ভূগোল ও পরিবেশ (Geography)
প্রথম অধ্যায় : ভূগোল ও পরিবেশ
* গুরুত্বপূর্ণ তথ্য *
ভূমিকা : আমরা পৃথিবীর অধিবাসী পৃথিবীতে রয়েছে নানা জাতির মানুষ, নানা ধরনের প্রাণী ও বিচিত্র ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিভিন্ন পরিবেশে মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদ-নদী, সাগর, খনিজ সম্পদ এ সবকিছু মানুষের ক্রিয়াকলাপ ও আচরণে প্রভাব বিস্তার করে। আধুনিক ভূগোল এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করে।
সুতরাং ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান, অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। এ অধ্যায়ে ভূগোল ও পরিবেশ, এদের পরিধি, ভূগোলের বিভিন্ন শাখা ও ভূগোল পাঠের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ভূগোলের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ : ইংরেজি ‘Geography’ শব্দের অর্থ হলো ভূগোল। ‘Geo’ শব্দের অর্থ হলো ‘ভূ’ বা পৃথিবী, আর ‘Graphy’ শব্দের অর্থ হলো বর্ণনা। অতএব Geography হলো পৃথিবীর বর্ণনা।
ইরাটসথেনিস (২৭৫–১৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) : প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস মিশরের স্বাইন ও আলেকজান্দ্রিয়ায় সূর্যের কৌণিক অবস্থানের পার্থক্য পরিমাপ করে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন। প্রাচীন গ্রিসে তিনিই সর্বপ্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেন। পৃথিবীর বর্ণনা বোঝাতে তিনিই সর্বপ্রথম ‘Geography’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ভৌগোলিক জ্ঞানে নানা অবদানের কারণে তাঁকে ‘ভূগোলের জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।
আল ইদ্রিসি (১১০০–১১৬৫ খ্রিষ্টাব্দ): মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম ভূগোলবিদ আল ইদ্রিসি সর্বপ্রথম সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশের জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি ও বাণিজ্যপথের বর্ণনাসহকারে মানচিত্র তৈরি করেন। তার তৈরি মানচিত্র ইউরোপে ল্যাটিন টেবুলা রজারিয়ানা নামে পরিচিত। তাঁর কাজ দ্বারা পরবর্তীকালে ইবনে বতুতা, ইবনে খালদুন, পিরি রেইস, ভাস্কো ডা গামা, ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রমুখ অনুপ্রাণিত হন। তাঁর সম্মানে ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইদ্রিসি’ নামে একটি জিআইএস সিস্টেমের নামকরণ করে।
আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট (১৭৬৯-১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দ) : আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট একজন জার্মান অভিযাত্রী ও ভূগোলবিদ। তিনি উদ্ভিদ ভূগোলের উপর প্রচুর গবেষণা করেন, যার ফলশ্রুতিতে ‘জীব ভূগোল’ নামে প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি শাখার গোড়াপত্তন ঘটে। ১৭৯৯ থেকে ১৮০৪ সালের মধ্যে হামবোল্ট দুই আমেরিকা মহাদেশ ভ্রমণ করেন এবং আমেরিকার ভূ-প্রকৃতি, জলবায়ু, স্থলজ ও জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিস্তারিত বর্ণনা দেন এবং আমেরিকার মানচিত্র তৈরি করেন।হামবোল্টের কাজ দ্বারা পরবর্তীকালে চার্লস ডারউইন, রাসেল ওয়ালেস, আর্নেস্ট হেকেল প্রমুখ বিজ্ঞানী হন।
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
ওয়াশিংটন ডিসি প্রদত্ত ভূগোলের সংজ্ঞা : যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৬৫ সালে ভূগোলের সংজ্ঞায় বলেছে, পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের সঙ্গে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে, তার ব্যাখ্যা খোঁজে ভূগোল।
* জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর *
প্রশ্ন–১। ইরাটোসথেনিস কোন দেশের নাগরিক ছিলেন?
উত্তর : গ্রিস।
প্রশ্ন–২। পূর্বে ভূগোলকে কয় ভাগে ভাগ করা হতো?
উত্তর : পূর্বে ভূগোলকে দুই ভাগে ভাগ করা হতো।
প্রশ্ন–৩। কোনটি আমাদের বাসভূমি?
উত্তর : পৃথিবী আমাদের বাসভূমি।
প্রশ্ন–৪। ‘Graphy’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘Graphy’ শব্দের অর্থ বর্ণনা।
প্রশ্ন–৫। পরিবেশ কয় প্রকার?
উত্তর : পরিবেশ দুই প্রকার।
প্রশ্ন–৬। প্রকৃতির সব দান মিলেমিশে কী তৈরি হয়?
উত্তর : পরিবেশ তৈরি হয়।
প্রশ্ন–৭। ভূগোল ও পরিবেশ কোন বিজ্ঞানের জননী?
উত্তর : ভূগোল ও পরিবেশ সব প্রকৃতি বিজ্ঞানের জননী।
প্রশ্ন–৮। কাদের জীব বলা হয়?
উত্তর : যাদের জীবন আছে তাদের জীব বলা হয়।
প্রশ্ন–৯। সামাজিক পরিবেশ কোনটি?
উত্তর : মানুষের তৈরি পরিবেশ।
প্রশ্ন–১০। ভূগোলের প্রধান কাজ কী?
উত্তর : কার্যকারণের খেলা উদঘাটন করা।
প্রশ্ন–১১। কাদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ?
উত্তর : জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ।
প্রশ্ন–১২। কোন পরিবেশে জীব ও জড় উপাদান রয়েছে?
উত্তর : প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব ও জড় উপাদান রয়েছে।
প্রশ্ন–১৩। ভূগোলের সাথে কোনটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত?
উত্তর : ভূগোলের সাথে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
প্রশ্ন–১৪। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশ কী রকম?
উত্তর : পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভিন্ন।
প্রশ্ন–১৫। আজকের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ কিসের ফল?
উত্তর : বহু বছরের বিবর্তনের ফল।
প্রশ্ন–১৬। কার্ল রিটার ভূগোলকে কী বলেছেন?
উত্তর : কার্ল রিটার ভূগোলকে পৃথিবীর বিজ্ঞান বলেছেন।
প্রশ্ন–১৭। প্রাকৃতিক পরিবেশে কী কী উপাদান রয়েছে?
উত্তর : প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব ও জড় উপাদান রয়েছে।
প্রশ্ন–১৮। বনভূমি কেটে কী তৈরি হয়?
উত্তর : বনভূমি কেটে গ্রাম বা শহরের মতো লোকালয় তৈরি হয়।
প্রশ্ন–১৯। কাদের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়ার সম্বন্ধ আছে?
উত্তর : মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়ার সম্বন্ধ আছে ।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২০। স্থান ও কালের পরিবর্তনের সাথে কী পরিবর্তিত হয়?
উত্তর : স্থান ও কালের পরিবর্তনের সাথে পরিবেশ পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন–২১। মানুষ কোথায় তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে?
উত্তর : মানুষ পৃথিবীতে তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে।
* অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর *
প্রশ্ন–১। জড় পরিবেশ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পরিবেশের উপাদান ২ প্রকার- জড় পরিবেশ ও জীব পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান। এ জড় উপাদান নিয়ে গঠিত পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
প্রশ্ন–২। ভৌত ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে ২টি পার্থক্য লেখ?
