অভাগীর স্বর্গ
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় [১৮৭৬–১৯৩৮]
উৎস : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি সুকুমার সেন সম্পদিত ‘শরৎ সাহত্যিসমগ্র’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে নেওয়া হয়েছে। সমাজের নিচু সম্প্রদায়ের এক স্বামী-পরিত্যক্তা নারী অভাগী। কাঙালী তার একমাত্র ছেলে।
* গুরুত্বপূর্ণ তথ্য *
শরৎচন্দ্রের জীবনে সন–তারিখঃ
জন্ম : ১৮৭৬ সালে ১৫ই সেপ্টেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবনন্দপুর গ্রামে। ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি লাভ।
মৃত্যু : ১৯৩৮ সালে ১৬ই জানুয়ারি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
শরৎচন্দ্রের বিশেষত্ব ও সাহিত্যিক পরিচয়:
- প্রধান পরিচয়- কথাসাহিত্যিক।
- অপরাজেয় কথাশিল্পী।
সাহিত্যের নানা শাখায় সমৃদ্ধি: উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ।
প্রবাস জীবনে সাহিত্য সাধনা শুরু এবং অল্প দিনেই খ্যাতি অর্জন।
বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক।
সাহিত্যের রূপ বা আঙ্গিক– ছোটগল্প ।
ছদ্মনাম – অনিলা দেবী।
ব্যক্তিজীবন-১৯০৩ সালে ভাগ্যের অন্বেষণে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) যান এবং রেঙ্গুনে (বর্তমান ইয়াংগুন) অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে কেরানি পদে চাকরি করেন। এখানেই তার সাহিত্যসাধনার শুরু হয়।
উল্লেখযোগ্য রচনা
উপন্যাস: বিরাজ বৌ, দেবদাস, পরিণীতা, পল্লিসমাজ, বৈকুণ্ঠের উইল, শ্রীকান্ত, চরিত্রহীন, দত্তা, গৃহদাহ, দেনাপাওনা, শেষ প্রশ্ন।
গল্পগ্রন্থ: বড়দিদি, রামের সুমতি, বিন্দুর ছেলে, মেজদিদি, পণ্ডিতমশাই, ছবি ।
এসএসসি বাংলা সকল অধ্যায় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
‘অভাগীর স্বর্গ ’ গল্পের পরিচিতি :
• রচয়িতা- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
• উৎসগ্রন্থ- শরৎ সাহিত্যসমগ্র।
• কেন্দ্রীয় চরিত্র- অভাগী (কাঙালীর মা)।
• নামকরণ- জাতপ্রথার অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের ওপর ভিত্তি করে।
• বিষয়বস্তু সামন্তবাদের নির্মম রূপ ও নীচ শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট।
গল্পের ঘটনা ও বিষয়বস্তুর খুঁটিনাটি :
- ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী মারা যান-সাতদিনের জ্বরে ভূগে।
- তিনি সংসারকরেছিলেন – পঞ্চাশ বছর।
- ঠাকুরদাস মুখুয্যের ছিল – চার ছেলে, তিন মেয়ে।
- ঠাকুরদাস মুখুয্যে স্ত্রী মারা গেলে উৎসব বাধিয়ে দিল —মুখুয্যের চার ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলেপুলে, জামাইরা, প্রতিবেশীর দল, চাকর-বাকর সবাই মিলে।
- ঠাকুরদাসের স্ত্রী মারা গেলে বিষয়টি শোকের ব্যাপার মনে হলো না, কারণ— পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে ও কলরবের আতিশয্যে।
- শ্মশানে পূর্বাহ্নেই সঞ্চিত হয়েছিল — কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি উপকরণ।
- ঠাকুরদাসের স্ত্রী স্বর্গে যায়—স্বামী, পুত্র, কন্যা, নাতি, নাতনী,দাস, দাসী, পরিজন সমস্ত সংসার উজ্জ্বল রেখে।
- কাঙালীর মার নাম ছিল— অভাগী।
- কাঙালীর বাবার নাম— রসিক বাঘ।
- কাঙালীদের বসবাস— দুলে পাড়ায়।
- গল্পে কাঙালী চরিত্রটিকে ডাকা হয়েছে — কাঙালী, ক্যাঙলা, ক্যাঙালী, কাঙালীচরণ নামে।
- কাঙালী মায়ের মৃত্যুর পরে মৃতদেহের সৎকারের জন্যে প্রার্থনা করেছিল — জমিদার, বৃদ্ধ ঠাকুরদাস, ভট্টাচার্য মহাশয় প্রভৃতি লোকের কাছে।
- কাঙালীর মা যখন মারা যায় তখন কাঙালীর বয়স — পনেরো বছর ।
- কাঙালীর মা মারা যায় — শেষ রাতে।
গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র: কাঙালী, অভাগী (কাঙালীর মা), ঠাকুরদাস মুখুয্যে, অধর রায়, দারোয়ান।
শ্রেণি: ‘অভাগীর স্বর্গ রচনাটি একটি ছোটগল্প ।
* তথ্য কণিকা *
১. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন— ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর।
২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থান — পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রাম।
৩. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন— ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি।
৪. শরৎচন্দ্রের ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে— এফ.এ শ্রেণিতে পড়ার সময়।
৫. শরৎচন্দ্র ভাগ্যান্বেষণে বার্মা যান— ১৯০৩ সালে।
৬. শরৎচন্দ্র জগত্তারিণী পদক লাভ করেন— ১৯২৩ সালে ।
৭. শরৎচন্দ্র জগত্তারিণী পদক লাভ করেন — কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
৮. শরৎচন্দ্র ডি.লিট উপাধি লাভ করেন— ১৯৩৬ সালে।
৯. শরৎচন্দ্র ডি.লিট উপাধি লাভ করেন — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১০. ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের রচয়িতা- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।
১১. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটির রচয়িতা— শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
১২. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভাগীর স্বর্গ’ একটি— ছোটগল্প ।
১৩. ‘অভাগীর স্বর্গ’ সংকলিত হয়েছে- ‘শরৎ সাহিত্যসমগ্র’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে।
১৪. ‘শরৎ সাহিত্যসমগ্র’ সম্পাদনা করেছেন— সুকুমার সেন ।
১৫. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের প্রধান চরিত্র— অভাগী।
১৬. গল্পটির মূল বিষয়— সামন্তবাদী সমাজে হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণা ।
১৭. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্ত প্রভু— ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়।
১৮. এ গল্পে অভাগীর পরিণতি — করুণ মৃত্যু এবং অবহেলিত সৎকার ।
১৯. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের নামকরণ করা হয়েছে— অন্তর্নিহিত তাৎপর্যের ওপর।
২০. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি লিখিত হয়েছে— সাধু ভাষারীতিতে।
২১. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী মারা যান— সাতদিনের জ্বরে ভুগে।
২২. মুখুয্যের ছিল — চার ছেলে, তিন মেয়ে।
২৩. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী সংসার করেছিলেন — পঞ্চাশ বছর ।
২৪. গ্রামের শশান ছিল— গরুড় নদীর তীরে।
২৫. কাঙালীর মায়ের নাম— অভাগী ।
২৬. কাঙালীর বাবার নাম— রসিক বাঘ।
২৭. কাঙালীর মা মারা যায় যখন কাঙালীর বয়স— পনেরো বছর।
২৮. কাঙালীদের বসবাস— দুলে পাড়ায়।
২৯. গ্রামে নাড়ী দেখতে জানত— ঈশ্বর নাপিত।
৩০. কাঙালীর মা মারা যায়— শেষ রাতে।
৩১. ‘মুখোপাধ্যায়’ পদবীর লোকমুখে উচ্চারিত বিকৃত রূপ — মুখুয্যে।
৩২. ‘বর্ষীয়সী’ শব্দের অর্থ — অতি বৃদ্ধা বা বয়সে সকলের মধ্যে বড় স্ত্রীলোক।
৩৩. ‘শশক’ শব্দের অর্থ — খরগোশ।
৩৪. মৃত ব্যক্তির সৎকারকে বলা হয়— অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
৩৫. ‘সগ্য’ হলো— ‘স্বর্গ’ শব্দের লোকমুখে উচ্চারিত বিকৃত রূপ।
৩৬. ‘অন্তরীক্ষ’ শব্দের অর্থ — আকাশ বা গগন।
৩৭. ‘প্রসন্ন’ শব্দের অর্থ — সন্তুষ্ট বা খুশি।
৩৮. দুলে বলা হয় — পালকি বহনকারী হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষকে।
৩৯. ‘ইন্দ্রজাল’ শব্দের অর্থ — জাদুবিদ্যা।
৪০. ‘মুষ্টিযোগ’ শব্দের অর্থ — টোটকা চিকিৎসা।
৪১. ‘অশন’ শব্দের অর্থ — খাদ্যদ্রব্য বা আহারের বস্তু।
৪২. শ্মশানটি অবস্থিত — গ্রামের একান্তে।
৪৩. বেলগাছটি ছিল — কুটীর প্রাঙ্গণে।
৪৪. বেলগাছটি কাটতে বাধা দেয় — জমিদারের দারোয়ান ।
৪৫. বেলগাছটি লাগিয়েছিল — কাঙালীর মা।
৪৬. শরৎচন্দ্র কেরানি পদে চাকরি করতেন — রেঙ্গুনে।
৪৭. শরচন্দ্রের ছাত্রজীবনের অবসান হয়— আর্থিক সংকটের কারণে।
৪৮. বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায় মহাশয় অতিশয় সংগতিপূর্ণ হয়েছিলেন — ধানের কারবারে।
৪৯. অভাগীর বাবা পেশায় ছিল — জেলে।
৫০. সমস্ত গ্রামবাসী প্রবল হরিধ্বনিতে অংশ নিল — শবযাত্রায়।
৫১. কাঙালীর মা কাঙালীকে কাজে না পাঠিয়ে শোনালেন — রূপকথা।
৫২. শেষ পর্যন্ত অভাগীর মুখে আগুন স্পর্শ করা হলো — খড়ের আঁটি জ্বালিয়ে।
৫৩. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তপ্রভূ — ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায় ।
৫৪. এ গল্পে অভাগীর পরিণতি — করুণ মৃত্যু এবং অবহেলিত সৎকার।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী কয়দিনের অসুখে মারা গেলেন?
