নবম দশম জীববিজ্ঞান
তৃতীয় অধ্যায়-কোষ বিভাজন
Cell Division
পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি
কোষ : জীবদেহের গঠন ও কাজের একককে কোষ বলে। প্রতিটি জীবদেহ কোষ দিয়ে গঠিত। একটিমাত্র কোষ দিয়ে প্রতিটি জীবের জীবন শুরু হয়।
কোষ বিভাজন : যে পদ্ধতিতে মাতৃকোষ থেকে দুই বা দুইয়ের বেশি অপত্যকোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে। অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে একটি কোষ হতে দুই বা ততোধিক অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে।

মাতৃকোষ : যে কোষ হতে নতুন কোষ বা অপত্যকোষের সৃষ্টি হয় তাকে মাতৃকোষ বলে।
অপত্যকোষ : মাতৃকোষ হতে সৃষ্ট নতুন কোষকে অপত্যকোষ বা শিশুকোষ বলে। অর্থাৎ যে কোষগুলোর গুণাগুণ মাতৃকোষের মতো হয়। তাদের অপত্যকোষ বলে।
কোষ বিভাজনের প্রকারভেদ : কোষ বিভাজন তিন প্রকারের। এই তিন ধরনের কোষ বিভাজন-
১. অ্যামাইটোসিস
২. মাইটোসিস
৩. মিয়োসিস।
অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন : যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ সরাসরি বিভাজিত হয়ে বা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুইটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে। এ ধরনের বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে বলে একে প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে। প্রাককেন্দ্রিক কোষে এ বিভাজন দেখা যায়। যেমন-ইস্ট, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি এককোষি জীবে এ কোষবিভাজন সংঘটিত হয়।
এসএসসি সকল বিষয় নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
মাইটোসিস : যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় দেহকোষের মাতৃকোষটি বিভাজিত হয়ে সমগুণসম্পন্ন ও সমসংখ্যক ক্রোমোসোমবিশিষ্ট দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয়, তাকে মাইটোসিস বলে। প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবদেহের দেহকোষে মাইটোসিস কোষ বিভাজন ঘটে। মাইটোসিস বিভাজন ঘটে না প্রাণীদের স্নায়ু কোষে, স্তন্যপায়ীদের পরিণত লোহিত রক্তকণিকায় ও অণুচক্রিকায় এবং উদ্ভিদের স্থায়ী টিস্যুর কোষে।
মাইটোসিস প্রধানত দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়- ১. ক্যারিওকাইনেসিস এবং ২. সাইটোকাইনেসিস। এর মধ্যে ক্যারিওকাইনেসিস একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ঘটে।
ক্যারিওকাইনেসিস : এ পর্যায়ে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং কোষের নিউক্লিয়াসটি ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি জটিল পরিবর্তনের মাধ্যমে বিভক্ত হয়। ধারাবাহিকভাবে নিউক্লিয়াসের বিভাজনকে পাঁচটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে। যথা :
(১) প্রোফেজ (২) প্রোমেটাফেজ (৩) মেটাফেজ (৪) অ্যানাফেজ ও (৫) টেলোফেজ।

সাইটোকাইনেসিস : এ পর্যায়ে বিভাজিত কোষের সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়ে দুটি অপত্যকোষ সৃষ্টি করে।
মিয়োসিস : যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় জীবের জনন মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুইবার বিভাজিত হয়ে জনন মাতৃকোষের অর্ধেক ক্রোমোসোমসহ চারটি অপত্য জননকোষ সৃষ্টি করে, তাকে মিয়োসিস কোষ বিভাজন বলে।

সমীকরণিক বা ইকুয়েশনাল বিভাজন : মাইটোসিসে ক্রোমোসোমের একবার বিভাজন ঘটে এবং অপত্য কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার সমান থাকে। এজন্য এই ধরনের কোষ বিভাজনকে সমীকরণিক বা ইকুয়েশনাল বিভাজনও বলে।
হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন : মিয়োসিসে ক্রোমোসোমের দুইবার বিভাজন ঘটে এবং অপত্যকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা মাতকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। এজন্য মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক কোষ বিভাজন বলে।
ইন্টারফেজ : কোষ বিভাজনের পূর্বে কোষে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। কোষের এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ বলে। প্রোফেজ ধাপে নিউক্লিয়ার জালিকা ভেঙে কতকগুলো নির্দিষ্ট সংখ্যক সুতার মতো অংশের সৃষ্টি হয়। এগুলোকে ক্রোমোসোম বলে।

প্রো-মেটাফেজ : বিভাজিত কোষের মেটাফেজ ধাপের পূর্ব অবস্থা।
স্পিন্ডল তন্তু : প্রো-মেটাফেজ ধাপে নিউক্লিয়াসের বিলুপ্তি ঘটে এবং উদ্ভিদ কোষে সাইটোপ্লাজম থেকে এবং প্রাণিকোষে সেন্ট্রিওল থেকে কোষের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত কতকগুলো তন্তুর আবির্ভাব ঘটে। একে স্পিন্ডল তন্তু বলে।
স্পিন্ডল যন্ত্র : কোষের মধ্যভাগকে বিষুবীয় অঞ্চল বলে। স্পিন্ডল তন্তগুলোকোষের বিষুবীয় অঞ্চলে বিস্তৃত হয়ে মাকুর আকার ধারণ করে একে স্পিন্ডল যন্ত্র বলে।
আকর্ষণ তন্তু : যেসব স্পিন্ডল তন্তুর সাথে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংযুক্ত থাকে তাদেরকে আকর্ষণ তন্তু বা ক্রোমোসোমাল তন্তু বলে।
অ্যানাফেজ : অ্যানাফেজ ধাপে ক্রোমাটিডগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোসোম বলে।
টেলোফেজ : ক্যারিওকাইনেসিসের শেষ ধাপটির নাম টেলোফেজ। টেলোফেজে কোষের দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয় এবং ক্যারিওকাইনেসিসের সমাপ্তি ঘটে।
এসএসসি গণিত সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
কোষ প্লেট : উদ্ভিদ কোষে টেলোফেজ ধাপের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গগুলো জমা হয় এবং পরবর্তীতে মিলিত হয়ে যে প্লেট গঠন করে তাকে কোষ প্লেট বলে।
