বিজ্ঞান
তৃতীয় অধ্যায়
হৃদযন্ত্রের যত কথা
ALL ABOUT THE HEART
ভূমিকা : মানুষ ও অন্যান্য উচ্চশ্রেণির প্রাণীদের দেহে যেসব তন্ত্র আছে তার মধ্যে রক্ত সংবহনতন্ত্র উল্লেখযোগ্য। এই তন্ত্রের মাধ্যমে দেহের যাবতীয় বিপাকীয় কাজের রসদ পরিবাহিত হয়। রক্ত সংবহনতন্ত্র রক্ত, হৃৎপিণ্ড ও রক্তবাহিকা নিয়ে গঠিত। হৃৎপিণ্ড পেশি নির্মিত প্রকোষ্ঠযুক্ত পাম্পের মতো অঙ্গ। এর সংকোচন ও প্রসারণের ফলে সারা দেহে রক্ত সংবাহিত হয়। আকার, আকৃতি ও কাজের ভিত্তিতে রক্তবাহিকা তিন রকম; যথা- ধমনি, শিরা ও কৈশিক জালিকা। রক্তকে রক্তবাহিকার ভেতর দিয়ে সঞ্চালনের জন্য হৃৎপিণ্ড মানব ও অন্য সকল প্রাণিদেহে পাম্পযত্রের মতো কাজ করে। ধমনি দিয়ে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সারা দেহে বাহিত হয়। সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে শিরার মাধ্যমে হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে। ধমনি ও শিরার সংযোগস্থল জালিকাকারে বিন্যস্ত হয়ে কৈশিক জালিকা গঠন করে।
- রক্ত (Blood): রক্ত এক ধরনের লাল বর্ণের, অস্বচ্ছ, লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক টিস্যু।
- রক্তরস (Plassma) : রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস বলে। রক্তকে সেন্ট্রিফিউজ করলে উপরে যে হালকা হলুদ বর্ণের উপাদান দেখা যায় তাই রক্তরস। রক্তে প্রায় ৫৫% রক্তরস থাকে।
- রক্তকণিকা : রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো-ছিটানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্তকণিকা বলে। রক্তকণিকা তিন ধরনের। যথা : (i) লোহিত রক্তকণিকা (ii) শ্বেত রক্তকণিকা (iii) অণুচক্রিকা।

রক্তের সাধারণ কাজ :
১. শ্বাসকার্য: রক্ত অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে টিস্যু কোষে এবং টিস্যু কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে ফুসফুসে পরিবহন করে। লোহিত কণিকা ও রক্তরস প্রধানত এ কাজটি করে।
২. হরমোন পরিবহন: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবহন করে।
৩. খাদ্যসার পরিবহন: দেহের সঞ্চয় ভাণ্ডার থেকে এবং পরিপাককৃত খাদ্যসার দেহের টিস্যু কোষগুলোতে বহন করে।
৪. বর্জ্য পরিবহন: নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্য পদার্থগুলোকে কিডনি বা বৃক্কে পরিবহন করে।
৫. উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ: দেহে তাপের বিস্তৃতি ঘটিয়ে দেহের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৬. রোগ প্রতিরোধ: দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল জাতীয় শ্বেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণুকে গ্রাস করে ধ্বংস করে। লিম্ফোসাইট-জাতীয় শ্বেত কণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং বাইরের থেকে জীবাণুর আক্রমণকে প্রতিহত করে।
- থ্যালাসিমিয়া : থ্যালাসিমিয়া একধরনের বংশগত রক্তের রোগ । মানবদেহে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে যে রোগ হয়, তার নাম থ্যালাসিমিয়া।
- সিরাম : রক্ত জমাট বাঁধার পর রক্তের জমাট অংশ থেকে যে হালকা হলুদ বা খড়ের রঙের মতো এক রকম স্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয়, তাকে সিরাম বলে।
- Rh ফ্যাক্টর : Rh ফ্যাক্টর রেসাস (Rhesus) নামক বানরের লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক ধরনের অ্যাগ্লুটিনোজেন। রেসাস বানরের নাম অনুসারে এই অ্যান্টিজেনকে রেসাস ফ্যাক্টর, সংক্ষেপে Rh ফ্যাক্টর বলে।
- হৃৎপিণ্ড : রক্ত সংবহনতন্ত্রের যে অঙ্গটি পাম্পের মতো সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সংবাহিত করে, তাকে হৃৎপিণ্ড বলে।
- ধমনি : যে রক্তনালিকার মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয় তাদের ধমনি বলে ।
- শিরা : যে রক্তনালির মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হৃৎপিণ্ডে বাহিত হয় তাদের শিরা বলে।
- হার্টবিট : হৃৎপিণ্ড স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মতো দেহের ভেতরে সর্বক্ষণ ছন্দের হারে স্পন্দিত হয়ে দেহে রক্ত প্রবাহিত করে। এই স্পন্দনকে হার্ট বিট বলে।
- রক্তচাপ : হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে ধমনি প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে।
- উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন : শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।
- নিম্ন রক্তচাপ : শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার নিচে অবস্থান করে তবে তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে।
- হার্ট অ্যাটাক : হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে পেশির রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।
- কোলেস্টেরল : কোলেস্টেরল হলো এক বিশেষ ধরনের জটিল স্নেহ পদার্থ এবং স্টেরয়েড-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
- লাইপোপ্রোটিন : লাইপোপ্রোটিন হলো এক প্রকার স্নেহ ও প্রোটিন যৌগ।
- ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস এক প্রকার বিপাকজনিত রোগ। মানবদেহের রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেড়ে গিয়ে যে রোগ সৃষ্টি হয় তাকে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র বলে।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১: রক্ত কাকে বলে?