উত্তর: ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী সাতদিনের অসুখে (জ্বরে) মারা গেলেন।
প্রশ্ন–২. গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত কে?
উত্তর: গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত ঈশ্বর নাপিত।
প্রশ্ন–৩. ‘সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়‘— কথাটি কে বলেছিল?
উত্তর: মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের বড় ছেলে বলেছিল— সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়।
প্রশ্ন–৪. কার মতো সতী–লক্ষ্মী দুলে পাড়ায় আর নেই?
উত্তর: কাঙালীর মা’র মতো সতী-লক্ষ্মী দুলে পাড়ায় আর নেই।
প্রশ্ন–৫. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কোন পদক প্রদান করেছিল?
উত্তর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জগত্তারিণী পদক প্রদান করেছিল।
প্রশ্ন–৬. ‘অভাগীর স্বর্গ‘ গল্পে জমিদারের গোমস্তার নাম কী?
উত্তর: জমিদারের গোমস্তার নাম অধর রায়।
প্রশ্ন–৭. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত সালে বার্মা যান?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯০৩ সালে বার্মা যান।
প্রশ্ন–৮. মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের দুই পায়ে কী লেপে দিয়েছিল?
উত্তর: মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের দুই পায়ে আলতা লেপে দিয়েছিল।
প্রশ্ন–৯. প্রজ্বলিত চিতার নীল রঙের ধোঁয়ার মধ্যে কাঙালীর মা কীসের চেহারা দেখতে পেয়েছিল?
উত্তর: প্রজ্বলিত চিতার নীল রঙের ধোঁয়ার মধ্যে কাঙালীর মা রথের চেহারা দেখতে পেয়েছিল।
প্রশ্ন–১০. কাঙালী কীসের কাজ শিখতে আরম্ভ করেছিল?
উত্তর: কাঙালী বেতের কাজ শিখতে আরম্ভ করেছিল।
প্রশ্ন–১১. মাকে বিশ্বাস করা কার অভ্যাস?
উত্তর: মাকে বিশ্বাস করা কাঙালীর অভ্যাস।
প্রশ্ন–১২. কাঙালী কবিরাজকে কয় টাকা প্রণামী দিয়েছিল?
উত্তর: কাঙালী কবিরাজকে এক টাকা প্রণামী দিয়েছিল।
প্রশ্ন–১৩. কবিরাজ কাঙালীকে কয়টি বড়ি দিয়েছিল?
উত্তর: কবিরাজ কাঙালীকে গোটা চারেক বড়ি দিয়েছিল।
প্রশ্ন–১৪. গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত কে?
উত্তর: গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ি দেখতে জানত।
এসএসসি সকল বিষেয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–১৫. কাঙালীদের ঘরের আঙিনায় কী গাছ ছিল?
উত্তর: কঙালীদের ঘরের আঙিনায় বেলগাছ ছিল।
প্রশ্ন–১৬. কুটির প্রাঙ্গণে বেলগাছটা কে লাগিয়েছিল?
উত্তর: কুটির প্রাঙ্গণে বেলগাছটা লাগিয়েছিল কাঙালীর মা।
প্রশ্ন–১৭. জমিদারের দারোয়ান কাকে চড় মেরেছিল?
উত্তর: জমিদারের দারোয়ান রসিককে চড় মেরেছিল।
প্রশ্ন–১৮. দারোয়ান কোন জাতের ছিল?
উত্তর: দারোয়ান হিন্দুস্থানি ছিল।
প্রশ্ন–১৯. কাছারির কর্তার নাম কী?
উত্তর: কাছারির কর্তার নাম অধর রায়।
প্রশ্ন–২০. অধর রায় গাছের দাম কত টাকা দাবি করে?
উত্তর: অধর রায় গাছের দাম পাঁচ টাকা দাবি করে।
প্রশ্ন–২১. কাঙালীকে গলাধাক্কা দিয়েছিল কে?
উত্তর: কাঙালীকে গলাধাক্কা দিয়েছিল পাড়ে নামক জমিদারের এক কর্মচারী।
প্রশ্ন–২২. কে মুখুয্যে বাড়ির শ্রাদ্ধের আয়োজন তত্ত্বাবধান করেছিলেন?
উত্তর: বৃদ্ধ ঠাকুরদাস মুখুয্যে বাড়ির শ্রাদ্ধের আয়োজন তত্ত্বাবধান ছিলেন।
প্রশ্ন ২৩. পাড়ে কার নাম?
উত্তর: জমিদারের পেয়াদার নাম পাড়ে।
প্রশ্ন–২৪. কোথায় গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হলো?
উত্তর: নদীর চরে গর্ত খুঁড়ে অভাগীকে শোয়ানো হলো।
প্রশ্ন–২৫. কাঙালীর হাতে খড়ের আঁটি জ্বেলে দিল কে?
উত্তর: কাঙালীর হাতে খড়ের আঁটি জ্বেলে দিল রাখালের মা।
প্রশ্ন–২৬. প্রণামী কী?
উত্তর: প্রণামী হচ্ছে পুরোহিত বা দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে অর্পিত অর্থ বা সম্পদ।
প্রশ্ন–২৭. ‘ইন্দ্রজাল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ইন্দ্রজাল’ শব্দের অর্থ জাদুবিদ্যা।
প্রশ্ন–২৮. ‘অশন’ মানে কী?
উত্তর: ‘অশন’ মানে খাদ্যদ্রব্য।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন?
উত্তর: অভাগীর পতিভক্তির পরিচয় পেয়ে রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। এক সময় রসিক দুলে তার স্ত্রী অভাগী ও পুত্র কাঙালীকে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে সে আর তাদের খোঁজ নেয় না। স্ত্রীর প্রাপ্য ভালোবাসা। বা তার প্রতি দায়িত্ব পালন কিছুই সে করেনি। তবুও মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় অভাগী রসিক দুলেকে খবর পাঠিয়ে বাড়ি আসতে বলে এবং তার অবশ বাহুখানা বাড়িয়ে দেয় স্বামীর পায়ের ধুলোর জন্য। তাই রসিক দুলে শত উপেক্ষা আর বঞ্চনা সত্ত্বেও নিজের প্রতি স্ত্রী অভাগীর ভক্তির পরিচয় পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলল।
প্রশ্ন–২. ‘রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়াইয়া রহিল’- কেন?
উত্তর: মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী অভাগী রসিকের পায়ের ধুলো চাওয়ায় রসিক বিস্ময়ে হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইল । অভাগী রসিকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। রসিক তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে ঘর-সংসার করছে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত অভাগী স্বমীর পদধূলি মাথায় নিয়ে স্বর্গে যেতে চায়। রসিক জীবনে কোনোদিন স্ত্রী অভাগীকে ভালোবাসা দেয়নি, অশন-বসন দেয়নি, কোনো খোঁজ-খবর রাখেনি। তদুপরি অভাগীর এমন ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখে রসিক হতবুদ্ধির মতো দাড়িয়ে রইল।
প্রশ্ন–৩. নাপিত কাঙালীর মায়ের হাত দেখে মুখ গম্ভীর করল কেন?
উত্তর: কাঙালীর মায়ের বাঁচার আশা না থাকায় নাপিত কাঙালীর মায়ের হাত দেখে মুখ গম্ভীর করল। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত গ্রামে ঈশ্বর নাপিত মানুষের নাড়ী দেখতে জানত। কাঙালীর মায়ের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে খবর দেওয়া হলো। তিনি এসে কাঙালীর মায়ের হাত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ গম্ভীর করলেন। কেননা কাঙালীর মায়ের বাঁচার আশা ছিল না এটা নাপিত বুঝতে পেরেছিলেন।
প্রশ্ন–৪. অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে তার দুঃখ যন্ত্রণা জর্জরিত জীবনের পরিসমাপ্তির ঘটনাপ্রবাহকে বোঝানো হয়েছে। প্রায় ত্রিশ বছর পার করে আসা অভাগীর জীবন জুড়ে ছিল ভাগ্যের নির্মম খেলা । তার মামা ছিল না, বাবা থেকেও নেই আর স্বামীকে সে পেয়েছিল সতীনের সম্পত্তি হিসেবে। অর্থাৎ তার জীবন ছিল নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। যে যখন মৃত্যুর পথযাত্রী তখনও তার কপালে চিকিৎসা জোটে না, জোটে না তার আকাঙ্ক্ষিত সৎকার, যেটিকে লেখক অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলেছেন।
প্রশ্ন–৫. ‘হায় রে অনভিজ্ঞ!’ কেন এ কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের জমিদার ও তাদের কর্মচারীদের সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে না পারায় কাঙালীকে ‘হায় রে অনভিজ্ঞ!’ বলা হয়েছে। কাঙালীর মা অভাগী স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছায় মুখাগ্নির প্রত্যাশা করেছিলেন। সেই ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে কাঙালী ও তার পিতাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। সে অনভিজ্ঞ কাঙালী অধর রায়ের কাছে বিচার চাইতে যায়। যথারীতি অধর রায় তার দারোয়ানকে সমর্থন করে। কাঙালীর এমন নির্বুদ্ধিতায় লেখক তাকে অনভিজ্ঞ বলেছেন।
প্রশ্ন–৬. ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও‘ –এখানে কাঙালীর মা কী ধরনের আশীর্বাদ চেয়েছিল?