উত্তর : ভৌত ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে ২টি পার্থক্য হলো:
- ভৌত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত; অন্যদিকে সামাজিক পরিবেশ মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
- মাটি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত ভৌত পরিবেশের আলোচ্য বিষয়; অন্যদিকে শিক্ষা, মূল্যবোধ, অর্থনীতি সামাজিক পরিবেশের আলোচ্য বিষয়।
প্রশ্ন–৩। পরিবেশ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মানুষ যেখানেই বাস করুক, তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সব উপাদান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ। নদীনালা, সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, বনজঙ্গল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, উদ্ভিদ, প্রাণী, পানি, মাটি ও বায়ু নিয়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ। কোনো জীবের চারপাশের সব জীব ও জড় উপাদানের সর্বসমেত প্রভাব ও সংঘটিত ঘটনা হলো ঐ জীবের পরিবেশ। পরিবেশবিজ্ঞানী আর্মসের মতে, জীব সম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক, জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলা হয়।
প্রশ্ন–৪। আমরা ভূগোল কেন পড়ব?
উত্তর : ভূগোল পাঠে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন করা যায়। এছাড়া জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং এদের আচার আচরণ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বৈচিত্র্য। ভূগোল পাঠে আমরা কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের সামাজিক পরিবেশের কী পরিবর্তন হয়েছে, তা জানতে পারি। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কেন সৃষ্টি হয়, এদের নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কী ক্ষতি করে, তা জানা যায়। এসব কিছু জানার জন্য আমরা ভূগোল পড়ব ।
প্রশ্ন–৫। সামাজিক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পরিবেশ দুই প্রকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। মানুষের তৈরি পরিবেশ হলাে সামাজিক পরিবেশ। মানুষের আচারআচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, শিক্ষা, মূল্যবোধ, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তা হলো সামাজিক পরিবেশ।
প্রশ্ন–৬। প্রাকৃতিক পরিবেশ কীভাবে মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে?
উত্তর : মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এ পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদ-নদী, সাগর, খনিজ সম্পদ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন–৭। মানুষের ক্রিয়াকলাপ কেন পরিবেশের পরিবর্তন ঘটায়?
উত্তর : মানুষের ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে নানা রকম পরিবর্তন ঘটায়। কারণ ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম ও শহরের মতো লোকালয়। খাল-বিল, পুকুর প্রভৃতি ভরাট হলে পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে।
প্রশ্ন–৮। আধুনিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পৃথিবী মানুষের বাসভূমি। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নানা রকম পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসব আধুনিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
প্রশ্ন–৯। কোন কারণে পরিবেশভূগোল বিজ্ঞানে গুরুত্ব বহন করে?
উত্তর : ভূগোল ও পরিবেশ হলো সব প্রকৃতিবিজ্ঞানের জননী। ভূগোলকে যত ভাগে বিভক্ত করা হােক না কেন, সব ভূগোলের সাথে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বর্তমানে ভূগোল ও পরিবেশ সম্পৃক্ত করে পড়ানো হয়। এ কারণে পরিবেশ ভূগোল বিজ্ঞানে গুরুত্ব বহন করে।
প্রশ্ন–১০। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : পরিবেশের জড় ও জীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে উঠেছে তাকে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। মানুষ, গাছপালা, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, নদীনালা, সাগর প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান। মানুষের আচার-আচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতি-নীতি, শিক্ষা, মূল্যবোধ ও অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে যে পরিবেশ গড়ে ওঠে তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে।
প্রশ্ন–১১। পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন কর।
উত্তর : পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার, যেমন- জড় উপাদান ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়, যাদের বৃদ্ধি আছে, জন্ম আছে, মৃত্যু আছে তাদের জীব বলা হয়। গাছপালা, পশপাখি, কীটপতঙ্গা, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হলো জীব। এরা পরিবেশের জীব উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, উষ্ণতা, আর্দ্রতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান। এই জড় উপাদান নিয়ে গড়ে ওঠা পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
পাঠের গুরুত্বপূর্ণ শব্দসমূহের ব্যাখ্যা
- আবাসভূমি : আবাসভূমি এমন একটি অঞ্চল বা পরিবেশ যেখানে একটি বিশেষ জীব স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করে এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে আবাসভূমি হচ্ছে এমন একটি জটিল মানবীয় পরিবেশ, যেখানে মানুষ বাস করে এবং সমৃদ্ধিশালী জীবনযাপনে প্রয়াস পায়।
- মিথস্ক্রিয়া : মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা-ই হলো মিথস্ক্রিয়া। এ সম্পর্কের মূলে রয়েছে কার্যকারণের খেলা। ভূগোলের প্রধান কাজ হলো এ কার্যকারণ উদঘাটন করা।
- Geography : ‘Geo’ ও ‘graphy’ শব্দ দুটি মিলে হয়েছে। এখানে ‘Geo’ শব্দের অর্থ ‘ভূ’ বা পৃথিবী এবং ‘graphy’ শব্দের অর্থ বর্ণনা’। সুতরাং ‘Geography’ শব্দের অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা।
- সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল : ভূগোলের একটি শাখা হলো সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল। ভূগোলের এ শাখায় সংখ্যাতাত্ত্বিক কৌশল এবং মডেল করে প্রমাণাৰ্থ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি ভূগোলের অন্যান্য শাখায় ব্যবহার করা হয়।
- সাংস্কৃতিক : সমাজে প্রচলিত আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, চালচলন, কথাবার্তা, ভাষা, কারিগরি দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ই হলো সাংস্কৃতিক।
- পরিবেশ : পরিবেশ বলতে বোঝায়, কোনো একটি জীবের অস্তিত্ব বা বিকাশের উপর ক্রিয়াশীল সামগ্রিক পারিপার্শ্বিকতা; যেমন-চারপাশের ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান।
- অর্থনৈতিক ভূগোল- ভূগোলের মানব ভূগোল শাখার অন্তর্ভুক্ত। কেননা অর্থনৈতিক ভূগোলে মানব ভূগোলের ন্যায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যেসব অর্থনৈতিক কাজ করে সেগুলো আলোচিত হয়। এজন্য অর্থনৈতিক ভূগোল মানব ভূগোল শাখার অন্তর্ভুক্ত।
- প্রাকৃতিক ভূগোল- ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। প্রাকৃতিক ভূগোলে পৃথিবীর ভূমিরূপ, মৃত্তিকা, আবহাওয়া ও জলবায়ু, জীবজগৎ, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।
- নগর ভূগোল- নগর অর্থনীতি, বসতিকাঠামো, কেন্দ্রীভূতকরণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। মানব ভূগোলের এই শাখা অনেক ক্ষেত্রে নৃবিজ্ঞান, নগর পরিকল্পনা এবং নগর সমাজ বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
* তথ্য কণিকা *
১. ইংরেজি ‘Geography’ শব্দের অর্থ হলো ভূগোল। ‘Geo’ শব্দের অর্থ হলো ‘ভূ’ বা পৃথিবী, আর ‘Graphy’ শব্দের অর্থ হলো বর্ণনা। অতএব Geography হলো পৃথিবীর বর্ণনা।
২. ইরাটসথেনিস (২৭৬–১৯৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস মিশরের স্বাইন ও আলেকজান্দ্রিয়ায় সূর্যের কৌণিক অবস্থানের পার্থক্য পরিমাপ করে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেন। প্রাচীন গ্রিসে তিনিই সর্বপ্রথম গোলাকার পৃথিবীর ধারণা দেন। পৃথিবীর বর্ণনা বোঝাতে তিনিই সর্বপ্রথম ‘Geography’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ভৌগোলিক জ্ঞানে নানা অবদানের কারণে তাকে ‘ভূগোলের জনক’ বলে অভিহিত করা হয়।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি ১৯৬৫ সালে ভূগোলের সংজ্ঞায় বলেছে, পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের সঙ্গে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে, তার ব্যাখ্যা খোজে ভূগোল।
৪. ইরাটোসথেনিস কোন দেশের নাগরিক ছিলেন — গ্রিস।
৫. পূর্বে ভূগোলকে কয় ভাগে ভাগ করা হতো — দুই ভাগে।
৬. কোনটি আমাদের বাসভূমি — পৃথিবী আমাদের বাসভূমি।
৭. পরিবেশ কয় প্রকার — পরিবেশ দুই প্রকার।
৮. প্রকৃতির সব দান মিলেমিশে কী তৈরি হয় — পরিবেশ তৈরি হয়।
৯. ভূগোল ও পরিবেশ কোন বিজ্ঞানের জননী — প্রকৃতি বিজ্ঞানের জননী।
১০. কার্ল রিটার ভূগোলকে বলেছেন — পৃথিবীর বিজ্ঞান বলেছেন।
১১. ভূগোলের প্রধান কাজ — কার্যকারণের খেলা উদঘাটন করা।
১২. যাদের জীবন আছে তাদের বলা হয় — জীব।
১৩. সামাজিক পরিবেশ কোনটি — মানুষের তৈরি পরিবেশ।
১৪. আজকের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ কিসের ফল — বহু বছরের বিবর্তনের ফল।
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১। কোনটি জীবভূগোলের অন্তর্ভুক্ত?
