নবম দশম-বাংলা প্রথম পত্র
উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯–১৯৭৬]
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
লেখক সম্পর্কিত তথ্য:
জন্ম : কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে, বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ই জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতৃপরিচয় : কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ।
ব্যাধি ও মৃত্যু : নজরুল মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অসুস্থ কবিকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করানো হয়। তিনি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট, বাংলা ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ই ভাদ্র ঢাকার পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। [দ্রষ্টব্য: পাঠ্যবইয়ে ভুলক্রমে চল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারানোর কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তিনি ১৯৪২ সালে মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান, যা তার তেতাল্লিশ বছর বয়সে ঘটেছিল। [তথ্যসূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান; নজরুল তারিখ অভিধান (ড. মাহবুবুল হক)।]
শৈশব : নজরুলের শৈশব কাটে কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তিনি গ্রামের মক্তব থেকে উত্তীর্ণ হয়ে সংসারের চাপে ঐ মক্তবেই এক বছর শিক্ষকতা করেন। বারো বছর বয়সে লেটো গানের দলে যোগদান করে পালাগান রচনার মধ্য দিয়ে তার কবিপ্রতিভার স্ফুরণ ঘটে।
শিক্ষা ও পেশা: নজরুলের শিক্ষাজীবন বার বার বাধাগ্রস্ত হয়। তিনি বর্ধমানে ও পরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাই স্কুলে লেখাপড়া করেন। ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান। সেখানেই তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।
সাহিত্যিক পরিচয়: কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি। সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তার ছিল বিস্ময়কর পদচারণা। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, পত্রসাহিত্য ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখায় তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান গান রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
এসএসসি সকল বিষয়ে সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
উল্লেখযোগ্য রচনা:
কাব্যগ্রন্থ: অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, প্রলয়শিখা, চক্রবাক, সিন্ধুহিন্দোল।
উপন্যাস: বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা।
গল্পগ্রন্থ: ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা।
প্রবন্ধগ্রন্থ: যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দীর জবানবন্দী।
পুরস্কার ও সম্মাননা : স্বাধীনতার পর কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকায় এনে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। এছাড়া তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ‘ পুরস্কার লাভ করেন।
উপাধি : বিদ্রোহী কবি।
নবম ও দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রবন্ধ সম্পর্কিত তথ্য:
উৎস ও পরিচিতি: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলি’ (জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড) থেকে নেওয়া হয়েছে। এ রচনায় দেশের অন্ত্যজ শ্রেণির বা অবহেলিত মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় উন্নয়নে তাদের জাগরণ কামনা করা হয়েছে।
মূলবক্তব্য: প্রবন্ধটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের পটভূমিতে লেখা। রচনাটিতে কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ রচনায় লেখক উপেক্ষিত শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দেশের অবহেলিত জনগণের শক্তিকে। তথাকথিত ভদ্রসমাজ যাদেরকে ছোটলোক বলে দূরে ঠেলে রেখেছে, নজরুল তাদেরকেই জাতীয় উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি মনে করেন। তাঁর মতে, এরাই দেশের দশ আনা শক্তি। এদেরকে জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রাবন্ধিক দেশের মনীষীগণের আমরণ সংগ্রামের ইতিহাস থেকে এবং তাদের জীবনের আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মানবপ্রেমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। আমরা যদি তাঁর মতো মানুষের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বিরাজ করবে।
রূপশ্রেণি: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ রচনাটি একটি প্রবন্ধ।
নামকরণ: রচনাটির নামকরণ করা হয়েছে এর বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে। এ রচনার মূলবক্তব্য দেশের উপেক্ষিত শ্রেণির মানুষের গুরুত্বকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয়েছে।
ভাষা ও গদ্যরীতি : প্রবন্ধটি সাধু ভাষারীতিতে রচিত হয়েছে। গদ্য হলেও ভাষার গাঁথুনি ও বাক্য রচনার কৌশলগুণে প্রবন্ধটিতে কাব্যময়তা লক্ষ করা যায়।
বাংলা প্রথম-নোট: সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. কাজী নজরুল ইসলামকে কোথায় সমাহিত করা হয়?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় ।
প্রশ্ন–২. ‘দুর্দিনের যাত্রী‘ কোন ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: ‘দুর্দিনের যাত্রী’ প্রবন্ধ গ্রন্থ।
প্রশ্ন–৩. কাদের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ?
উত্তর: ছোটলোক সম্প্রদায়ের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ।
প্রশ্ন–৪. কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কত বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন–৫. সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে তিনি কত সালে যোগ দেন?
উত্তর: সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে তিনি ১৯১৭ সালে যোগ দেন।
প্রশ্ন–৬. বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাকে?
উত্তর: বিদ্রোহী কবি বলা হয় কাজী নজরুল ইসলামকে।
প্রশ্ন–৭. `রাজবন্দীর জবানবন্দী‘ কবি নজরুল ইসলামের কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: `রাজবন্দীর জবানবন্দী’ কবি নজরুল রচিত প্রবন্ধগ্রন্থ।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন-PDF
প্রশ্ন–৮. কাজী নজরুল ইসলাম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রশ্ন–৯. আমাদের অভিজাত সম্প্রদায় হতভাগাদের কী নামকরণ করেছে?
উত্তর: আমাদের অভিজাত সম্প্রদায় হতভাগাদের ‘ছোটলোক’ নামকরণ করেছে।
প্রশ্ন–১০. আমরা কাদের উপেক্ষা করছি?
উত্তর: আমরা তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করছি।
প্রশ্ন–১১. কোন ভাষার শব্দের ব্যবহার কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে?
উত্তর: আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
প্রশ্ন–১২. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধটি কোন পটভূমিতে লেখা?
উত্তর: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের পটভূমিতে লেখা।
প্রশ্ন–১৩. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের কী ধরনের মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে?
উত্তর: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন–১৪. উদার প্রাণ নিয়েও ছোটলোকেরা কোনো কাজ করতে পারছে না কেন?
উত্তর: ভদ্র সম্প্রদায়ের অত্যাচারের কারণে ছোটলোকেরা মুক্ত, উদার প্রাণ নিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না।
প্রশ্ন–১৫. কী করলে শত বছরের চেষ্টার কাজ একদিনে সম্পন্ন হবে?
উত্তর: জনগণের শক্তির উন্মেষ ঘটাতে পারলে শত বছরের চেষ্টার কাজ একদিনে সম্পন্ন হবে।
প্রশ্ন–১৬. মহাত্মা গান্ধীর কীসের অহংকার নেই?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধীর পদ-গৌরবের অহংকার নেই।
প্রশ্ন–১৭, মহাত্মা গান্ধী কাদের বক্ষে ধরে ভাই বলে ডেকেছেন?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী তথাকথিত ছোটলোকদের বক্ষে ধরে ভাই বলে ডেকেছেন।
প্রশ্ন–১৮. চণ্ডাল বলতে কাদের বোঝায়?
উত্তর: চণ্ডাল বলতে হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় নিম্নবর্গের লোকদের বোঝায়।
প্রশ্ন–১৯. বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান রাষ্ট্র গঠন করতে প্রতিটি দেশের মনীষীগণ কী করে গেছেন?