ডিপ্লয়েড : দেহকোষে ক্রোমাসোম সংখ্যাকে ডিপ্লয়েড সংখ্যা বা 2n বলে। ডিপ্লয়েড অবস্থায় ক্রোমোসোমগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ মানুষের দেহকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৩ জোড়া বা ৪৬টি।
হ্যাপ্লয়েড : জনন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যাকে হ্যাপ্লয়েড সংখ্যা বা n বলে। জনন মাতকোষ থেকে উৎপন্ন জনন কোষগুলো হ্যাপ্লয়েড হয়। উদাহরণস্বরূপ মানুষের জনন কোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৩ অর্থাৎ n বা হ্যাপ্লয়েড।
বংশগতি বা Heredity: মাতাপিতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে প্রক্রিয়ায় সন্তানসন্তুতিতে সঞ্চারিত হয় তাকে বংশগতি বা হেরেডিটি (Heredity) বলে।
ক্রোমোসোম: কোষ বিভাজনের সময় নিউক্লিয়ার জালিকা থেকে উৎপন্ন সুতার মতো যে অংশগুলো জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের বাহক হিসেবে কাজ করে তাদের ক্রোমোসোম বলে।
অ্যানাফেজে ক্রোমোসোমগুলোর আকার : অ্যানাফেজে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোসোমগুলো V, L, J বা I এর মতো আকার ধারণ করে। এদেরকে যথাক্রমে মেটাসেন্ট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বা টেলোসেন্ট্রিক বলে। জীবের প্রতিটি প্রজাতির কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ধ্রুবক।

ক্রোমাটিড : মাইটোসিসের প্রোফেজ ধাপে প্রতিটি ক্রোমোসোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতার মতো অংশ গঠন করে তাকে ক্রোমাটিড বলে। ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর যে অংশে যুক্ত থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ কোষ বিভাজন কী?
উত্তর : যে পদ্ধতিতে কোষ (মাতৃকোষ) বিভাজিত হয়ে অপত্যকোষ সৃষ্টি করে তাকে কোষ বিভাজন বলে।
প্রশ্ন ॥ ২॥ সমীকরণিক কোষ বিভাজন কাকে বলে?
উত্তর : যে ধরনের কোষ বিভাজনে অপত্যকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার | গঠন ও গুণাগুণ মাতৃকোষের মতো থাকে তাকে সমীকরণিক কোষ বিভাজন বলে। মাইটোসিস কোষ বিভাজন সমীকরণিক কোষ বিভাজন ।
প্রশ্ন ॥ ৩॥ অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন কাকে বলে?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় কোনো মাতৃকোষ তার নিউক্লিয়াসের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ বিভাজন ঘটিয়ে দুটি অপত্যকোষ সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন বলে।
রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ চিহ্নিত চিত্রসহ মাইটোসিসের বিভিন্ন পর্যায়সমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর : মাইটোসিস প্রধানত দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়- ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন এবং সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন।
ক্যারিওকাইনেসিস : ক্যারিওকাইনেসিস ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি পর্যায় বা ধাপে ঘটে। যথা :
১. প্রোফেজ, ২. প্রো-মেটাফেজ, ৩. মেটাফেজ, ৪. অ্যানাফেজ এবং ৫. টেলোফেজ।
১. প্রোফেজ : এ ধাপে-
i. নিউক্লিয়াসটি আকারে ও আয়তনে বৃদ্ধি পায়।
ii. পানি বিয়োজনের দরুন নিউক্লিয়াসের নিউক্লীয় জালক বা ক্রোমাটিন থেকে সূত্রাকার ক্রোমোসোম গঠিত হয়।
iii. প্রত্যেক ক্রোমোসোম লম্বালম্বি ভাগ হয়ে দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে এবং ক্রোমাটিডদ্বয় সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকে।
iv. ক্রোমোসোমগুলো ধীরে ধীরে ঘনীভূত ও স্থুল হতে থাকে।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
২. প্রো-মেটাফেজ : প্রো-মেটাফেজ ধাপ স্বল্পস্থায়ী।
এ ধাপে-
i. উদ্ভিদকোষে প্রথমে নিউক্লিয়াসের নিকটস্থ সাইটোপ্লাজমের ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়ে স্পিন্ডলতন্তু গঠিত হয়। পরে তন্তুগুলো মেরুপ্রান্তে একত্রিত হয়ে মাকু আকৃতির স্পিন্ডল যন্ত্র গঠন করে।
ii. মাকুর সুচালো প্রান্ত দুটিকে মেরু বলে। এক মেরু থেকে অন্য মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত তন্তুগুলোকে স্পিন্ডল তন্তু এবং এক মেরু থেকে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারের সঙ্গে যুক্ত বাকি তন্তুগুলোকে
ক্রোমোসোমীয় বা আকর্ষণ তন্তু বলে।
iii. এরপর নিউক্লিওলাসটি ছোট হতে থাকে এবং এর শেষ পর্যায়ে -নিউক্লীয় পর্দাসহ তা বিলুপ্ত হতে থাকে।

প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে :
i. সেন্ট্রোজোমের সেন্ট্রিওল বিভক্ত হয়ে দুটি সেন্ট্রিওল গঠন করে।
ii. সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে বিচ্ছুরিত রশ্মির মতো অ্যাস্ট্রার রশ্মির আবির্ভাব ঘটে।
iii. এছাড়া সেন্ট্রিওলদ্বয় পরস্পরের থেকে ক্রমশ দূরে সরে যায় এবং নিউক্লিয়াসের দুই বিপরীত মেরুতে পৌঁছায় এবং স্পিন্ডল যন্ত্র গঠন করে।
৩. মেটাফেজ : এ ধাপে-
i. প্রতিটি ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিডদ্বয় স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চলে আড়া- আড়িভাবে অবস্থান করে।
ii. এরপর ক্রোমোসোমগুলো আরও সংকুচিত হয়ে স্থুল ও বেঁটে হয়।
iv. মেটাফেজের শেষ পর্যায়ে প্রতি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার দ্বিখন্ডিত হতে শুরু করে।
প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে : উপরিউক্ত ঘটনাগুলো প্রাণিকোষের মেটাফেজ দশায় ঘটে।

৪. অ্যানাফেজ : এ ধাপে-
i. শুরুতেই ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারগুলো সমান দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
ii. ফলে ক্রোমাটিডগুলো পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য ক্রোমোসোম গঠন করে