উত্তর: রত হলো প্রাণিদেহের এক ধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক কলা।
প্রশ্ন–২: হিমোগ্লাবিন কী?
উত্তর: রক্তরসে বিদ্যমান লৌহঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থই হলো হিমোগ্লোবিন যার উপস্থিতির কারণে রক্তের রং লাল হয়।
প্রশ্ন–৩: প্লাজমা কী?
উত্তর: প্লাজমা হলো প্রায় ৯০% পানি ও ১০% বিভিন্ন রকমের জৈব ও অজৈব পদার্থ সমৃদ্ধ রক্তের তরল অংশ।
প্রশ্ন-৪: রক্তকণিকা কাকে বলে?
উত্তর: রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্তকণিকা বলে
প্রশ্ন–৫: অ্যানিমিয়া কী?
উত্তর: লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে তাকে অ্যানিমিয়া বলে।
প্রশ্ন–৬: অ্যান্টিজেন কী?
উত্তর: যে বহিরাগত প্রোটিন রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে তাকে অ্যান্টিজেন বলে।
প্রশ্ন–৭: Rh ফ্যাক্টর কী?
উত্তর: Rh ফ্যাক্টর রেসাস নামক বানরের লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক ধরনের অ্যাগ্লুটিনোজেন।
প্রশ্ন–৮. ধমনি কী?
উত্তর: যে রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয় তাই ধমনি।
প্রশ্ন-৯. শিরা কাকে বলে?
উত্তর: যেসব রক্তনালি সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গা থেকে হৃদপিন্ডে বহন করে নিয়ে যায়, তাদের শিরা বলে।
প্রশ্ন–১০. কৈশিক জালিকা কী?
উত্তর: ধমনি ও শিরার সংযোগস্থলে অবস্থিত একস্তর বিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়াম দিয়ে গঠিত যেসব সুক্ষ্ম রক্তনালি জালকের আকারে বিন্যস্ত থাকে সেগুলোই কৈশিক জালিকা।
প্রশ্ন–১১. হার্ট ব্লক কী?
উত্তর: হৃৎপিণ্ডের প্রবাহ উৎপাদন ত্রুটিপূর্ণ হলে বা উৎপন্ন প্রবাহ সঠিক পথে না হলে তাকে হার্ট ব্লক বলা হয়।
প্রশ্ন-১২. LDL ও HDL এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর: LDL এর পূর্ণরূপ হলো- Low Density Lipoprotein এবং HDL এর পূর্ণরূপ হলো-High Density Lipoprotein.
প্রশ্ন–১৩. কোলেস্টেরল কী?
উত্তর: কোলেস্টেরল এক বিশেষ ধরনের জটিল স্নেহ পদার্থ বা লিপিড এবং স্টেরয়েড এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
প্রশ্ন–১৪. ইনসুলিন দেহের কোথায় উৎপন্ন হয়?
উত্তর: ইনসুলিন দেহের প্যানক্রিয়াস এর আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস এর বিটা কোষ থেকে উৎপন্ন হয়।
প্রশ্ন–১৫. ডায়াবেটিস কাকে বলে?
উত্তর: মানবদেহের রক্তে যদি গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তাকে ডায়াবেটিস বলে।
প্রশ্ন–১৬: হার্ট অ্যাটাক কাকে বলে?
উত্তরঃ হূৎপিণ্ডের করোনারি ধমনি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে হৃৎপেশির রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে যে রোগ সৃষ্টি হয় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।
প্রশ্ন–১৭:হার্টবিট কী?
উত্তর: হৃৎপিণ্ড স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মতো দেহের ভেতরে সর্বক্ষণ ছন্দের আকারে স্পন্দিত হয়ে দেহে রক্ত প্রবাহিত করে, এই স্পন্দনকে হার্টবিট বলে।
প্রশ্ন–১৮: সিরাম কী?
উত্তর: রক্ত জমাট বাঁধার পর রক্তের জমাট অংশ থেকে যে হালকা হলুদ বা খড়ের রঙের মতো এক রকম স্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয় তাকে সিরাম বলে।
প্রশ্ন–১৯: রোগজীবাণু ধ্বংসকারী রক্তকণিকার নাম কী?