উত্তর: বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান রাষ্ট্র গঠন করতে প্রতিটি দেশের মনীষীগণ আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন।
প্রশ্ন–২০. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে কয় শ্রেণির লোকের উল্লেখ আছে?
উত্তর: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে দুই শ্রেণির লোকের উল্লেখ আছে।
প্রশ্ন–২১. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে উল্লিখিত দুই শ্রেণি কারা?
উত্তর: ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে উল্লিখিত দুই শ্রেণি হলো ছোটলোক ও অভিজাত সম্প্রদায়।
প্রশ্ন–২২. কার আভিজাত্য গৌরব নেই?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধীর আভিজাত্য গৌরব নেই।
প্রশ্ন–২৩. কে পদ–গৌরবের অহংকার করেননি?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী পদ-গৌরবের অহংকার করেননি।
প্রশ্ন–২৪. কার আহ্বানে জাতিভেদ ছিল না?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে জাতিভেদ ছিল না।
• অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর •
প্রশ্ন–১. ‘এমনি করিয়া এই উপেক্ষিত শক্তির বোধন করো’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন
উত্তর: উক্তিটিতে লেখক উপেক্ষিত শক্তির মূল্যায়ন ও মানবাধিকার প্রদানের কথা বুঝিয়েছেন। আমাদের দেশে তথাকথিত অভিজাত শ্রেণি দরিদ্র শ্রমিকদের ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ বলে আখ্যায়িত করে। তাদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। লেখক এ ধরনের মানসিকতা ত্যাগ করে মহাত্মা গান্ধীর মতো তাদেরকে বুকে টেনে নিতে বলেছেন। তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়নের কথা বলেছেন। তাহলে দেশের মহা উন্নয়ন সাধিত হবে।
বাংলা প্রথম-নোট: সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২. লেখক ‘ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে কী বুঝিয়েছেন
উত্তর: লেখক ‘ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে সমাজের নীচুশ্রেণির অবহেলিত মানুষকে বুঝিয়েছেন। ধন ও বংশমর্যাদাহেতু সমাজের মানুষের মধ্যে নানা শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে একশ্রেণির মানুষ নিজেদের ভদ্রলোক বলে পরিচয়। করাতে গিয়ে অপর শ্রেণি বা শ্রেণিসমূহকে অবদমন করেছে। ওই অবদমিত শ্রেণির শ্রমেই সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়েছে; কিন্তু সমাজপতিরা তাদের প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেনি। উল্টো তাদের ছোটলোক সম্প্রদায় বলে অভিহিত করেছে।
প্রশ্ন–৩. ‘বোধন–বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বোধন-বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোটলোক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন যে, আমাদের সমাজে ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে আমরা যাদের বুঝি তারাই সমাজ-প্রগতির কাণ্ডারি। কিন্তু ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে সবসময় এ শ্রেণিকে অবদমন করে থাকে। এ বিষয়টিকে মানতে পারেননি প্রাবন্ধিক। তাই তিনি ওই ছোটলোক তথা উপেক্ষিত সম্প্রদায়কে জাগিয়ে নিয়ে সমাজ-প্রগতির মূল স্রোতে বেড়াতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন–৪. ‘আমাদের জন্মগত অধিকার’ বড় নয় কেন?
উত্তর: মানুষের মানুষ পরিচয়ের চেয়ে তার অর্থনৈতিক দিকটি সমাজে সমাদৃত হয় বলে তার জন্মগত অধিকারটাই বড় নয়। প্রাবন্ধিকের মতে আমরা সব মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি। তবে কেউ জন্মায় তথাকথিত ভদ্র সম্প্রদায়ে, আবার কেউ ছোটলোক সম্প্রদায়ে। মানুষ হয়ে জন্মে মানুষ হিসেবে সমস্ত অধিকারই আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু উঁচু-নিচু, ছোট-বড়, ধনী-গরিব ভেদাভেদ নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকি বলে আমাদের জন্মগত অধিকারটা আর বড় থাকে না।
প্রশ্ন–৫. ‘দেখিবে বিশ্ব তোমাকে নমস্কার করিবে‘- কেন?
উত্তর: ‘দেখিবে বিশ্ব তোমাকে নমস্কার করিবে’- উক্তিটি দ্বারা তথাকথিত ছোটলোক দের আপন করে নেওয়ার সুফলকে বোঝানো হয়েছে। আমরা ছোটলোক -চণ্ডাল বলে সমাজে যাদের অধিকারহীন করে রাখি, যাদের শক্তিকে আমরা অবজ্ঞা করি, এদের যদি আপন করে নিতে পারি, তবে আমরা বিশ্বের দরবারে শক্তিশালী জাতিরূপে আবির্ভূত হতে পারব। সারাবিশ্ব আমাদের বাহবা দেবে। একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব। আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন–৬. উপেক্ষিত শক্তিদের নিয়ে লেখকের আশাবাদ কীরূপ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উপেক্ষিত শক্তিরাই দেশে যুগান্তর আনবে- লেখক এরকম আশা পোষণ করেন। লেখক উপেক্ষিত শক্তিদের মহা আহ্বানে ডাকতে বলেছেন, যেমনি করে মহাত্মা গান্ধী ডেকেছেন। বুকভরা স্নেহ দিয়ে ডাকলে তারা সাড়া দেবেই। তাই উপেক্ষিত শক্তিকে বোধন করলে এরাই দেশে যুগান্তর আনবে, অসাধ্য সাধন করবে।
এসএসসি সকল বিষয়ে সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–৭. আমাদের কোন শক্তিকে ভুললে চলবে না বলে লেখক ইঙ্গিত করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লেখকের মতে, যাদের ওপর আমাদের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে সেই শক্তিকে ভুললে চলবে না। আমাদের দেশে যারা দরিদ্র শ্রেণি তারা কৃষি কাজ করে। অনেকেই কামার, কুমার, মুচি। এরকম আরও অনেক ছোট ছোট পেশার মানুষ রয়েছে যাদের আমরা উপেক্ষা করি। অথচ তাদের শক্তির ওপরই আমাদের দেশের উন্নতি নির্ভর করে। তাই তাদের কথা ভুললে চলবে না।
প্রশ্ন–৮. আমাদের দেশের তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়– কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আমাদের দেশের ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায় বলতে নিম্ন আয়ের মানুষকে বোঝানো হয়েছে। আমাদের অভিজাত সম্প্রদায় আমাদের দেশের দরিদ্ৰশ্রেণি নিম্ন আয়ের মানুষকে তথাকথিত ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায় নাম দিয়েছে। এই ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের পরিশ্রমের ফলেই তারা বড়লোক হয়েছেন। এই ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ যারা জন্ম হতে ঘৃণা, উপেক্ষা পেয়ে নিজেকে ছোট মনে করে। সংকোচে নিজেকে জড়িয়ে রাখে।
প্রশ্ন–৯. জাতিকে উন্নত করবার আশা কেন শেষ হয়ে যায় বলে লেখক বলেছেন?