iii. অপত্য ক্রোমোসোম দুটির মধ্যে বিকর্ষণ শুরু হয়। ফলে অপত্য ক্রোমোসোমগুলোর অর্ধেক বিষুব অঞ্চল থেকে উত্তর মেরুর দিকে এবং আর অর্ধেক দক্ষিণ মেরুর দিকে যাত্রা শুরু করে, যাকে অ্যানাফেজ চলন বলে।
iv. এ সময় অপত্য ক্রোমোসোমগুলোকে ইংরেজি ‘v’, ‘L’, ‘J’, ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়।
v. বিপরীত মেরুতে পৌছানো পর্যন্ত এ পর্যায় চলে ।

প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে : উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলো ঘটে।
৫. টেলোফেজ : এ ধাপে-
i. স্পিন্ডল যন্ত্রের উভয় মেরুপ্রান্তে সমান সংখ্যক। ক্রোমোসোমগুলো পাক খুলে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায় এবং জালকের আকারে বিন্যস্ত হয়ে নিউক্লীয় জালক গঠন করে।
ii. ক্রোমোসোমগুলোকে বেষ্টন করে পুনরায় নিউক্লীয় পর্দার আবির্ভাব ঘটে।
iii. নিউক্লিয়াসের মধ্যে নিউক্লিওলাসের পুনঃআবির্ভাব ঘটে।
iv. এরপর নিউক্লিয়াসে পানি শোষণ ও প্রসারণ ঘটে। ফলে দুই মেরুতে সমসংখ্যক ক্রোমোসোমবিশিষ্ট ও সমগুণসম্পন্ন দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়।

প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে : উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলোই ঘটে।
সাইটোকাইনেসিস :
উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে : টেলোফেজের শেষ পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের বিষুব অঞ্চল বরাবর ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট কণা জমতে থাকে। এগুলো থেকেই সেল প্লেট ও কোষপ্রাচীর গঠিত হয়। এভাবে কোষপ্রাচীর গঠনের সঙ্গে সঙ্গে মাতৃকোষের সাইটোপ্লাজম দুটি সমান অংশে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি করে।
প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে : কোষের বিষুব অঞ্চল বরাবর সাইটোপ্লাজমে খাঁজ পড়ে। খাঁজ ক্রমশ গভীর হয়ে সাইট্রোপ্লাজমকে দুটি অংশে ভাগ করে। এভাবে দুটি সমগুণসম্পন্ন, সমান আকারের অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ॥ ২॥ মাইটোসিস প্রক্রিয়ার গুরুত্ব আলোচনা কর।
উত্তর : জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর ফলে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। সব বহুকোষী জীবই জাইগোট নামক একটি কোষ থেকে জীবন শুরু করে। এই একটি কোষই বারবার মাইটোসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য | কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে পূর্ণ জীবে পরিণত হয়। মাইটোসিসে সৃষ্ট অপত্য কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে হতে পারে। কোষের স্বাভাবিক আকার, আকৃতি ও আয়তন বজায় রাখতে মাইটোসিস প্রয়োজন। এককোষী জীব মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে, মাইটোসিসের ফলে অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয় এবং জননকোষের সংখ্যাবৃদ্ধিতে মাইটোসিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষতস্থানে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস অপরিহার্য। কিছু কিছু জীবকোষ আছে যাদের আয়ুষ্কাল নির্দিষ্ট। এসব কোষ বিনষ্ট হলে মাইটোসিসের মাধ্যমে এদের পূরণ ঘটে। মাইটোসিসের ফলে একই ধরনের কোষের উৎপত্তি হওয়ায় জীবজগতের গুণগত বৈশিষ্ট্যের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ কোষের কোন অংশে ক্যারিওকাইনেসিস সংঘটিত হয়?
উত্তর : কোষের নিউক্লিয়াসে ক্যারিওকাইনেসিস সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ২॥ মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে কেন?
উত্তর : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের অপত্য কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায় তাই এ ধরনের কোষ বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ মিয়োসিস কোথায় ঘটে?
উত্তর : জীবের জনন মাতৃকোষ ও নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদের জাইগোটে মিয়োসিস ঘটে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ মানুষের জননকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা কত?
উত্তর : মানুষের জননকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৩টি।
প্রশ্ন ॥ ৫॥ মানুষের ভ্রূণকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা কত?
উত্তর : ভ্রূণকোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা ৪৬টি।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের শেষে কয়টি অপত্যকোষ উৎপন্ন হয়?
উত্তর : মিয়োসিস কোষ বিভাজনের শেষে চারটি অপত্যকোষ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ মাইটোসিস কোষ বিভাজনের কোন দশায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেন অবলুপ্ত হয়?
উত্তর : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ ধাপে নিউক্লিওলাস এবং নিউক্লিয়ার মেমব্রেন অবলুপ্ত হয়।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ সাইটোকাইনেসিস কী?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় নিউক্লিয়াস বিভাজনের পর কোষের সাইটোপ্লাজম সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ কোন ধাপে ক্রোমোসোমগুলো স্পিন্ডল যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষুবীয় অঞ্চলে সজ্জিত হয়?
উত্তর : মেটাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোসোমগুলো স্পিন্ডল যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিষুবীয় অঞ্চলে সজ্জিত হয়।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ দেহকোষের কাজ কী?
উত্তর : বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে সাহায করে।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ ইকুয়েটর কী?
