কপোতাক্ষ নদ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত [১৮২৪–১৮৭৩]
কবি সম্পর্কিত তথ্য:
জন্ম : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যু : তিনি ১৮৭৩ সালের ২৯শে জুন কলকাতার লেয়ার সার্কুলার রোডে মৃত্যুবরণ করেন।
পিতা–মাতা : তাঁর পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত ও মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী।
শিক্ষাজীবন : তিনি প্রথমে কলকাতার খিদিরপুর স্কুলে, এরপর হিন্দু কলেজে ও পরে বিশপস্ কলেজে ভর্তি হন। ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেতে গিয়েছিলেন।
ব্যক্তিজীবন : মধুসূদন ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তখন তার নামের শুরুতে ‘মাইকেল’ শব্দটি যোগ হয়। পাশ্চাত্য জীবনযাপনেরপ্রতি প্রবল আগ্রহ এবং ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যসাধনার তীব্র আবেগ তাঁকে ইংরেজিতে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। | [দ্রষ্টব্য: পাঠ্য বইয়ে ভুলক্রমে ১৮৪২ সাল উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত কবি ১৮৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে ধর্মান্তরিত হয়ে নামের সঙ্গে ‘মাইকেল’ শব্দটি যোগ করেন। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত: ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথমখণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৯৩; সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত ‘মধুসূদন রচনাবলী’, পৃষ্ঠা-তেরো।]
উল্লেখযোগ্য রচনা :
মহাকাব্য: মেঘনাদবধ কাব্য।
কাব্য: তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলি,The Captive Lady, Visions of the Past।
নাটক: শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, মায়া-কানন।
বাংলা প্রথম পত্র নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা, বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ।
বিশেষ অবদান : বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেটের প্রবর্তন। মাইকেল বাংলা ভাষার একমাত্র সার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর রচয়িতা। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জনক।
কবিতা সম্পর্কিত তথ্য:
উৎস : ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ মাইকেলের সনেট সংকলন।
মূলবক্তব্য : এ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি এ নদের তীরবর্তী প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। পরিণত বয়সে প্রবাসজীবনে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নদ কবিকে কাতর করেছে। সুদূরে বসেও তিনি যেন এর কলকল ধ্বনি শুনতে পান। কত দেশে কত নদী তিনি দেখেছেন, কিন্তু মাতৃস্বরূপা এ নদের দুগ্ধ-স্রোতোরূপী ধারা পৃথিবীতে আর কোথাও পাননি তিনি। এ নদের কাছে কবির আকুল মিনতি, বাংলা কবিতা ও গানে তিনি যেন এ নদের কথা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
রূপশ্রেণি: আঙ্গিকগত দিক থেকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি একটি উৎকৃষ্ট মানের সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এটি দেশপ্রেমমূলক কবিতা। প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে এটি একটি স্মৃতিচারণমূলক কবিতা।
নামকরণ: কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে এর বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে। আলোচ্য কবিতায় শৈশবের নদের প্রতি স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার মূলবক্তব্য কেন্দ্রীভূত হয়েছে কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে। তাই এটির নামকরণ ‘কপোতাক্ষ নদ’ যথাযথ হয়েছে।
ছন্দ : ‘কপোতাক্ষ নদ’ সনেটটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রতি চরণে মাত্ৰাসংখ্যা ১৪। প্রতিটি চরণ দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্ব ৮ মাত্রার ও দ্বিতীয় পর্ব ৬ মাত্রার। এ কবিতার অন্ত্যমিল এরকম— কখকখকখখক গঘগঘগঘ।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি কোনটি?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য।
প্রশ্ন–২. মাইকেল মধুসূদন দত্ত কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন–৩. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তির নাম কী?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তির নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
প্রশ্ন–৪. মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন কত সালে?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন।
প্রশ্ন–৫. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমরকীর্তি কোন কাব্যটি?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমরকীর্তি ‘মেঘনাদবধ কাব্য‘।
প্রশ্ন–৬. মাইকেল মধুসূদন দত্ত কত সালে পরলোকগমন করেন?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালে পরলোকগমন করেন।
প্রশ্ন–৭. বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তন করেন কে?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন–৮. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি কী?
উত্তর: মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
প্রশ্ন–৯. বহু দেশে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কী দেখেছেন?
উত্তর: বহু দেশে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বহু নদ-নদী দেখেছেন।
প্রশ্ন–১০. কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন–১১. স্কুলজীবন শেষ করে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কোন কলেজে ভর্তি হন?
উত্তর: স্কুলজীবন শেষ করে মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।
প্রশ্ন–১২. ‘কৃষ্ণকুমারী‘ কার লেখা নাটক?
উত্তর: ‘কৃষ্ণকুমারী’ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা নাটক।
প্রশ্ন–১৩. ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনটি কার লেখা?
উত্তর: ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা।
প্রশ্ন–১৪. বাংলা কাব্যে সনেটের প্রবর্তন করেন কে?
উত্তর: বাংলা কাব্যে সনেটের প্রবর্তন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন–১৫. হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোন ভাষার সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগ জন্মে?
উত্তর: হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি ভাষার সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগ জন্মে।
প্রশ্ন–১৬. কবির মনে সর্বদা কোন নদের কথা মনে পড়ে?
উত্তর: কবির মনে সর্বদা কপোতাক্ষ নদের কথা মনে পড়ে।
প্রশ্ন–১৭. কবি কীসের ছলনায় প্রাণ জুড়ান?
উত্তর: কবি ভ্রান্তির ছলনায় প্রাণ জুড়ান।
প্রশ্ন–১৮. চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণকে কী বলে?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণকে অষ্টক বলে।
প্রশ্ন–১৯. ‘দুগ্ধ–স্রোতোরূপী‘ বলতে কবি কোন নদীকে বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলতে কবি ‘কপোতাক্ষ নদ’কে বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন–২০. নিশার স্বপনে লোকে কী শোনে?
উত্তর: নিশার স্বপনে লোকে ‘মায়া-মন্ত্রধ্বনি’ শোনে।
প্রশ্ন–২১. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে কী প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন-২২. কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির উৎস কী?
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির উৎস- মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ কাব্যগ্রন্থ।
প্রশ্ন–২৩. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার মিলবিন্যাস লেখো।
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মিলবিন্যাস হলো কখকখকখখক গঘগঘগঘ।
প্রশ্ন–২৪. চতুর্দশপদী কবিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: চতুর্দশপদী কবিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Sonnet.
প্রশ্ন–২৫. বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন কে?
উত্তর: বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
প্রশ্ন–২৬. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় কবির কোন ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়?