উত্তর: শুধু মুখে বলে কাজ না করার কারণে জাতিকে উন্নত করবার আশা শেষ হয়ে যায় বলে লেখক মনে করেন। আমারা যারা ভদ্র সম্প্রদায়, দেশের দুর্দশা বুঝি, মানুষকে বোঝাতে পারি এবং দুর্ভাগ্যের কথা বলে কাঁদতে পারি অথচ কর্মক্ষেত্রে কাজ করার শক্তি আমাদের নেই। এই কথাতেই আমাদের দেশকে, জাতিকে উন্নত করবার আশা শেষ হয়ে যায় ।
প্রশ্ন–১০. শত বছরের চেষ্টায় যে কাজ হচ্ছে না একদিনে সেই কাজ কীভাবে সম্পন্ন হবে বলে লেখক মনে করেন?
উত্তর: যদি একবার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলেই শত বছরের চেষ্টায় যে কাজ হয়নি একদিনে সেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে লেখক মনে করেন। আমাদের জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের মানুষ ভেবে ভাই বলে ডাক দেবার উদারতা থাকতে হবে। তাদের ভেতরের শক্তির উন্মেষ ঘটাতে হবে তাহলেই একদিনেই কাজ সম্পন্ন হবে।
নবম ও দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন।
প্রশ্ন–১১. আমরা কেন ছোটলোকদের উপেক্ষা করে আসছি।
উত্তর: সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত অবস্থানের দিক থেকে ছোটলোকরা অনেক পিছিয়ে থাকায় আমরা তাদের উপেক্ষা করছি। ছোটলোকরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা শ্রমিকশ্রেণির হওয়ায় তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার ফলে সামাজিক অবস্থানেও তারা নীচুস্তরে আছে। এসব দিক থেকে ভদ্রসম্প্রদায়ের সমকক্ষ না হওয়ায় আমরা ছোটলোকদের উপেক্ষা করে আসছি।
প্রশ্ন–১২. ছোটলোকদের স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জন্ম থেকে ঘৃণা আর উপেক্ষা পাওয়ার কারণে ছোটলোকদের
স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যায়। ছোটলোকদের সন্তানরাও ছোটলোক হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই ভদ্ৰশ্রেণির মানুষ তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। এ আচরণে থাকে দারুণ ঘৃণা আর উপেক্ষা। এ ধরনের অবজ্ঞাসূচক আচরণ সহ্য করতে করতে ছোটলোকদের স্বভাবে সংকোচ আর জড়তা জড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন–১৩. এই ‘ছোটলোকদের কে বক্ষে ধরিয়া ভাই বলিয়া ডাকিয়াছেন বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: “এই ‘ছোটলোক’কে বক্ষে ধরিয়া ভাই বলিয়া ডাকিয়াছেন” বাক্যটিতে মহাত্মা গান্ধীর সাম্যবাদী মানসিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী মানবতাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার মধ্যে বংশ বা পদ গৌরবের অহংকার ছিল না। মানুষের প্রতি সম্মানবোধ থেকে সকলকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই মহাত্মা গান্ধী সাধারণ মানুষকে ভাই বলে ডাকতে পেরেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর সাম্যবাদী মানসিকতার দিকটিকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন–১৪. মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সকলের সাড়া দেওয়ার কারণ কী?
উত্তর: মহাত্মা গান্ধী তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে আপন করে নিতে পেরেছিলেন বলেই সকলে তাঁর আহ্বানে সকলে সাড়া দেয়। মহাত্মা গান্ধী নিরহংকার মানুষ ছিলেন। কোনো রূপ শ্রেণিভেদাভেদে তিনি বিশ্বাস করতেন না। আপন ভেবে সকলের দুঃখ বুঝতে চাইতেন। মহৎপ্রাণ এই মানুষটির অসাম্প্রদায়িক চেতনার কারণে তার আহ্বানে সকলে সাড়া দেয়।
প্রশ্ন–১৫. সাম্যবাদী চেতনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: সাম্যবাদী চেতনা বলতে সকলকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার আদর্শকে বোঝায়। সাম্যবাদ বলতে সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখা বোঝায়। যেখানে সকলের অধিকার সমান থাকে সেখানে সাম্যবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায় । আদর্শ সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের উদ্দেশ্যে প্রাবন্ধিক সাম্যবাদী। | চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রশ্ন–১৬. দেশের অধিবাসী লইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি। বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: দেশের সকল অধিবাসী তথা সকল ব্যক্তির সমন্বয়ই দেশ ও জাতির আসল শক্তি প্রশ্নোক্ত বাক্যটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে। দেশের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে যাদের ওপর অভিজাত-গর্বিত সম্প্রদায় সেই হতভাগাদের নামকরণ করেছে ছোটলোক সম্প্রদায়। অথচ ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু সকলের সম্মিলিত শক্তি ও প্রয়াসের দ্বারাই কেবল জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব। কেননা একটি ভূখণ্ডের সকল অধিবাসীদের সমন্বয়েই গঠিত হয় দেশ আর একই সংস্কৃতির সকল মানুষের সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতি। অর্থাৎ একটি দেশের সকল মানুষেরই সম্মিলিত শক্তির ওপরই নির্ভর করে একটি দেশের অস্তিত্ব তথা সামগ্রিক উন্নয়ন।
তথ্যকণিকা
১. কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম- ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ।
২. কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম- ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে।
৩. কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে।
৪. কাজী নজরুল ইসলাম ছেলেবেলায় – লেটো গানের দলে যোগ দেন।
৫. কাজী নজরুল ইসলাম লেখাপড়া করেন-ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে।
৬. কাজী নজরুল ১৯১৭ সালে- সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন।
৭. কাজী নজরুল ইসলাম- ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত।
৮. কাজী নজরুল ইসলাম মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে- দুরারোগ্য ব্যাধিতে বাকশক্তি হারান।
৯. কাজী নজরুলের উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ- রাজবন্দীর জবানবন্দী।
১০. কাজী নজরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন- ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট।
১১. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের প্রারম্ভের কবিতাংশটি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।
১২. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে- জাতির মহাজাগরণের কথা।
১৩. মহাজাগরণের দিনে উপেক্ষিত- শক্তিদশ আনা।
১৪. প্রবন্ধে উপেক্ষিত শক্তি হচ্ছে তথাকথিত- ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়।
১৫. ঐ তথাকথিত ‘ছোটলোক’র অন্তর-কাচের ন্যায় স্বচ্ছ।
১৬. তথাকথিত হতভাগাদের নজরুল বলেছেন- সত্যিকার মানুষ।
১৭. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে দৃষ্টান্ত- মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ।
১৮. মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে- জাতিভেদ, ধর্মভেদ, সমাজভেদ ছিল না।
১৯. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোটলোককের আত্মাও—ভদ্ৰশ্রেণির আত্মার মতোই ভাস্বর।
২০. মহাজাগরণ নিশ্চিত করতে হলে- বিভেদ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা জরুরি।
২১. ‘মসীময়’ শব্দের অর্থ- কালিমাখাময়, অন্ধকারাচ্ছন্ন।
২২. ‘চণ্ডাল‘ অর্থ হচ্ছে- চাড়াল; হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় নিম্নবর্গের লোক।
২৩. প্রচলিত অথচ তাহার সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ বর্তমান এমন বিষয়কে- তথাকথিত বলে।
২৪. ওতপ্রোত শব্দের অর্থ – বিশেষভাবে জড়িত বা পরিব্যাপ্ত।
২৫. উৎপীড়ন শব্দের অর্থ— উত্যক্তকরণ বা অত্যাচারকরণ।
২৬. দুর্দশা শব্দের অর্থ- মন্দ অবস্থা বা শোচনীয় অবস্থা।
২৭. উন্মেষ শব্দের অর্থ— উম্মিলন; চোখ মেলে চাওয়া।
২৮, উপেক্ষিত শব্দের অর্থ— তুচ্ছ তাচ্ছিল্য; বা অগ্রাহ্য করণ।
২৯, বোধন বাঁশি শব্দের অর্থ— বোধ জাগিয়ে তোলার বাঁশি।
৩০. দৈন্য শব্দের অর্থ – দারিদ্র্য; দীনতা।
৩১. ‘নজরুল রচনাবলী’ প্রকাশিত হয় – বাংলা একাডেমি থেকে ।
৩২. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি চয়ন করা হয়েছে-‘নজরুল রচনাবলী’ (জন্ম শতবর্ষ সংস্করণ, প্রথম খণ্ড) থেকে।
৩৩. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ শিরোনামের রচনাটি – একটি প্রবন্ধ।
৩৪. কবির ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ রচনার পটভূমি – অবিভক্ত ভারতবর্ষ।
৩৫. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি – যুগবাণী’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
৩৬. একটি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় – ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করা আবশ্যক।
৩৭. জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে আমরণ সংগ্রাম করেছেন – দেশের মনীষীগণ।
৩৮. মনীষীদের নির্দেশিত পথে পরিভ্রমণ করলে – সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে ।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. আজ আমাদের মহাজাগরণের দিনে কত আনা শক্তি উপেক্ষিত ব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করছে?