উত্তর : স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ কোষ প্লেট কাকে বলে?
উত্তর : টেলােফেজের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার | ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ জমা হয়ে যে প্লেট গঠন করে তাকে কোষ প্লেট বলে।।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥১ ॥ ডিপ্লয়েড ও হ্যাপ্লয়েড বলতে কী বোঝ?
উত্তর : দেহকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যাকে ডিপ্লয়েড বা 2n অবস্থাকে ডিপ্লয়েড বলে। ডিপ্লয়েড অবস্থায় ক্রোমোসোমগুলো জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। জীবের দেহকোষের তুলনায় জননকোষে অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। ক্রোমোসোমের এ অবস্থাকে হ্যাপ্লয়েড বলে। একে n দিয়ে বুঝানো হয়।
প্রশ্ন ॥ ২॥ মিয়োসিসের দুটি গুরুত্ব লেখ।
উত্তর: মিয়োসিসের গুরুত্ব :
i. মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দ্বারা বংশগতির ধারা অব্যাহত থাকে।
ii. ক্রোমোসোমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষা করে।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ জীবে মিয়োসিস কোষ বিভাজন ঘটে কেন?
উত্তর : যৌন জননে পুং ও স্ত্রীজনন কোষের মিলন ঘটে। যদি জনন কোষগুলোর ক্রোমোসোম সংখ্যা দেহকোষের সমান থেকে যায় তাহলে ভ্রূণ বা জাইগোট কোষে জীবটির দেহকোষের ক্রেমোজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কিন্তু মিয়োসিস কোষ বিভাজনে জননকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। ফলে ভ্রূণ বা জাইগোটে ক্রোমোসোম সংখ্যা প্রজাতির ক্রোমোসোম সংখ্যার সমান থাকে। ফলে নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্রোমোসোম সংখ্যার ধ্রুবতা বজায় থাকে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ উদ্ভিদের বর্ধনশীল কান্ড ও মূলের অগ্রভাগে এবং প্রাণীদের শুক্রাণু মাতৃকোষে কী ধরনের কোষ বিভাজন হয়?
উত্তর : উদ্ভিদের বর্ধনশীল কান্ড ও মূলের অগ্রভাগে মাইটোসিস কোষ বিভাজন হয় এবং প্রাণীদের শুক্রাণু মাতৃকোষে মিয়োসিস কোষ বিভাজন হয়।
প্রশ্ন ॥ ৫॥ তিন প্রকার কোষ বিভাজনের নাম লেখ এবং প্রত্যেকটি কোথায় ঘটে উলেখ কর।
উত্তর : অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন দ্বারা ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট ইত্যাদি এক কোষী জীব কোষসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। মাইটোসিস কোষ বিভাজন- উদ্ভিদ ও প্রাণীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এবং ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটায়। মিয়োসিস কোষ বিভাজন- উদ্ভিদ ও প্রাণীর যৌন জননের জন্য পুং ও স্ত্রীগ্যামেট উৎপন্ন করে।
প্রশ্ন ॥ ৬ ॥ প্রোফেজ পর্যায়টির দুইটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর : প্রোফেজ পর্যায়ের দুইটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
i. কোষ বিভাজনের এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়।
ii. ক্রোমোসোমগুলো থেকে পানি হ্রাস পেতে থাকে। ফলে ক্রোমোসোমগুলো ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে মোটা ও খাটো হতে শুরু করে।
প্রশ্ন ॥ ৭ ॥ ক্রোমোসোমের প্রকৃতি কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর : ক্রোমোসোম ৪ প্রকার। যথা :
i. মেটাসেন্ট্রিক, V আকৃতির।
ii. সাব মেটাসেন্ট্রিক, L আকৃতির।
iii. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক; J আকৃতির।
iv. টেলোসেন্ট্রিক; I আকৃতির।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ মটর গাছ ও মানুষের মিয়োসিস কোথায় ঘটে?
উত্তর : মটর গাছে মিয়োসিস ঘটে-পরাগধানীর রেণু মাতৃকোষে এবং ডিম্বকের স্ত্রী রেণু মাতৃকোষে। মানুষের মিয়োসিস ঘটে শুক্রাশয়ের শুক্রাণু মাতৃকোষে এবং স্ত্রীলোকের ডিম্বাশ্বয়ের ডিম্বাণু মাতৃকোষে।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ অ্যানাফেজ পর্যায়ের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর : অ্যানাফেজ পর্যায়ের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো :
i. এ পর্যায়ে অপত্য ক্রোমোসোমগুলোর মধ্যে বিকর্ষণ বৃদ্ধি পায়, ফলে এরা বিষুবীয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ii. এ পর্যায়ের শেষের দিকে ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ মেটাফেজ ধাপের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ।
উত্তর : মেটাফেজ ধাপে সব ক্রোমোসোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে। এ ধাপে ক্রোমোসোমগুলো সবচেয়ে মোটা ও খাটো হয়। প্রতিটি ক্রোমোসোমের ক্রোমাটিড দুটির আকর্ষণ কমে যায় এবং বিকর্ষণ শুরু হয়। এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়। এ ধাপে নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিয়াস সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ দেহ কোষ ও জনন কোষের পার্থক্যগুলো কী কী?
উত্তর : দেহ কোষ মাইটোসিস এবং অ্যামাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে জীবের দেহ গঠনে অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে, জনন কোষ জীবের যৌন জননে অংশগ্রহণ করে। মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে জনন মাতৃকোষ থেকে এসব কোষ সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ একটি উদ্ভিদমূলের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উদ্ভিদমূলের কোষগুলো দেহকোষ। তাই মূলের কোষগুলো মাইটোসিস পদ্ধতিতে পাঁচটি ধারাবাহিক ধাপে বিভাজিত হয়। এ বিভাজন প্রক্রিয়ায় মাতৃকোষটি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে। এ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং পরে সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে।
এসএসসি সকল বিষয় নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ অ্যামাইটোসিস বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় কোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়। প্রথমে নিউক্লিয়াস বিভক্ত হয়, পরবর্তীতে সাইটোপ্লাজম বিভক্ত হয়। কিন্তু যখন কোনো কোষ তার নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ জিমের সরাসরি বিভাজনের মাধ্যমে দুটি অপত্যকোষ সৃষ্টি করে তখন তাকে অ্যামাইটোসিস পদ্ধতি বলে। যেমন : ঈস্ট কোষের বিভাজন।
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রক্রিয়াটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। কোনো কারণে প্রক্রিয়াটির ধারাবাহিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে কোষ বিভাজন। বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। একে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলে।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ লাইসোসোমকে ‘সুইসাইডাল স্কোয়াড‘ বলা হয় কেন?