ক. ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা খ. উদ্ভিদ ও জীবজন্তু
গ. অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ ঘ. শহরের ক্রমবিকাশ
উত্তর: খ. উদ্ভিদ ও জীবজন্তু
২। ভূগোলের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে-
i. প্রকৃতি
ii. শক্তি
iii. সমাজ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
মি. নাঈম চার রাস্তার মোড়ে অবস্থিত নিচু জায়গা ভরাট করে একটি দোকান এবং দোকানের পিছনে বাড়ি তৈরি করলেন।
৩। নাঈমের কর্মকাণ্ডটি কোন ভূগোলের অতর্ভুক্ত?
ক. জীবভূগোল খ. মানব ভূগোল
গ. জলবায়ুবিদ্যা ঘ. ভূমিরূপবিদ্যা
উত্তর: খ. মানব ভূগোল
৪। উল্লিখিত কর্মকাণ্ডটি হলো–
i. গ্রামের ক্রমবিকাশ
ii. নগরায়ণ
iii. জনপদ তৈরি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৫। পৃথিবীর পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্যের যথাযথ যুক্তিসংগত ও সুবিন্যস্ত বিবরণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো ভূগোল।– উক্তিটি কার?
ক. অ্যাকারমেন খ. ইমানুয়েল কান্ট
গ. রিচার্ড হার্টশোর্ন ঘ. আলেকজান্ডার হামবোন্ট
উত্তর: গ. রিচার্ড হার্টশোন
৬। “মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল।”- উক্তিটি কার?
ক. অধ্যাপক ম্যাকনি খ. ইরাটসথেনিস
গ. অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্প ঘ. রিচার্ড হাটশোর্ন
উত্তর: ক. অধ্যাপক ম্যাকনি
৭। “পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফলকে বঝায়।”- উক্তিটি কার?
ক. হামবোল্ট খ. অ্যাকরম্যান
গ. পার্ক ঘ. ইরাটসথেনিস
উত্তর: গ. পার্ক
৮। সংখ্যাতাত্ত্বিক কৌশল ও মডেল ব্যবহার করে প্রমাণাৰ্থ পরীক্ষা করা ভূগোলের কোন শাখার অন্তর্ভুক্ত?
ক. ঐতিহাসিক খ. সামাজিক
গ. সংখ্যাতাত্ত্বিক ঘ. প্রাকৃতিক
উত্তর: গ. সংখ্যাতাত্ত্বিক
৯। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে আলোচ্য মিথস্ক্রিয়ার সম্পর্কের মূলে কী আছে?
ক. নিয়মকানুন খ. বৈষম্য
গ. কার্যকারণের খেলা ঘ. সম্পর্ক
উত্তর: গ. কার্যকারণের খেলা
১০। ‘Geography’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কে?
ক. ম্যাকনি খ. ইরাটসথেনিস
গ. অ্যাকারম্যান ঘ. সি. সি. পার্ক
উত্তর: খ. ইরাটসথেনিস
১১। Geo শব্দটির অর্থ কী?
ক. বর্ণনা খ. ভূ
গ. প্রকৃতি ঘ. পরিবেশ
উত্তর: খ. ভূ
১২। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র বিজ্ঞান একাডেমি কত সালে ভূগোলের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে।
ক. ১৯৬০ খ. ১৯৬৫
গ. ১৯৭০ ঘ. ১৯৭৫
উত্তর: খ. ১৯৬৫
১৩। ভূগোলের কোন শাখায় ক্ষয়ীভবন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়?
ক. ভূমিরূপবিদ্যা খ. জলবায়ুবিদ্যা
গ. মৃত্তিকা ভূগোল ঘ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
উত্তর: ক. ভূমিরূপবিদ্যা
১৪। কোনটি প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত বিষয়?
ক. রাষ্ট্রের সীমানা খ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
গ. জলবায়ুর তারতম্য ঘ. প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ
১৫। হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলন–
ক. আঞ্চলিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়
খ. অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়
গ. সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়
ঘ. ভূমিরূপ বিদ্যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয়
উত্তর: খ. অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
১৬। ইরাটসথেনিস কোন দেশের ভূগোলবিদ?
ক. ইরাক খ. ইতালি
গ. গ্রিস ঘ. যুক্তরাষ্ট্র
উত্তর: গ. গ্রিস
১৭। “পৃথিবী ও এর অধিবাসীদের বর্ণনাই হলো ভূগোল”- উক্তিটি কার?
ক. অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্প খ. অধ্যাপক কার্ল রিটার
গ. রিচার্ড হার্টশোর্ন ঘ. অধ্যাপক ম্যাকনি
উত্তর: ক. অধ্যাপক ডাডলি স্ট্যাম্প
১৮। মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয় কোনটি?
ক. জীব ভূগোল খ. মৃত্তিকা ভূগোল
গ. জলবায়ুবিদ্যা ঘ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
উত্তর: ঘ. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
১৯। ‘Geography’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কে?
ক. ইরাটসথেনিস খ. অধ্যাপক ম্যাকনি
গ. অধ্যাপক কারিটার ঘ. রিচার্ড হার্টশোর্ন
উত্তর: ক. ইরাটসথেনিস
২০। ভূগোলকে পৃথিবীর বিজ্ঞান বলেছেন কে?
ক. কার্ল রিটার খ. ডাডলি স্ট্যাম্প
গ. ম্যাকনি। ঘ. রিচার্ড হার্টশোর্ন
উত্তর: ক. কার্ল রিটার
২১। “পরিবেশ বলতে স্থান ও কালের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে মানুষকে ঘিরে থাকা সকল অবস্থার যোগফল বোঝায়”- উক্তিটি কে বলেছেন?
ক. ডাডলি স্ট্যাম্প খ. রিচার্ড হার্ডশোর্ন
গ. আর্মস ঘ. পার্ক
উত্তর: ঘ. পার্ক
২২। পরিবেশ প্রধানত কত প্রকার?
ক. দুই প্রকার খ. তিন প্রকার
গ. চার প্রকার ঘ. ছয় প্রকার
উত্তর: ক. দুই প্রকার
২৩। রাজনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়–
i. রাজনৈতিক বিবর্তন
ii. বিভাগের মধ্যস্থিত ভৌগোলিক বিষয়
iii. অঞ্চলভেদে পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
২৪। ভৌত পরিবেশের উপাদান কোনটি?