ক. ছয় আনা খ. আট আনা
গ. দশ আনা ঘ. বারো আনা
উত্তর: গ. দশ আনা
২. আজ আমাদের এত অধঃপতনের কারণ কী?
ক. মেহনতি মানুষদের প্রতি অবহেলা
খ. গণজাগরণের অভাব
গ. স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ
ঘ. ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া
উত্তর: ক. মেহনতি মানুষদের প্রতি অবহেলা
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘ভৃত্য চড়িল উটের পৃষ্ঠে উমর ধরিল রশি,
মানুষে স্বর্গে তুলিয়া ধরিয়া ধুলায় নামিল শশী।’
৩. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিকের কোন্ মানসিকতার পরিচয় উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. অসাম্প্রদায়িকতার খ. সত্যবাদিতার
গ. ভ্রাতৃত্ববোধের ঘ. সাম্যবাদিতার
উত্তর: ঘ. সাম্যবাদিতার
বাংলা প্রথম-নোট: সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
৪. মানুষকে মানুষ হইয়া ঘৃণা করা কীসের ধর্ম নয়?
গ. মানুষের ঘ. মানবতার
উত্তর: খ. আত্মার
৫. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে কী প্রকাশ পেয়েছে?
ক. সাম্যবাদী মানসিকতা
খ. ছোটলোক সম্প্রদায়ের যাপিত জীবন
গ. পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া
ঘ. অভিজাত গর্বিত সম্প্রদায়ের অহংবোধ
উত্তর: সাম্যবাদী মানসিকতা
৬. কোনো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় কোনটি?
ক. সাধারণ মানুষ খ. অভিজাত সম্প্রদায়
গ. শ্রেণি বৈষম্য ঘ. ছোটলোক সম্প্রদায়
উত্তর: গ. শ্রেণি বৈষম্য
৭. তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ার অধিকার ভুলে যাবার কারণ কী?
ক) নিজেদের অজ্ঞানতা খ. ভদ্র সমাজের অত্যাচার
গ. সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘ. অর্থনৈতিক বৈষম্য
উত্তর: খ. ভদ্র সমাজের অত্যাচার
৮. কাজী নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ গ্রন্থ কোনটি?
ক. মৃত্যুক্ষুধা খ. ছায়ানট
উত্তর: ঘ. যুগবাণী
৯. আসিতেছে শুভ দিন ……….
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।
কবিতাংশে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধের কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
ক. সভ্যতা নির্মাণ করা খ. শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করা
গ. শ্রমজীবীদের গুরুত্ব দেয়া ঘ. শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা
উত্তর: গ. শ্রমজীবীদের গুরুত্ব দেয়া
১০. সমাজ উন্নয়নে যা কাম্য ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবধানুসারে তার নাম কী?
ক. মন খ. সাম্য
গ. নেতৃত্ব ঘ. অন্তর
উত্তর: খ. সাম্য
১১. আজ আমাদের এত অধঃপতনের কারণ কী?
ক. মেহনতি মানুষের প্রতি অবহেলা খ. স্বপ্নরাজ্যে বিচরণ
গ. গণজাগরণের অভাব ঘ. ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া
উত্তর: ক. মেহনতি মানুষের প্রতি অবহেলা
১২. গান্ধীর আহ্বানে কোনটি উপস্থিত ছিল বলে কাজী নজরুল ইসলাম ইঙ্গিত করেছেন?
ক. অভেদ খ. ধর্মভেদ
গ. জাতিভেদ ঘ. বর্ণভেদ
উত্তর: ক. অভেদ
১৩. কোনটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত উপন্যাস?
ক. চক্রবাক খ. ছায়ানট
গ. কুহেলিকা ঘ. প্রলয়শিখা
উত্তর: গ. কুহেলিকা
১৪. ‘দেশের অধিবাসী লইয়াই তো—’ শুন্যস্থানে কোনটি বসবে?
ক. ব্যক্তির সমষ্টি খ. জাতি
উত্তর: ঘ. দেশ
১৫. জনসংখ্যাবহুল এদেশের দশ আনা শক্তি যাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের আমরা অবহেলা করি। তাদের একান্ত প্রয়োজনীয় চাহিদাকেও আমরা উপেক্ষা করি। উদ্দীপকে ‘এ দশ আনা শক্তি’ বলতে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে কাদের বোঝানো হয়েছে?
ক অভিজাত সম্প্রদায় খ. মেহনতি মানুষ
গ. শাসকশ্রেণি ঘ. সত্যান্বেষী মানুষ
উত্তর: খ. মেহনতি মানুষ
১৬. ‘মসীময়’ শব্দের অর্থ কী?
ক. অন্ধকারাচ্ছন্ন খ. মেঘাচ্ছন্ন
গ. কালচে ঘ. মেটে
উত্তর: ক. অন্ধকারাচ্ছন্ন
১৭. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন” শীর্ষক প্রবন্ধে মহা–আহ্বান বলতে বোঝানো হয়েছে–
i. যে-আহ্বানে জাতি ও ধর্মভেদ নেই
ii. যে-আহ্বানে সমাজভেদ নেই
iii. যে-আহ্বানে জড়তা নেই নিচের কোনটি সঠিক?