উত্তর : লাইসোজোম অটোফ্যাগি প্রক্রিয়ায় কোষের কোনো ক্ষতি হলে বা খাদ্যাভাব দেখা দিলে কোষস্থ উপাদান ও কোষ অঙ্গাণুগুলোকে বিগলিত করে ধ্বংস করে দেয়। তাই লাইসোসোমকে সুইসাইডাল স্কোয়ার্ড বলা হয়।
প্রশ্ন ॥ ১৫ ॥ জীব প্রযুক্তি জীববিজ্ঞানের ফলিত শাখা–বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : জীব প্রযুক্তি জীববিজ্ঞানের ফলিত শাখা কারণ, এ শাখায় | জীব সংশ্লিষ্ট প্রায়োগিক বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। জীব। প্রযুক্তি মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, উন্নততর ফসল সৃষ্টিতে, ফসলের মান।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. সাইটোকাইনেসিসের পরে কোনটি ঘটে?
ক. প্রোফেজ খ. ইন্টারফেজ
গ. মেটাফেজ ঘ. টেলোফেজ
উত্তর: খ. ইন্টারফেজ
২. কোষ বিভাজনের কোন ধাপে পানি হ্রাস পায়?
ক. প্রোফেজ খ. প্রো-মেটাফেজ
গ. মেটাফেজ ঘ. টেলোফেজ
উত্তর: ক. প্রোফেজ
৩. নিয়ন্ত্রণহীন কোষ বিভাজনের ফল কোনটি?
ক. অর্বুদ খ. আলসার
গ. নিউমোনিয়া ঘ. যক্ষ্মা
উত্তর: ক. অর্বুদ
৪. মাইটোসিসের কোন ধাপে স্পিন্ডল তন্তু সৃষ্টি হয়?
ক. প্রোফেজ খ. প্রো-মেটাফেজ
গ. মেটাফেজ ঘ. অ্যানাফেজ
উত্তর: খ. প্রো-মেটাফেজ
৫. অ্যাস্টার–রে বিচ্ছুরিত হয় মাইটেসিসের কোন ধাপে?
ক. প্রোফেজ খ. প্রো-মেটাফেজ
গ. মেটাফেজ ঘ. অ্যানাফেজ
উত্তর: খ. প্রো-মেটাফেজ
৬. Nostoc-এ কোন ধরনের কোষ বিভাজন দেখা যায়?
ক. অ্যামাইটোসিস খ. মাইটোসিস
গ. মিয়োসিস ঘ. ইন্টারকাইনেসিস
উত্তর: ক. অ্যামাইটোসিস
৭. মাইটোসিসের অ্যানাফেজ পর্যায়ে ‘I’ আকৃতির ক্রোমোজোমের নাম কী?
ক. মেটাসেন্ট্রিক খ. সাবমেটাসেন্ট্রিক
গ. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ঘ. টেলোসেন্ট্রিক
উত্তর: ঘ. টেলোসেন্ট্রিক
৮. কোলনের একটি অংশের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কোন ভাইরাস দায়ী?
ক. এইচআইভি খ. রোটা
গ. হেপাটাইটিস বি ঘ. প্যাপিলোমা
উত্তর: ঘ. প্যাপিলোমা
৯. সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের আকৃতি কেমন?
গ. J ঘ. I
উত্তর: খ. L
১০. V আকার ধারণকারী ক্রোমোজোমগুলোকে কী বলে?
ক. সাবমেটাসেন্ট্রিক খ. মেটাসেন্ট্রিক
গ. টেলোসেন্ট্রিক ঘ. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
উত্তর: খ. মেটাসেন্ট্রিক
১১. কোন ধাপে নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয়?
ক. প্রোফেজ খ. প্রো-মেটাফেজ
গ. মেটাফেজ ঘ. অ্যানাফেজ
উত্তর: ক. প্রোফেজ
১২. মিয়োসিসের কারণে কোষে–
i. ক্রোমোসোমের সংখ্যার পরিবর্তন ঘটে
ii. হ্যাপ্লয়েড সংখ্যক গ্যামেট তৈরি হয়
iii. গুণাগুণের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে
.নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর : ক. i ও ii
১৩. নিচের কোন ভাইরাস ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে?
ক. HIV খ. প্যাপিলোমা
গ. র্যাবিস ঘ. রুবিওলা
উত্তর: খ. প্যাপিলোমা
১৪. মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দ্বিতীয় বিভাজনটি কোনটির অনুরূপ?
ক. মাইটোসিস খ. মাইটোসিস-২
গ. মিয়োসিস-১ ঘ. মিয়োসিস-২
উত্তর: ক. মাইটোসিস
১৫. সকল হুকোষী জীব কোন মাতৃকোষ থেকে জীবন শুরু করে?
ক. নিষিক্ত শুক্রাণু খ. মাতৃকোষ
উত্তর: ঘ. জাইগোট
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
১৬। জনন কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কোন বিভাজনের কারণে?
ক. মিয়োসিস খ. মাইটোসিস
গ. অ্যামাইটোসিস ঘ. ক্যারিওকাইনেসিস
উত্তর: খ. মাইটোসিস
১৭. ‘J’ আকৃতির ক্রোমোজোমকে কি বলা হয়?
ক. মেটাসেন্ট্রিক খ. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
গ.সাবমেটাসেন্ট্রিক ঘ. টেলোসেন্ট্রিক
উত্তর: খ. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক
১৮. মাইটোসিস কোষ বিভাজন হয় কোনটিতে?