ক. রীতিনীতি খ. দালানকোঠা
গ. পশুপাখি ঘ. বাজার
উত্তর: গ. পশুপাখি
২৫। ভূগোলের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে–
i. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ
ii. নতুন নতুন আবিষ্কার
iii. চিন্তাধারার বিকাশ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
২৬। ‘Geography’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক. ইংরেজি খ. ল্যাটিন
গ. স্প্যানিশ ঘ. ফরাসি
উত্তর: ক. ইংরেজি
২৭। ভৌত পরিবেশের উপাদান কোনটি?
ক. ভৌত পরিবেশ খ. উৎসব-অনুষ্ঠান
গ. রীতিনীতি ঘ. সাগর
উত্তর: ঘ. সাগর
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ২৮নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন মানুষকে মানুষও তার প্রয়োজনে পরিবেশকে পরিবর্তন করেছে। ফলে একটি মিশ্র ক্রিয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
২৮। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে আলোচ্য মিশ্র ক্রিয়ার সম্পর্কের মূলে কী আছে?
ক. নিয়মকানুন খ. বৈষম্য
গ. কার্যকরণের খেলা ঘ. সম্পর্ক
উত্তর: গ. কার্যকরণের খেলা
২৯। অর্থনৈতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়–
i. কৃষিকাজ
ii. শহর ও নগর
iii. বনজ সম্পদ ও খনিজ সম্পদ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৩০। প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয় কোনটি?
ক. অর্থনীতি খ. শিক্ষা
গ. মাটি-পানি ঘ. মূল্যবোধ
উত্তর: গ. মাটি-পানি
৩১। কোনটি সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান?
গ. পরিবার ঘ. রাষ্ট্র
উত্তর: গ. পরিবার
৩২। পৃথিবীর কত অংশ সমুদ্র?
ক. এক-চতুর্থাংশ খ. দুই-চতুর্থাংশ
গ. তিন-চতুর্থাংশ ঘ. চার-পঞ্চমাংশ
উত্তর: গ. তিন-চতুর্থাংশ
৩৩। যে ধরনের বিষয়বস্তু ভূগোলে আলোচিত হয়–
i. পরিবেশে মানুষের কর্মকাণ্ড
ii. অর্থনৈতিক মন্দার কারণ
iii. পরিবেশে মানুষের জীবনধারা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৩৪। ভূগোল যেটির ব্যাখ্যা খোঁজে–
i. প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংঘটিত হয়
ii. প্রাকৃতিক বিষয়ের সাথে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে
iii. প্রাকৃতিক অবয়বের সাথে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৩৫। মানুষের জীবনযাত্রাকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে–
i. পৃথিবীর জলবায়ু
ii. পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ
iii. পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৩৬। প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত হয় যে উপাদান নিয়ে–
i. মাটি, পানি, বায়ু নিয়ে
ii. আলো, উদ্ভিদ, প্রাণী নিয়ে
iii. মানুষের রীতিনীতি, মূল্যবোধ নিয়ে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৩৭। ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনশীলতার পরিচয় ভুগোলে যেভাবে প্রকাশিত হয়–
i. যুক্তিসংগত বর্ণনার মাধ্যমে
ii. সুবিন্যস্ত বিবরণের মাধ্যমে
iii. সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৩৮। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে যেভাবে কাজ করতে হয়–
i. প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে
ii. সামাজিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে
iii. বৈরী পরিবেশকে নিশ্চিহ্ন করে
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৩৯। সামাজিক ভূগোলের আলোচনায় যে ধরনের বিষয়বস্তু স্থান পায়–
i. গ্রাম, শহর, নগর ও জনপদ তৈরি
ii. গ্রাম, শহর, নগর ও জনপদের ক্রমবিকাশ
iii. গ্রাম, শহর, নগর ও জনপদের পরিবর্তন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪০। মানবিক ভূগোল যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজে–
i. বৈচিত্র্যময় পরিবেশে মানুষ কীভাবে বাস করছে?
ii. কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে?
iii. মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী?
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৪১। অর্থনৈতিক ভূগোল অনুসন্ধান করছে।
i. নানা স্থানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি
ii. মানবজাতির কৃষির বৈচিত্র্য
iii. বিভিন্ন স্থানের খনিজ সম্পদ সংগ্রহের ধরন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৪২। জনসংখ্যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয় যেগুলো–
i. জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি
ii. সামাজিক জীবনের উপর প্রভাব
iii. অর্থনৈতিক জীবনের উপর প্রভাব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৩। বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কারণ চিহ্নিত করার জন্য একদল বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যাদের প্রথম কাজ হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে কীভাবে প্রভাবিত করে, তা বিশ্লেষণ করা। উক্ত বিশেষজ্ঞ দল যেটির প্রভাব বিশ্লেষণ করবেন–
i. জলবায়ুর
ii. ভূপ্রকৃতির
iii. শিক্ষার
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৪৪। ঢাকা শহরের মাটি, পানি, বায়ু, নদী, খাল–বিল, উষ্ণতা, আর্দ্রতা ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। উদ্দীপকে ঢাকা শহরের পরিবেশের যে উপাদানের কথা বলা হয়েছে–
i. জৈব উপাদান
ii. অজৈব উপাদান
iii. জড় উপাদান
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
৪৫। আমার হাতের এ বইটিতে আমার এলাকার মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীর কথা উঠে এসেছে। বইটিতে মূলত আমার এলাকার যে বিষয়টির কথা ফুটে উঠেছে–
i. ভৌত পরিবেশ
ii. সামাজিক পরিবেশ
iii. প্রাকৃতিক পরিবেশ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
৪৬। শুক্রবারের দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ নিয়ে চমৎকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য–
i. বাংলাদেশিদের আচার-আচরণ
ii. বাংলাদেশিদের রীতিনীতি
iii. বাংলাদেশের অর্থনীতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৪৭। এবারের জন্মদিনে বাবা আমাকে যে বইটি উপহার দিয়েছেন, সেটি পড়ে আমি আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক বিষয়বস্তু জানতে পেরেছি। বাবার দেওয়া বইটি যে ধরনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ–
i. উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনপ্রণালির বৈশিষ্ট্যের
ii. ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর বৈচিত্র্যের
iii. সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তনের
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৪৮। তোমার বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের ‘জনসংখ্যা ভূগোল’ বইটিতে যে ধরনের তথ্যের সমাহার ঘটেছে–
i. জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি-প্রকৃতি
ii. জনসংখ্যা বৃদ্ধির কার্যকারণ
iii, সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৪৯ ও ৫০নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
সৌদিপ্রবাসী রিপন লক্ষ করলেন, তার দেশ যেখানে নদীমাতৃক সেখানে সৌদি আরব বলতে গেলে মরুভূমি। সেখানে প্রচুর উট, খেজুর গাছ ইত্যাদি রয়েছে, যা তার দেশে দেখা যায় না বললেই চলে।
৪৯। রিপন দুই দেশের মধ্যে কোন বিষয়টির পার্থক্য লক্ষ করলেন?
ক. প্রকৃতির জড় উপাদান খ. প্রকৃতির জীব উপাদান
গ. প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘ. সামাজিক পরিবেশ
উত্তর: গ. প্রাকৃতিক পরিবেশ
৫০। অনুচ্ছেদের দেশ দুটির মধ্যকার ভিন্নতার যথার্থ কারণ হলো–
ক. সামাজিক প্রেক্ষাপটের পার্থক্য
খ. পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার ক্ষমতা
গ. উট, খেজুর প্রভৃতির প্রতি সে দেশের মানুষের ঝোক
ঘ. আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতা
উত্তর: ঘ. আঞ্চলিক বা ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতা
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৫১ ও ৫২নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
সোহেল অস্ট্রেলিয়া গিয়ে দেখল, সেদেশের মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতির সাথে বাংলাদেশের মানুষের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
৫১। সোহেল মানুষের কোন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছে?