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
১৮. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে ‘মহাজাগরণের দিন’ বলতে বোঝানো হয়েছে—
i. জাতিগঠনে নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া
ii. স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া
iii. বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রত্যয়ী হওয়া
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১৯ ও ২০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘দেখিনু সেদিন রেলে। কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে!’
১৯. উদ্দীপকের তারে তোমার পঠিত ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধের কাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
ক) ধনিক খ. বণিক
গ. মেহনতি মানুষ ঘ. মধ্যবিত্ত শ্রেণি
উত্তর: গ. মেহনতি মানুষ
২০. উদ্দীপকে উল্লিখিত বাবু সা’ব এবং পঠিত প্রবন্ধের ভদ্র সম্প্রদায় উভয়েই –
i. নিপীড়ক
ii. অভিজাত
iii. উদার
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ২১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়,
সেই পথ লক্ষ্য করে স্বীয় কীর্তি ধ্বজা ধরে আমরাও হব বরণীয়।
নবম ও দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন।
২১. কবিতাংশে প্রতিফলিত আশাবাদ নিচের কোন রচনার লেখকের চাওয়া?
ক. নিরীহ বাঙালি খ. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
গ. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন ঘ. মানুষ মুহম্মদ (স.)
উত্তর: গ. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
উদ্দীপকটি পড়ে ২২ ও ২৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
‘গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।
২২. উদ্দীপকের সাথে তোমার পঠিত কোন প্রবন্ধের মিল খুঁজে পাও?
ক. নিরীহ বাঙালি খ. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
গ. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন ঘ. পয়লা বৈশাখ
উত্তর: গ. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন
২৩. উদ্দীপক ও প্রবন্ধের মধ্যে ভাবগত ঐক্য হলো–
i. সত্যবাদিতায়
ii. সাম্যবাদিতায়
iii. অসাম্প্রদায়িকতায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
উত্তর: ঘ. ii ও iii
২৪. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে বলা হয়েছে যাদের ওপর আমাদের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে সেই শক্তিকে জলে চলবে না। এখানে ‘যাদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
ক. দরিদ্র শ্রেণির লোকজন খ. যারা কৃষি কাজ করে
গ. কামার, কুমার, মুচি ঘ. বণিক শ্রেণির লোকজন
উত্তর: ক. দরিদ্র শ্রেণির লোকজন
২৫. “যে একা সেই সামান্য, যার ঐক্য নেই সেই তুচ্ছ এ উক্তি কী ধারণ করে?
ক. খণ্ডিত ভাবকে খ. মৌল চেতনাকে
গ) নেতিবাচক দিককে ঘ. গৌণ ভাবকে
উত্তর: খ. মৌল চেতনাকে
২৬. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধের লেখক ছোট–বড়, উঁচু–নিচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদ দূর করা আবশ্যক বলে মনে করেছেন কেন?
ক. দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য খ. দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য
গ. দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঘ. দেশের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য
উত্তর: গ. দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য
২৭. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ কাজী নজরুল ইসলামের কোন প্রবন্ধ গ্রন্থের একটি রচনা?
ক. নজরুল রচনাবলি খ. কুহেলিকা
গ. মৃত্যুক্ষুধা ঘ. যুগবাণী
উত্তর: ঘ. যুগবাণী
২৮. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধটি পাঠের উদ্দেশ্য হলো–
ক. গণজাগরণ খ. ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জাগরণ
গ.উপেক্ষিতদের জাগরণ ঘ. মনুষ্যত্বের
উত্তর: গ.উপেক্ষিতদের জাগরণ
২৯. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধটি কোন পটভূমিতে লেখা?
ক. অবিভক্ত ভারতবর্ষ খ. স্বৈরাচারী পাকিস্তান
গ. বিভাগ-উত্তর বাংলা ঘ. অবহেলিত ও উপেক্ষিত পূর্ব বাংলা
উত্তর: ক. অবিভক্ত ভারতবর্ষ
৩০. কুপমণ্ডুক অসংযমীর আখ্যা দিয়াছে যারে
তারি তরে ভাই গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে।
উদ্দীপকে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে?
ক. উপেক্ষিতদের প্রতি ভালোবাসা
খ. ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের প্রতি ধিক্কার
গ. উপেক্ষিতদের জেগে ওঠার আহ্বান
ঘ. হৃদয়বান হওয়ার প্রতি আহ্বান
উত্তর: ক. উপেক্ষিতদের প্রতি ভালোবাসা
৩১. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে প্রকাশ পেয়েছে—
ক. রাষ্ট্রীয় জীবনের সুখ-দুঃখ খ. সত্যবাদিতার বহিঃপ্রকাশ
গ. সাম্যবাদী মানসিকতা ঘ. গণজাগরণের অভাব
উত্তর: গ. সাম্যবাদী মানসিকতা
৩২. ‘বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে সচেতন করা
খ. জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেওয়া
গ. দৈন্য দূর করা
ঘ. নীতিবোধ জাগ্রত করা
উত্তর: ঘ. নীতিবোধ জাগ্রত করা
৩৩. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কাদের উদ্বোধন কামনা করেছেন।
ক. প্রগতিশীল মানুষদের খ. উপেক্ষিত ছোটলোকদের
গ. অভিজাত শ্রেণির মানুষদের ঘ. ভদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের
উত্তর: খ. উপেক্ষিত ছোটলোকদের
৩৪. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন‘ প্রবন্ধে লেখকের জীবন চেতনার কোন পরিচয় বিধৃত হয়েছে?
ক. বিদ্রোহ খ. সাম্যবোধ
গ. জাতীয়তাবোধ ঘ. তারুণ্য
উত্তর: খ. সাম্যবোধ
৩৫. মহাত্মা গান্ধী ভারতে অসাধ্য সাধন করেছিলেন যেটির মাধ্যমে-
i. মেহনতি মানুষদের বুকে টেনে নিয়ে
ii. মেহনতি মানুষদের সুখ-দুঃখের ভাগী হয়ে
iii. মেহনতি মানুষদের পারিশ্রমিক দিয়ে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১ : ‘তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটে ও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!’
ক. ব্যক্তির সমষ্টিকে এক কথায় কী বলা যায়?
খ. আমাদের দেশে জনশক্তি গঠন হতে পারছে না কেন?