ক. জনন মাতৃকোষে খ. ডিম্বাণুতে
গ. জননকোষে ঘ. দেহকোষে
উত্তর: ঘ. দেহকোষে
১৯. কোষ বিভাজনের কোন ধাপে ক্রোমোজোমগুলো দুই মেরুর মাঝখানে অবস্থান করে?
ক. প্রো-মেটাফেজ খ. মেটাফেজ
গ. অ্যানাফেজ ঘ. টেলোফেজ
উত্তর: খ. মেটাফেজ
নিচের চিত্রের আলোকে ২০ ও ২১ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:

২০. A চিত্রের কোষ বিভাজনে–
i. মাতৃকোষ ও নতুন সৃষ্ট কোষ সমগুণ সম্পন্ন
ii. নতুন কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা অর্ধেক থাকে
iii. ক্রোমোসোম মাত্র একবার বিভাজিত হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর : খ. i ও iii
২১. B চিত্রের বিভাজনটি A থেকে ব্যতিক্রম কারণ, এর ফলে-
ক. অপত্য জীবে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ঠিক থাকে
খ. ক্রোমোসোমের সংখ্যা বেড়ে যায়
গ. অস্বাবাবিক কোষ সৃষ্টি হয়
ঘ. দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে্
উত্তর: ক. অপত্য জীবে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ঠিক থাকে
২২. মিয়োসিস কোষ বিভাজনে-
i. প্রজাতির বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ তাকে
ii. মস উদ্ভিদের জাইগোটে ঘটে
iii. অঙ্গজ প্রজনন সাধিত হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর : ক. i ও ii
নিম্নলিখিত উদ্দীপকের আলোকে ২৩ ও ২৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
পুং ও স্ত্রী ‘X’ গ্যামেট দুটি মিলিত হয়ে জাইগোট সৃষ্টি করে।
২৩. ‘X’ বলতে নিম্নলিখিত কোনটিকে বোঝানো হয়েছে?
গ. জনন কোষ ঘ. জনন মাতৃকোষ
উত্তর: গ. জনন কোষ
২৪. যদি জাইগোটের ক্রোমোসোম সংখ্যা ১৬ (2n) হয়, তবে যে কোষ থেকে `X’ কোষগুলো তৈরি হয়েছে তাদের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত?
ক. ৪ খ. ৮
গ. ১৬ ঘ. ৩২
উত্তর: গ. ১৬
২৫. কোনটিতে মিয়োসিস কোষ বিভাজন ঘটে?
ক. মুকুল খ. ভ্রূণমূল
গ. পরাগধানী ঘ.মূলের অগ্রভাগ
উত্তর: গ. পরাগধানী
২৬. কোন পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ারগুলো বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান করে?
ক. Prophase খ. Metaphase
গ. Anaphase ঘ. Telophase
উত্তর: খ. Metaphase
২৭. অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফল কোনটি?
ক. এইডস খ. গয়টার
গ. রক্তশূন্যতা ঘ. ক্যান্সার
উত্তর: ঘ. ক্যান্সার
২৮. কোষ বিভাজনের শেষ পর্যায়ের ভ্রূণকে কি বলা হয়?
ক. অমরা খ. ফিটাস
গ. ডিম্বাণু ঘ. ব্লাস্টোসিস্ট
উত্তর: ঘ. ব্লাস্টোসিস্ট
২৯. ইস্টে কোন ধরনের বিভাজন দেখা যায়?
ক. মাইটোসিস খ. অ্যামাইটোসিস
গ. মিয়োসিস ঘ. সাইটোকাইনোসিস
উত্তর: খ. অ্যামাইটোসিস
৩০. একটি ক্রোমোজোমে কয়টি ক্রোমাটিড থাকে?
ক. ১ খ. ২
গ. ৩ ঘ. ৪
উত্তর: খ. ২
৩১. প্যাপিলোমা ভাইরাসের কোন দুইটি জীন ক্যান্সার তৈরির জন্য দায়ী?
ক. ই৪ ও ই৫ খ. ই৫ ও ই৬
গ. ই৬ ও ই৭ ঘ. ই৭ ও ই৮
উত্তর: গ. ই৬ ও ই৭
৩২. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের কোন ধাপে ক্রোমোসোম সর্বাধিক খাটো ও মোটা হয়?
ক. প্রোফেজ খ. মেটাফেজ
গ. প্রোমেটাফেজ ঘ. অ্যানাফেজ
উত্তর: খ. মেটাফেজ
নিচের চিত্রের আলোকে ৩৩ ও ৩৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:

৩৩. উপরের চিত্রটি মাইটোসিস কোষ বিভাজনের কোন পর্যায়ের?
গ. অ্যানাফেজ ঘ. টেলোফেজ
উত্তর: গ. অ্যানাফেজ
এসএসসি সকল বিষয় নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
৩৪. উপরের চিত্রে দেখা যায়-
i. সেন্ট্রোমিয়ার দুই ভাগে বিভক্ত হয়
ii. বিকর্ষণ শক্তি হ্রাস পায়
iii. ক্রোমোসোম দৈর্ঘে বৃদ্ধি পায়
.নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর : খ. i ও iii
৩৫. প্রো–মেটাফেজ দশায় –
i. দুই মেরুবিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি হয়
ii. ক্রোমোজোমগুলোতে পানি যোজন শুরু হয়
iii. নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর : খ. i ও iii
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১ : নিচের চিত্র লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. অ্যামাইটোসিস কোথায় ঘটে?