ক. পরিবেশের জৈব উপাদান খ. জড় উপাদান
গ. প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘ. সামাজিক পরিবেশ
উত্তর: ঘ. সামাজিক পরিবেশ
৫২। অনুচ্ছেদটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়-
ক. অস্ট্রেলিয়ার মানুষের বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র
খ. বাংলাদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র
গ. অঞ্চলভেদে মানুষের বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যময়
ঘ. অঞ্চলভেদে মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ভিন্ন
উত্তর: গ. অঞ্চলভেদে মানুষের বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যময়
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৫৩ ও ৫৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
রিফাত তার বাবা আতিক সাহেবের কাছে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তিনি তাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয় পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান, যেটি পড়ার মাধ্যমে সে এই ব্যাপারে ধারণা লাভ করবে।
৫৩। রিফাতের বাবা আতিক সাহেব যে বিষয়টি পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, সেটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ক. অর্থনীতি ও ইতিহাস খ. ভূগোল ও পরিবেশ
গ. সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতি ঘ. পৌরনীতি ও অর্থনীতি
উত্তর: খ. ভূগোল ও পরিবেশ
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৫৪। উদ্দীপকে উক্ত বিষয় পাঠের যৌক্তিকতা হলো–
i. এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীর আচরণ সম্বন্ধে জানা যায়
ii. এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বৈচিত্র্য সম্বন্ধে জানা যায়
iii. এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে ধারণা লাভ করা যায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৫৫। প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন কীভাবে গড়ে উঠছে, তা ভূগোল পাঠের মাধ্যমে জানা যায়। এ বাক্য অনুসারে ভূগোল বাংলাদেশ–
i. কৃষিনির্ভর হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে
ii. জাহাজভাঙা শিল্পে উন্নতি করার কারণ ব্যাখ্যা করে
iii. পাটশিল্পে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১ : নিচের তথ্যের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
গ্রুপ-A | গ্রুপ-B |
পাহাড়-পর্বত মানুষ জলবায়ু গাছপালা | জীবভূগোল প্রাকৃতিক ভূগোল মানব ভূগোল অর্থনৈতিক ভূগোল |
ক ‘ভূগোল’ শব্দটি কে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন?
খ. সমুদ্রবিদ্যার বিষয়বস্তু কী?
গ. গ্রুপ ‘A’-এর উপাদানগুলো কোন পরিবেশের অন্তর্গত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মানবজীবনে গ্রুপ ‘A’ এবং গ্রুপ ‘B’-এর প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘ভূগোল’ শব্দটি ইরাটসথেনিস সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছেন।
খ. পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র। বিভিন্ন মহাদেশের মধ্যে সমুদ্রপথে যোগাযোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান, অবনমন, সাগর-মহাসাগরের উৎপত্তি, সমুদ্রতলদেশের উৎপত্তি, সমুদ্রস্রোত, জোয়ার-ভাটা, সমুদ্রের পানির রাসায়নিক গুণাগুণ ও লবণাক্ততা নির্ধারণ, সামুদ্রিক সম্পদব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সমুদ্রবিদ্যার মূল বিষয়বস্তু।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রুপ ‘A’-এর উপাদানগুলো ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।
পরিবেশকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ তাকে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ বলা হয়। এ পরিবেশে থাকে মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়-পর্বত, নদী, সাগর, আলল, মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী। গ্রুপ ‘A’-এর উপাদানগুলো হলো পাহাড়-পর্বত, মানুষ, জলবায়ু ও গাছপালা। প্রাকৃতিক পরিবেশের এসব উপাদানগুলোর মধ্যে পাহাড়-পর্বত ও জলবায়ু হলো জড় উপাদান এবং মানুষ ও গাছপালা হলো জীব উপাদান। এসব জড় ও জীব উপাদান নিয়েই ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। অন্যদিকে মানুষের তৈরি পরিবেশকে বলে সামাজিক পরিবেশ। মানুষের আচার-আচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান রীতিনীতি, শিক্ষা, মূল্যবোেধ, অর্থনীতি ও রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে সামাজিক পরিবেশ গঠিত হয়।
সুতরাং দেখা যায়, প্রকৃতি প্রদত্ত উপাদানকে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত উপাদানগুলো হলো প্রাকৃতিক উপাদান। অতএব বলা যায়, গ্রুপ ‘A’-এর উপাদানগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. মানবজীবনে গ্রুপ ‘A’ এবং গ্রুপ ‘B’-এর প্রভাব নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
উদ্দীপকে উল্লিখিত গ্রুপ ‘A’-এর উপাদানগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, প্রাণী, নদনদী, সাগর, খনিজ সম্পদ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং তার ক্রিয়াকলাপ পরিবেশে নানা রকম পরিবর্তন ঘটায়। পাহাড়-পর্বতের অবস্থান ও প্রাচুর্যতা এবং অনুকূল ও প্রতিকূল জলবায়ুর সাথে মানুষ প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে বেঁচে থাকে।
আবার গাছপালা, অক্সিজেন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে মানুষকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করে থাকে। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে। গাছপালা কেটে তৈরি হয় গ্রাম বা শহরের মতো লোকালয়। অন্যদিকে, গ্রুপ ‘B’ ভূগোলের কয়েকটি শাখাকে নির্দেশ করে। জীব ভূগোল পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদের বণ্টন নিয়ে আলোচনা করে। প্রাকৃতিক ভূগোল পৃথিবীর ভূমিরূপ, এর গঠন প্রক্রিয়া, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।
মানুষ মানব ভূগোলের প্রধান উপাদান পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে মানব ভূগোল তার কার্যকারণ অনুসন্ধান করে, যা মানবজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। আবার অর্থনৈতিক ভূগোল প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশকে মানিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যে কাজ করে তা আলোচনা করে । সুতরাং দেখা যায়, মানুষ গ্রুপ ‘B’-এর সব উপাদানগুলোকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিবর্তন সাধন করছে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের গ্রুপ ‘A’ এবং গ্রুপ ‘B’ মানবজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২ : শিশির একজন হকার। সে বাস, ট্রেন ও লঞ্চে বই বিক্রি করে। তাদের বইয়ের পাঠ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হকার শিশির বলছিল, “আমার এ বইটি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন, পৃথিবীতে বাস করা নানা রকম মানুষ ও তাদের বিচিত্র জীবনধারা, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নানা পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদির জানা–অজানা তথ্য।”
ক. জনসংখ্যা ভূগোল কোন ভূগোলের শাখা?