উত্তর : রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী রক্তকণিকার নাম হলো শ্বেত রক্তকণিকা।
প্রশ্ন–২০: মানুষের হৃৎপিণ্ড কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মানুষের হৃৎপিণ্ডটি বক্ষগহবরে অবস্থিত ফুসফুস দুটির মাঝখানে এবং মধ্যচ্ছদার উপরে অবস্থিত।
প্রশ্ন–২১: লিউকোসাইটোসিস কী?
উত্তর: শ্বেতকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক মানের চেয়ে বেড়ে ২০,০০০-৩০,০০০ হলে যে রোগ হয় তাকে লিউকোসাইটোসিস বলে।
প্রশ্ন–২২: রক্তের প্রধান উপাদান কী কী?
উত্তর: রক্তের প্রধান উপাদান দুটি। তা হলো- রক্তরস বা। প্লাজমা এবং রক্তকণিকা।
প্রশ্ন–২৩: রক্তচাপ কাকে বলে?
উত্তর : হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে ধমনি প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হয়,তাকে রক্ত চাপ বলে।
প্রশ্ন–২৪ : রক্তরস কাকে বলে?
উত্তর : রক্তকে সেন্ট্রিফিউজ করলে উপরে যে হালকা হলুদ বর্ণের। তরল দেখা যায় তাকে রক্তরস বলে। রক্তের প্রায় ৫৫% রক্তরস থাকে।
প্রশ্ন–২৫: লোহিত রক্তকণিকা কী?
উত্তর : রক্তকণিকার মধ্যে দ্বি-অবতল, চাকতি আকৃতির এবং লাল বর্ণের কণিকাকে লোহিত রক্তকণিকা বলে।
প্রশ্ন–২৬: মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কত?
উত্তর : পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে ৪-৫.৫ লাখ লোহিত রক্তকণিকা থাকে।
প্রশ্ন–২৭: শ্বেত রক্তকণিকা কী?
উত্তর : রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনবিহীন এবং নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষকে বলে শ্বেত রক্তকণিকা।
প্রশ্ন–২৮: মানবদেহে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা কত?
উত্তর : মানবদেহের প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে।
প্রশ্ন–২৯: শ্বেত রক্তকণিকা কত প্রকার?
উত্তর : শ্বেত রক্তকণিকা দু প্রকার। যথা- অ্যাগ্রানুলোসাইট বা দানাবিহীন এবং গ্রানুলোসাইট বা দানাযুক্ত।
প্রশ্ন–৩০: ব্লাড ক্যান্সার কাকে বলে?
উত্তর : মানবদেহে শ্বেতকণিকা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যদি ৫০,০০০-১,০০,০০০ হয়, তবে তাকে ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া বলে।
প্রশ্ন–৩১: কোন রক্তনালিকা দ্বারা হাতের পালস বোঝা যায়?
উত্তর : ধমনি দ্বারা হাতের পালস বোঝা যায় ।
প্রশ্ন–৩২: থ্যালাসিমিয়া কী?
উত্তর : মানবদেহে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে যে রোগ হয়, তার নাম থ্যালাসিমিয়া।
প্রশ্ন–৩৩: অ্যান্টিবডি কী?
উত্তর : বাইরে থেকে কোনো প্রাণীর দেহে রক্ত প্রবেশ করানো হলে প্রাণীটির রক্তে যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি হয় তাকে অ্যান্টিবডি বলে।
প্রশ্ন–৩৪: সিস্টোলিক রক্তচাপ কাকে বলে?
উত্তর : হৃৎপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত সিস্টোল বা সংকোচনের অবস্থায় ধমনিতে যে রক্তচাপ থাকে তাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বলে।
প্রশ্ন–৩৫: ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কাকে বলে?
উত্তর :হৃৎপিণ্ডের স্বতঃস্ফূর্ত ডায়াস্টোলিক বা প্রসারণের ফলে ধমনিতে যে রক্তচাপ থাকে তাকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১. রক্তের রং লাল হয় কেন?
উত্তর: মানুষ ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদেহের রক্ত লাল রঙের। রক্তের রসে হিমোগ্লোবিন নামক লৌহঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকায় রক্তের রং লাল দেখায়।
প্রশ্ন–২. রক্ত জমাট বাঁধা অণুচক্রিকার প্রধান কাজ বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর: সাধারণত যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সে স্থানের অণুচক্রিকাগুলো ভেঙে যায় এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক পদার্থ সৃষ্টি করে। এ পদার্থগুলো রক্তের আমিষ প্রোথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে। এই থ্রমবিন পরবর্তীতে রক্তরসের প্রোটিন-ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
প্রশ্ন–৩. রক্তবাহিকায় রক্ত জমাট বাধে না কেন?
উত্তর: নিম্নলিখিত কারণে রক্তবাহিকায় রক্ত জমাট বাঁধে না-
i. বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে রক্তবাহিকায় জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
ii. রক্তবাহিকার মধ্যে দিয়ে অনবরত রক্ত সঞ্চালিত হতে থাকে।
প্রশ্ন–৪. শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয় কেন?