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবির স্বদেশ ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।
প্রশ্ন–২৭. ‘বিরলে’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বিরলে’ শব্দের অর্থ— একান্ত নিরিবিলিতে।
প্রশ্ন–২৮. ‘সতত‘ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘সতত’ শব্দটির অর্থ সর্বদা।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: অবচেতন মনে হঠাৎ কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি উপলব্ধি করাকেই কবি ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলেছেন। কবিচৈতন্যে কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি সদাজাগ্রত; তাই রাতে যখন তিনি নিদ্রাযাপন করেন তখনো এ নদের স্রোতপ্রবাহজাত শব্দ তাঁর স্বপ্নে এসে হাজির হয়। কবি উপলব্ধি করেন এ তার মানসিক ভ্রান্তিরই নামান্তর; তবুও তিনি এই ভ্রান্তিতেই আবৃত থাকতে চান। কারণ এ ভ্রান্তিই কবির কানকে এক সুখানুভূতি প্রদান করে।
প্রশ্ন–২. ‘কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে’- চরণে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: উদ্ধৃত চরণের মাধ্যমে কবি কপোতাক্ষ নদের প্রতি তাঁর মাতৃপ্রতিম স্নেহাভিলাষ ও দেশপ্রেমকে বুঝিয়েছেন। কবি দেশ ত্যাগ করে প্রবাসে থেকেছেন দীর্ঘসময়। সেখানে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণে তিনি অনেক নদ-নদীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই কবির অন্তরের তৃষ্ণা মেটাতে সমর্থ হয়নি। কারণ একমাত্র কপোতাক্ষকে তিনি মাতৃরূপে বন্দনা করেন যা তার দেশপ্রেমেরও স্মারক। এ কারণে এ নদের সেরূপ বারিধারাই কেবল তার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে।
প্রশ্ন–৩. ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি বঙ্গদেশ তথা জন্মভূমির কবিতা ও গানকে বুঝিয়েছেন। প্রবাসজীবনে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভেবে কবি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। এ নদকে একনজর দেখার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সংশয় প্রকাশ করেন এই বলে যে আর কি তার সঙ্গে কপোতাক্ষ নদের দেখা হবে? যদি তা নাও হয় তবে তার আকুল মিনতি, বঙ্গবাসী যেন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মাধ্যমে বঙ্গভাষায় রচিত কবিতা ও গানে তাকে স্মরণ করে।
প্রশ্ন–৪. ‘দুগ্ধ–স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি–স্তনে’- একথা দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: জন্মভূমি কবির কাছে মায়ের মতো বলে তিনি কপোতাক্ষের জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন। মা যেমন তার সন্তানকে নিবিড় মমতায় বুকের দুধ পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে তেমনি কপোতাক্ষের তীরে বেড়ে ওঠা কবি এ নদের স্মৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অপার মমতায় লব্ধ এ নদের জল ছাড়া কবির তৃষ্ণা মেটে না। তাই কবি কপোতাক্ষের জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রশ্ন–৫. ‘ভ্রান্তির ছলনে‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি আশার ছলনাকে বুঝিয়েছেন। কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কবি খ্যাতি লাভের আশায় নিজ দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে ত্যাগ করে সুদূর ফ্রান্সে চলে গিয়েছিলেন। প্রবাসজীবনে মাতৃভাষার প্রতি তার তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি কপোতাক্ষ নদের প্রতি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। অনুভূতির গভীরে কপোতাক্ষকে স্থান দেন বলে কবির মনে হয় তিনি যেন সে নদীর কলধ্বনি শুনছেন। ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন–৬. ‘বারি–রূপ কর‘ কথাটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘বারি-রূপ কর’ কথাটির মাধ্যমে কবি সমুদ্রে গিয়ে নদীর মিশে যাওয়ার বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। সকল নদীরই সর্বশেষ গন্তব্য হলো সাগর। নদীর জল গিয়ে সাগরে পতিত হয়। কপোতাক্ষ নদের জলও একইভাবে প্রতিনিয়ত সাগরে গিয়ে পড়ে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরকে দেখেছেন রাজারূপে। কপোতাক্ষ নদ যেন প্রজার মতোই সাগরকে খাজনা বা কর হিসেবে নিজের জল প্রদান করে।
প্রশ্ন–৭. ‘প্রজারূপে রাজরূপ‘ কথাটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: ‘প্রজারূপে রাজরূপ’- কথাটি দ্বারা রাজা ও প্রজার সম্পর্ক বোঝানো হয়েছে। রাজার রাজত্বে প্রজারা বসবাস করে। এজন্য প্রজামাত্রই রাজাকে কর বা খাজনা দিয়ে থাকে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি কপোতাক্ষকে প্রজা হিসেবে বর্ণনা করে কপোতাক্ষের জল কর হিসেবে সাগরে প্রবাহিত হওয়ার কথা বলেছেন। প্রশ্নের কথাটি দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন–৮. ‘আর কি হে হবে দেখা’-কবির এই আক্ষেপের কারণ কী?
উত্তর: প্রবাসে কাতর কবি দেশ এবং কপোতাক্ষকে আর দেখতে না পাওয়ার শঙ্কা থেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের আশা ছিল প্যারিসে জগদ্বিখ্যাত কবিদের গৌরবময় পঙক্তিতে ঠাঁই করে নেবেন। কিন্তু পরিণতিতে উপলব্ধি করলেন, যে আলেয়াকে আলো ভেবে পিছু নিয়েছিলেন তিনি তা তাঁর জীবনে ধরা দেবে না। জীবন তাঁকে বঞ্চনা ও ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। এ অবস্থায় দেশমাতৃকাও তাঁর পাশে নেই। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত সংশয়ব্যঞ্জক জিজ্ঞাসাটি কবি চেতনায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন–৯. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ একটি চতুর্দশপদী কবিতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ভাব ও আঙ্গিক গঠনগত দিকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি চতুর্দশপদী কবিতা। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির রয়েছে চৌদ্দটি চরণ। এ চরণগুলোর মাঝে রয়েছে বিশেষ ধরনের অন্ত্যমিল যা চতুদর্শপদী কবিতার বৈশিষ্ট্যকেই ইঙ্গিত করে। এর অন্ত্যমিল বিন্যাস হচ্ছে- কখকখকখখক গঘগঘগঘ। কপোতাক্ষকে স্মরণ করার নানা ভঙ্গিমার মাধ্যমে কবি অষ্টকে ভাবের প্রবর্তন করেছেন এবং এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে ভাবের পরিণতি দেখিয়েছেন। তাই এটি একটি চতুর্দশপদী কবিতা।
বাংলা প্রথম পত্র নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–১০. কপোতাক্ষ নদ সর্বদা কবির মনকে কীভাবে আলোড়িত করে?
উত্তর: কবি সর্বদাই কপোতাক্ষ নদের চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকেন। কবির মন সারাক্ষণই কপোতাক্ষকে স্মরণ করে চলে। একান্ত নির্জনে বসেও কবি কপোতাক্ষের স্মৃতি রোমন্থন করেন। প্রবাসে বসেও যেন তিনি কপোতাক্ষের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। কপোতাক্ষ নদের কোনো বিকল্প কবি চিন্তাও করতে পারেন না।
প্রশ্ন–১১. সতত তোমার কথা ভাবি এ ‘বিরলে’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি সর্বদা একান্ত নিরিবিলিতে কপোতাক্ষ নদের কথাই ভাবেন। কপোতাক্ষ নদ হচ্ছে কবির শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত নদী। সুদূর ফ্রান্সে বসবাস করা সত্ত্বেও শৈশবের এ নদীটিকে ভুলতে পারেননি। সর্বদা তার পাশে পাশেই থাকে। তাই তিনি একান্ত মুহূর্তে সর্বদা কপোতাক্ষ নদের কথাই ভাবেন।
প্রশ্ন–১২. কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদের যে রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন তা বর্ণনা করো।
উত্তর: যশোর জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এক দুগ্ধ-স্রোতোরূপী নদের নাম কপোতাক্ষ । নদীমাতৃক বাংলাদেশের যশোর জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ তার সৌন্দর্য ও শীতলতা দিয়ে অনন্য। এই নদের স্নেহ-মায়ার বন্ধনেই লালিত হয়েছেন কবি মাইকেল মধুসূদন। কবির কাছে এ নদের জল মায়ের বুকের দুধের মতো মধুর। জীবনদায়ী এই নদ তাই ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় অসাধারণ মূর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে।
প্রশ্ন–১৩. ‘লইছে যে তব নাম বঙ্গের সঙ্গীতে‘- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি প্রবাসজীবনেও তাঁর গানে, কবিতায় শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদীর গুণগান গেয়েছেন। কপোতাক্ষ নদ কবির হৃদয়ের সবটুকু কাতরতা দখল করে আছে বলে তিনি বঙ্গবাসীর নিকটও তা কাব্যে ও গানে ব্যক্ত করেন। তাই প্রবাসজীবনেও তার সকল গান ও কবিতায় শৈশব স্মৃতিবিজড়িত নদীর নামই নিয়েছেন।