উত্তর: উক্তিটির মাধ্যমে কাঙালীর মা মুখুয্যের স্ত্রীর আত্মার কাছে প্রার্থনা করেছিল তার মতো যেন সেও নিজ ছেলের হাতের আগুনটুকু পায় । মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বহুকষ্ঠের হরিধ্বনির সাথে যখন ছেলের হাতের মন্ত্রপুত আগুন মৃতের মুখে সংযোজিত হয়েছিল তখন কাঙালীর মার চোখ থেকে ঝরঝর করে জল পড়তে থাকে। মনে মনে সে তাই মৃত আত্মার প্রতি প্রার্থনা করে, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালীর হাতের আগুনটুকু পাই।
প্রশ্ন–৭. ‘সে যেন একটা উৎসব বাঁধিয়া গেল’- কেন?
উত্তর: ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়ের বর্ষীয়সী স্ত্রী মারা যাওয়ায় ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের উপস্থিতির ফলে একটা উৎসব উৎসব অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছিল। ঠাকুরদাস মুখুয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রীকে চির বিদায় জানানোর জন্য মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভিড় জমেছিল অসংখ্য মানুষের। আয়োজনেরও কোনো কমতি ছিল না। ফলে শোক ছাপিয়ে বরং একটা উৎসবের আমেজই ফুটে উঠেছিল। আর এই ধুমধামের শবযাত্রা দেখার জন্য সমস্ত গ্রামের মানুষও ভিড় জমিয়েছিল। ফলে তা একটা উৎসবের আকার লাভ করে।
প্রশ্ন–৮. ‘তাই তাহাদের সমস্ত জীবনটা তাহাদের নিজের নামগুলোকেই যেন আমরণ ভ্যাঙচাইয়া চলিতে থাকে।‘—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: কাঙালীর মায়ের মতো গরিব অভাগী মানুষদের সমস্ত জীবনটা তাদের নামগুলোকেই আমরণ ভ্যাঙচায়। গরিব মানুষের নামকরণও কষ্টের প্রলেপ দিয়ে মোড়াননা। তাই তাদের নামটাই তাদের আজীবন ভ্যাঙচায়। অভাগী যখন জন্মগ্রহণ করে তার মা মারা যায়। ফলে বাবা রাগ করে তার নাম রাখে ‘অভাগী। এই নামটাই তাকে আমরণ অভাগী করে রাখে। এমনকি মৃত্যুর সময়ও মিলে পোড়ানোর মতো কাঠ। ফলে অভাগী তার নামের মতোই আজীবন অভাগী থেকে যায়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন–৯. কাঙালীর মা কেন কাঙালীকে ভাত রেঁধে খাওয়ার জন্য বলেছিল?
উত্তর: মৃত্যুর পূর্বে সাংসারিক কাজকর্মে ছেলে কতটা পারঙ্গম তা দেখতেই অভাগী তার ছেলেকে রেঁধে খাওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রত্যেক মা-ই চায় তার ছেলে স্বাবলম্বী হোক। কাঙালীর মা-ও তার হেলের দক্ষতা দেখতে তাকে রেঁধে খাওয়ার জন্য বলে। কাঙালী অপটু হাতে রাঁধলেও তা স্বয়ংসম্পূর্ণতা পায়নি। তাই চোখের জল ফেলে দুঃখ প্রকাশ করে কাঙালীর মা কিভাবে রান্না করতে হয় তা শিখিয়ে যায় ।
প্রশ্ন–১০. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে তৎকালীন সমাজের নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে কীভাবে?
উত্তর: ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে সামন্তবাদের স্বরূপ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজের নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। কৌলিন্যনির্ভর তৎকালীন হিন্দু সমাজের নির্মম সামন্তবাদের শিকার অভাগী ও তার পরিবার। নিচু জাতের মানুষের সমাজে যে কোথাও কোনো স্থান নেই তারই স্পষ্ট চিত্র দেখা যায় ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে। ফলে অভাগী রথে চড়ে স্বর্গ যাওয়ার যে চিত্র কল্পনা করে তা আর সম্ভব হয়নি। কাঠের অভাবে শবদাহের পরিবর্তে তাকে দেওয়া হয় মাটি চাপা। আর নিচু জাত বলে কাঙালিকেও হতে হয় পর্যুদস্ত।
প্রশ্ন–১১. ঈশ্বর নাপিতের মুখ গম্ভীর দেখে অভাগী কী বুঝতে পারল?
উত্তর: ঈশ্বর নাপিতের মুখ গম্ভীর দেখে অভাগী বুঝতে পারল, তার অন্তিম সময় এসে গিয়েছে। অভাগীর অসুস্থতার সংবাদ গ্রামে প্রচারিত হলে ঈশ্বর নাপিত আসে তার নাড়ি পরীক্ষা করতে। গ্রামের মধ্যে সেই একমাত্র নাড়ি দেখতে পারত। অভাগীর নাড়ি দেখে পরিস্থিতি বিবেচনায় সে মুখ গম্ভীর করে। ঈশ্বর নাপিতের মুখের এ গম্ভীর ভাব দেখে অভাগী বুঝতে পারে যে তার অন্তিম সময় এসে গেছে।
প্রশ্ন–১২. রসিক দুলেকে জমিদারের দারোয়ানের চড় মারার কারণ কী?
উত্তর: নিজ আঙিনার বেলগাছ কাটতে যাওয়াই রসিক দুলেকে জমিদারের দারোয়ানের চড় মারার কারণ। অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তাকে যেন চিতায় পোড়ানো হয়। এ কারণে তার মৃত্যুর পর রসিক দুলে অভাগীর হাতে পোঁতা বেলগাছটা কাটতে যায়। জমিদারের অনুমতি ছাড়া কোনো গাছ কাটতে পারে না তারা। তাই জমিদারের বিনা অনুমতিতে গাছ কাটতে যাওয়ায় রসিক দুলেকে জমিদারের দারোয়ান চড় মারে।
প্রশ্ন–১৩. কাঙালীর ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে কাছারি বাড়ি যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: অত্যাচারের বিচার চাওয়া এবং গাছ কাটার অনুমতি পাওয়ার জন্য কাঙালী ঊর্ধ্বশ্বাসে জমিদারের কাছারি বাড়িতে গেল। রসিক দুলে স্ত্রী অভাগীর সৎকারের জন্য নিজের বাড়ির বেলগাছ কাটতে যাওয়ায় জমিদারের দারোয়ান তাকে চড় মারে । কাঙালী ভেবেছিল, এ অন্যায়ের কথা যদি জমিদারের কানে পৌছানো যায়; তাহলে সুবিচার হবে এবং গাছ কাটার অনুমতি মিলবে। তাই কাঙালী উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে কাছারি বাড়িতে গেল।
প্রশ্ন–১৪. ‘আমি হয়ত না খেতে পেয়ে এতদিনে কবে মরে যেতুম’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘আমি হয়ত না খেতে পেয়ে এতদিনে কবে মরে যেতুম’ – উক্তিটি দ্বারা কাঙালীকে বড় করার পেছনে তার মায়ের ত্যাগের দিকটিকে বোঝানো হয়েছে । কাঙালী যখন ছোট ছিল তখন তার বাবা তাকে ও তার মা অভাগীকে ফেলে বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। এ সময় অনেকে অভাগীকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু কাঙালীর ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে আর বিয়ে করেনি। কাঙালী কিছুটা বড় হলে বিষয়টি বুঝতে পারে।
প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে সে কথাই ব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন–১৫. অভাগী তার ছেলে কাঙালীকে কাজে যেতে নিষেধ করল কেন?
উত্তর: অভাগী তার ছেলে কাঙালীকে রূপকথার গল্প শোনাবে বলে কাজে যেতে নিষেধ করল। অভাগীর ছেলে কাঙালী সারাদিন কাজ করে যে টাকা আয় করে তা দিয়ে অভাগীর কষ্টের সংসার চলে। কাঙালী সারাদিন কাজ করে বলে অভাগী তাকে কাছে পায় না, ভালোভাবে কথা বলারও সুযোগ পায় না। একারণে অভাগী তার ছেলে কাঙালীকে রূপকথার গল্প শোনানোর কথা বলে তাকে কাজে যেতে নিষেধ করে ।
প্রশ্ন–১৬. বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুকে শোকের ব্যাপার মনে হলো না কেন?
উওর: মৃতের শবযাত্রার আড়ম্বর ও সৎকারের ব্যাপকতা থাকায় বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুকে শোকের ব্যাপার মনে হলো না। বৃদ্ধ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুতে তাঁর চার ছেলে, তিন মেয়ে, নাতিনাতনি, জামাইরা, প্রতিবেশীর দল সবাই মিলে ভিড় করে দেখতে আসল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে, কলরবে মনে হলো না এ কোনো শোকের ব্যাপার এ যেন বড় বাড়ির গৃহিণী পঞ্চাশ বর্ষ পরে আর একবার নতুন করে তার স্বামীগৃহে যাত্রা করছেন।
প্রশ্ন–১৭. নীল রঙের ধোঁয়ার মধ্যে কাঙালীর মা কেমন রথযাত্রীর দেখা পেয়েছিল?
উত্তর: নীল রঙের ধোঁয়ার মধ্যে কাঙালীর মা তার কাঙ্ক্ষিত রথযাত্রীর দেখা পেয়েছিল। প্রজ্বলিত ধোঁয়ার মধ্যে কাঙালীর মা যেমন রথযাত্রীর স্বপ্ন দেখত ঠিক সেরকম রথযাত্রীই সে দেখতে পায়। গায়ে নানা ছবি আঁকা, চূড়ায় লতাপাতা জড়ানো রথের ভিতরে কে যেন বসে আছে, চেনা যায় না। কিন্তু সিঁথিতে সিদুর রেখা, পা দুটি আলতা রাঙানো। এমন একটি রথযাত্রার ছবি তার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠলে তার চোখ বেয়ে অবিরল ধারায় অশ্রু বয়ে চলে।
প্রশ্ন–১৯. কাঙ্গালীর মা কেন শবযাত্রার নিকট যেতে সাহস পায়নি?