খ. “ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে আলোচনা করে।” বুঝিয়ে লেখ।
গ. “হকার শিশিরের বর্ণনায় ভূগোলের ধারণা ব্যক্ত হয়েছে।” ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “শিশিরের বইটিতে পরিবেশের ধারণা থাকা স্বাভাবিক।” বিশ্লেষণ কর/মতামত দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যা ভূগোল মানব ভূগোলের শাখা।
খ. আমরা জানি, পরিবেশ দুই প্রকার- ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ।
প্রকৃতির অন্যতম উপাদান হলো জড় ও জীব। আর এ জড় ও জীব উপাদান নিয়েই আলোচনা করে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও ক্ষুদ্র অনেক প্রাণী। এদের নিয়ে আলোচনা করে বলেই বলা হয়েছে, ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে আলোচনা করে।
গ. উদ্দীপকে শিশির নামের হকারের বর্ণনায় ভূলোলের ধারণা ব্যক্ত হয়েছে।
শিশির তার বইতে কী লেখা রয়েছে এর বর্ণনা প্রদান করতে গিয়ে বলেছে, তার বইটিতে পৃথিবীতে বাস করা নানা রকম মানুষ ও তাদের বিচিত্র জীবনধারা, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নানা পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের জানা-অজানা তথ্যের কথা পাওয়া যায় ।
পাঠ্যবই তথা আমরা যদি ভূগোল বইয়ে লক্ষ করি তবে দেখতে পাই, পৃথিবীতে বাস করে নানা রকম মানুষ; বিচিত্র তাদের জীবনধারা। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নানা রকম পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসবই হলো আধুনিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
তাই বলা যায়, শিশিরের বর্ণনায় ভূগোলের ধারণাই ব্যক্ত হয়েছে
ঘ. উদ্দীপকে শিশিরের বর্ণনা প্রমাণ করে, শিশির ভূগোল বিষয়ে আলোচনাসংবলিত বই বিক্রি করতে চাইছে। তার প্রমাণ পৃথিবীতে বাস করা নানা রকম মানুষ ও তাদের বিচিত্র জীবনধারা, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের নানা পরিবেশ ও প্রকৃতি, এমনকি মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি এবং জানা-অজানা তথ্য শিশিরের বইটিতে রয়েছে। এ ধরনের তথ্য ভূগোলেরও আলোচ্য বিষয়।
তাই শিশিরের বইটিতে ভূগোলের ধারণা ব্যক্ত হয়েছে।
আর যেখানে ভূগোলের ধারণা রয়েছে, সেখানে পরিবেশের ধারণাও থাকবে। কারণ শিশিরের বর্ণিত বিষয়গুলোর সাথে পরিবেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। কেননা প্রকৃতির সব উপাদান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ। নদীনালা, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, উদ্ভিদ, প্রাণী মিলে তৈরি হয় পরিবেশ- এ কথা পাঠ্যবই দ্বারা প্রমাণিত।
সুতরাং বলা যায়, শিশিরের সব তথ্যই পরিবেশগত। তাই তার বইটিতে পরিবেশের ধারণা থাকাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন–৩ : লামিয়া পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীকে নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ছবি আঁকতে আগ্রহী। সে মনে করে, এসব নিয়ে ছবি আঁকলে তার ছবিগুলো ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি মানুষের মনের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।
ক. পৃথিবীর প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদের বণ্টন কোন ভূগোলের আলোচ্য বিষয়?
খ. “পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।” বুঝিয়ে লেখ।
গ. লামিয়া যেসব বিষয় নিয়ে ছবি আঁকতে চায়, সেই বিষয়গুলোর সাথে ভূগোল বিষয়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, লামিয়ার ছবির বিষয়গুলো ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান এবং মানুষের তৈরি পরিবেশের উপাদান নয়? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবীর প্রাণিজগৎ এবং উদ্ভিদের বণ্টন জীবভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
খ. পৃথিবীতে মানুষ বাস করে এবং এ পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদনদী, সাগর, খনিজ সম্পদ প্রভৃতি অর্থাৎ পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। যেমন সাগরতীরবর্তী কিংবা নদীমাতৃক অঞ্চলে মৎস্য শিকার, কৃষিকাজ ইত্যাদিই হয়ে ওঠে মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস। আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে নদীনালা যথেষ্ট নেই। তবে সেখানকার অনেক দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় ওই সম্পদ আহরণ ও রপ্তানিই হয়ে উঠেছে সেসব দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লামিয়া পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীকে নিয়ে, অর্থাৎ প্রকৃতির সব উপাদান নিয়ে ছবি আঁকতে চায়। প্রকৃতির এসব উপাদান মিলেমিশে তৈরি হয় পরিবেশ, যা ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
এ পরিবেশের সীমার মধ্যে যুগে যুগে বিভিন্ন স্থানে মানুষের বেঁচে থাকার যে সংগ্রাম চলছে, ভূগোল তা নিয়ে যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ করে। ভূগোল হলো প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞান। প্রকৃতিতে যা কিছু আছে, তার বর্ণনা করে এটি। পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক অবয়বের সাথে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে, তার ব্যাখ্যা খোজে ভূগোল । মানুষের ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে নানা রকম পরিবর্তন ঘটায়। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে পরিবর্তন করে বিভিন্নভাবে।
আবার এই পরিবেশও তার জীবনযাত্রাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এ মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ রয়েছে। এ সম্বন্ধের মূলে আছে কার্যকারণের খেলা। ভূগোলের প্রধান কাজই হলো এ কার্যকারণ উদঘাটন করা।
তাই বলতে হয়, লামিয়া যেসব বিষয় নিয়ে ছবি আঁকতে চায়, সেই বিষয়গুলোর সাথে ভূগোলের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
ঘ. হ্যাঁ, আমি মনে করি লামিয়ার ছবির বিষয়গুলো ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান। পরিবেশ দুই প্রকার; যথাপ্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ। প্রকৃতির জড় ও জীব উপাদান নিয়ে যে পরিবেশ, সেটিই হলো ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এ পরিবেশে থাকে মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী। অন্যদিকে মানুষের তৈরি পরিবেশই হলো সামাজিক পরিবেশ। মানুষের আচার-আচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, শিক্ষা, মূল্যবোধ, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি সামাজিক পরিবেশের উপাদান।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, লামিয়া পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, আলো, গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীর ছবি আঁকতে চায় । অর্থাৎ সে ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান নিয়ে ছবি আঁকতে আগ্রহী।
অতএব এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, লামিয়ার ছবির বিষয়গুলো মানুষের তৈরি পরিবেশের নয়, তা ভৌত বা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান।
প্রশ্ন–৪ : জুয়েল ও সোহান দুই ভাই। জুয়েল বারিমণ্ডল ও জলবায়ু বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু সোহান পশুপালন ও কৃষিকাজ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।
ক. পৃথিবীর প্রায় কত অংশ সমুদ্র।
খ. জীব কাকে বলে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. জুয়েলের গবেষণার বিষয়গুলোর সাথে প্রাকৃতিক ভূগোলের সম্পর্ক নির্ণয় কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, জুয়েল ও সোহানের বিষয়গুলো ছাড়াও ভূগোল বহু শাখায় বিভক্ত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমুদ্র।
খ. যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায়, যাদের বৃদ্ধি আছে, জন্ম আছে, মৃত্যু আছে তাদের বলা হয় জীব। গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হলো জীব। এরাই পরিবেশের জীব উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জীব পরিবেশ।
গ. জলবায়ু ও বারিমণ্ডলই হলো জুয়েলের গবেষণার বিষয়। আর প্রাকৃতিক ভূগোল হলো ভূগোলের একটি শাখা।
প্রাকৃতিক ভূগোলে ভৌত পরিবেশ ও এতে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। পৃথিবীর ভূমিরূপ, এর গঠন প্রক্রিয়া, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভূগোলের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