প্রশ্ন–১৪. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় কবির যে স্মৃতিকাতরতা প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার শৈশবের স্মৃতিচারণা করেছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের শৈশবের দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে নিসর্গ লালিত কপোতাক্ষ নদের তীরে। কবিকে কপোতাক্ষ যেন মায়ের স্নেহে তার তৃষ্ণা মিটিয়েছেন। কপোতাক্ষের জল তাই কবির কাছে দুগ্ধ স্রোতোরূপী বলে মনে হয়েছে। কবি প্রবাসজীবনেও তাই এই নদেরই স্মৃতিচারণা করেন তার সমস্ত রচনায়।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
* তথ্যকণিকা *
- খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের কারণে নামের সাথে– ‘মাইকেল’ শব্দ যোগ।
- বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও সনেটের– প্রবর্তক।
- আধুনিক বাংলা কবিতার জনক, মহাকবি, নাট্যকার–মাইকেল
- বাংলা ভাষার সার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদ বধ’- রচয়িতা ।
- সাহিত্যের নানা শাখায় সমৃদ্ধি: কাব্য, নাটক, প্রহসন, মহাকাব্য রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
- উৎসগ্রন্থ— চতুর্দশপদী কবিতাবলি।
- রূপশ্রেণি- সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা।
- নামকরণ– বিষয়বস্তুকে উপজীব্য করে।
- বিষয়বস্তু – কপোতাক্ষ নদের প্রতি অনুরাগ ও দেশপ্রেম।
- ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির উৎস- মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘চতুদর্শপদী কবিতাবলি’।
- ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি – চতুর্দশপদী কবিতা
- এ কবিতায় অষ্টকের মিলবিন্যাস – কখকখকখখক।
- ষষ্টকের মিলবিন্যাস- গঘগঘগঘ।
- ‘কপােতাক্ষ নদ’ কবির – ফ্রান্সে বসবাস কালে রচিত হয়।
- চতুর্দশপদী কবিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ – Sonnet।
- সনেট হলো চৌদ্দ-চরণ-সমন্বিত ভাবসংহত বিশেষ ধরনের – কবিতা।
- চতুর্দশপদী কবিতার প্রথম আট চরণকে – অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে – ষষ্টক বলে।
- অষ্টকের প্রতিশব্দ ‘Octave’ এবং ষষ্টকের প্রতিশব্দ ‘Sestet’।
- চতুর্দশপদী কবিতার অষ্টকে থাকে—ভাবের প্রবর্তনা এবং ষষ্টকে থাকে-পরিণতি।
- বাংলা কাব্যে চতুর্দশপদী কবিতার প্রবর্তক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
সুপার টিপস:
১. মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন — ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি।
২. মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান যশোর জেলার — সাগরদাড়ি গ্রামে।
৩. স্কুলজীবনের শেষে মধুসূদন ভর্তি হন কলকাতার — হিন্দু কলেজে।
৪. কলেজে অধ্যয়নকালে মধুসূদন দত্তের তীব্র অনুরাগ জন্মে — ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি।
৫. মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন — ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’।
৬. খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ফলে মধুসূদন দত্তের নামের আগে যুক্ত হয় — মাইকেল।
৭. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীতি — ‘মেঘনাদবধ কাব্য।
৮. ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, ‘শর্মিষ্ঠা’ ইত্যাদি গ্রন্থের রচয়িতা— মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
৯. বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ এবং সনেট প্রবর্তন করেন — মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
১০. মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যু — ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে জুন।
১১. কবির সর্বদা মনে পড়ে — কপোতাক্ষ নদের কথা ।
১২. কবি কপোতাক্ষ নদের কথা — ভাবেন বিরলে।
১৩. কবি সর্বদা শুনতে পান কপোতাক্ষ নদের — কলধ্বনি।
১৪. কবির মনে ভ্রান্তির ছলন—কপোতাক্ষের কলকল ধ্বনি।
১৫. কবির স্নেহের তৃষ্ণা মেটে — কপোতাক্ষের জলে।
১৬. কবির নিকট কপোতাক্ষের স্রোত— দুগ্ধরূপী।
১৭. দুধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে এখানে ‘তুমি’ হলো — কপোতাক্ষ নদ।
১৮. কপোতাক্ষ নদ বারি-রূপ কর দেয় — সাগরকে।
১৯. কপোতাক্ষ নদকে কবি তার হৃদয়ের কাতরতা প্রকাশ করতে বলেন—বঙ্গবাসীদের নিকট।
২০. কবি প্রবাসজীবনে কপোতাক্ষকে স্মরণ করেন— প্রেমভাবে।
২১. ‘সতত’ শব্দের অর্থ — সর্বদা।
২২. ‘বিরলে’ শব্দের অর্থ — একান্ত নিরিবিলিতে।
২৩. “নিশা’ শব্দের অর্থ— রাত্রি।
২৪. চতুর্দশপদী কবিতাকে ইংরেজিতে বলে— Sonnet।
২৫. চৌদ্দ চরণ সমন্বিত ভাবসংহত কবিতাকে বলা হয়— সনেট।
২৬. সনেটের প্রথম আট চরণের স্তবককে বলে— অষ্টক (Octave)।
২৭. চতুর্দশপদী কবিতার অষ্টকের পরবর্তী হয় চরণকে বলে— ষটক (Sestet)।
২৮. চতুর্দশপদী — কবিতার অষ্টকে থাকে ভাবের প্রবর্তনা আর যটকে থাকে ভাবের পরিণতি।
২৯. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি একটি— চতুর্দশপদী কবিতা ।
৩০. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মিলবিন্যাস — কখ কখ কখখক গঘ গঘ গঘ।
৩১. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার রচয়িতা— মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
৩২. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি গৃহীত হয়েছে— ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলি’ থেকে ।
৩৩. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে কবির — স্মৃতিকাতরতা ও অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম।
৩৪. কপোতাক্ষ নদ অবস্থিত—যশোর জেলায়।
৩৫. সাগরদাঁড়ি গ্রামটি অবস্থিত— কপোতাক্ষ নদের তীরে।
৩৬. জন্মভূমির শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে স্মৃতিকাতর করত— ফ্রান্সে বসবাসকালে।। ৩৭. দূরে থেকেও কবি শুনতে পেতেন— কপোতাক্ষ নদের কলকল ধ্বনি।
৩৮. কপোতাক্ষ নদকে মধুসূদন দত্ত স্মরণ করেন —বন্ধুভাবে ও স্নেহাদরে।
৩৯, কপোতাক্ষ নদের কাছে কবির মিনতি কপোতাক্ষ নদ যেন কবিকে প্রেমভাবে— স্মরণ করে।
৪০. মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি যেন — স্বদেশের জন্য কবির হৃদয়ের কাতরতা।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতাটি রচনাকালে কবি কোন দেশে ছিলেন?
ক. ফ্রান্সে খ. ইংল্যান্ডে
গ. ইতালিতে ঘ. আমেরিকাতে
উত্তর: ক. ফ্রান্সে
২. ‘কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?’- এ উক্তিতে কবির কোন ভাব প্রকাশ পেয়েছে?
i. মমতা
ii. অনুরাগ
iii. ভ্রান্তি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও:
প্রবাসজীবনে ফাস্টফুডের দোকানে কত খাবার খেয়েছি আমি জীবনে। মায়ের হাতের পিঠার কথা ভুলি আমি কেমনে?
৩. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার কোন বিষয়টি উদ্দীপকটিতে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. সুখস্মৃতির অনুপম চিত্রায়ন খ. রঙিন কল্পনার নিদর্শন
গ. কষ্টকর স্মৃতির কাতরতা ঘ. স্নেহাদরের কাতরতা
উত্তর: ঘ. স্নেহাদরের কাতরতা
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৪. অনুচ্ছেদটির মূল বক্তব্য নিচের কোন চরণে ফুটে উঠেছে?
ক. সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
খ. জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
গ. এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
ঘ. আর কি হে হবে দেখা।
উত্তর: গ. এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
৫. ‘সইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে’- এখানে কার নামের কথা বলা হয়েছে?
ক. কবির খ. কপোতাক্ষ নদের
গ. সাগরের ঘ. বঙ্গাবাসীর
উত্তর: খ. কপোতাক্ষ নদের
৬. ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবে কিরে হায় ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা সে কি ভুলা যায়‘ ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার সাথে উদ্ধৃতাংশের মিল রয়েছে-
ক. স্বদেশচেতনায়
খ. স্মৃতিকাতরতায়
গ. দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসায়
ঘ. অমরত্ব আকাঙ্ক্ষায়
উত্তর: খ. স্মৃতিকাতরতায়
৭. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি কোনটি?
ক. ব্রজাঙ্গনা কাব্য খ. বীরাঙ্গনা কাব্য
গ. মেঘনাদবধ কাব্য ঘ. তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
উত্তর: গ. মেঘনাদবধ কাব্য
৮. ‘নয়ন সমুখে তুমি নাই।
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাই’
উদ্দীপকের ভাবটি ফুটে উঠেছে কোন চরণে?
ক. জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!
খ. দুগ্ধ-স্রোতেরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে।
গ. কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
ঘ. সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!
উত্তর: ঘ. সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!
৯. আর কি হে হবে দেখা – এখানে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. অসহায়ত্ব খ. অনিশ্চয়তা
গ. সংকোচ ঘ. বিরহ
উত্তর: খ. অনিশ্চয়তা
১০. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষষ্টকের ছন্দমিল কোনটি?