উত্তর: দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে শ্বেতকণিকা তা ধ্বংস করে রোগ প্রতিরোধ করে। দেহে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল শ্বেতকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে জীবাণুকে গ্রাস করে ধ্বংস করে। লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহের ভিতরের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং বহিঃস্থ জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে। এভাবে শ্বেতকণিকা দেহেরোগ প্রতিরোধ করে। এ কারণেই শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয়।
প্রশ্ন–৫. রক্তের কাজ লিখ।
উত্তর: রক্তের কাজ নিম্নে দেওয়া হলো:
i. রক্ত অক্সিজেনকে ফুসফুস থেকে টিস্যু কোষে এবং টিস্যু কোষ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ফুসফুসে পরিবহন করে।
ii. দেহে রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে মনোসাইট ও নিউট্রোফিল শ্বেত কণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু গ্রাস করে ধ্বংস করে।
iii. দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন–৬, অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: অ্যান্টিবডি হলো রক্তকোষ কর্তৃক সৃষ্ট এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থ যা বাইরের প্রোটিনের সাথে বিক্রিয়া ঘটায়। বহিরাগত যে প্রোটিন রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে সেই প্রোটিনকে বলা হয় অ্যান্টিজেন।
প্রশ্ন–৭. সর্বজনীন দাতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: O গ্রুপের ব্যক্তির রক্তকণিকায় উভয় প্রকার অ্যান্টিজেন অর্থাৎ A ও B অনুপস্থিত। এজন্য তাদের রক্ত যেকোনো গ্রহীতা গ্রহণ করতে পারে। কারণ, দাতার রক্তের কোনো অ্যান্টিজেন না থাকলে গ্রহীতার (A, B বা AB) রক্তের অ্যান্টিবডির সাথে কোনো বিক্রিয়া করে না। কারণ, গ্রহীতার সমস্ত রক্তে মিশে দাতার স্বল্প পরিমাণ অ্যান্টিবডিযুক্ত রক্ত অত্যন্ত তরল ও প্রভাবমুক্ত হয়ে যায়। অন্য যেকোনো গ্রুপকে রক্তদান করতে পারে বলে O গ্রুপকে সর্বজনীন দাতা বলা হয়।
প্রশ্ন–৮. সর্বজনীন গ্রহীতা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: AB গ্রুপকে সর্বজনীন গ্রহীতা বলা হয়। কারণ AB গ্রুপের প্লাজমায় অ্যান্টিবডি a বা অ্যান্টিবডি b কোনোটিই থাকে না। AB গ্রুপের ব্যক্তি AB, A, B গ্রুপ ও O গ্রুপের দাতাদের রক্ত গ্রহণ করতে পারে। কারণ, AB গ্রুপের অ্যান্টিবডি না থাকার কারণে A ও B রক্ত গ্রুপের অ্যান্টিজেন গ্রহীতার (AB) রক্তের সাথে কোনো বিক্রিয়া করে না। এ কারণে AB গ্রুপের ব্যক্তিদেরকে সর্বজনীন গ্রহীতা বলা হয়।
প্রশ্ন–৯. Rh ফ্যাক্টর বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: Rh ফ্যাক্টর রেসাস নামক বানরের লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক ধরনের অ্যাগ্লুটিনোজেন। রেসাস বানরের নাম অনুসারে এ অ্যান্টিজেনকে রেসাস ফ্যাক্টর সংক্ষেপে Rh ফ্যাক্টর বলে। যেসব মানুষের রক্তে Rh ফ্যাক্টর উপস্থিত, তাদের Rh (Rh পজেটিভ) এবং যাদের রক্তে Rh ফ্যাক্টর অনুপস্থিত তাদের Rh (Rh নেগেটিভ) বলে।
প্রশ্ন–১০. ধমনি ও শিরার দুটি পার্থক্য লিখ।
উত্তর: ধমনি ও শিরার মধ্যে দুটি পার্থক্য নিচে দেওয়া হলো-
শিরা | ধমনি |
i. শিরা কৈশিক জালিকা থেকে শুরু হয়ে হৃৎপিণ্ডে শেষ হয়। | i. ধমনি হৃৎপিণ্ড থেকে শুরু হয়ে কৈশিক জালিকায় শেষ হয়। |
ii. পলমোনারি শিরা ব্যতীত সকল শিরা কার্বন ডাইঅক্সাইড যুক্ত রক্ত বহন। | ii. ফুসফুসীয় ধমনি ব্যতীত সকল ধমনি অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে। |
প্রশ্ন–১১. কার্ডিয়াক চক্র বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: হৃৎপিণ্ড একবার সংকোচন ও একবার প্রসারণের মাধ্যমে হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট সম্পন্ন হয়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ ব্যক্তির হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০-৮০ বার। প্রতি হৃদস্পন্দন সম্পন্ন করতে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে যে চক্রাকার ঘটনা ঘটে তাকে কার্ডিয়াক চক্র বা হৃদচক্র বলে। প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তির গড়ে ৭৫ বার হার্ট বিট হয়, কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল ০.৮ সেকেন্ড।
প্রশ্ন–১২. রক্তচাপ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে ধমনি প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি করে, তাকে রক্ত চাপ বলে। তাই রক্ত চাপ বলতে সাধারণভাবে ধমনির রক্ত চাপকেই বোঝায়। রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা, ধমনির প্রাচীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং রক্তের ঘনত্ব ও পরিমাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্রশ্ন–১৩. উচ্চ রক্তচাপ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হিসেবে গণ্য করা হয়। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহকালে ধমনি গাত্রে কোনো ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সবসময় ১৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে, তবে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে বলা যায়।
প্রশ্ন–১৪, ডায়াবেটিস রোগীদের শৃঙ্খলা মেনে চলা জরুরি কেন?