জুয়েলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারিমণ্ডল ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে এদের প্রতিটি উপাদান পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করতে হবে; তথ্য সংগ্রহ করতে হবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদান, স্তরবিন্যাস, এদের বৈশিষ্ট্য, বারিমণ্ডলের সাথে এদের সম্পর্ক ইত্যাদির আলোচনা করতে হবে। জলবায়ু ও আবহাওয়ার নানা উপাদান- তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিশির, কুয়াশা ইত্যাদি নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে।
শীতপ্রধান, গ্রীষ্মপ্রধান, মরু কিংবা তুন্দ্রা অঞ্চলের জলবায়ু ও পৃথিবীপৃষ্ঠে এর প্রভাব নিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহ, আলোচনা বা বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য সহায়ক হলো প্রাকৃতিক ভূগোল। কারণ প্রাকৃতিক ভূগোল এসব বিষয়ের গভীর ও বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে। এ বিষয়টি এ ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বারিমণ্ডল ও জলবায়ু সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে।
শুধু তা-ই নয়, প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতের বারিমণ্ডল ও জলবায়ুর অবস্থা সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে সাহায্য করে। অতীতের বারিমণ্ডল কিংবা জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পেতে সাহায্য করে। স্থান ও সময়ভেদে জলবায়ুতে কেন, কীভাবে বৈচিত্র্য এসেছিল, তার যৌক্তিক ধারণা পাওয়া যায় এ প্রাকৃতিক ভূগোলে।
তাই বলতে হয়, জুয়েলের গবেষণার বিষয়ের সাথে প্রাকৃতিক ভূগোলের সম্পর্ক গভীর।
ঘ. হ্যাঁ যা, আমি মনে করি জুয়েল ও সোহানের বিষয়গুলোর পাশাপাশি ভূগোল আরও বহু শাখায় বিভক্ত। নিচে আমার মতের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো-
জুয়েল ও সোহান ভূগোলের দুটি মাত্র শাখা নিয়ে কাজ করতে চায়। জুয়েল কাজ করতে চায় বারিমণ্ডল ও জলবায় নিয়ে, যা। প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
অন্যদিকে সোহান আগ্রহী পশুপালন ও কৃষিকাজ বিষয়ে, যা অর্থনৈতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। এ দুটি শাখা ছাড়াও ভূগোলের আরও অনেক শাখা রয়েছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ভূগোল, মানবিক ভূগোল, আঞ্চলিক ভূগোল, গাণিতিক ভূগোল, সামাজিক ভূগোল, উদ্ভিদ ভূগোল, প্রাণী ভূগোল, ঐতিহাসিক ভূগোল, শিল্প ভূগোল, জনসংখ্যা ভূগোল প্রভৃতি অন্যতম।
রাজনৈতিক বিবর্তন, রাজনৈতিক বিভাগ, বিভাগের মধ্যস্থিত ভৌগোলিক বিষয় রাজনৈতিক ভূগোলের প্রধান বিষয় । অঞ্চলভেদে মানুষের বসতি ও জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যের কার্যকারণ অনুসন্ধান করে মানবিক ভূগোল। আঞ্চলিক ভূগোল অনুশীলন করে আলিক বৈশিষ্ট্যানুসারে পৃথিবীর নানা অঞ্চলের ভৌগোলিক বিষয়বস্তু।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি, বিবর্তন, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, বিভিন্ন সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদি গাণিতিক ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। সমাজের পরিকাঠামোর বিবর্তন ও পরিবর্তন আলোচনা করে সামাজিক ভূগোল। অঞ্চলভেদে নানা প্রজাতির উদ্ভিদের অবস্থানের কারণ অন্বেষণ করে উদ্ভিদ ভূগোল, যেখানে প্রাণী ভূগোল অন্বেষণ করে প্রাণিবৈচিত্র্যের কারণ । আজকের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের বিবর্তন ঐতিহাসিক ভূগোলের প্রতিপাদ্য, যেখানে শিল্প পরিবেশ, পটভূমি ও উন্নয়ন হলো শিল্প ভূগোলের প্রতিপাদ্য। জনসংখ্যা ও আর্থসামাজিক জীবনে জনসংখ্যার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে জনসংখ্যা ভূগোল।
অতএব এটি এখন স্পষ্ট যে, জুয়েল ও সোহানের বিষয়গুলো ভূগোলের দুটি শাখা মাত্র। এর পাশাপাশি ভূগোলের আরও বহু শাখা রয়েছে।
প্রশ্ন–৫ : রহমান সাহের ভূগোলবিষয়ক একটি জার্নাল পড়ছিলেন। এমন সময় একটি বিষয় তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল । বিষয়টি ছিল, পৃথিবীতে বাস করে নানা রকম মানুষ, বিচিত্র তাদের জীবনধারা, নানা রকম তাদের প্রকৃতি ও পরিবেশ। বিভিন্ন তাদের কর্মকাণ্ড । সর্বশেষ তিনি দেখতে পেলেন ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান, অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান।
ক. কে ভূগোলকে পৃথিবীর বিজ্ঞান বলেছেন?
খ. প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে যে বিষয়ের কথা বলা হয়েছে, সেটি পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সর্বশেষ বক্তব্যটির সাথে তুমি কি একমত? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অধ্যাপক কার্ল রিটার ভূগোলকে পৃথিবীর বিজ্ঞান বলেছেন।
খ. প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এতে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলা হয়। পৃথিবীর ভূমিরপ, এর গঠন প্রক্রিয়া, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
অপরপক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে। তার কার্যকারণ অনুসন্ধান মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
গ. উদ্দীপকে যে বিষয় পাঠের কথা বলা হয়েছে তা হলো ভূগোল। নিচে ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলো-
ভূগোল পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভূগোল হলো সব প্রকৃতি বিজ্ঞানের জননী। ভূগোল বিষয়টি পাঠে জানা যায়, পৃথিবীর কোন স্থানের প্রকৃতি ও পরিবেশ কেমন, কোথায় পাহাড়, পর্বত, নদী, সাগর, মালভূমি, সমভূমি ও মরুভূমি আছে। এদের গঠনের কারণ ও বৈশিষ্ট্য, ভূগোল পাঠে পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে কীভাবে জীবজগতের উদ্ভব হয়েছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা অর্জন করা যায়।
এছাড়া জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং এদের আচারআচরণ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারার বৈচিত্র্য। ভূগোল পাঠে আমরা কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের সামাজিক পরিবেশের কী পরিবর্তন হয়েছে তা জানতে পারি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো কেন সৃষ্টি হয়, এদের নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ কী ক্ষতি করে তা জানা যায়। মানুষ তার কর্মকাণ্ড দ্বারা কীভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে, এ ক্ষতির মাত্রা কেমন, এ ক্ষতি কী করে কাটিয়ে ওঠা যায়-
এসব বিষয় ভূগোল পাঠে জানা যায়। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি, গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ও এর প্রভাব জানতে ভূগোল পাঠ করা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে। লাগিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন কীভাবে গড়ে উঠেছে তা-ও এর মাধ্যমে জানা যায়। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ভূগোল বিষয়ের জ্ঞান প্রয়োজন।
উপরিউক্ত কারণগুলোর জন্য ভূগোল পাঠ করা প্রয়োজন।
ঘ. উদ্দীপকের সর্বশেষ বক্তব্য হলো- ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান, অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত। নিচে আমার মতের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো-
আমরা পৃথিবীতে বাস করি। পৃথিবী আমাদের বাসভূমি। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাই হলো ভূগোল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমির সংজ্ঞামতে, পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপব্যবস্থাগুলো কীভাবে সংগঠিত এবং এসব প্রাকৃতিক বিষয় বা অবয়বের সাথে মানুষ নিজেকে কীভাবে বিন্যস্ত করে, তার ব্যাখ্যা খোজে ভূগোল । হামবোন্টের মতে, ভূগোল হলো প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত।
পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদনদী, সাগর, খনিজ সম্পদ তার জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে, তার ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে ঘটায় নানা রকম পরিবর্তন। আবার সমাজবদ্ধ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি, জনসংখ্যা বণ্টন, অভিবাসন প্রভৃতি ভূগোলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যায়।
তাই বলা যায়, ভূগোল যেমন প্রকৃতির বিজ্ঞান তেমন পরিবেশ এবং সমাজেরও বিজ্ঞান।
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন-৬ : রাশেদ ও চন্দন স্নাতকোত্তর ডিগ্রী গবেষণামূলক কাজ করতে আগ্রহী। রাশেদ এ কাজের জন্য বায়ুমণ্ডল বা বারিমণ্ডলের যেকোনো একটির উপর গবেষণা করবে বলে স্থির করল। চন্দনের ইচ্ছা পৃথিবীতে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, জীবনযাত্রা কেমন এর উপর অনুসন্ধানমূলক কাজ করা।
ক. Urban Geography অর্থ কী?