ক. গঘঙ গঘঙ খ. গঘগ গঘগ
গ.গঘগ ঘগঘ ঘ. গঘঘ গঘগ
উত্তর: গ.গঘগ ঘগঘ
১১. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার শেষ হয় চরণের অন্ত্যমিল কীরূপ?
ক. ঘঙচ ঘঙচ খ. ঘঙ ঘঙ চচ
গ. গঘ গঘ গঘ ঘ. গঘ ঘঙ গঘ
উত্তর: গ. গঘ গঘ গঘ
১২. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার কোন পঙক্তিটির মধ্যে কবির স্বদেশপ্রেমের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে?
ক. লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে।
খ. সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে।
গ. দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে
ঘ. আর কি হে হবে দেখা?- যতদিন যাবে
উত্তর: গ. দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে
১৩. চতুর্দশপদী কবিতার অষ্টকে থাকে–
ক. ভাবের প্রবর্তনা খ. ভাবের ব্যাখ্যা
গ. ভাবের পরিণতি ঘ. উপসংহার
উত্তর: ক. ভাবের প্রবর্তনা
১৪. ‘সতত যেমতি লোকে নিশার স্বপনে।
শোনে মায়া–মন্ত্রধ্বনি’ এ চরণে কবির কোন ভাব প্রকাশ পেয়েছে?
ক. স্বদেশপ্রেম
খ. কপোতাক্ষ নদের প্রতি ভালোবাসা
গ. মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা
ঘ. পিতামাতা থেকে দূরে থাকার কষ্ট
উত্তর: খ. কপোতাক্ষ নদের প্রতি ভালোবাসা
১৫. ‘নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেম–ভাবে। লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে’- এ চিত্রকল্পে যা ফুটে উঠেছে—
ক. বিরহের ব্যাকুলতা খ.সান্নিধ্যের উদ্বেলতা
গ. বিচ্ছেদের প্রতিকূলতা ঘ. ভালোবাসার আকুলতা
উত্তর: খ.সান্নিধ্যের উদ্বেলতা
১৬. ‘লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে’- এখানে ‘তব নাম’ বলতে বোঝানো হয়েছে–
ক বঙ্গজ জনকে খ. কপোতাক্ষ নদকে
গ. বাংলাদেশকে ঘ. বাংলা ভাষাকে
উত্তর: খ. কপোতাক্ষ নদকে
১৭. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতাটি একটি –
i. গীতিকবিতা
ii. সনেট
iii. দেশাত্মবোধক কবিতা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. ii ও iii
১৮. বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও সার্থক মহাকাব্য কোনটি?
ক. হেক্টরবধ খ. বীরাঙ্গনা
গ. মেঘনাদবধ ঘ. মহাশ্মশান
উত্তর: গ. মেঘনাদবধ
১৯. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় কবি সাগরকে কীরূপে কল্পনা করেছেন?
ক. রাজা খ. প্রজা
গ. মাতা ঘ. সখা
উত্তর: ক. রাজা
২০. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় ‘স্নেহের তৃষ্ণ’ কথাটিতে প্রকাশ পেয়েছে কবির–
ক. স্বজাতিপ্রীতি খ. স্মৃতিকাতরতা
গ. মাতৃভাষাপ্রীতি ঘ. সন্তানবাৎসল্য
উত্তর: খ. স্মৃতিকাতরতা
২১. মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত কাব্য কোনটি?
ক. বীরাঙ্গনা খ. পদ্মাবতী
গ. কৃষ্ণকুমারী ঘ. যে বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ
উত্তর: ক. বীরাঙ্গনা
২২. ‘একেই কী বলে সভ্যতা’– মধুসূদনের কোন ধরনের রচনা?
ক. নাটক খ. প্রহসন
গ. উপন্যাস ঘ. প্রবন্ধ
উত্তর: খ. প্রহসন
২৩. মধুসূদন দত্তের নামের প্রথমে ‘মাইকেল’ শব্দটি কত সালে যুক্ত হয়?
ক. ১৮৪৩ খ. ১৮৪৪
গ. ১৮৪৫ ঘ. ১৮৪৬
উত্তর: ক. ১৮৪৩
[ব্যাখ্যা: পাঠ্য বইয়ে ভুলক্রমে ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত কবি ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখে ধর্মান্তরিত হয়ে নামের সঙ্গে ‘মাইকেল‘ শব্দটি যোগ করেন। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত: সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান‘, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা–৩৯৩। মধুসূদন রচনাবলী; পৃষ্ঠা–তেরো।]
২৪. চতুর্দশপদী কবিতায় প্রচলিত অষ্টকের অন্ত্যমিল হচ্ছে–
i. কখখগ কখখগ
ii. কখগক কখগক
iii. কখখক কখখক।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. i ও iii
২৫. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতায় কবি ‘বঙ্গজ জন‘ বলতে কাকে বুঝিয়েছেন?
ক কপোতাক্ষ নদকে খ. বঙ্গদেশের জনগণকে
গ. প্রবাসী বাঙালিকে ঘ. বাংলা সাহিত্যকে
উত্তর: খ. বঙ্গদেশের জনগণকে
২৬. প্রথম বাংলা আধুনিক নাটক রচনার কৃতিত্ব কার?
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ. প্যারীচাঁদ মিত্র
গ. দীনবন্ধু মিত্র ঘ. তারাচাঁদ শিকদার
উত্তর: ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ২৭ ও ২৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
পৌষের কাছাকাছি
রোদমাখা সেইদিন
ফিরে আর আসবে কি কখনো?
২৭. ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতা কোন বিষয়টি উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে?
ক. আত্মনিবেদন খ. স্মৃতিকাতরতা
গ. দেশপ্রেম ঘ. প্রকৃতিপ্রেম
উত্তর: খ. স্মৃতিকাতরতা
২৮. উদ্দীপকের মূলবক্তব্য নিচের কোন চরণে ফুটে উঠেছে?
ক. সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে
খ. আর কি হে হবে দেখা?- যত দিন যাবে
গ. লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে
ঘ. জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে
উত্তর: খ. আর কি হে হবে দেখা?- যত দিন যাবে
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ২৯ ও ৩০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো-
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো।
২৯. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ‘ কবিতার কবির কোন মানসিকতা ব্যক্ত হয়েহে
ক. স্মৃতিকাতরতা খ. দেশে ফেরার আকুলতা
গ. স্বদেশপ্রেম ঘ. প্রকৃতিপ্রেম
উত্তর: গ. স্বদেশপ্রেম
৩০. উক্ত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে-
i. সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!
ii. কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
iii. আর কি হে হবে দেখা?
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১ : ছোটকালে ছিলাম বাঙালিদের বালুচরে, সাঁতরায়ে নদী পাড়ি দিতাম বার বার এপার হতে ওপারে, ডিভি লটারি সুযোগ করে দিলে ছুটে চলে যাই আমেরিকায় কিন্তু আজ মন শুধু ছটফটায় আর শয়নে স্বপনে বাড়ি দিয়ে যায়, মধুময় স্মৃতিগুলো আমাকে কাঁদায়, তবু দেশে আর নাহি ফেরা হয়।
ক. সনেটের ষষ্টকে কী থাকে?