উত্তর: শৃঙ্খলা ডায়াবেটিস রোগীর জীবন-কাঠি। ওষুধ সেবন করলেও ডায়াবেটিস রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। নিয়মিত ও পরিমাণ মতো সুষম খাবার গ্রহণ না করলে ওষুধ সেবন করেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। রোগীকে এমন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতে হবে যেন তার ন্যূনতম ক্যালরি চাহিদা পূরণ করে কিন্তু রক্তে ও প্রসাবে শর্করা বেড়ে না যায়। এক্ষেত্রে নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিমাপ এবং ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীদের শৃঙ্খলা মেনে চলা জরুরী।
প্রশ্ন–১৫. ডায়াবেটিস রোগে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: ডায়াবেটিস রোগে গ্লুকোজ বিপাকে সমস্যা হয় বিধায়, মানবদেহে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দীর্ঘস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়। ইনসুলিন হরমোন রক্তে গ্লুকোজ বিপাকে সহায়তা করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন–১৬. হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখার কয়েকটি উপায় লেখ।
উত্তর: হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখার কয়েকটি উপায় হলো-
i. দেহের উচ্চতা ও বয়স অনুসারে মিশ্রিত খাবার খাওয়া।
ii. প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিশ্রিত খাবার খাওয়া।
iii. শর্করা, মিষ্টি ও স্নেহজাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।
iv. ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদাগুলো সুষম খাদ্য অনুযায়ী অপরিবর্তিত রাখা।
প্রশ্ন–১৭:রক্ত কীভাবে জমাট বাঁধে?
উত্তর: যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সে স্থানের অণুচক্রিকাগুলো ভেঙে যায় এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন (Thromboplastin) নামক পদার্থ সৃষ্টি করে। এ পদার্থগুলো রক্তের আমিষ প্রোথ্রমবিনকে থ্রমবিনে পরিণত করে। থ্রমবিন পরবর্তীতে রক্তরসের প্রোটিন-ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্ত জমাট বাধায়।
প্রশ্ন–১৮: মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা প্রয়োজন কেন?
উত্তর: মানুষের রক্তের গ্রুপ জানার প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ:
i. কোনো কারণে দেহে রক্তের প্রয়োজন হলে দাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপ জানার জন্য পরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি। কারণ, ভিন্ন গ্রুপের দাতা গ্রহীতার রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে প্রাণহানি ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
ii. কোনো শিশুর পিতৃত্ব নির্ণয়ের জটিলতা রক্তের গ্রুপ সহজেই সমাধান করতে পারে।
iii. অপরাধী শনাক্তকরণেও রক্তের গ্রুপ সাহায্য করে।
প্রশ্ন–১৯: থ্যালাসেমিয়া বলতে কী বোঝ?