খ. মিয়োসিসকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলা হয় কেন বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের B ধাপটিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘প্রক্রিয়াটি জীব জগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে’-উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ সবুজ শৈবাল, ঈস্ট প্রভৃতি জীবে অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন ঘটে।
খ. মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় জননমাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দু’বার বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। এখানে যদিও নিউক্লিয়াসটি দু’বার বিভক্ত হয় কিন্তু ক্রোমোসোম একবার বিভক্ত হয়; ফলে অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়। এজন্য মিয়োসিস কোষ বিভাজনকে হ্রাসমূলক বিভাজন বলে।
গ. উদ্দীপকের B ধাপটি হলো মাইটোসিস কোষ বিভাজনের শেষ ধাপ টেলোফেজ। এ ধাপটিতে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটে তা হলো :
i. ক্রোমোসোমগুলোতে পানি যোজন ঘটতে থাকে এবং সরু ও লম্বা আকারের হয়। এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন করে।
ii. নিউক্লিওলাসের আবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের পুনঃ আবির্ভাব ঘটে।
iii. এ ধাপে স্পিন্ডল যন্ত্রের কাঠামো ভেঙ্গে যায় এবং স্পিন্ডল | তন্তুগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
iv. টেলোফেজ ধাপের শেষে বিষুবীয় তলে কোষপ্লেট সৃষ্টি হয়।
v. সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুগুলোর সমবন্টন ঘটে, ফলে দু’টি অপত্য কোষ (Doughter cell) সৃষ্টি হয়।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি হলো মাইটোসিস কোষ বিভাজন।
জীবদেহে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব অপরিসীম। মাইটোসিস বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যকার আয়তন ও পরিমাণগত ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর মাধ্যমে বহুকোষী জীবের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। এই বিভাজনের মাধ্যমে অপত্যকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ মাতৃকোষের অনুরূপ থাকে। তাছাড়া এককোষী জীবে মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। ক্ষতস্থান পূরণ করতে মাইটোসিস বিভাজন অপরিহার্য। এ বিভাজনের মাধ্যমেই বহুকোষী জীবের জননাঙ্গ সৃষ্টি হয়। এর ফলে বংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
মাইটোসিস বিভাজন প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে অস্বাভাবিকভাবে কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এর ফলে টিউমার সৃষ্টি হয়। আবার ক্যান্সারও হতে পারে। ক্যান্সার একটি অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফসল এবং একটি মারাত্মক রোগ।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কোষ বিভাজন সঠিকভাবে না ঘটলে জীবে টিউমার ও ক্যান্সার সৃষ্টি, ক্ষতস্থান পূরণে ও বংশবৃদ্ধির জন্য জনন অঙ্গ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এতে করে জীবে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তাই মাইটোসিস কোষবিভাজন প্রক্রিয়াটি জীবজগতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করে।
এসএসসি সকল বিষয় নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২ : নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সাধারণত উচ্চ শ্রেণির জীবের দেহকোষে এক ধরনের কোষ বিভাজন হয়। উক্ত কোষ বিভাজনের একটি ধাপে সেন্ট্রোমিয়ার দুটি খন্ডে বিভক্ত হয়। ফলশ্রুতিতে একটি ক্রোমোসোম থেকে দু‘টি অপত্য ক্রোমোসোম সৃষ্টি হয়।
ক. ইন্টারফেজ কী?
খ. মাইটোসিস কোষ বিভাজনকে সমীকরণিক বিভাজন বলা হয় কেন?
গ. উল্লিখিত ধাপটির সচিত্র বর্ণনা দাও।
ঘ. উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না ঘটলে জীবদেহে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কোষ বিভাজনের শুরুতে বা একটি কোষে পরপর দু’বার বিভাজনের মধ্যবর্তী নিউক্লিয়াসের প্রস্তুতিমূলক কার্যসম্পন্নকারী দশাটি হলো ইন্টারফেজ।
খ. মাইটোসিস কোষ বিভাজনে মাতৃকোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। অপত্য কোষগুলোর নিউক্লিয়াস ও ক্রোমোসোম সংখ্যা ও গুণাগুণ মাতৃকোষের মতো হয়। এ কারণেই মাইটোসিস বিভাজনকে সমীকরণিক বিভাজন বলে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ধাপটি হলো মাইটোসিসের অ্যানাফেজ দশা। এটি কোষ বিভাজনের ৪র্থ ধাপ।
এ ধাপে-
i. প্রতিটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, ফলে ক্রোমাটিডগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমাটিডকে অপত্য ক্রোমোসোম বলে।
ii. এরপর অপত্য ক্রোমোসোমের বিকর্ষণের ফলে অপত্য ক্রোমোসোমের অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
iii. অপত্য ক্রোমোসোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়। এ সময় ক্রোমোসোমগুলো সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ইংরেজি বর্ণমালার V, L, J অথবা I আকৃতিবিশিষ্ট হয়।
iv. এ ধাপের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমোসোমগুলো স্পিন্ডলযন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয় এবং ক্রোমোসোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি হলো মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া।
জীবের জন্য এ প্রক্রিয়াটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং এটি সঠিকভাবে না ঘটলে জীবদেহে নানা সমস্যা দেখা দেয়, যা নিচে তুলে ধরা হলো:
i. বহুকোষী জীবে জাইগোট নামক একটি মাত্র কোষের মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোষী জীবদেহ গঠিত হয় এবং এদের দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং, উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না ঘটলে জীবের দেহ গঠন ও দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
ii. মাইটোসিসের মাধ্যমে বহুকোষী জীবের জননাঙ্গ তৈরি হয়ে থাকে। তাই প্রক্রিয়াটি অর্থাৎ মাইটোসিস সঠিকভাবে না ঘটলে জীবের জননাঙ্গ ঠিকভাবে তৈরি হবে না ফলে বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হবে।
iii. মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজনের কারণে প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের ভারসাম্য রক্ষা পায়। তাই এ বিভাজন সঠিকভাবে না ঘটলে এ ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে।
iv. মাইটোসিসের কারণেই জীবদেহের সকল কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা সমান থাকে। সুতরাং, প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না ঘটলে কোষে ক্রোমোসোমের সমতা বিনষ্ট হবে।
v. মাইটোসিস প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবে না ঘটলে কোষের নির্দিষ্ট আকার, আকৃতি ও আয়তনের বিঘ্ন সৃষ্টি হবে।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে না ঘটলে অপত্য কোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম না থাকায় জীবের দেহের বৃদ্ধি সুশৃঙ্খলভাবে না হয়ে অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে এবং জীবদেহে জটিল সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন–৩ নিচের চিত্রটি দেখ প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. মানুষের প্রতিটি দেহকোষে কয়টি ক্রোমোসোম রয়েছে?