উত্তর: কাঙালীর মা নিচু জাতের মানুষ বলে মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবযাত্রার নিকট যেতে সাহস পায়নি। সংস্কারাবদ্ধ হিন্দু সমাজের সামন্তবাদের নির্মম শিকার কাঙালীর মা তথা নিচু সমাজ। তাই মর্মান্তিক কোনো মুহূর্তেও তাদের ভদ্রসমাজে প্রবেশাধিকার মেলে না। তাই দুলের মেয়ে বলে কাঙালীর মা মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবযাত্রায় অংশ নিতে পারে না। অই দুর থেকে দাঁড়িয়েই কাঙালীর মা-কে সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখতে হয়েছিল।
প্রশ্ন–২০. ‘উর্ধ্বদৃষ্টে চাহিয়া কাঙালীর মায়ের চোখে অশ্রুর ধারা বহিতেছিল কেন?
উত্তর: ধর্মীয় অনুভূতির কারণে কাঙালীর মায়ের মনে হয় ঠাকুরদাস মুখুয্যের মৃত স্ত্রী রথে চড়ে স্বর্গে যাচ্ছে, এমন ভাবনায় কাঙালীর মায়ের চোখ পানি চলে আসে। সাতদিনের জ্বরে মুখুয্যের স্ত্রী মারা গেলেন। তার সৎকারের মহা আয়োজন হতে লাগল। পুষ্পে, পত্রে, গন্ধে, মাল্যে চারদিক মুখরিত হলো। মহাসমারোহে তাকে শ্মশান ঘাটে নিয়ে আসা হলো। কাঠের ভার, চন্দনের টুকরা, ঘৃত, মধু, ধূপ, ধুনা প্রভৃতি দিয়ে চিতায় মন্ত্রপূত অগ্নি সংযযাজিত হলো। কাঙালীর মা দূরে থেকে এসব দৃশ্য দেখছিল। সদ্যপ্রজ্বলিত চিতার অজস্র ধুঁয়ার ভেতর রথে চড়ে বামুন মা স্বর্গে যাচেই কাঙালীর মায়ের কাছে এমন মনে হলো। তাই উর্ধ্বদৃষ্টে চেয়ে কাঙালীর মায়ের দুচোখে অশ্রুর ধারা বয়ে যাচ্ছিল।
প্রশ্ন–২১. জ্বরের ঘোরে কাঙালীর মা কাঙালীকে গল্পের ছলে কীসের গল্প কর্ণনা করেছিল।
উত্তর: জ্বরের ঘোরে কাঙালীর মা তার নিজের জীবনেরই গল্প রূপকথার আদলে ছেলের কাছে বলে গিয়েছে। জীবন সায়াহ্নে এসে অভাগী জ্বরের ঘোরে তার ছেলের কাছে রূপকথা বলতে শুরু করে। কাঙালীও তার মায়ের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হয় বার বার । কিন্তু এই রূপকথার আদলেই অভাগী বলে যায় এমন এক রূপকথা যা তার নিজের জীবনেরই প্রতিরূপ। যে গল্প তার অন্যের কাছে শেখা নয়, নিজের সৃষ্টি। জ্বরের ঘোরে মৃত্যুর আগে অভাগী তার নিজের জীবনের গল্পই বলে যায়।
প্রশ্ন–২২. ঈশ্বর নাপিতের মুখ পীর দেখে অভাগী কী বুঝতে পারল?
উত্তর: ঈশ্বর নাপিতের মুখ গম্ভীর দেখে অভাগী বুঝতে পারল, তার অন্তিম সময় এসে গিয়েছে। অভাগীর অসুস্থতার সংবাদ গ্রামে প্রচারিত হলে ঈশ্বর নাপিত আসে তার নাড়ি পরীক্ষা করতে। গ্রামের মধ্যে সেই একমাত্র নাড়ি দেখতে পারত। অভাগীর নাড়ি দেখে পরিস্থিতি বিবেচনায় সে মুখ গম্ভীর করে । ঈশ্বর নাপিতের মুখের এ গম্ভীর ভাব দেখে অভাগী বুঝতে পারে যে তার অন্তিম সময় এসে গেছে।
প্রশ্ন–২৩. ‘ওরে কে আছিস রে, এখানে একটু গোবর জল ছড়িয়ে দে‘ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে।
উত্তর: অধর রায় অশৌচের ভয় প্রকাশ করতে গিয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছে। কাঙালী মায়ের মৃতদেহ দাহের কাঠ সংগ্রহের জন্য জমিদারের কাছারি বাড়িতে যায়। শোক ও উত্তেজনায় সে একেবারে উপরে উঠে যায়। তার কান্নাকাটিতে অধর রায় অত্যন্ত বিরক্ত হন। কাঙালী মড়া ছুঁয়ে এসেছে, তাই এখানকার কিছু ছুঁয়ে ফেললে অশৌচ হবে । উক্তিটির দ্বারা এই বিষয়টিকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন–২৪. অভাগী সন্তানের হাতে মুখাগ্নি চায় কেন?
উত্তর : মৃত্যুকালে সন্তানের হাতে মুখাগ্নি পাওয়া হিন্দুমতে সৌভাগ্যের বিষয়- এমন ধারণা থেকেই অভাগী সন্তানের হাতে মুখাগ্নি চায়। কাঙালীর অভাগী মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মতো কেও একইরূপ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কামনা করে। মনে মনে মৃত্যুর পর কাঙালীর হাতের আগুন প্রার্থনা করে। তার বিশ্বাস বাঙালীর হাতের আগুন পেলে সে স্বর্গবাসী হবে। এ কারণেই অভাগী সন্তানের হতে মুখাগ্নি চান।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. কোন নদীর তীরে শশ্মান ঘাটি অবস্থিত?
গ. গড়াই ঘ. পদ্মা
উত্তর: খ. গরুড়
২. রসিক বেল গাছটি কী কাজে ব্যবহার করতে চেয়ছিল?
ক. অভাগীর শবদাহ খ. ঘরবাড়ি তৈরি
গ. রান্নার কাঠ সংগ্রহ ঘ. কাঙালীর জন্য
উত্তর: ক. অভাগীর শবদাহ
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
তর্করত্ন কহিলেন ধার নিবি শুধবি কীভাবে? গফুর বলিল, যেমন করে পারি শুধব বাবা ঠাকুর, তোমাকে ফাঁকি দেব না।
৩. তর্করত্ন ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিঃ
ক. ঠাকুর দাস মুখুজ্যে খ. রসিক দুলে
গ. দারোয়ানজী ঘ. অধর
উত্তর: ঘ. অধর
৪. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ডিলিট উপাধি প্রদান করে কোন বিশ্ববিদ্যালয় ।
ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খ. কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
গ. ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘ. রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
উত্তর: ক. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫. ‘সব ব্যাটারাই এখন বামুন–কায়েত হতে চায়’- ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে-এ বক্তব্যে কোন ভাব ফুটে উঠেছে।
ক. বিরক্তি খ. ক্রোধ
গ. ক্ষোভ ঘ. বিদ্রুপ
উত্তর: ঘ. বিদ্রুপ
৬. দাও বাবা, দাও একটু পায়ের ধুলো। এ কথা কে বলেছিলেন?
ক. কাঙালী খ. ঈশ্বর নাপিত
গ. বিন্দির পিসি ঘ. রাখালের মা
উত্তর: গ. বিন্দির পিসি
৭. ‘বলিস নে মা, বলিসনে, আমার বড় ভয় করে‘- এ ভয়ের কারণ কী?
ক. শ্মশানের দৃশ্য দেখে খ. রূপকথার গল্প শুনে
গ. ভূতের গল্প শুনে ঘ. মৃত্যুর কথা শুনে
উত্তর: ঘ. মৃত্যুর কথা শুনে
৮. ‘সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল’- এখানে কোন উৎসবের কথা বলা হয়েছে ?
ক. শ্রাদ্ধের খ. ব্রাহ্মণ ভোজের
গ. শবযাত্রার ঘ. কাঙালি ভোজের
উত্তর: গ. শবযাত্রার
৯. ‘শীত–তাপ, ক্ষুধা–তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি’– চরণদুটির বক্তব্য ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন দিকটির বিপরীত?
ক. সামাজিক বৈষম্য খ. জাতি বৈষম্য
গ. ধনী-দরিদ্র বৈষম্য ঘ. শ্রেণি বৈষমা
উত্তর: গ. ধনী-দরিদ্র বৈষম্য
১০. ‘পাড়ে, ব্যাটাকে গলাধাক্কা দিয়ে বার করে দে তা‘– অধর রায়ের এ উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে—
ক. উপেক্ষা খ. তাচ্ছিল্য
গ. বিরক্তি ঘ. উপহাস
উত্তর: খ. তাচ্ছিল্য
১১. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী কত দিনের জ্বরে মারা গিয়েছিল?
ক. পাঁচ খ. সাত
গ. আট ঘ. নয়
উত্তর: খ. সাত
১২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্রকে কোন খেতাবে ভূষিত করে?