উত্তর : থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়। হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতার কারণে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়, ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ রোগটি মানুষের অটোজোমে অবস্থিত প্রচ্ছন্ন জিনের দ্বারা ঘটে। যখন মাতা ও পিতা উভয়ের অটোজোমে এ জিনটি প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে; তখন তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন জিন দুটি একত্রিত হয়ে এই রোগের প্রকাশ ঘটায়। সাধারণত শিশু অবস্থায় থ্যালাসেমিয়া রোগটি শনাক্ত হয়।
প্রশ্ন–২০: রক্তরসের গঠন লেখ।
উত্তর : রক্তরসে প্রায় ৯০% পানি এবং ১০% বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থ দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। জৈব পদার্থের মধ্যে খাদ্যসার, রেচন পদার্থ, প্রোটিন, বিভিন্ন হরমোন ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে অজৈব পদার্থের মধ্যে থাকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের আয়ন এবং গ্যাসীয় পদার্থ CO2, CO2, N2, ইত্যাদি।
প্রশ্ন–২১: রক্তরসের প্রধান কাজগুলো লেখ।
উত্তর : রক্তরসের প্রধান কাজগুলো হলো-
i. রক্তকণিকাসহ রক্তরসে দ্রবীভূত খাদ্যসার দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করে।
ii. টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থ নির্গত করে রেচনের জন্য বৃক্কে পরিবহন করে।
iii. শ্বসনের ফলে কোষে সৃষ্ট CO2 কে বাইকার্বনেট হিসেবে ফুসফুসে পরিবহন করে।
iv. রক্ত জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পরিবহন করে।
v. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
প্রশ্ন–২২: পালস রেট গণনা করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পালস রেট গণনা করার পদ্ধতি নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
কোনো ব্যক্তির পালস রেট গণনা করতে হলে প্রথমে তার হাতের কবজিতে হাতের তিন আঙুল যেমন : অনামিকা, মধ্যমা ও তর্জনী দিয়ে চাপ দিয়ে প্রতি মিনিটে হৃৎস্পন্দন কতবার তা অনুভব করতে হবে। হাতের তিন আঙুল এমনভাবে রাখতে হবে যেন তর্জনী থাকে হৃৎপিণ্ডের দিকে, মধ্যমা মাঝখানে এবং অনামিকা হাতে আঙুলের দিকে। এভাবে এক মিনিটে বোঝা যাবে হাতের রেডিয়াল ধমনি কতবার ধুকধুক করছে। এটাই পালস রেট গণনার পদ্ধতি।
প্রশ্ন–২৩: LDL ও HDL এর মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখ।
উত্তর : LDL এবং HDL উভয়ই হলো লাইপেপ্রোটিন অর্থাৎ এগুলো লিপিড ও প্রোটিন সমন্বয়ে গঠিত যৌগ। নিচে HDL এবং LDL এর মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করা হলো :
LDL | HDL |
i. LDL হলো নিম্ন ঘনত্ববিশিষ্ট লাইপোপ্রোটিন। | i. HDL হলো উচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট লাইপোপ্রোটিন। |
ii. রক্তে অধিক LDL শরীরের জন্য ক্ষতিকর। | ii. রক্তে অধিক HDL শরীরের জন্য উপকারী। |
iii. রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে LDL এর পরিমাণ বেড়ে যায়। | iii. রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে HDL এর পরিমাণ কমে যায়। |
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন-২৪: কার্ডিয়াক চক্র বলতে কী বুঝায়?
উত্তর : হৃৎপিণ্ডের একবার সংকোচন (সিস্টোল) ও একবার প্রসারণ (ডায়াস্টোল) কে হৃৎস্পন্দন বলে। প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির হৃৎস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০-৮০ বার। প্রতি হৃৎস্পন্দন সম্পন্ন করতে সিস্টোল ও ডায়াস্টোলের যে চক্রাকারে ঘটনাবলি অনুসৃত হয়, তাকে কার্ডিয়াক চক্র বা হৃদচক্র বলে।
প্রশ্ন–২৫: লোহিত রক্তকণিকার দুটি কাজ লেখ।
উত্তর : লোহিত রক্তকণিকার প্রধান কয়েকটি কাজ হলো
i. দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে।
ii. লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা | বজায় রাখে।
প্রশ্ন–২৬: লোহিত রক্তকণিকা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : লোহিত রক্তকণিকার আরেক নাম Red Blood Cell । লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে বলে একে এই নামে ডাকা হয়। এরা দ্বি-অবতল ও চাকতি আকৃতির। লোহিত রক্তকণিকা অস্থিমজ্জার ভেতরে উৎপন্ন হয় এবং রক্তরসে চলে আসে। লোহিত রক্তকণিকা অধিক পরিমাণে অক্সিজেন পরিবহন করে। মানুষের লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। লোহিত কণিকা সাধারণত প্লীহাতে সঞ্চিত থাকে।
প্রশ্ন–২৭: হাইপারটেনশন কখন হয়?
উত্তর : শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে, তখন তাকে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সব সময় ১৬০ মিলিমিটার পারদ স্তম্ভ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ সব সময় ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে, তখন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।
প্রশ্ন–২৯: শিরার গঠন লেখ।
উত্তর : শিরার প্রাচীর তিন স্তরে গঠিত হলেও এর প্রাচীর বেশ পাতলা ও গহ্বর বড়। কপাটিকা থাকায় শিরা দিয়ে রক্ত ধীরে ধীরে এক মুখে প্রবাহিত হয়। ধমনি প্রান্তের কৈশিক জালিকাগুলো একত্রিত হয়ে উপশিরা গঠিত হয়। এই উপশিরাগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে শিরা গঠন করে। আবার কতগুলো শিরা একত্রে মিলিত হয়ে মহাশিরা গঠন করে। শিরা কৈশিক জালিকায় শুরু হয়ে হৃৎপিণ্ডে শেষ হয়।
* তথ্য কণিকা *
১. মানুষের রক্তরসের প্রায় ৯০%-পানি।
২. পারপুরা অবস্থা সৃষ্টি হয়- ডেঙ্গুজ্বরে।
৩. লোহিত কণিকা ভেঙ্গে সৃষ্ট বংশগত রক্তের রোগ- থ্যালাসিমিয়া।
৪. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে- রক্তরস।
৫. রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা অণুচক্রিকার গড় আয়ু- ৫-১০ দিন।
৬. রক্তশূন্যতা হয়- RBC হ্রাস পেলে ।
৭. লেসিথিন- রেচন পদার্থ।
৮. রক্ত লাল দেখায়-হিমোগ্লোবিনের জন্য।
৯. শ্বেত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে— HIV.
