে রাখে।
উদ্দীপক ও গল্পে কানাই ও দুর্গা দুজনেই ছোট ভাইবোনের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহশীল আচরণ করেছে। দুর্গা ভাইয়ের প্রতি ক্ষেত্র বিশেষে একটু রূঢ় আচরণ করলেও কানাইয়ের মধ্যে সেরকম কোনো বিষয় দেখা যায় না। তবে তারা উভয়েই ছোট ভাই বোনের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।
এদিক থেকে বিচার করলে কানাই ও দুর্গাকে একে অপরের প্রতিবিম্ব বলা যায়।