ক. ডি. লিট খ. জগত্তারিণী
গ. কথাসাহিত্যিক ঘ. পল্লিকবি
উত্তর: খ. জগত্তারিণী
১৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লাভ করেন–
ক. এম এ ডিগ্রি খ. ডি. লিট উপাধি
গ. জগত্তারিণী পদক ঘ. পি এইচ ডি ডিগ্রি
উত্তর: খ. ডি. লিট উপাধি
ব্যাখ্যা: ডি.লিট অর্থ হলো ‘ডক্টর অব লিটারেচার’।
১৪. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের উপস্থাপিত তাৎপর্য –
i. সামন্তবাদের নির্মমরূপ
ii. হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা
iii. একজন রোগক্লিষ্ট মানুষের যাপিত জীবন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
১৫. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত দরদী ভাষায় উপস্থাপন করেছেন–
i. সামন্তবাদের নির্মম চিত্র
ii. নিচু শ্রেণির মানুষের দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণা
iii. উঁচু শ্রেণির মৃতের অনাড়ম্বর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
১৬. অভাগীর স্বর্গ গল্পের জমিদারের আচরণে প্রকাশ পায়–
i. অত্যাচারীর রূপ
ii. অবজ্ঞার রূপ
iii. জাতভেদের রূপ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i ও iii
উত্তর: ঘ. i ও iii
১৭. রসিকের হতবুদ্ধির মতো দাঁড়ানোর কারণ কি –
i. তাকে কেউ এতো ভালোবাসে তা জেনে
ii. দারোয়ান তাকে কষে চড় মারাতে
iii. কেউ তার পায়ের ধুলো চাইতে পারে, তা শুনে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. i ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১৮ ও ১৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
পূজার সময় যেমন খাঁ পাড়ার কুদুস, সেলিনা, কামালরা হিন্দু পাড়ায় যায়, তেমনি ঈদের দিন অরুণ, শালতী, ভবেশরা খাঁ পাড়ায় আসে। খায়-দায়, আনন্দে মাতে। রহমতপুরের মানুষ জন একে অপরের স্বজন।
১৮. উদ্দীপকের ভাববস্তুর সাথে নিচের কোন রচনার বিষয়বস্তুর বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়?
ক. দেনা পাওনা খ. অভাগীর স্বর্গ
গ. আম আঁটির ভেঁপু ঘ. মমতাদি
উত্তর: খ. অভাগীর স্বর্গ
১৯. উল্লিখিত রচনায় ফুটে উঠেছে –
i. সামন্তবাদের নির্মম চিত্র
ii. অগাধ পরিভক্তির পরিচয়
iii. সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে ২০ ও ২১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পে দেখা যায়- কায়স্থের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করে। তার হাতে ভাত খাওয়ার অপরাধে গ্রামবাসী মৃত্যুঞ্জয় ও বিলাসীকে অমানবিক নির্যাতন করে।
২০. উদ্দীপকের গ্রামবাসীর আচরণে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে ?
ক. ঠাকুরদাস মুখুয্যে খ. ভট্টাচার্য মহাশয়
গ. অধর রায় ঘ. ঈশ্বর নাপিত
উত্তর: গ. অধর রায়
২১. উক্ত বৈশিষ্ট্যটি হলো–
ক. আভিজাত্য খ. ধর্মীয় কুসংস্কার
গ. সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব ঘ. জাত-বৈষম্য
উত্তর: ঘ. জাত-বৈষম্য
উদ্দীপকটি পড়ে ২২ ও ২৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
নিউমার্কেটের সিগন্যালে এক ভিক্ষুক আবেদীন সাহেবের গাড়ির জানালার পাশে থালা বাড়িয়ে দিলে তিনি খুব বিরক্ত হন এবং তাকে ধমক দিয়ে চলে যেতে বলেন।
২২. উদ্দীপকটিতে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন দিক প্রকাশ পেয়েছে।
ক. গরিবের প্রতি ধনীর অত্যাচার
খ. উঁচু জাতের মানুষের কপটতা
গ. উঁচু জাতের মানুষের হীনম্মন্যতা
ঘ. গরিবের প্রতি ধনীর আচরণ
উত্তর: ঘ. গরিবের প্রতি ধনীর আচরণ
২৩. প্রকাশিত দিকটি নিচের যে উক্তিতে ফুটে উঠেছে তা হলো—
i. মাকে পোঁড়াবিত গাছের দাম পাঁচ টাকা আনগে
ii. সব ব্যাটারাই বামুন কায়েত হতে চায়
iii. যা যা, এখানে কিছু হবে না- এখানে কিছু হবে না
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ২৪ ও ২৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
চা শ্রমিক মালতি, বাগানের ডাক্তার বাবুকে দেখে তার মনে স্বপ্ন জাগে ছেলে কাশুকে ডাক্তারি পড়ানোর। তাই কাশুকে বাগানের কাজে না দিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দিতে চাইলে বাগানের বড় বাবু ব্যঙ্গ করে বলেন- ‘বামন হয়ে চাঁদ ধরার শখ!’
২৪. বড় বাবুর মানসিকতার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে–
ক. অধর রায়ের খ. ঠাকুরদাসের
গ. মুখুয্যে মহাশয়ের ছেলের ঘ. ভট্টাচার্য মহাশয়ের
উত্তর: গ. মুখুয্যে মহাশয়ের ছেলের
২৫. এ সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে নিচের কোন বাক্যটিতে?
ক. মাকে নিয়ে নদীর চড়ায় পুঁতে ফেলগে যা
খ. শোন আবদার, আমারই কত কাঠের দরকার
গ. তোদের জেতে আবার কে কবে পোড়ায় রে
ঘ. সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়।
উত্তর: ঘ. সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ২৬ ও ২৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
প্রতাপ বাবু নিচু শ্রেণির লোকদের এড়িয়ে চলেন। কারণ তাতে তার জাত যায়।
২৬. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন চরিত্রের সাথে প্রতাপ বাবুর মিল আছে?
ক. রসিকের খ. দারোয়ানের
গ. কবিরাজের ঘ. অধর রায়ের
উত্তর: ঘ. অধর রায়ের
২৭. উক্ত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো—
i. নির্মমতা
ii. নিষ্ঠুরতা
iii. স্বার্থপরতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
ক. i ও ii
২৮. শরৎচন্দ্র ভাগ্যের সন্ধানে কোন দেশে যান?
ক. ভারত খ. বার্মা
গ. নেপাল ঘ. ভুটান
উত্তর: খ. বার্মা
২৯. ‘ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়‘- কাঙালীর মা এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না কেন?
ক. গরিব হওয়ায় খ. ছোটজাত হওয়ায়
গ. লোকলজ্জায় ঘ. ব্যস্ততার কারণে
উত্তর: খ. ছোটজাত হওয়ায়
৩০. অধর রায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কোনটি?
ক. ন্যায়পরায়ণতা খ. কর্তব্যপরায়ণতা
গ. নিষ্ঠুরতা ঘ. ধৈর্যশীলতা
উত্তর:গ. নিষ্ঠুরতা
৩১. অভাগীর শেষ ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার জন্য দায়ী কে?
ক. কবিরাজ খ. অধর রায়
গ. দারোয়ান ঘ. রসিক বাঘ
উত্তর: খ. অধর রায়
৩২. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে গ্রামের শ্মশানটি কোথায় ছিল?
ক. মাঠের ধারে খ. খালের পাড়ে
গ. নদীর তীরে ঘ. বনের ধারে
উত্তর: গ. নদীর তীরে
৩৩. অভাগী (কাঙালীর মা) কখন মারা যায়?
ক. সকালে খ. দুপুরে
উত্তর: ঘ. রাতে
৩৪. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারের কাছারির কর্তা কে?
ক. কুলীন রায় খ. হেমচন্দ্র ব্যানার্জী
গ. অধর রায় ঘ. শিথিল চক্রবর্তী
উত্তর: গ. অধর রায়
৩৫. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গন্ধে বেলগাছটির অবস্থান কোথায়?
ক. বাড়ির বাইরে খ. কুটির প্রাঙ্গণে
গ. শ্মশানের ধারে ঘ. নদীর তীরে
উত্তর:খ. কুটির প্রাঙ্গণে
৩৬. কবিরাজ কাঙালীর মায়ের জন্য বড়ি দিলেন –
ক. গোটা দুয়েক খ. তিনটি
গ. গোটা চারেক ঘ. পাঁচটি
উত্তর: গ. গোটা চারেক
৩৭. ‘কাঙালীর স্বল্প দেহ বার বার রোমাঞ্চিত হইতে লাগিল।’ কেন?
ক. নব নব উপকথার ইন্দ্রজালে খ. কাঙালীর মায়ের শেষ চিহ্ন বিলুপ্ত করে দিলে
গ. প্রতিবেশীরা দেখতে আসলে ঘ. মায়ের অন্তিমকালে বাবাকে আনতে গিয়ে
উত্তর: ক. নব নব উপকথার ইন্দ্রজালে
৩৮. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কে নাড়ি দেখতে জানত?
ক. ঈশ্বর নাপিত খ. ইন্দুকুমার
গ.অমিত ঘ. আশিস কর্মকার
উত্তর: ক. ঈশ্বর নাপিত
৩৯. ‘ওরে কে আছিস রে, এখানে একটু গোবরজল ছড়িয়ে দে‘- একথায় কী ফুটে উঠেছে?
ক. সাম্প্রদায়িকতা খ. অসাম্প্রদায়িকতা
গ. হীনমানসিকতা ঘ. আভিজাত্যের অহমিকা
উত্তর: ক. সাম্প্রদায়িকতা
৪০. কাঙালীর বাবাকে জমিদারের লোক বেলগাছ কাটতে দেয়নি কেন?
ক. অনধিকার চর্চা বলে খ. খাজনা বাকি ছিল
গ.আইন অমান্য করেছে ঘ. অনুমতি নেয়নি বলে
উত্তর: ঘ. অনুমতি নেয়নি বলে
৪১. ‘রসিক হতবুদ্ধির মত দাড়াইয়া রহিল’– কেন?