খ. ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত অনুভূতি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার আলোকে তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত অনুভূতির অন্তরালে যে ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে তা-ই ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাব– কথাটির সত্যতা বিচার করো।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. সনেটের ষটকে ভাবের পরিণতি থাকে।
[দ্রষ্টব্য: পাঠ্য বইয়ে ভুলক্রমে ‘ষটক’ শব্দটিকে ‘ষষ্টক’ লেখা হয়েছে। ইংরেজি ‘sestet’-এর পরিভাষা ‘ষটক’ শব্দটি প্রত্যয়ের মাধ্যমে গঠিত এবং এর ব্যুৎপত্তি– ষষ্+ক। ষষ্। চলিত বাংলায় ‘ষট্ ‘-এ রূপান্তরিত হয়। তাই ‘ষটক‘-এর উচ্চারণ শট্কো বা শটোক্। ‘অষ্ট’ থেকে যেমন ‘অষ্টক’-এর উৎপত্তি তেমনি ‘ষট্ ‘ থেকে ষটক।]
খ. জন্মভূমির যে নদ কবিকে স্নেহভোরে বেঁধে রেখেছিল, প্রবাসজীবনে সেই নদের সৌন্দর্যে কবির তৃষ্ণা নিবারণের আকাঙ্ক্ষাকেই ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলে বোঝানো হয়েছে। শৈশবে কবি কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন, এই নদের বয়ে চলা কুলকুল ধ্বনিতে তিনি সৌন্দর্যের তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন। এই নদই কবিকে মাতৃভূমির সাথে অকৃত্রিম এক বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। কবি ফ্রান্সে বসবাসরত অবস্থায় অনেক নদ-নদীর সান্নিধ্যে এলেও শৈশবের নদকে ভুলতে পারেননি। এই কপোতাক্ষের জল-হাওয়ায় মনের তৃষ্ণা নিবারণের আকাঙ্ক্ষাকেই কবি ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় প্রবাসজীবনে কবির দেশপ্রেমের যে অনুভূতি রূপায়িত হয়েছে উদ্দীপকেও সেই অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার আবরণে কবির অত্যুজ্জ্বল দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। কবি তাঁর প্রবাসজীবনেও শৈশব স্মৃতিবিজড়িত | কপোতাক্ষ নদের কথা ভুলতে পারেন না। আলোচ্য কবিতায় কপোতাক্ষ নদের প্রতি কাতরতা প্রকাশের মাধ্যমে কবির স্বদেশপ্রীতি ও গভীর ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রবাসজীবনে জন্মভূমির প্রতি স্মৃতিকাতরতা ও স্বদেশপ্রীতি প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাংশের কথক ডিভি লটারি পেয়ে উন্নত জীবনযাপনের জন্য আমেরিকা চলে যান। প্রবাসজীবনে স্বদেশের মধুময় স্মৃতিগুলো আবেগতাড়িত করলেও দেশে ফিরে আসা সম্ভব হয়ে ওঠে না তার পক্ষে। উদ্দীপকের এ আক্ষেপ পাঠ্য কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে।
‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রবাসজীবনে মাতৃভূমির সাথে আর দেখা সম্ভব হবে কি না সেই সংশয় প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং উদ্দীপক ও পাঠ্য কবিতায় একই রকমের অনুভূতি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তার স্মৃতিকাতরতার অনুভূতির অন্তরালে জন্মভূমিপ্রীতির সে ভাবটি প্রতিফলিত হয়েছে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাবেও সেই বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
স্মৃতিকাতরতার অন্তরালে কবির গভীর দেশপ্রেমই ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে। জন্মভূমির প্রকৃতি ও কপোতাক্ষ নদ কবিমনে চিরন্তন | যে প্রভাব ফেলেছে, যার স্মৃতি কবিমনকে প্রবাসজীবনে ব্যথিত করে রেখেছে তার মূলে রয়েছে দেশপ্রেম।
উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তা প্রবাসজীবনে জন্মভূমিতে কাটানো মধুর দিনগুলোর স্মৃতিতে কাতর। এই অনুভূতির অন্তরালেও রয়েছে দেশাত্মবোধ | চেতনা উন্নত জীবনযাপনের জন্য বা ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যাশায় অনেকেই দেশ ত্যাগ করে। দেশ ত্যাগ করলেও মানুষের মনে সহজাত যে দেশাত্মবোধ চেতনা থাকে তা বিলুপ্ত না হয়ে আরও বিকশিত হয়। দেশের বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জন্মভূমিকে নিয়ে স্মৃতিকাতরতা ও জন্মভূমিতে না যেতে পারার আক্ষেপ ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকে না। উদ্দীপকে জন্মভূমির স্মৃতিকাতরতার আড়ালে দেশাত্মবোধই প্রকাশ পেয়েছে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাতেও মাইকেল মধুসূদন দত্ত কপোতাক্ষ নদকে ঘিরে যেভাবে স্মৃতিতাড়িত হয়েছেন তার অন্তরালেও রয়েছে কবিমনের দুর্বার দেশপ্রেম।
তাই যৌক্তিকভাবেই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রতিফলিত অনুভূতির অন্তরালে যে ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে তা-ই ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মূলভাব- কথাটি পুরোপুরি সত্য।
প্রশ্ন-২: “মনে পড়ে সেই সুপুরি গাছের সারি
তার পাশে মৃদু জ্যোৎস্না মাখানো গ্রাম
মাটির দেয়ালে গাঁথা আমাদের বাড়ি
ছোট ছোট সুখে স্নিগ্ধ মনস্কাম।
পড়শি নদীটি ধনুকের মতো বাঁকা।
উরু ডোবা জলে সারাদিন খুনসুটি।”
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি কোনটি?
খ. ‘ভ্রান্তির ছলনে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের ভাবের সাথে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যে দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপক এবং ‘কপোতাক্ষ নদ’ রচনার পেছনে একই চেতনা কাজ করেছে”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তি ‘মেঘনাদবধ কাব্য‘।
খ. অবচেতন মনে হঠাৎ কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি উপলদ্ধি করাকেই কবি ভ্রান্তির ছলনে বলেছেন। কবিচৈতন্যে কপোতাক্ষ নদের কলধ্বনি সদাজাগ্রত; তাই রাতে যখন তিনি নিদ্রাযাপন করেন তখনো এ নদের স্রোতপ্রবাহজাত শব্দ তার স্বপ্নে এসে হাজির হয়। কবি উপলব্ধি করেন এ তার মানসিক ভ্রান্তিরই নামান্তর; তবুও তিনি এই ভ্রান্তিতেই আবৃত থাকতে চান। কারণ এ ভ্রান্তিই কবির কানকে এক সুখানুভূতি প্রদান করে।
গ. নিজভূমির প্রতি স্মৃতিচারণাগত ভাব থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে। স্বদেশ থেকে বহুদূরে অবস্থান করেও কবি স্বদেশের সঙ্গে একীভূত হয়ে আছেন শৈশবের কপোতাক্ষের মধ্য দিয়ে। এ নদ কবিকে অনন্য ভালোবাসায় সিক্ত করেছে শৈশবে; কিন্তু পরিণত বয়সেও কবি সে ভালোবাসা প্রত্যাশী। তাই তিনি কপোতাক্ষের স্নেহধারায় মিশে ফিরে আসতে চান। তাঁরই জন্মভূমিতে। নিজভূমির প্রতি কবির এ ভালোবাসাবোধ তার স্মৃতিমথিত হয়েই উগত হয়েছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশে স্মৃতিমথিত হয়ে ভেসে এসেছে গ্রামের কথা। সুপুরি গাছের ছায়ায় মৃদু জ্যোৎস্র সজ্জিত হয়ে সে গ্রাম যেন স্নিগ্ধ সুখের প্রতিচ্ছবি সৃষ্টি করেছে। মাটির দেয়ালের বাড়ি এবং ধনুকের মতো বাঁকা নদীটির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে বিগত দিনের নানা স্মৃতি। তবে নিজভূমির এ সবই একাৰ্থে কাল্পনিক; কারণ তার সবটাই স্মৃতিসঞ্জাত।
তাই বলব, নিজভূমির প্রতি স্মৃতিচারণাগত ভাব থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. আমি মনে করি উদ্দীপক ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা রচনার পেছনে যথাযথভাবে একই চেতনা কাজ করেনি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্যাতিমাহে আচ্ছন্ন হয়ে প্রবাসী হলেও জন্মভূমি থেকে বিছিন্ন হননি। তাঁর স্মৃতিসঞ্জাত কপোতাক্ষ নদ সে সত্যকেই বহন করে।
শৈশবের খেলার ছলে মনের মধ্যে কবি এ নদ সম্পর্কে যে ধারণা যত্ন করেছেন তা প্রকৃতপক্ষে তার বৃহদায়তনের দেশপ্রেম। তাই বেদনার্ত কণ্ঠে তিনি বঙ্গবাসীর সান্নিধ্যপ্রত্যাশী হয়েছেন। উদ্দীপকে মধুসূদনের স্মৃতিকাতরতার অনুকরণে গ্রামের কথা উঠে এসেছে। সুপুরি গাছের সারির পাশে মাটির দেয়ালের গ্রাম এক গভীর স্নিগ্ধতা সৃষ্টি করেছে। পাশের ছোট নদীটি মনে করিয়ে দিয়েছে বহুবিগত দিনের রঙিন স্মৃতিকে।
তবে এ সবই এককেন্দ্রিক হৃদয়ভাষ্য; অর্থাৎ এখানে বৃহদার্থে দেশপ্রেমের কোনো নিদর্শন আমাদের চোখে পড়ে না। তাই বলব, ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি কবি জন্মভূমির প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। এখানে তার শৈশব থেকে পরিণত বয়সের সমস্ত স্মৃতি উদগত হয়েছে। তাই সাধারণ স্মৃতিকাতরতার কবিতা এটি নয়।
অপরদিকে উদ্দীপকে দেশপ্রেমের কোনো স্মারক আমরা দেখি না তবে স্মৃতিকাতরতা সেখানেও উপজীব্য হয়েছে। তাই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে উদ্দীপক ও ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা রচনার পেছনে যথাযথভাবে একই চেতনা কাজ করেনি।