গ. উদ্দীপকের মজুর, মুটে ও কুলি’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের কাদের সমার্থক? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তির সমষ্টিকে এককথায় জাতি বলা হয়।
খ. আমাদের সত্যিকার মানুষকে আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করছি না বলেই আমাদের দেশে জনশক্তি গঠিত হতে পারছে না। আমাদের অভিজাত গর্বিত সম্প্রদায় সব সময়ই তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে নিচু চোখে দেখে। ভদ্র সম্প্রদায়ের এ ধরনের আচরণের ফলে তথাকথিত এই ছোটলোক সম্প্রদায়ের মানুষেরা হীনম্মন্যতায় ভোগে ও দেশের কাজে প্রাণখুলে অংশ নিতে পারে না। অথচ তারাই দেশের সত্যিকারের শক্তি। তাদের অবহেলা করছি বলেই আমাদের দেশে জনশক্তি গঠিত হতে পারছে না।
গ. উদ্দীপকের মজুর, মুটে ও কুলির মাঝে কবিতাংশে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে উল্লিখিত উপেক্ষিত শক্তির স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সমাজের উপেক্ষিত মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যাদের অন্তর কাচের মতো স্বচ্ছ, যাদের কর্মস্পৃহা দেশের উন্নয়নের জন্য জরুরি তাদের প্রশস্তি গেয়েছেন তিনি।
উদ্দীপকের কবিতাংশেও সেই উপেক্ষিত শক্তিরই জয়গান গাওয়া হয়েছে। সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোক সম্প্রদায় যাদের ছোটলোক বলে অবহেলা করে তথাকথিত সেই ছোটলোকেরাই দেশের প্রকৃত মানুষ। তাদের শ্রমের বিনিময়ে উন্নত হয়েছে সভ্যতা, সেই সত্যই প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপকে। জাতীয় উন্নয়নে মজুর, মুটে ও কুলি অর্থাৎ অবহেলিত শ্রমজীবী মানুষের অবদান ও তাদের মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা বর্ণিত হয়েছে। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে এ মানুষদেরই লেখক উপেক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
নবম ও দশম শ্রেণির সকল বিষয়ের নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র; সমগ্র ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে না। উদ্দীপক কবিতাংশটি দেশের আসল শক্তি শ্রমজীবী মানুষের জয়গান সংবলিত। প্রকাশিত ভাবটি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের একটি অংশকে প্রকাশ করলেও প্রবন্ধে বিস্তৃত ভাবের সম্পূর্ণ প্রকাশে সক্ষম হয়নি।
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী মানসিকতা প্রকাশিত হয়েছে। সমাজের বিশাল কর্মযজ্ঞেও শ্রমজীবী মানুষদের অবদান যে সবচেয়ে বেশি তা তিনি ঘোষণা করেছেন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে। এই শ্রমজীবী মানুষদের মাধ্যমে সকলে উপকৃত হলেও অভিজাত গর্বিত ভদ্রলোক সম্প্রদায় তাদের উপযুক্ত সম্মান দেয়নি বরং ‘ছোটলোক’ বলে তাদের অপমান করেছে। মর্যাদাবান একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় ছোট-বড়, উঁচু-নীচু, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভেদকে ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে বলে প্রাবন্ধিক মত দিয়েছেন।
উদ্দীপকে প্রকাশিত শ্রমজীবী মানুষের ত্যাগের মহিমা চিত্রণ, আলোচ্য প্রবন্ধের অনুরূপ। কিন্তু উপেক্ষিত শক্তিকে যথাযথ মূল্যায়ন করার যে প্রয়াস প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে উপস্থিত হয়নি। প্রবন্ধে উল্লিখিত উপেক্ষিত মানুষকে ভালোবেসে বুকে টেনে নেওয়ার প্রস্তাবটিও বর্ণিত হয়নি উদ্দীপকে।
উদ্দীপকটি তাই ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র।
প্রশ্ন–২ : দৈনিক প্রথম আলোর খবর: বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এ উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে পোশাকশিল্প ও বিদেশে কর্মরত অগণিত নারী–পুরুষ শ্রমিক। সূত্র মতে, আট ঘণ্টার পরিবর্তে দশ–পনেরো ঘণ্টা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে পোশাক শ্রমিকরা যে বস্ত্র উৎপাদন করছে তা বিদেশে রপ্তানি করে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দরিদ্র নারী–পুরুষরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে অর্থ উপার্জন করছে, তা রেমিটেন্স হিসেবে দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। অথচ এসব শ্রমিকদের জীবনমানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সামাজিকভাবে আজও তারা অবজ্ঞা–অবহেলার শিকার। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিলেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি।
ক. কাজী নজরুল ইসলামকে কোথায় সমাহিত করা হয়?
খ. ‘এমনি করিয়া এই উপেক্ষিত শক্তির বোধন করো’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের শ্রমিক শ্রেণি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের কাদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে কাজী নজরুল ইসলামের পরামর্শ কতটা কার্যকর তা
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।
খ. উক্তিটিতে লেখক উপেক্ষিত শক্তির মূল্যায়ন ও মানবাধিকার প্রদানের কথা বুঝিয়েছেন। আমাদের দেশে তথাকথিত অভিজাত শ্রেণি দরিদ্র শ্রমিকদের ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ বলে আখ্যায়িত করে। তাদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে। লেখক এ ধরনের মানসিকতা ত্যাগ করে মহাত্মা গান্ধীর মতো তাদেরকে বুকে টেনে নিতে বলেছেন। তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্যায়নের কথা বলেছেন। তাহলে দেশের মহা উন্নয়ন সাধিত হবে।
গ. উদ্দীপকের শ্রমিক শ্রেণি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ‘ছোটলোক’ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের সমাজে ধনিক শ্রেণি ও দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির বসবাস রয়েছে। ধনিক শ্রেণি চিরকাল শ্রমিক শ্রেণিকে হেয় প্রতিপন্ন করে আসছে। তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন না করে তাদের ওপর নির্যাতন করে আসছে। অথচ উপেক্ষিত শ্রমিক শ্রেণির ওপর আমাদের দেশের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে। এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধে।
উদ্দীপকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবমূল্যায়নের চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা শ্রমিকরা ঘুরিয়ে দিলেও তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির প্রতি অবমূল্যায়ন ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তথাকথিত ধনী-অভিজাত শ্রেণি তাদেরকে ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ আখ্যা দিয়ে অনবরত উপেক্ষা করে আসছে। উপেক্ষা-উৎপীড়নের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণি বিদ্রোহ করলে তাদের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলে। তারা আর অধিকারের কথা বলতে সাহস পায় না।
এভাবে অবমূল্যায়ন ও নিপীড়নের দিক থেকে উদ্দীপকের শ্রমিক শ্রেণি আলোচ্য প্রবন্ধের উপেক্ষিত শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. শ্রমিক শ্রেণিকে মানুষ হিসেবে, ভাই হিসেবে বুকে টেনে নিয়ে যথার্থ মূল্যায়ন করতে হবে- কাজী নজরুল ইসলামের এমন পরামর্শ বাস্তবিকই উদ্দীপকের শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য একটি সমাজের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। শ্রমিক শ্রেণি যথার্থ মূল্যায়ন পেলে দেশে-বিদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করতে পারে। এমন ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে।
উদ্দীপকে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবমূল্যায়নের দৃশ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেয় তাদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন না হওয়া অত্যন্ত অমানবিক একটি বিষয়। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও লেখক তথাকথিত অভিজাত সম্প্রদায় কর্তৃক দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির প্রতি উপেক্ষা ও উৎপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অথচ এ শ্রেণির ওপর আমাদের দেশের দশ আনা শক্তি নির্ভর করে। ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য দরিদ্র ও অবহেলিত শ্রমিক শ্রেণিকে যথাযথ মানবিক মূল্যায়ন প্রসঙ্গে লেখক কিছু বাস্তব পরামর্শ প্রদান করেছেন। লেখক মহাত্মা গান্ধীর উপমা টেনে শ্রমিকদের ভাই বলে বুকে টেনে নিতে বলেছেন। তাদের প্রাণের সঙ্গে আমাদের প্রাণকে মিলিয়ে নিতে বলেছেন। তাদের শক্তির বোধন বা মূল্যায়ন করতে উপদেশ দিয়েছেন।
তাহলে দেশের উন্নয়নের চাকা সচল হবে এবং দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের চাকাও উন্নতির পথে ঘুরতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে লেখকের এমন পরামর্শ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলা প্রথম-নোট: সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–৩ : আকবর হোসেন পৌর মেয়র। তিনি একজন জনদরদি নেতা। সমাজের নীচুতলার মানুষের সঙ্গে তার চলাফেরা বেশি। তিনি তাদের সুখদুঃখের সাথি। তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তা সংস্কার এবং নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করেন। তিনি বলেন, এরাই আমার আসল শক্তি।
ক. ‘দুর্দিনের যাত্রী’ কোন ধরনের গ্রন্থ?