ক. কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে খ. স্ত্রী মারা যাচ্ছে বলে
গ. নিজেকে নগণ্য ভাবায় ঘ. বিন্দীর পিসীর কথায়
উত্তর: ক. কৃতকর্মে অনুতপ্ত হয়ে
৪২. শরৎ সাহিত্যসমগ্র ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে কথাটিতে সামন্তবাদের নির্মম রূপ প্রকাশ পেয়েছে –
i. মাকে পোড়াবি ত গাছের দাম পঁচটা টাকা আনগে
ii. যা, মুখে একটু নুড়ো জ্বেলে দিয়ে নদীর চড়ায় মাটি দেগে
iii. শালা, একি তোর বাপের গাছ যে কাটতে লেগেছিস
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৩. ‘মা মরেচে ত যা নিচে নেবে দাঁড়া‘- উক্তিটিতে কী প্রকাশিত হয়েছে?
i. শ্রেণিবৈষম্য
ii. নিচু জাতের প্রতি ঘৃণা
ii. দরিদ্রের প্রতি অবহেলা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৪. ‘মনে হইল না এ কোনো শোকের ব্যাপার’–
i. গন্ধ ও কলরবের জন্য
ii. পুস্পমাল্যের জন্য
ii. পুষ্প ও পত্রের জন্য
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৫. দারোয়ান কাঙালীকে মারল না–
i. জমিদারের ভয়ে
ii. জাতপ্রথার জন্য
iii. অশৌচের ভয়ে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৪৬. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে তৎকালীন সমাজের যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা হলো—
i. ধনতন্ত্র
ii. বর্ণবাদ
iii. সামন্তবাদ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
শ্রীলেখা দুলে পরিবারের মেয়ে। গ্রামের অতুল চক্রবর্তীর বাড়িতে অনেক কাকুতিমিনতি করেও সাহায্য পেল না। সে গিন্নিমার পা ধরতে গেলে তিনি বিদ্যুৎ বেগে সরে গিয়ে বললেন, ছি! ছি! ছোট জাতের মেয়ে ছুঁয়ে ফেললে না কি?
৪৭. উদ্দীপকের গিন্নিমা ‘অভাগীর স্বর্গ‘ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করছে?
ক. রসিক দুলে খ. দারোয়ানজি
গ. ভট্টাচার্য মশায় ঘ. অধর রায়
উত্তর: ঘ. অধর রায়
৪৮. এই প্রতিনিধিত্বের কারণ হলো–
i. উভয়েই সমাজের উঁচু জাতের
ii. উভয়েই বিত্তশালী পরিবারের
iii. উভয়েই শিক্ষিত শ্রেণির
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
উদ্দীপকটি পড়ে এবং ৪৯ ও ৫০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
হরিদাস রাস্তা ঝাড় দেয়। পুরোহিত মশাই সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হরিদাস পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। তখনই পুরোহিত দূরে সরে গিয়ে হরিদাস ছুঁয়ে দিয়েছে বলে তাকে বকাবকি করতে
৪৯. ‘অভাগীর স্বর্গ ’ গল্পের কোন বিষয়টি উদ্দীপকের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে?
ক. সাদা-কালো পার্থক্য খ. জাত প্রভেদ
গ. পরিবারের পার্থক্য ঘ. ধর্মের পার্থক্য
উত্তর: খ. জাত প্রভেদ
৫০. উদ্দীপকের পুরোহিতের সাথে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে?
ক. অধর রায় খ. রসিক দুলে
গ. ঠাকুরদাস মুখুয্যে ঘ. কাঙালীচরণ
উত্তর: ক. অধর রায়
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১ : এই নিষ্ঠুর অভিযোগে গফুর যেন বাক্ রোধ হইয়া গেল। ক্ষণেক পরে ধীরে ধীরে কহিল, কাহন খানেক খড় এবার ভাগে পেয়েছিলাম। কিন্তু গেল সনের বকেয়া বলে কর্তামশায় সব ধরে রাখলেন? কেঁদে কেটে হাতে পায়ে পড়ে বললাম, বাবু মশাই, হাকিম তুমি, তোমার রাজত্ব ছেড়ে আর পালাব কোথায়? আমাকে পণদশেক বিচুলি না হয় দাও। চালে খড় নেই। বাপ বেটিতে থাকি, তাও না হয় তালপাখার গোঁজাগাঁজা দিয়ে এ বর্ষা কাটিয়ে দেব, কিন্তু না খেতে পেয়ে আমার মহেশ যে মরে যাবে।
ক. কাঙালীর বাবার নাম কী?
খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে সমাজচিত্রের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না’- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. কাঙালীর বাবার নাম— রসিক বাঘ।
খ. ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’—উক্তিটিতে অভাগীর শেষকৃত্যের সময় ছেলের হাতের আগুন পাওয়ার প্রচলিত বিশ্বাস ফুটে উঠেছে। কাঙালীর মা অভাগী দূর থেকে মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর শবযাত্রা দেখে সেও মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মতো স্বর্গে যাওয়ার মনস্কামনা করে। মুখোপাধ্যায়ের ছেলেরা তার স্ত্রীর মুখাগ্নি করে । এই দৃশ্য দেখার পর থেকে কাঙালীর মা মনে মনে কাঙালীর হাতের আগুন প্রার্থনা করে এবং সেও ভাবে কাঙালীর হাতের আগুন পেলে সে স্বর্গবাসী হবে। তাই সে কাঙালীকে বলেছিলো ‘তোর হাতের আগুন যদি পাই, আমিও সগ্যে যাব’।
গ. উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সামন্তবাদী সমাজের নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে হতদরিদ্র মানুষের মানবেতর জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে’– যারা সমাজে ধনিক শ্রেণির দ্বারা সবসময় বঞ্চিত হয় । এমনকি নিজেদের ন্যায্য পাওনাটুকুও পায় না। ফলে তাদের বেঁচে থাকতে হয় অন্যের করুণার ওপরে।
উদ্দীপকে আমরা হতদরিদ্র গফুরকে দেখতে পাই। সে সারাবছর খেটে কাহন খানেক খড় ভাগে পেলেও বকেয়া খাজনার দায়ে জমিদারের লোক সব রেখে দেয়। অনুনয়-বিনয়েও সে তা ফিরে পায় না। আবার, ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে নিজের হাতে গাছ লাগিয়েও গাছের মালিক হতে পারে না কাঙালীর মা তাই জমিদারের জমিতে শত অনুরোধ সত্ত্বেও কাঠের অভাবে মায়ের শবদাহ করতে পারে না কাঙালী ।
অর্থাৎ উভয়ক্ষেত্রেই সমাজের নির্মম বাস্তবতার দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
ঘ. কাঙালীর সঙ্গে উদ্দীপকের গফুরের সাদৃশ্য থাকলেও কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না’- মন্তব্যটি যথার্থ।
গফুর জীবন সংগ্রামে অভিজ্ঞ, পোড় খাওয়া একজন মানুষ। অপরদিকে কাঙালী অনভিজ্ঞ এক বালক। ফলে কাঙালী সম্পূর্ণরূপে গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না। উদ্দীপকে একজন হতদরিদ্র নিম্নবর্গের মানুষের নির্যাতিত হওয়ার গল্প বলা হয়েছে। গফুর নামের এই নির্যাতিত ব্যক্তিটি ধনিক শ্রেণির শোষণের শিকার হয়। সারাবছর খাটুনির মাধ্যমে পাওয়া কাহন খানেক খড়ের সবটাই হারাতে হয় বকেয়া খাজনার দায়ে । যা মূলত অন্যায্য ছিল।
অপরদিকে, কাঙালী তার মায়ের শবদাহ করানোর জন্য কাঠ পায় না। বাড়ির আঙিনায় লাগানো মায়ের হাতের গাছটিও হারাতে হয় জমিদারের অমানবিক শোষণের কারণে। ফলে গফুরের সাথে কাঙালীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। উদ্দীপক ও ‘অভাগীর স্বর্গ’ উভয় গল্পেই উনবিংশ শতাব্দীর হতদরিদ্র নিম্নশ্রেণির মানুষের বঞ্চিত জীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
কাঙালী ও গফুর উভয়েই সেই সমাজের নিগৃহীত মানুষ। প্রচুর সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও কাঙালী গফুরের প্রতিনিধিত্ব করে না— কারণ কাঙালী একজন অনভিজ্ঞ বালক। তার পক্ষে সমাজের সব চরিত্র সঠিকভাবে চেনা সম্ভব হয় না। তাই তাকে পদে পদে হেনস্থা হতে হয়। অপরদিকে, গফুর জীবনের পোড় খাওয়া মানুষ। কিন্তু তাকেও শিকার হতে হয়েছে জমিদারের নির্মম অত্যাচারের। সমাজের চরিত্রগুলো সম্পর্কে তার ধারণা থাকলেও নিম্নশ্রেণির মানুষ হওয়ায় তাকে মুখ বুজে সয়ে যেতে হয় সবকিছু।
তাই কাঙালীকে গফুরের সম্পূর্ণ প্রতিনিধি বলা যায় না।
প্রশ্ন–২: রহিম চৌধুরী কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কিছুদিন আগে তার বড় মেয়ের বিয়েতে এলাকার সকলকে দাওয়াত দেন। তিনি ধনী–গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি। তার এ আচরণে এলাকার দরিদ্র জনগণ খুবই খুশি।
ক. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী কয়দিনের অসুখে মারা গেলেন?