প্রশ্ন–৩ : ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে– এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়– হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে; হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল–ছায়ায়।‘
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
খ. ‘কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে’- চরণে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার যে দিক প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পেয়েছে কি? তোমার যুক্তিনির্ভর মতামত দাও।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
খ. উদ্ধৃত চরণের মাধ্যমে কবি কপোতাক্ষ নদের প্রতি তার মাতৃপ্রতিম মেহাভিলাষ ও দেশপ্রেমকে বুঝিয়েছেন। কবি দেশ ত্যাগ করে প্রবাসে থেকেছেন দীর্ঘসময়। সেখানে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণে তিনি অনেক নদ-নদীর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই কবির অন্তরের তৃষ্ণা মেটাতে সমর্থ হয়নি। কারণ একমাত্র কপোতাক্ষকে তিনি মাতৃরূপে বন্দনা করেন যা তাঁর দেশপ্রেমেরও স্মারক। এ কারণে এ নদের সেহরূপ বারিধারাই কেবল তার তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে।
গ. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় উল্লিখিত মাতৃভূমির কাছে ফিরে আসার আকুল বাসনাই ব্যক্ত হয়েছে। কবির আনন্দঘন শৈশব কেটেছে কপোতাক্ষ নদের স্নেহম্পর্শে; যাকে পরবর্তী জীবনেও তিনি অন্তর-আত্মা থেকে উপলব্ধি করেছেন। এ কারণে বিদেশমোহ ঝরে পড়তেই কপোতাক্ষ প্রাণ ফিরে পেয়েছে কবিচৈতন্যে। কিন্তু তিনি তখনো প্রিয় নদ থেকে অনেক দূরে; অথচ উপলব্ধিতে থেকে গেছেন কপোতাক্ষের স্নেহরসে। তাই স্মরণে কপোতাক্ষের জলধারার মধ্য দিয়েই কবি মাতৃভূমির কাছে ফিরে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকের কবিতাংশে বাংলার মাটিতে আমৃত্যু বিচরণ করতে চেয়েছেন কবি। তাই মানবজন্ম শেষ হলেও শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে বিচরণে আগ্রহী তিনি। অর্থাৎ মৃত্যুর পরও পুনর্জন্মে কবি এদেশে তার অস্তিত্বকে জানান দিতে চান। দেশের প্রতি সত্যিকার অর্থেই এমন ভালোবাসার স্বাক্ষর বিরল; কবি মধুসূদনও তা থেকে বিচ্ছিন্ন নন।
তাই বলব, উদ্দীপকে কবিতায় উল্লিখিত মাতৃভূমির কাছে ফিরে আসার আকুল বাসনাই ব্যক্ত হয়েছে।
ঘ. আমি মনে করি উদ্দীপকে কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত সত্যিকার হৃদয়াবেগ দিয়ে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি সৃষ্টি করেছেন। বিচ্ছেদ ও বেদনা এ কবিতাকে আচ্ছন্ন করলেও এখানে দেশের প্রতি কবির আকুতি প্রদর্শন স্বচ্ছ ও স্পষ্ট। সে কারণে কবিহৃদয় দুঃখভারাক্রান্ত হয়েও স্বদেশের কাছে নিজেকে উজাড় করে নিবেদন করেছেন। তাই প্রবাসজীবনও তার আত্মাকে কপোতাক্ষ তথা বঙ্গভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।
উদ্দীপকের কবিতাংশেও মধুসূদনের আত্মার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সেখানে কুয়াশার বুকে ভেসে কবি এদেশে স্বরূপে ফেরার প্রত্যাশা করেন। তিনি বাংলার আকাশের সামান্য কোনো জীব হয়ে এদেশে ফিরে আসার প্রত্যাশা রাখেন। মাতৃভূমির প্রতি অনন্য ভালোবাসাই কবিকে এই বোধে। উৎসাহিত করেছে।
তাই বলব, উদ্দীপকে একমাত্রিকভাবে কবি এদেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন। মধুসূদনের মতো স্নেহের সম্পর্ককে তিনি এ অংশে তুলে ধরেননি। অর্থাৎ মধুসূদনের ভালোবাসার প্রকাশ এখানে অনেক বেশি বৃহদায়তনকে তুলে ধরে।
তাই আমি মনে করি উদ্দীপকে কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশ পায়নি।
প্রশ্ন–৪ : কবি আল মাহমুদের প্রিয় নদী তিতাস। এ নদী কবির শৈশবের নদী। নদীর বিক্ষুব্ধ তরঙ্গমালা কবিমনকে উদাস করেছিল। নির্মল বাতাস, নদী শুভ্র তনুশ্রী জয় করে নিয়েছে কবির মন। তাই তো কবি বলেছেন ‘নীরব তৃপ্তির জন্য আনমনে বসে থেকে ঘাসে নির্মল বাতাস টেনে বহুক্ষণে ভরেছি এ বুক।‘ কর্মজীবনে নানা স্থানে তিনি ঘুরেছেন কিন্তু শৈশবের প্রিয় এ নদী স্মৃতিতে জাগরুক।
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তির নাম কী?
খ. ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার কোন দিকটি অনুপস্থিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “কবি আল মাহমুদের অনুভূতি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষটকের ভাবে ফুটে উঠেছে”– বিশ্লেষণ করো।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর কীর্তির নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য‘।
খ. ‘বঙ্গের সংগীত’ বলতে কবি বঙ্গদেশ তথা জন্মভূমির কবিতা ও গানকে বুঝিয়েছেন। প্রবাসজীবনে শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা ভেবে কবি স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। এ নদকে একনজর দেখার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। সংশয় প্রকাশ করেন এই বলে যে আর কি তার সঙ্গে কপোতাক্ষ নদের দেখা হবে? যদি তা নাও হয় তবে তার আকুল মিনতি, বঙ্গবাসী। যেন ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মাধ্যমে বঙ্গভাষায় রচিত কবিতা ও গানে তাঁকে স্মরণ করে।
গ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় প্রতিফলিত কবির স্মৃতিকাতরতার দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। সুদূর প্রবাসে বসে কবি যখন নিজ জন্মভূমির কথা স্মরণ করেছেন তখনই তার মনে হয়েছে শৈশবের কপোতাক্ষ নদের কথা। এ নদ কবির জীবনের বিশেষ এক সময়কে ধারণ করে আছে। মাতৃভূমির কথা মনে করে কবি এ নদকেই বলেছেন তার আত্মকাতরোক্তির কথা। এই বিষয় কখনো এসেছে দুঃখময় স্মৃতি বর্ণনায় আবার কখনো এসেছে সংশয়ের শব্দে রূপ পেয়ে। উদ্দীপকের কবিতাংশে কাব্যিক মূর্ধনায় আত্মতৃপ্তি অর্জন করেছেন কবি আল মাহমুদ। তিতাস তাঁর প্রিয় নদী যা তাকে শৈশবে পৌঁছে দেয়-এ নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবিকে ভাবুক ও নির্মল করে। কবিমন অফুরন্ত আনন্দের উৎস পায় এ নদীর কাছ থেকে।
তবে এখানে কবি স্মৃতিকাতর হয়ে তার আক্ষেপের কথা জানাননি; বরং আনন্দকেই উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছেন। সুতরাং ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার যে বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
ঘ. কবি আল মাহমুদের অনুভূতি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষটকের ভাবে ফুটে উঠেছে- মন্তব্যটি যথার্থ। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় সনেটের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। সে পদ্ধতিতেই তিনি দ্বিতীয় স্তবকে (প্রথম স্তবক অষ্টক ও দ্বিতীয় স্তবক ষটক) কপোতাক্ষ নদ সম্পর্কে তার আত্মভাবনার কথা ব্যক্ত করেছেন। প্রথম স্তবকে কবি যে ভাবের প্রবর্তনা করেছেন, দ্বিতীয় স্তবকে তা সম্পন্ন করেছেন।
উদ্দীপকে কবি আল মাহমুদ মধুসূদন দত্তের মতোই তার শৈশবের নদীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। এ নদী কবিকে যেমন উদাস করেছে তেমনি আবার তাঁকে নির্মল প্রশান্তিও প্রদান করেছে। অর্থাৎ আমরা ধরেই নিতে পারি উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তার শৈশবের ভাবের একটি পরিণতি প্রদান করেছেন। উপযুক্ত আলোচনা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সনেটের আঙ্গিকে মধুসূদন দত্ত যে ভাবের পরিণতি প্রদান করেছেন কপােতাক্ষ নদ’ কবিতায়; ঠিক একই রকম ভাবের পরিণতি রয়েছে উদ্দীপকে কবি আল মাহমুদের অভিব্যক্তিতে।
অতএব, কবি আল মাহমুদের তিতাসকেন্দ্রিক অনুভূতি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ষটকের ভাবে ফুটে উঠেছে।
প্রশ্ন–৫ : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কর্মজীবন বহু জায়গায় কাটিয়ে মধ্যবয়সে কয়েক দিনের জন্য গিয়েছিলেন ছেলেবেলার স্মৃতিময় ইছামতী নদীর তীরের নিজ গ্রামে। সেখানেই তিনি আবার নতুন করে দেখেছিলেন ইছামতী নদীকে; নিজের গ্রাম আর প্রকৃতিকে। গ্রামের অজস্র পাখি, গাছপালা, নীল, আকাশ, রাতের জোছনা ও ইছামতী নদীর অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে অভিভূত লেখকের মনে হয়েছিল এসব বুঝি কেবল তার জন্যই সৃষ্টি করেছেন ঈশ্বর।
ক. কীসের ছলনায় কবি কান জুড়ান?