১০. হরমোন, এনজাইম ও লিপিডকে দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করে- রক্তরস।
১১. রক্তের তরল অংশকে বলে— প্লাজমা।
১২. লোহিত কণিকায় অ্যান্টিজেন থাকে- ২টি।
১৩, রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্যে করে- খনিজ লবণ।
১৪. অণুচক্রিকার স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়াকে বলে-থ্রম্বোসাইটোসিন।
১৫. রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধাকে বলে- থ্রম্বোসিস।
১৬. উৎসেচক ও নালীবিহীন গ্রন্থি হতে নিঃসৃতরস বহন করে- রক্তরস।
১৭. লৌহঘটিত প্রোটিন জাতীয় পদার্থ এবং মেরুদন্ডী প্রাণীর রক্তরসে থাকে- হিমোগ্লোবিন।
১৮. নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য বৃক্কে পরিবহন করা ও দেহের বিভিন্ন অংশে হরমোন পরিবহন করা- রক্তের কাজ।
১৯. Rh+ ফ্যাক্টরযুক্ত কোন পুরুষের সাথে Rh– ফ্যাক্টরযুক্ত নারীর বিয়ে হলে সম্ভাবনা থাকে- গর্ভপাত হওয়ার ।
২০. B ও AB গ্রুপধারী ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারবে- B গ্রুপধারী ব্যক্তি।
২১. রক্তের সর্বজনীন গ্রহীতা গ্রুপ- AB।
২২. মানুষের দেহের মোট ওজনের প্রায় ৮% থাকে – রক্ত।
২৩. AB ও A গ্রুপের ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবে- AB গ্রুপ এর ব্যক্তিকে।
২৪. হৃৎপিন্ডের পেরিকার্ডিয়াম পর্দা- দুই স্তরবিশিষ্ট।
২৫. হৃৎপিন্ডের আকৃতি- ত্রিকোণাকার ।
২৬. মানুষের ধমনির রক্তের pH – ৭.৪।
২৭. হৃৎপিন্ড ৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট-মানুষের।
২৮. অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরবরাহ করে থাকে-ধমনি ওপালমোনারি শিরা।
২৯. দূষিত রক্ত বহন করে- ফুসফুসীয় ধমনি।
৩০. কার্ডিয়াক চক্রের ধাপ- ৪টি।
৩১. দেহের কোনো রক্তনালিকা বন্ধহয়ে যাওয়া-হার্ট অ্যাটাকের কারণ।
৩২. মানবদেহে রক্তের গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা- ৮০-১২০মি.গ্রাম/ডিসিলি ।
৩৩. প্রাচীর পুরু এবং কপাটিকা বিহীন- ধমনির।
৩৪. মানবদেহের প্রধান রক্ত সংবহনতন্ত্রগুলো হলো- হৃৎপিন্ড, ধমনি ও কৈশিক নালিকা।
৩৫. মানবদেহের জন্য ভালো-রক্তে HDL এর পরিমাণ বেশি থাকা।
৩৬. মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ- ১২০/৮০ mm Hg.
৩৭. কোলেস্টেরল বেশি থাকে – যকৃতে ও মগজে।
৩৮. সুষম খাদ্য ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হয়- হার্ট ব্লকের কারণে হৃৎপিন্ডের স্পন্দন ত্রুটিপূর্ণ হলে। ৩৯. নিয়ন্ত্রিত ও পরিমিত ব্যায়াম নিয়ন্ত্রণ করে- ডায়াবেটিস।
৪০. ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে করণীয় হচ্ছে – শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
৪১. ঘন ঘন প্রসাব হওয়া ও দেহের ক্ষত দেরিতে শুকানো- ডায়াবেটিসের লক্ষণ।
৪২. একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে রক্তের পরিমাণ – ৫-৬ লিটার।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. রক্ত জমাট বাঁধানো কোনটির কাজ?
ক) লোহিত কণিকা খ. অণুচক্রিকা
গ. শ্বেতকণিকা ঘ. লসিকা কোষ
উত্তর: খ. অণুচক্রিকা
২. অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে—
ক. ধমনি ও পালমোনারি ধমনি খ. ধমনি ও পালমোনারি শিরা
গ. শিরা ও পালমোনারি শিরা ঘ. শিরা ও ধমনি
উত্তর: খ. ধমনি ও পালমোনারি শিরা
নিচের অনুচ্ছদটি পড়ে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
অভিষেক ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে তার বন্ধুর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। ফলে রক্তের প্রয়োজন। বন্ধুর রক্ত পরীক্ষা ছাড়াই অভিষেক বলল, আমি রক্ত দিতে পারব।
৩. অভিষেকের রক্তের গ্রুপ কী ছিল?