খ. লেখক ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে।
ঘ. “এরাই আমার আসল শক্তি” । উদ্দীপকের আকবর হোসেনের এই উক্তিটি ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘দুর্দিনের যাত্রী’ প্রবন্ধ গ্রন্থ।
খ. লেখক ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ বলতে সমাজের নীচুশ্রেণির অবহেলিত মানুষকে বুঝিয়েছেন। ধন ও বংশমর্যাদাহেতু সমাজের মানুষের মধ্যে নানা শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে একশ্রেণির মানুষ নিজেদের ভদ্রলোক বলে পরিচয় করাতে গিয়ে অপর শ্রেণি বা শ্রেণিসমূহকে অবদমন করেছে। ওই অবদমিত শ্রেণির শ্রমেই সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়েছে; কিন্তু সমাজপতিরা তাদের প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেনি। উল্টো তাদের ‘ছোটলোক সম্প্রদায়’ বলে অভিহিত করেছে।
গ. উদ্দীপকে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ছোটলোক সম্প্রদায় তথা সমাজের নীচুতলার মানুষের প্রতিনিধিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক এ প্রবন্ধে সমাজের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান শ্রেণিবিভাজনকে তুলে ধরে নীচুতলার (অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও শ্রমজীবী) মানুষের সামাজিক অবস্থানকে তুলে ধরেছেন। তাদের শ্রমের ওপর নির্ভর করেই সমাজের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে, কিন্তু প্রাপ্য সম্মান থেকে তাদের সর্বদাই হতে হচ্ছে বঞ্চিত। প্রাবন্ধিকের মতে, তাদের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ, তাই তিনি তাদের বুকে নিয়ে আপন করে বোধন বাঁশিতে সুর দিতে চান।
উদ্দীপকে পৌর মেয়র আকবর হোসেন একজন জনদরদি মানুষ। সমাজের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে তার সখ্য বেশি। সমস্ত সংস্কার কাজ তিনি তাদের সহযোগিতায় সম্পন্ন করে থাকেন। তার বিশ্বাস, এ মানুষগুলোই তার প্রকৃত শক্তি। আকবর হোসেনের এ বিষয়টি পরিদৃষ্টে বলা যায়, তার মাধ্যমে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ছোটলোক সম্প্রদায় তথা সমাজের নীচুতলার মানুষের প্রতিনিধিত্বের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. ‘এরাই আমার আসল শক্তি’- উদ্দীপকের আকবর হোসেনের এ উক্তিটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন প্রাবন্ধিক তাঁর ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে।
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর এ প্রবন্ধে সাম্যবাদী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সমাজের মধ্যে কোনো বিভাজন দেখতে চাননি। এ সমাজে যাদেরকে অবজ্ঞা করা হয় প্রকৃতপক্ষে তারাই সমাজ গড়ার কারিগর। তাদের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়েই ভদ্রলোক সম্প্রদায় সভ্যতা ও গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়। কিন্তু ওই শ্রেণি সমাজ প্রতিনিধিত্বের বাইরেই থেকে যায়।
উদ্দীপকের আকবর হোসেনের মধ্যে প্রাবন্ধিকের চিন্তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। তিনি পৌর মেয়র হয়ে সমাজের নীচুতলার মানুষকে ভুলে যাননি। তাদের সঙ্গেই তিনি সখ্য রেখে সমাজের সংস্কার কাজে অংশ নিয়েছেন। কারণ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, এ মানুষগুলোই তার শক্তি। প্রাবন্ধিক নজরুলের মধ্যেও আমরা এই গণমুখী চেতনা লক্ষ করি। সমাজে যে মানুষগুলো সবচেয়ে অবহেলিত তাদের অবদান সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। উদ্দীপকের মেয়র আকবর হােসেনের মতো সেই সম্প্রদায়ের মানুষকেই তিনি আপন করেছেন। কারণ তিনি জানেন, তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের এ মানুষগুলোই তার আসল শক্তি।
উপরের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে যুগপৎ সমাজের অবহেলিত শ্রেণির মানুষের প্রশস্তি গাওয়া হয়েছে। তাই আকবর হোসেনের উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন–৪ : লাঙল কাঁদিয়া বলে ছাড়ি দিয়ে গলা,
তুই কোথা থেকে এলি ওরে ভাই ফলা?
যেদিন আমার সাথে তোরে দিল জুড়ি
সেই দিন হতে মোর মাথা খোড়াখুঁড়ি
ফলা কহে, ভাল ভাই, আমি যাই খসে
দেখি তুমি কী আরামে থাকো ঘরে বসে
ফলাখানা টুটে গেল হাল খানা তাই,
খুশি হয়ে পড়ে থাকে কোন কর্ম নাই।
চাষা বলে, এ আপদ আর কেন রাখা।
এরে আজ চালা করে ধরায়িব আখা
হাল বলে, ওরে, ফলা, আয় ভাই ধেয়ে
খাটুনী যে ভালো ছিল জ্বলুনীর চেয়ে।
ক. কাদের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ?