খ. ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় ফুটে উঠেছে? বর্ণনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের তুলনায় ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার চেতনা আরও গভীর”- আলোচনা করো।
৫নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ভ্রান্তির ছলনায় কবি কান জুড়ান।
খ. কবির কাছে জন্মভূমি মায়ের মতো বলে কপোতাক্ষের জলকে তিনি ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলেছেন। মা যেমন তার সন্তানকে নিবিড় মমতায় বুকের দুধ পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি কপোতাক্ষের তীরে বেড়ে ওঠা কবি এ নদের স্মৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অপার মমতায় লব্ধ এ নদের জল ছাড়া তৃষ্ণা মেটে না তার। তাই কবি কপোতাক্ষের জলকে ‘দুগ্ধ-স্রোতোরূপী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গ. উদ্দীপকের যে বিষয়টি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় ফুটে উঠেছে তা হলো জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা। জন্মভূমির প্রতি মানুষের ভালোবাসা সহজাত। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ্যাতির লোভে জন্মভূমিকে ছাড়লেও জন্মভূমি তাঁকে ছাড়েনি। বিদেশবিভূঁইয়েও তার মনে জন্মভূমি ছিল চিরজাগরূক। তারই সার্থক রূপায়ণ দেখা যায় ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়। এ কবিতায় নানা ব্যঞ্জনায় কবি মূলত তার জন্মভূমির প্রশংসাগীত গেয়েছেন। স্মৃতিময় জন্মভূমি বারবার আকর্ষণ করেছে তাকে।
উদ্দীপকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুদিন বাইরে কাটানোনার কথা বর্ণিত হয়েছে। তবে তার ছেলেবেলার স্মৃতিময় গ্রাম ও গ্রাম্য প্রকৃতি তাকে বার বার কাছে ডেকেছে। পুনরায় গ্রামে এসে তাই তার মনে হয়েছে, এসব বুঝি ঈশ্বর কেবল তার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। জন্মভূমির প্রতি এই যে ভালোবাসা, তা ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও দেখা যায়। আর তাই কবি মাতৃভূমিকে ছেড়ে আসলেও প্রতিনিয়ত তার মনে জন্মভূমি দোলা দিয়ে যায়। তিনি কিছুতেই ভুলতে পারেন না তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম ও গ্রামের প্রকৃতি অর্থাৎ তার জন্মভূমিকে।
এভাবে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় উদ্দীপকে প্রকাশিত জন্মভূমির প্রতি লেখকের গভীর মমত্ববোধ ও স্মৃতিকাতরতার দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. “গভীর আবেগের প্রকাশে উদ্দীপকের তুলনায় ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার চেতনা গভীর”- কথাটি যুক্তিসংগত বলেই আমি মনে করি। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় স্মৃতিকাতরতার অন্তরালে মূলত জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর আবেগ, মমত্ববোধ ও ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে।
কবি খ্যাতির লোভে জন্মভূমি ছাড়লেও মন থেকে ক্ষণকালের জন্যও তাকে ভুলে যেতে পারেননি। এজন্য তিনি সবসময় তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা, তার জন্মভূমি বাংলাদেশ ও তার স্বজন বাঙালির কথা ভেবেছেন। জন্মভূমির সাথে মৃত্যুর পূর্বে আবার দেখা হবে কি না এমন আকুতি ফুটে উঠেছে এ কবিতায়।
উদ্দীপকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত গ্রাম ও গ্রাম্য প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার কথা ফুটে উঠেছে। তিনি নানা কাজে জীবনের অধিকাংশ সময় বাইরে বাইরে কাটালেও জন্মভূমির মাটিতে ফিরে এসে প্রশান্তি পেয়েছেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কপোতাক্ষ নদ কবিতার কবি দুজনই তাদের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে অনন্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
তবে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় যে গভীর আবেগ প্রকাশিত হয়েছে তা এককথায় অনবদ্য। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপােতাক্ষ নদের সাথে কবির কথােপকথনের মধ্য দিয়ে জন্মভূমির প্রতি তার গভীর ভালােবাসা স্বরূপ প্রকাশিত হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে কবি খ্যাতির লোভে জন্মভূমিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তিনিই আবার বিদেশের মাটিতে বসে ভাবিত হয়েছেন স্বদেশ ও স্বজাতির জন্য। জন্মভূমিতে ফেরার আকুতি, স্বজাতির সাথে তার আত্মিক সম্পর্কের কথা জানাতে চাওয়ার মাঝে যে আবেগ লুকিয়ে আছে, তা উদ্দীপকের তুলনায় অনেক বেশি গভীরে প্রোথিত।
তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
প্রশ্ন–৬ :

ক. সনেটের প্রতি চরণে কতটি মাত্রা থাকে?