খ. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অভাগীর আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীদের মতো মানুষ প্রয়োজন”- বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী সাতদিনের অসুখে মারা গেলেন।
খ. অভাগীর পতিভক্তির পরিচয় পেয়ে রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল। এক সময় রসিক দুলে তার স্ত্রী অভাগী ও পুত্র কাঙালীকে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে সে আর তাদের খোঁজ নেয় না। স্ত্রীর প্রাপ্য ভালোবাসা বা তার প্রতি দায়িত্ব পালন কিছুই সে করেনি। তবুও মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় অভাগী রসিক দুলেকে খবর পাঠিয়ে বাড়ি আসতে বলে এবং তার অবশ বাহুখানা বাড়িয়ে দেয় স্বামীর পায়ের ধুলোর জন্য। তাই রসিক দুলে শত উপেক্ষা আর বঞ্চনা সত্ত্বেও নিজের প্রতি স্ত্রী অভাগীর ভক্তির পরিচয় পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলল।
গ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে বর্ণিত ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও জাতিভেদের পার্থক্যের সাথে উদ্দীপকের চেতনাগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে আমরা দুটি শ্রেণি দেখতে পাই। দরিদ্র ও নিচুজাতের মানুষের প্রতিনিধি অভাগী ও তার পুত্র কাঙালী। আর ধনী ও উঁচুজাতের মানুষের প্রতিনিধি মুখুয্যে ও জমিদার বাড়ির লোকজন। নিচুজাতের কাঙালী তার মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে উঁচুজাতের দ্বারে দ্বারে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে। মায়ের শবদাহের স্বপ্ন সে পুরণ করতে পারেনি।
উদ্দীপকে এই বৈষম্যের চিত্র অনুপস্থিত বরং রহিম চৌধুরী শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও সাধারণ জীবন-যাপন করেন। তিনি নিজের মেয়ের বিয়েতে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য না করে এলাকার সকলকে দাওয়াত দেন। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে ধনী কর্তৃক দরিদ্রের নিগৃহীত হওয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে যা উদ্দীপকের সাথে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করে।
ঘ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের জমিদারশ্রেণির মানসিকতা উদ্দীপকের রহিম চৌধুরীর মতো হলে অভাগীর আশা পূর্ণতা পেতো।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে ধনী ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণির মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। দরিদ্র অভাগী মুখুয্যে বাড়ির বউয়ের শবযাত্রা ও শবদাহের দৃশ্য দেখে নিজের মৃত্যুর পর সেও পুত্রের দ্বারা মুখাগ্নির স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অভাগীর মৃত্যুর পর উঁচুশ্রেণি ও জমিদারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পুত্র কাঙালী মায়ের মুখাগ্নির কাঠ জোগাড় করতে পারেনি বরং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছে।
উদ্দীপকের রহিম চৌধুরী ধনিকশ্রেণির প্রতিনিধি। তিনি কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। তারপরও তিনি সাধারণভাবে জীবনযাপন করেন। নিজের মেয়ের বিয়েতে এলাকায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে দাওয়াত করে খাওয়ান। সে কারণে তার প্রতি সকলেই সন্তুষ্ট।
উদ্দীপকের রহিম চৌধুরীর মতো ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের জমিদারের মানসিকতা হলে অভাগীর মনের আশা পূর্ণ হতো। কাঙালীকে তার মায়ের শব পোড়ানোর কাঠের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো না। উঁচুশ্রেণির মানুষের কাছে নিচুশ্রেণির মানুষের নিগৃহীতও হতে হতো না।
তাই বলা যায়, অভাগীর মনের আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীর মতো মানুষ প্রয়ােজন’- মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন-৩ : গফুর লজ্জিত হইয়া বলিল, বাপ বেটিতে দু বেলা দুটো পেটভরে খেতে পর্যন্ত পাইনে। ঘরের পানে চেয়ে দেখ, বিষ্টি বাদলে মেয়েটিকে নিয়ে কোণে বসে রাত কাটাই, পা ছড়িয়ে শোবার ঠাঁই মেলে না। মহেশকে একটিবার তাকিয়ে দেখ, পাঁজরা গোনা যাচ্ছে। দাও না ঠাকুর মশাই কাহন–দুই ধার, গরুটাকে দু‘দিন পেটপুরে খেতে দিই । বলিতে বলিতেই গফুর ধপ করিয়া ব্রাহ্মণের পায়ের কাছে বসিয়া পড়িল। তর্করত্ন কহিলেন, ‘আ মরু, ছুয়ে ফেলবি না কি?
ক. গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত কে?
খ. ‘রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়াইয়া রহিল’- কেন?
গ. উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটি কোন দিক দিয়ে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালী চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের তর্করত্ন কি ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত ঈশ্বর নাপিত।
খ. মৃত্যুপথযাত্রী স্ত্রী অভাগী রসিকের পায়ের ধুলো চাওয়ায় রসিক বিস্ময়ে হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইল । অভাগী রসিকের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। রসিক তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে ঘর-সংসার করছে। মৃত্যুশয্যায় শায়িত অভাগী স্বামীর পদধূলি মাথায় নিয়ে স্বর্গে যেতে চায়। রসিক জীবনে কোনোদিন স্ত্রী অভাগীকে ভালোবাসা দেয়নি, অশন-বসন দেয়নি, কোনো খোঁজ-খবর রাখেনি। তদুপরি অভাগীর এমন ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখে রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইল।
গ. জাত-বর্ণভেদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী অশুচিতার দিক থেকে উদ্দীপকের গফুরের সঙ্গে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালী চরিত্রটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
পাঠ্য গল্পে কাঙালী ও তার মা অভাগী দুলে সম্পদ্রায়ের প্রতিনিধি। মায়ের মৃত্যুর পর কাঙালীর বাবা রসিক বাঘ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাঠ জোগাড় করতে বাড়ির উঠোনে লাগানো বেল গাছ কাটতে যায়। এতে জমিদারের লোক বাধা প্রদান করলে কাঙালী কাছারি বাড়ির কর্তা অধর রায়ের কাছে নালিশ জানাতে আসে। কাঙালী নিম্নবর্ণের হওয়ায় উচ্চ বর্ণের অধর রায় বলে ওঠে- ‘কি জানি এখানকার কিছু ছুঁইয়া ফেললি নাকি!’ অধর রায়ের এমন উক্তির মাধ্যমে নিচু শ্রেণির মানুষের প্রতি অবজ্ঞা ও জাতভেদ প্রথা প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্দীপকের দরিদ্র গফুর দু বেলা ঠিকমতো খেতে পায় না। ঝড়-বৃষ্টি বাদলে সে মেয়েকে নিয়ে ঘরের এককোণে রাত কাটিয়ে দেয়। এছাড়া তাদের পালিত মহেশকেও ঠিকমতো খেতে দিতে পারে না। মহেশের জন্য গফুর ঠাকুর মশাইয়ের কাছে খড় ধার চায়। স্নেহকাতর গফুর প্রিয় মহেশের জন্য খাবার চাইতে গিয়ে বিনয়ে ব্রাহ্মণ তর্করত্নের পায়ের কাছে বসে পড়লে, তিনিও বলেন- ‘আ মর, ছুঁয়ে ফেলবি নাকি?
অর্থাৎ পাঠ্য গল্পের কাঙালী ও উদ্দীপকের গফুর উভয় চরিত্রই জাতধর্মের নিগ্রহের শিকার হয়েছে।
ঘ. জাতধর্মকে বড় করে দেখার মানসিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের তর্করত্ন ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি।
পাঠ্য গল্পে অধর রায় সামন্তবাদী একটি চরিত্র। যে জমিদারের কাছারির বড় কর্তা। তার মানসম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি অন্য যে কারো চেয়ে বেশি। সমাজে সে উঁচু কুলশীল ও মর্যাদার অধিকারী। এজন্য দরিদ্র ও নিম্নবর্ণের লোকদের সে ছোট নজরে দেখত। তার কাছে কাঙালী যখন বিচার চাইতে আসে তখন সে কাঙালীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। অশুচিতার ভয়ে কাঙালীর গায়ে হাত দেয় না এবং পেয়াদা পড়েকে বলে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে।
উদ্দীপকের তর্করত্নের চরিত্রের মাঝেও সামন্তবাদী মনোভাব লক্ষণীয়। দরিদ্র ও মুসলমান গফুর প্রিয় মহেশের জন্য তার কাছে খড় ধার চায়। এমন অবস্থায় গফুর তর্করত্নের পায়ের কাছে বসে পড়লে, তর্করত্ন নিজের অশুচিতার ভয়ে দূরে সরে যান। মানবতাকে বড় করে না দেখে জাতধর্মকেই বড় করে দেখেছেন তর্করত্ন।
অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অধর রায় যেমন জাতধর্মকে গুরুত্ব দিয়েছে উদ্দীপকে তর্করত্নের ক্ষেত্রেও তেমনটিই ঘটেছে। অধর রায় নিজের শুচিতা ও আভিজাত্য বজায় রাখার জন্য কাঙালীর গায়ে হাত দেয় না। এমনকি কাঙালীর মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য কাঠও দেয় না। বরং পড়েকে বলে কাঙ্গালীকে গলাধাক্কা দিয়ে যেন বের করে দেয়। উদ্দীপকের তর্করত্নও গফুরকে খড় ধার দেয় না। গফুর তাকে ছুঁয়ে ফেললে জাত নষ্ট হবে ভেবে গফুরকে ভৎসনা করেছেন।
উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের তর্করত্ন ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি।
প্রশ্ন–৪ : নন্দীপুর এলাকার চেয়ারম্যান মানিক সরকার। সম্প্রতি তার বাবার মৃত্যুর পর কুলখানিতে দশ গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ালেন। সবাই প্রাণভরে দোয়া করে গেল। কদিন পরেই মারা গেলেন ঐ এলাকার দরিদ্র বর্গাচাষী হরিপদ বিশ্বাস । বাবার মৃত্যুশোক এবং সকারের চিন্তায় তার একমাত্র মেয়ে দীপালি কান্নায় ভেঙে পড়ল। পিতৃহারা অসহায় কিশোরীর শোকের মাতমে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠল। খবর পেয়ে হরিপদর বাড়িতে ছুটে গেলেন মানিক সরকার। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিলেন এবং তাদের ধর্মীয় বিধি–বিধান অনুসারে হরিপদের সকারের সু–ব্যবস্থা করলেন।
ক. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কোন পদক প্রদান করেছিল?