খ. অর্থনৈতিক ভূগোল ভূগোলের কোন শাখায় অন্তর্ভুক্ত?
গ. রাশেদ যে বিষয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী তা ভূগোলের যে শাখার অন্তর্ভুক্ত সেটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রাশেদ ও চন্দন যে বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করতে চায় তা কি ভূগোলের একই শাখার অন্তর্ভুক্ত? তোমার মতামত দাও।
৬নং প্রশ্নের উত্তর
ক. Urban Geography অর্থ নগর ভূগোল।
খ. অর্থনৈতিক ভূগোল ভূগোলের মানব ভূগোল শাখার অন্তর্ভুক্ত।
কেননা অর্থনৈতিক ভূগোলে মানব ভূগোলের ন্যায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য যেসব অর্থনৈতিক কাজ করে সেগুলো আলোচিত
হয়। এজন্য অর্থনৈতিক ভূগোল মানব ভূগোল শাখার অন্তর্ভুক্ত।
গ. রাশেদ বায়ুমণ্ডল বা বারিমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক যা ভূগোলের প্রাকৃতিক ভূগোল শাখার অন্তর্ভুক্ত। নিচে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো-
ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। প্রাকৃতিক ভূগোলে পৃথিবীর ভূমিরূপ, মৃত্তিকা, আবহাওয়া ও জলবায়ু, জীবজগৎ, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। প্রাকৃতিক ভূগোলবিদগণ উপরিউক্ত বিষয়সমূহের আন্তঃসম্পর্ক এবং মানুষের কার্যকলাপের সাথে এদের সম্পর্ক অর্থাৎ মানুষের হস্তক্ষেপে তাদের পরিবর্তন নিয়েও পর্যালোচনা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রাশেদের গবেষণার জন্য নির্ধারিত বিষয়টি প্রাকৃতিক ভূগোল।
ঘ. উদ্দীপকে রাশেদ যে বিষয়ের উপর গবেষণা করতে ইচ্ছুক তা হলো, বায়ুমণ্ডল বা বারিমণ্ডল যা প্রাকৃতিক ভূগোলোর অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে চন্দনের ইচ্ছা সে পৃথিবীতে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে ও তাদের জীবনযাত্রা কেমন এর উপর অনুসন্ধানমূলক কাজ করা, যা মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে রাশেদ ও চন্দনের গবেষণার বিষয়বস্তু ভূগোলের দুটি ভিন্ন শাখার অন্তর্ভুক্ত। নিচে আমার মতামত দেওয়া হলো-
ভূগোলের যে শাখায় প্রাকৃতির সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। পৃথিবীর ভূমিরূপ এর গঠন, বায়ুমণ্ডল, বারিমণ্ডল, জলবায়ু, প্রভৃতি প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত।
উদ্দীপকে রাশেদের আলোচনার বিষয়বস্তুও প্রাকৃতিক ভূগোলের আলোচনার বিষয়বস্তুর অনুরূপ। অন্যদিকে মানবিক ভূগোলে মানুষ ও তার আশেপাশের পরিবেশ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, শিল্প, খনিজ, জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। চন্দনের গবেষণার বিষয়বস্তুও মানব ভূগোলের আলোচনার বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, রাশেদ ও চন্দনের গবেষণাকৃত বিষয়বস্তু ভূগোলের দুটি ভিন্ন শাখার অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন–৭ : কিছুদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে মূল্যবান মাটি কাটার যন্ত্র জব্দ করাসহ একটি পাহাড়ি এলাকা সিলগালা করে দেয়। পাহাড় কেটে জলাভূমি ভরাট করে সেখানে গৃহনির্মাণের জন্য প্লট বরাদ্দের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
ক. ১৯৬৫ সালে ভূগোলের সংজ্ঞা দিয়েছে কোন প্রতিষ্ঠান?
খ. পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ভূগোলের জ্ঞান প্রয়োজন কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মকাণ্ডটি কোন ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. মানুষ তার কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে মূলত নিজেদের অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে কাজ করছে। আলোচনা কর।
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির বিজ্ঞান একাডেমি।
খ. জীবসম্প্রদায়ের পারিপার্শ্বিক জৈব ও প্রাকৃতিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে। ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান, আবার অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান। প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজ সম্পর্কে ভূগোলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তাই পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ভূগোলের জ্ঞান প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মকাণ্ডটি মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত। নিচে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল।
আলেকজান্ডার ফন হামবোল্টের মতে, ভূগোল হলো প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলোচনা এর অন্তর্ভুক্ত। ঘরবাড়ি, অফিস, আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম বা শহরের মতো লোকালয় । খাল, বিল ও পুকুর ভরাট হয়।
মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এ মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে। এ সম্বন্ধের যুক্তিপূর্ণ আলোচনাই হলো ভূগোল। ভূগোল প্রধানত দুই প্রকার। যথা : প্রাকৃতিক ভূগোল ও মানব ভূগোল। প্রাকৃতিক ভূগোলে ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কীভাবে বসবাস করছে, কীভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে, কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার কার্যকারণ অনুসন্ধান মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়।
উদ্দীপকে যেহেতু মানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা আছে, তাই বলা যায়, উদ্দীপকের কর্মকাণ্ডটি মানব ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. মানুষ তার কর্মকাণ্ড দ্বারা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে মূলত নিজেদের অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে কাজ করছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
সম্পদের অধিক ব্যবহারের ফলে আমাদের যে তিন ধরনের বাস্তুসংস্থান বিদ্যমান (জলজ, বনজ, স্থলজ) এর প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। জলজ বাস্তুসংস্থান নষ্ট হওয়ার ফলে অনেক জলজ প্রাণী ও মাছ এখন বিলুপ্ত। বনজ সম্পদের অনেক বৃক্ষ বিলুপ্ত ও কিছু বৃক্ষ বিলুপ্তির মুখে। অনেক বনজ প্রাণী ধ্বংস হয়েছে। বনজঙ্গল বেশি কেটে ফেলার ফলে শৃগাল, খরগোশ, বনবিড়াল প্রভৃতির বাসস্থান নষ্ট হয়েছে, যা খাদ্যশৃঙ্খলকে ভেঙে দিয়েছে। এর প্রভাব স্থলজ প্রাণীর বাস্তুসংস্থানের উপর তথা মানবসমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আমরা দেখতে পাই, অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পদ ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে উত্তপ্ততা এবং শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত বিশ্বে অতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, নড়াইল, বরিশাল, নোয়াখালী জেলার অনেক অংশ সমুদ্রে জলমগ্ন হয়ে পড়বে। এছাড়া ভূনিম্নস্থ পানিতে লোনা পানি প্রবেশ করছে। ফলে স্বাভাবিক উদ্ভিদ জন্মানোর পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। পাহাড় ও ভূমিধ্বস বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, পেটের পীড়া প্রভৃতি।
উপযুক্ত আলোচনাতে দেখা যায় যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধিত হলে তার বিরূপ প্রভাব মানুষের উপরই পরছে। তাই বলা যায়, প্রকৃতির ক্ষতি মানে মানুষেরই ক্ষতি।