খ. অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলতে কী বোঝায়?
গ. P কোষ বিভাজনটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উন্নত প্রাণীতে P ও Q কোষ বিভাজন দুইটির তুলনামূলক আলোচনা কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ৪৬টি ক্রোমোসোম আছে।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
খ. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রক্রিয়াটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। কোনো কারণে প্রক্রিয়াটির ধারাবাহিক নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে গেলে কোষ বিভাজন বিরামহীনভাবে চলতে থাকে। একে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন বলে।
গ. প্রশ্নের P কোষ বিভাজনটি মিয়োসিস কোষ বিভাজন। মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রধানত জীবের জননকোষ বা গ্যামেট সৃষ্টির সময় জনন মাতৃকোষে ঘটে। সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগধানী ও ডিম্বকের মধ্যে এবং উন্নত প্রাণিদেহে শুক্রাশয়ে ও ডিম্বাশয়ের মধ্যে মিয়োসিস ঘটে। মিয়োসিস বিভাজনের সময় কোষ পরপর দু’বার বিভাজিত হয়।
প্রথম বিভাজনকে প্রথম মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-১ এবং দ্বিতীয় বিভাজনকে দ্বিতীয় মিয়োটিক বিভাজন বা মিয়োসিস-২ বলা হয়। প্রথম বিভাজনের সময় অপত্যকোষে ক্রোমোসোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেকে পরিণত হয় এবং দ্বিতীয় বিভাজনটি মাইটোসিসের অনুরূপ।
ঘ. P হলো মিয়োসিস কোষ বিভাজন ও Q হালো মাইটোসিস। উন্নত প্রাণীতে এই কোষ বিভাজন দুটির তুলনামূলক আলোচনা ছকে দেওয়া হলো :
মিয়োসিস | মাইটোসিস |
i. মিয়োসিস জনন মাতৃকোষে ঘটে এবং জননকোষ সৃষ্টি করে । | i. মাইটোসিস দেহকোষে ঘটে এবং দেহের বৃদ্ধি ঘটায়। |
ii. অপত্যকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার অর্ধেক হয়। ফলে প্রজাতির ক্রোমোসোম সংখ্যার ধ্রুবতা বজায় থাকে। | ii. অপত্যকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যার সমান থাকে। সৃষ্ট অপত্য কোষে ক্রোমোসোম সংখ্যা ও গুণাগুণ একই রকম থাকে। |
iii. চারটি হ্যাপ্লয়েড অপত্যকোষ উৎপন্ন হয়। | iii. দুটি ডিপ্লয়েড অপত্যকোষ উৎপন্ন হয়। |
iv. মাতৃকোষ দু’বার বিভাজিত হয়। | iv. মাতৃকোষ একবার বিভাজিত হয়। |
v. মিয়োসিসের উদ্দেশ্য জননকোষ সৃষ্টি করা। | v. মাইটোসিসের উদ্দেশ্য দেহকোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। |
প্রশ্ন–৫ : নিচের চিত্রটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. কোন ধরনের কোষ বিভাজন দ্বারা জননকোষ উৎপন্ন?
খ. ক্রোমোসোমকে বংশগতির বাহক বলা হয় কেন?
গ. ২নং ধাপটির চিহ্নিত চিত্র এঁকে এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
ঘ. একটি জীবে ২নং ধাপটির বিভাজন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত না থাকলে তার সম্ভাব্য পরিণতি উদাহরণসহ বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মিয়োসিস কোষ বিভাজন দ্বারা জননকোষ উৎপন্ন হয়।
খ. জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারীর নাম জিন। জিন ক্রোমোসোমে অবস্থান করে। ক্রোমোসোমের কাজ হলো পিতামাতা হতে জিন সন্তান সন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। যেমন : মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার রং ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোসোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। এ কারণে ক্রোমোসোমকে বংশগতির বাহক বলা হয়।
গ. ২নং ধাপটি হলো মেটাফেজ ধাপ। এর চিহ্নিত চিত্র নিম্নরূপ :
বৈশিষ্ট্য : i) ধাপটি মেটাফেজ।
ii) এ ধাপে প্রতিটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার কোষের বিষুব অঞ্চলে অবস্থান করে।
iii) বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে থাকে।
iv) এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্টোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয়।

ঘ. ২নং ধাপটি হলো মেটাফেজ যা নিয়ন্ত্রিতভাবে না ঘটলে তার সম্ভাব্য পরিণতিতে প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
i) মেটাফেজ ধাপে দুই মেরুযুক্ত মাকু বা স্পিন্ডল যন্ত্রের সৃষ্টি হয়। প্রতিটি ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডল যন্ত্রের ট্রাকশন তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয় এবং বিষুবীয় অঞ্চলে অবস্থান। নেয়।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
ii) পরবর্তী ধাপে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিভক্ত হয় এবং ট্রাকশন তন্তুর সংকোচনে ক্রোমোসোমগুলো বিপরীত মেরুর দিকে চলে যায়। শেষে দুটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে যার ক্রোমোসোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে।
iii) মেটাফেজে যদি স্পিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি না হয় তা হলে ক্রোমোসোমগুলোর বিপরীত মেরুর দিকে যাওয়া বিঘ্নিত হবে।
ফলে কোষটিতে ক্রোমোসোম সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে একটি অস্বাভাবিক কোষের সৃষ্টি হবে। যার পরিণতিতে এ অস্বাভাবিক কোষটির অস্বাভাবিক বিভাজনের ফলে টিউমার অথবা অনেক সময় ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
আমাদের ইউটিউব লিঙ্ক
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে গণিত, বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে টিউটোরিয়াল দেওয়া আছে। আপনারা টিউটোরিয়ালগুলি দেখে নিতে পারেন।