খ. অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের যে ভাবের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ঠাকুর দাস মুখয্যে ও অধর রায় যদি চেয়ারম্যান সাহেবের মানসিকতা ধারণ করতেন, তাহলে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতো তুমি কি এর সাথে একমত? তোমার মতামতের পক্ষে যুক্তি দাও।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে জগত্তারিণী পদক প্রদান করেছিল।
খ. অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে তার দুঃখ যন্ত্রণা জর্জরিত জীবনের পরিসমাপ্তির ঘটনাপ্রবাহকে বোঝানো হয়েছে।
প্রায় ত্রিশ বছর পার করে আসা অভাগীর জীবন জুড়ে ছিল ভাগ্যের নির্মম খেলা। তার মামা ছিল না, বাবা থেকেও নেই আর স্বামীকে সে পেয়েছিল সতীনের সম্পত্তি হিসেবে। অর্থাৎ তার জীবন ছিল নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। যে যখন মৃত্যুর পথযাত্রী তখনও তার কপালে চিকিৎসা জোটে না, জোটে না তার আকাঙ্ক্ষিত সৎকার, যেটিকে লেখক অভাগীর জীবন নাট্যের শেষ অঙ্ক বলেছেন।
গ. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের সামান্তবাদের নির্মম রূপের সাথে উদ্দীপকের বক্তব্য বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের অবস্থাসম্পন্ন ঠাকুরদাস মুখয্যের বর্ষীয়সী স্ত্রী মারা গেলে ধুমধাম করে তার সৎকার সম্পন্ন হয়। পুষ্ট, মাল্য, পত্র, কলরব সব মিলিয়ে এতো আতিশায্য হয় যা দেখে মনেই হয় না যে এটা কোনো শবযাত্রা । মুখয্যে গিন্নির মতো মুখাগ্নি হলে তার স্বর্গযাত্রা হবে ভেবে সে, ঐরকম সৎকার চেয়ে মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু হতদরিদ্র অভাগীর কপালে সেরকম কিছু জোটে না।
উদ্দীপকের মানিক সরকার ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের ঠাকুরদাস মুখুয্যের মতোই বিত্তশালী। কিন্তু ঠাকুরদাস মুখুয্যের মতো অমানবিক ব্যক্তি তিনি নন। আর তাইতো, দরিদ্র হরিপদর সৎকারে তিনি এগিয়ে আসেন। কিন্তু ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের ঠাকুরদাস মুখুয্যে অভাগীর শেষ ইচ্ছা পূরণে কাঙালিকে সামান্য কাঠও দিতে রাজি হয় না। ঠাকুরদাস মুখুয্যের এই নির্মম আচরণ উদ্দীপকের বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. ঠাকুরদাস মুখুয্যে ও অধর রায় যদি চেয়ারম্যান মানিক সরকারের মানসিকতা ধারণ করতেন তাহলে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতো- আমি এই কথার সাথে একমত।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের ঠাকুরদাস ও অধর রায় অহংকারী সহানুভূতিশীল মানসিকতার অধিকারী। ঠাকুরদাসের বিত্ত বৈভবের কোনো অভাব ছিল না। অধর রায় তার গোমস্তা। অভাগীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার সৎকারের জন্য তার ছেলে কাঙালী ঠাকুরদাসের কাছে কাঠ চাইতে যায় । কিন্তু কাঙালীর কপালে জোটে অপমান ও উত্তম মধ্যম আর অভাগীর শেষ ইচ্ছা অপূর্ণই থাকে।
উদ্দীপকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। ঠাকুরদাসের মতোই বিত্তশালী ব্যক্তি মানিক সরকার। নিজের বাবার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান মানিক সরকার সেভাবেই খরচ করেন যেভাবে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের ঠাকুরদাস স্ত্রীর সৎকারে করেছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান মানিক সরকার দরিদ্র হরিদপকে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন ঠাকুরদাস অভাগীর পুত্র কাঙালীর সাথে তেমন করেননি। চেয়ারম্যান মানিক সরকার হরিপদের মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু ঠাকুরদাস ও অধর রায় কাঙালীল সাথে নির্মম আচরণ করেছিলেন।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে আমরা দেখতে পাই, সমাজের হতদরিদ্র মানুষের ওপর সামন্তবাদের নির্মমতার স্বরূপ। বিত্তের অহংকারে ঠাকুরদাস ও অধর রায় কাঙালীকে মানুষ বলেই গণ্য করেন না। তারা সমাজের উঁচু স্তরের লোক হলেও মানসিকতায় অত্যন্ত নিচু। কিন্তু এর বিপরীত চিত্রও আছে। বিপরীত চিত্রটি আমরা দেখতে পাই মানিক সরকারের আচরণে।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের ঠাকুরদাস ও অধর রায় যদি চেয়ারম্যান মানিক সরকারের মানসিকতাকে ধারণ করতেন তাহলে অভাগীর শেষ ইচ্ছা মোতাবেক তার সৎকার হতো। আর ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের পরিণতিও অন্যরকম হতো।
প্রশ্ন–৫ : ও কে চণ্ডাল? চমকাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!
ওই হ’তে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
আজ চণ্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী সম্রাট।
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে করিবে নান্দীপাঠ।
ক. ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারের গোমস্তার নাম কী?
খ. ‘রসিক হতবুদ্ধির মত দাঁড়াইয়া রহিল’- কেন?
গ. “উদ্দীপকের চণ্ডাল ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালির প্রতিনিধি।”- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে ফুটে ওঠা মনোভাবই ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের লেখকের প্রত্যাশা।” মূল্যায়ন করো।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. জমিদারের গোমস্তার নাম অধর রায়।
খ. মৃত্যুপথযাত্রী অভাগী পায়ের ধুলো প্রার্থনা করাতে রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইল। তৎকালীন সমাজের সংস্কার অনুসারে স্বামীরাই ছিল স্ত্রীদের কাছে মূর্তিমান দেবতা। তাই স্বামীর কাছ থেকে শত নির্যাতন ও বঞ্চনা পাওয়ার পরও স্ত্রীরা তাদের দেবতাজ্ঞান করত। এ ধারণা বদ্ধমূল ছিল অভাগীর মধ্যেও, সে কারণে মৃত্যুকালে সে রসিক দুলের পদধূলি প্রার্থনা করেছিল। আর সারাজীবনের বঞ্চনা সহ্য করেও অভাগীর পতিভক্তির এ নিদর্শন দেখে রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে ছিল।
গ. উদ্দীপকের চণ্ডালকে ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের মঙালীর প্রতিনিধি বলা যায় ।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে কাঙালী ছিল দুলে জাতের, যাদের স্থান ছিল সমাজের অনেক নিচে। এ কারণে শবদেহ পোড়ানোর অধিকার তাদের ছিল না। কিন্তু অভাগীর শেষ ইচ্ছে ছিল ছেলের হাতের একটু আগুন পাওয়ার। সে চেষ্টা কাঙালী করেছিল, কিন্তু তার নিজের সামাজিক অবস্থান ভালো না হওয়ার কারণে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাকে অচ্ছুত বিবেচনা করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । উদ্দীপকের বর্ণনায় শ্রেণি বৈষম্যের ভয়াবহ রূপটি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে চণ্ডালকে দেখে সমাজের মানুষ চমকে যায়। তাকে অবজ্ঞা করে সবাই।
কারণ চণ্ডালের কর্ম হচ্ছে শ্মশানে মড়া পোড়ানো। তাই সভ্য সমাজে যাদের জাত্যভিমান রয়েছে তাদের পক্ষে সাধারণের কাতারে চণ্ডালকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে তাকে সবাই এড়িয়ে চলে। গল্পের কাঙালীকে দেখেও তেমনি জমিদারের লোকজন তাচ্ছিল্য করেছিল। অর্থাৎ উদ্দীপকের চণ্ডাল এবং গল্পের কাঙালী উভয়েই শ্রেণি বৈষম্যের জাঁতাকলে পিষ্ট।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চণ্ডাল ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের কাঙালীরই প্রতিনিধি।
ঘ. “উদ্দীপকে ফুটে ওঠা মনোভাবই ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের লেখকের প্রত্যাশা”- মন্তব্যটি যথার্থ ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে নীচু জাতের অধিকার ও তাদের বঞ্চনার কথা অভাগী ও তার সন্তান কাঙালীর অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে কাঙালীকে সমাজের রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কাঙালী ওই সমাজে তার অবস্থানকে খুঁজে পেয়েছে। আর লেখক দেখিয়েছেন জাতের নামে মানুষের নিষ্ঠুরতা।
উদ্দীপকের চণ্ডাল সমাজের ব্রাত্যজন। তাই অভিজাত সম্প্রদায় তাকে দেখে চমকে যায়। তাকে মনে করে ঘৃণ্য জীব । কিন্তু তার মধ্যেও যে হরিশচন্দ্রের মতো পুণ্যাত্মা থাকতে পারে তা মনেই রাখে না তারা। আবার তেমন হলে তার পায়েই অর্ঘ্য দিতে কার্পণ্য করে না সমাজের মানুষ। ‘অভগীর স্বর্গ’ গল্পে জাতিভেদের কারণে কাঙালীর সাথেও প্রায় একই ধরনের আচরণ করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত দুটি ঘটনাতেই আমরা সমাজের মানুষের সংকীর্ণ মনোভঙ্গি সম্পর্কে আবগত হতে পারি। উদ্দীপকের মূলভাবে সাম্য প্রতিষ্ঠার একটি সুপ্ত আমা ব্যক্ত হয়েছে। প্রকৃত অর্থে সেটি হলো দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের একটি প্রচেষ্টা মাত্র। ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পের লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরও প্রত্যাশা ছিল এমন। তাই তিনি অভগীকে অভাজন করে সৃষ্টি করেননি বরং মানুষ হিসেব তাকে যথার্থ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।