খ. ‘বোধন-বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে’ ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের লাঙলের আচরণে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের কোন দিকটির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের লাঙল আর ফলাকে এক সূত্রে বাঁধার আহ্বানে কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যাশা ধ্বনিত হয়েছে- ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার কর।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ছোটলোক সম্প্রদায়ের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ।
খ. বোধন-বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোটলোক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন যে, আমাদের সমাজে ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে আমরা যাদের বুঝি তারাই সমাজ-প্রগতির কাণ্ডারি। কিন্তু ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে সবসময় এ শ্রেণিকে অবদমন করে থাকে। এ বিষয়টিকে মানতে পারেননি প্রাবন্ধিক। তাই তিনি ওই ছোটলোক তথা উপেক্ষিত সম্প্রদায়কে জাগিয়ে নিয়ে সমাজ-প্রগতির মূল স্রোতে বেড়াতে চেয়েছেন।
গ. উদ্দীপকের লাঙলের আচরণে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের ছোটলোক সম্প্রদায়ের প্রতি অবজ্ঞার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোটলোক সম্প্রদায়ের প্রতি কথিত ভদ্রলোক সম্প্রদায়ের অবহেলার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অন্ত্যজ শ্রেণির এসব মানুষ সমাজের প্রগতি ও উন্নতিতে সর্বোচ্চ অবদান রাখলেও তাদের কথা সমাজের উঁচু শ্রেণির কেউ মনে রাখে না। সমাজের অবহেলিত এসব মানুষের অবদান লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকে অথচ তারা একে-অপরের পরিপূরক। উদ্দীপকে বর্ণিত লাঙলের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে স্বার্থপরতা ও অকৃতজ্ঞতা। লাঙল ভুলে গিয়েছিল তার জীবনে ফলার গুরুত্ব। ফলাহীন লাঙলের যে কোনো মূল্য নেই এ বিষয়টি উপলব্দি করে ফলাহীন অবস্থায়।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকে লাঙলের আচরণে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের অন্ত্যজ শ্রেণির প্রতি সমাজের কথিত ভদ্রলোক সম্পদ্রায়ের আচরণের দিকটির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
এসএসসি সকল বিষয়ে সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. উদ্দীপকে লাঙল আর ফলাকে এক সূত্রে বাঁধার আহ্বানে কাজী নজরুল ইসলামের প্রত্যাশা ধ্বনিত হয়েছে- মন্তব্যটিকে সত্য বলেই প্রতিপন্ন করা যায়। প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলাম ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণি বা ছোটলোক সম্প্রদায়ের অবদান সম্পর্কে আমাদের সচেতন করেছেন। এ শ্রেণির মানুষেরা সমাজের প্রগতি ও উন্নতিতে অবদান রাখলেও তাদের অবদানের কথা সমাজ মনে রাখে না। সমাজের যে মানুষেরা এদের অবদানের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়ায় পরবর্তীকালে তাদের কথা আর সম্মুখে আসে না।
উদ্দীপকে লাঙল ও ফলা প্রবন্ধে বর্ণিত ছোটলোক সম্প্রদায় ও ভদ্রলোক সম্প্রদায়ের মানুষের মতোই পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলাহীন লাঙলের অবস্থা যে কতটা কঠিন হতে পারে তা কবিতার চরণের মধ্যে আমরা উপ্ত হতে দেখি। ঠিক একইভাবে ছোটলোক সম্প্রদায়ের অবদান ব্যতীত ভদ্রলোকরাও সমাজে অকার্যকর হয়ে পড়বে বলেই মনে করেন প্রাবন্ধিক।
উদ্দিষ্ট আললাচনা থেকে আমরা বলতে পারি, লাঙল আর ফলা যেমন একে-অপরের পরিপূরক এবং প্রায় অবিচ্ছেদ্য, তেমনি সমাজের ছোটলোক ও ভদ্রলোক সম্প্রদায়ের মানুষও একে-অপরের পরিপূরক। তাদের একজন ছাড়া অন্যজনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে লেখক সমাজের প্রগতিতে তাদের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রত্যাশা করেন ।
প্রশ্ন–৫ : অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ,
কাণ্ডারি, আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পণ।
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারি বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।
ক. আমাদের একবার কাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে?
খ. ‘বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করো।
ঘ. “উদ্দেশ্য যদি জাতির উন্নয়ন হয় তবে সেখানে ভেদাভেদ করা উচিত নয়। এই বিষয়টি উদ্দীপক ও ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে বিদ্যমান।”— মূল্যায়ন করো।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. আমাদের একবার উপেক্ষিত জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
খ. বোধন-বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে ছোটলোক সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন যে, আমাদের সমাজে ছোটলোক সম্প্রদায় বলতে আমরা যাদের বুঝি তারাই সমাজ-প্রগতির কাণ্ডারি। কিন্তু ভদ্র সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থে সবসময় এ শ্রেণিকে অবদমন করে থাকে। এ বিষয়টিকে মানতে পারেননি প্রাবন্ধিক। তাই তিনি ওই ছোটলোক তথা উপেক্ষিত সম্প্রদায়কে জাগিয়ে নিয়ে সমাজ-প্রগতির মূল স্রোতে বেড়াতে চেয়েছেন।
গ. ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে উল্লিখিত ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ দূর করার ভাবনাটি উদ্দীপকে বিদ্যমান।
কাজী নজরুল ইসলাম ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন রচনায় সমাজে বিদ্যমান শ্রেণি-বৈষম্যের দিকটি তুলে ধরেছেন। তথাকথিত ভদ্র সম্প্রদায়ের মানুষেরা সমাজের নীচু তলার মানুষদের ‘ছোটলোক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তথাকথিত এই ছোটলোকেরা পায় কেবল ঘৃণা, বঞ্চনা আর অপমান। প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে সমাজ থেকে এই অসাম্য ও বিভেদ দূর করার কথা বলেছেন।
উদ্দীপক কবিতাংশে রূপকার্থে একটি জাতির দুর্দশার স্বরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় জীবনে যে দুর্যোগের সূচনা হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার একজন দক্ষ নেতা। কিন্তু সমাজের মানুষের মাঝে ভেদাভেদ রয়ে গেলে জাতির মুক্তি আসবে না। কবি তাই সকলকে সমান মর্যাদা দিয়ে দৃঢ়চিত্তে নিজের দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধেও একইভাবে সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কাউকে উপেক্ষা না করে ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়ে মিলে মিশে সুন্দর সমাজ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে।
বাংলা প্রথম-নোট: সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে জাতীয় উন্নয়নে সমাজ থেকে সকল ধরনের বিভেদ দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য প্রবন্ধে তার সাম্যবাদী মনোভাবের স্বরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। জাতিগত ভেদাভেদের কারণে মানুষ তথাকথিত নীচুতলার মানুষদের ঘৃণা করে। এই উপেক্ষার কারণেই আমাদের দেশে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। লেখকের প্রত্যাশা, সকল ভেদাভেদ দূর করে আমরা উন্নত সমাজ গঠনে ব্রতী হবো।
উদ্দীপক কবিতাংশে ডুবন্ত জাতির রূপকে জাতীয় জীবনের অবনতির চিত্র ফুটে উঠেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কবি একজন সুদক্ষ নেতার যথাযথ ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। কবি প্রত্যাশা করে যে একজন প্রকৃত নেতা সকল ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্যত্বকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখাবেন। উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন রচনাতেও জাতীয় উন্নয়নে একই ধরনের পথে আমাদের চলতে বলেছেন কাজী নজরুল। একটি দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন দেশ থেকে ছোট-বড়, উঁচু-নিচ, ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ দূর হয়। ভেদাভেদের কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রে যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়, তা জাতীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধের লেখকের মতে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা আত্মার ধর্ম নয়। কাউকে ঘৃণা করা, জাতিগত বিভাজনের প্রশ্ন তুলে উপেক্ষা করার অধিকার আমাদের নেই। বরং সমাজের উপেক্ষিত মানুষগুলোকে বুকে টেনে নিলেই আমরা একটি উন্নত জাতি গঠনে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারব।
উদ্দীপকেও একইভাবে জাতীয় উন্নয়নে বিভেদ-বৈষম্যকে উপেক্ষা করে মানুষকে তার প্রকৃত মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সার্বিক আলােচনার ভিত্তিতে বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।