খ. সনেটের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
গ. উদ্দীপকে সনেট-এর যে গড়ন উল্লিখিত হয়েছে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা তুলে ধরো।
ঘ. সনেট-এর এই গড়নসৌষ্ঠব ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার বিষয়-উপস্থাপনে কতটুকু যথার্থ? বিচার-বিশ্লেষণ করো।
৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. সনেটের প্রতি চরণে চৌদ্দটি মাত্রা থাকে।
খ. সনেট হচ্ছে চৌদ্দ চরণের অষ্টক ও ষটক দ্বারা নির্মিত কবিতা। ‘সনেট’ বা ‘চতুর্দশপদী’ কবিতায় চরণসংখ্যা চৌদ্দটি। এ ধরনের কবিতার প্রধান ভাগ দুটো হলো স্তবক বিন্যাস এবং বিষয়বস্তু। মূল ভাগের আবার দুটো করে উপভাগ বা বিভাজন রয়েছে। সনেটের প্রথম আট চরণকে অষ্টক এবং শেষের ছয় চরণকে ষটক বলা হয়। প্রথম আট চরণে থাকে ভাবের প্রবর্তনা এবং শেষের ছয় চরণে থাকে ভাবের পরিণতি। অষ্টক এবং ষটকের সমন্বয়ে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণভাবে ফুটে উঠতে হয়। নতুবা তা সনেট হিসেবে সফল হয় না।
গ. মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ একটি দেশপ্রেমমূলক সার্থক সনেট কবিতা। ‘কপোতাক্ষ নদ’কে সনেট কবিতা বলা যায়। কবিতাটির বিষয়বস্তুতে কবির প্রবাসজীবনে স্বদেশের জন্য বেদনাদগ্ধ আত্মার করুণ আর্তনাদ ধ্বনিত হয়েছে। কবিহৃদয়ের এ অখণ্ড ভাবটি কবিতার স্তবক বিন্যাসের প্রথম আট চরণে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
কবিতার দ্বিতীয়াংশে অর্থাৎ ষটকে কপোতাক্ষ নদকে উপলক্ষ করে জন্মভূমির প্রতি কবিহৃদয়ের আকুলতা যেন উচ্ছ্বসিত আবেগ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মাতৃভূমির প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণে তার হৃদয় হতে ব্যক্ত হয়েছে অনুরাগের আবেগ। চতুর্দশপদী কবিতার মতো ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় চৌদ্দটি চরণ আছে। প্রতি চরণে আছে চৌদ্দ মাত্রা। কবিতাটিতে সনেটের রীতি অনুসারে অন্ত্যমিল রক্ষা করা হয়েছে। যেমন- কখকখকখখক, গঘগঘগঘ। কবিতাটিতে কবি পরিমিত পরিসরে একটি ক্ষুদ্র ভাবকে অখণ্ড ব্যঞ্জনা দান করেছেন। তাই উদ্দীপকে সনেট-এর যে গড়ন উল্লিখিত হয়েছে তার বিচারে ‘কপোতাক্ষ নদ’ নিঃসন্দেহে একটি সার্থক সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা ।
ঘ. মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি বাংলা ভাষায় রচিত একটি অসাধারণ সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। উদ্দীপকের সনেটএর গড়নসৌষ্ঠবকে ধারণ করে কবিতাটি অর্জন করে সার্থক সনেটের মর্যাদা। কবিহৃদয়ের একটিমাত্র অখণ্ড ভাব বা অনুভূতি একটি বিশেষ পদ্ধতিতে চৌদ্দটি অক্ষরের সমন্বয়ে চৌদ্দ চরণ দ্বারা যখন রচিত হয় তখন তাকে সনেট বলে। বাংলা ভাষায় সনেটের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি চৌদ্দ পঙক্তিতে বিন্যস্ত একটি সার্থক সনেট। প্রতি পঙক্তিতে চৌদ্দটি করে মাত্রা রয়েছে। সে হিসেবে এটি একটি সার্থক সনেট। আবার চৌদ্দ লাইনের সনেটের প্রথম আট লাইন অষ্টক এবং শেষের ছয় লাইন ষটক। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটিতে এ বিভাজনও বজায় রয়েছে। সনেটে একটিমাত্র আবেগ প্রকাশিত হয়। আলোচ্য কবিতাটিতেও একটি আবেগ পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটিতে কবির প্রবাসজীবনে স্বদেশের জন্য বেদনাদগ্ধ আত্মার করুণ আকুতি ধ্বনিত হয়েছে। কবিহৃদয়ের এ অখণ্ড ভাবটি কবিতার প্রথম আট চরণে চমৎকারভাবে প্রতিফলিত।
আবার কবিতার দ্বিতীয় অংশে অর্থাৎ ষটকে কপোতাক্ষ নদকে কেন্দ্র করে জন্মভূমির প্রতি কবিহৃদয়ের আকুলতা উচ্ছ্বসিত আবেগ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সনেটের গড়নসৌষ্ঠবকে ভিত্তি করে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় একটি নির্দিষ্ট বিষয় সার্থকভাবেই প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। তাই বলা যায় সনেটএর উক্ত গড়নসৌষ্ঠব বিষয় উপস্থাপনে যথার্থ।
প্রশ্ন–৭ : ‘তিতাস’ একটি নদীর নাম। তার কূলজোড়া জল, বুক ভরা ঢেউ, প্রাণ ভরা উচ্ছ্বাস। স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়। ভোরের তন্দ্রায় তার তন্দ্রা ভাঙে, দিনের সূর্য তাকে তাতায়, রাতের চাঁদ ও তারারা তাকে নিয়া ঘুম পাড়াইতে বসে, কিন্তু পারে না।
[তথ্যসূত্র: ‘তিতাস‘ একটি নদীর নাম– অদ্বৈত মল্লবর্মণ ]
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির মিল বিন্যাস কেমন?
খ. ‘এ মিনতি গাবে, বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখারীতে নাম তার’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার সঙ্গে উদ্দীপকের মিল ও অমিল দেখাও।
ঘ. ‘নদীমাতৃক বাংলায় নদী মানুষের প্রাণের সখা।’—‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির সত্যাসত্য বিচার করো।
৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটির মিলবিন্যাস- কখকখ কখ খক গঘ গঘ গঘ।
খ. উল্লিখিত চরণটি দ্বারা কবি বোঝাতে চেয়েছেন কপোতাক্ষ নদ যেন স্বদেশের জন্য কবির হৃদয়ের কাতরতা বঙ্গবাসীর নিকট ব্যক্ত করে। কবি কপোতাক্ষ নদকে তার সখা হিসেবে অভিহিত করেছেন। প্রিয় সখার কাছে কবির একটিই মিনতি। আর তা হলো—যখন ‘কপোতাক্ষ নদ বঙ্গবাসীর পাশ দিয়ে বয়ে যাবে, তখন যেন সে মাতৃভূমির প্রতি কবি হৃদয়ের আকুলতার কথা বঙ্গবাসীকে শুনিয়ে যায়।’ উল্লিখিত চরণটি দ্বারা কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
গ. স্মৃতি বিজড়িত নদীর প্রতি মুগ্ধতা ও ভালোবাসা প্রকাশের দিক থেকে ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা এবং উদ্দীপকের মিল ও অমিল দুই-ই রয়েছে। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও আলোচ্য উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রে নদীকে জীবন্ত সত্তারূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বড় প্রিয়। এ নদের সঙ্গে তাঁর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে তিনি একে সখা বলে সম্বোধন করেছেন।
একইভাবে উদ্দীপকের অদ্বৈত মল্লবর্মণও তিতাস নদীকে জীবন্ত সত্তারূপে উপস্থাপন করেছেন। তিতাস নদীর বর্ণনা উদ্দীপকের মুখ্য বিষয়। দিনের নানা সময় তিতাস নদীর কেমন পরিবর্তন ঘটে উদ্দীপকে লেখক তা শৈল্পিকভাবে বর্ণনা করেছেন। এর বিপরীতে আলোচ্য কবিতায় কবি কপোতাক্ষের সীমিত বর্ণনা করে এর জন্য কবির স্মৃতিকাতরতা ও ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। এ কবিতায় প্রবাসে বসবাসরত কবির দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে কপোতাক্ষ নদ।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে তিতাস নদীর অনুপম বর্ণনার মধ্য দিয়ে কবি মূলত তিতাসের প্রতি তার হৃদয়ানুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা কবিতাটির সাথে উদ্দীপকের মিল নির্দেশ করে।
ঘ. ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উল্লিখিত উদ্দীপকের আলোকে ‘নদীমাতৃক বাংলায় নদী মানুষের প্রাণের সখা।’—মন্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে সত্য। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার কবিতায় কপোতাক্ষ নদকে তার সখা হিসেবে অভিহিত করেছেন। কবি মনে করেন, কোনো নদীই তাকে কপোতাক্ষ নদের মতো এতটা মোহিত করেনি। তাই কবি সবসময় ভাবেন তার ফেলে আসা স্মৃতিবিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কথা। প্রিয় বন্ধুর মতোই কপোতাক্ষ নদ তার শৈশবের সমস্ত স্মৃতিকে ধারণ করে আছে।
উদ্দীপকে যদিও তিতাস নদীকে লেখক সরাসরি সখা বলেননি, তবুও তার বর্ণনা থেকে আমরা অনুভব করি তিতাস নদীর প্রতি লেখকের আন্তরিকতাকে। লেখকের বর্ণনায় তিতাস পেয়েছে প্রাণসত্তা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তিতাসের রূপের পরিবর্তনের যে বর্ণনা উদ্দীপকটিতে দেওয়া হয়েছে-তা থেকে বোঝা যায় লেখক প্রকৃতপক্ষে এ নদীকে প্রাণের সখারূপেই দেখেন।
আলোচ্য উদ্দীপকের এ দিকটি ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায়ও লক্ষিত হয়। ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতার মধুসূদন দত্ত ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ উভয়ই নদীকে দেখেছেন বন্ধুরূপে। উভয়ই নদীমাতৃক বাংলার অধিবাসী। স্বভাবতই নদীর সঙ্গে উভয়েরই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। বস্তুত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা নদীগুলোই এদেশের প্রাণ। নদীর অবদানেই এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা হয়েছে সহজতর।
আলোচ্য ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উল্লিখিত উদ্দীপকে সেই বন্ধুত্বের পরিচয়ই বিবৃত হয়েছে। এ বিবেচনায় ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে ‘নদীমাতৃক বাংলায় নদী মানুষের প্রাণের সখা।’—মন্তব্যটি যথার্থ।