ক. A খ. B
গ. AB ঘ. O
উত্তর: ঘ. O
৪. রক্তরসে কোন গ্যাসীয় পদার্থ নেই?
ক. O2 খ. CO2
গ. Cl2 ঘ. N2
উত্তর: গ. Cl2
৫. মানুষের রক্তরসের প্রায় কত ভাগ পানি?
ক. ১০% খ. ৪৫%
গ. ৫৫% ঘ. ৯০%
উত্তর: ঘ. ৯০%
৬. পারপুরা অবস্থা সৃষ্টি হয় কোন রোগে আক্রান্ত হলে?
ক থ্যালাসিমিয়া খ. ডেঙ্গুজ্বর
গ. পলিসাইথিমিয়া ঘ. অ্যানিমিয়া
উত্তর: খ. ডেঙ্গুজ্বর
৭. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে যে রোগ হয় তা হলো–
i. থ্যালাসিমিয়া
ii. পারপুরা
iii. অ্যানিমিয়া
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii
৮. কোনটি বংশগত রক্তের রোগ?
ক. লিউকোসাইটোসিস খ. থ্যালাসিমিয়া
গ. থ্রম্বোসাইটোসিস ঘ.পারপুরা
উত্তর: খ. থ্যালাসিমিয়া
৯. থ্যালাসিমিয়া রোগের কারণ কোনটি?
ক. লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়া খ. অটোজোমে প্রকট জিনের উপস্থিতি
গ. রক্তে অনুচক্রিকা কমে যাওয়া ঘ. রক্তে প্রচুর অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হওয়া
উত্তর: ক. লোহিত কণিকা ভেঙে যাওয়া
১০. রক্তের অম্ল–ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে কোনটি?
ক লোহিত রক্তকণিকা খ. শ্বেত রক্তকণিকা
গ. অণুচক্রিকা ঘ. রক্তরস
উত্তর: ঘ. রক্তরস
১১. নিচের কোনটি রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে?
ক. লোহিত রক্ত কণিকা খ. শ্বেত রক্ত কণিকা
গ. অনুচক্রিকা ঘ. গ্রানুলোসাইট
উত্তর: গ. অনুচক্রিকা
১২. অণুচক্রিকার গড় আয়ু কত দিন?
ক. ২-৫ খ. ৫-১০
গ. ১০-১৫ ঘ. ১৫-২০
উত্তর: খ. ৫-১০
১৩. রক্তশূন্যতা হয়, যখন—
ক. RBC বৃদ্ধি পায় খ. WBC বৃদ্ধি পায়
গ. RBC হ্রাস পায় ঘ. অণুচক্রিকা বৃদ্ধি পায়
উত্তর: গ. RBC হ্রাস পায়
১৪. কোনটি রেচন পদার্থ?
ক. লেসিথিন খ. অ্যামোনিয়া
গ. অ্যালবুমিন ঘ. বিলিরুবিন
উত্তর: ক. লেসিথিন
১৫. কোনটির জন্য রক্তের রং লাল দেখায়?
ক হিমোগ্লাবিন খ. অণুচক্রিকা
গ. রক্তরস ঘ. ক্লোরোপ্লাস্ট
উত্তর: ক হিমোগ্লাবিন
১৬. HIV নিচের কোনটিকে আক্রমণ করে?
ক. লোহিত রক্তকণিকা খ. শ্বেত রক্তকণিকা
গ. অণুচক্রিকা ঘ. রক্তরস
উত্তর: খ. শ্বেত রক্তকণিকা
১৭. কোনটি হরমোন, এনজাইম ও লিপিডকে দেহের বিভিন্ন অংশে বহন করে?
ক. রক্তরস খ. রক্তকণিকা
গ. লোহিত রক্ত কণিকা ঘ. শ্বেত রক্তকণিকা
উত্তর: ক. রক্তরস
১৮. রক্তের তরল অংশকে কী বলে?
ক. হিমোগ্লোবিন খ. কণিকা
গ. লসিকা ঘ. প্লাজমা
উত্তর: ঘ. প্লাজমা
১৯. লোহিত কণিকায় কয়টি অ্যান্টিজেন থাকে?
ক. ২টি খ. ৪টি
গ. ৫টি ঘ. ৬টি
উত্তর: ক. ২টি
২০. কোনো ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ ‘O’ হলে, তিনি –
i. A, B, AB গ্রুপকে রক্ত দিতে পারবেন।
ii. শুধু O হতে গ্রহণ করতে পারবেন।
iii. উক্ত গ্রুপের অধিকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় 82%
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
২১. ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ হলো –
i. ওজন বেশি হওয়া
ii. খুব বেশি পিপাসা লাগা
iii. চোখে ঝাপসা দেখা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
২২. রক্তরসের কাজ হলো–
i. রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা
ii. দেহের বিভিন্ন অংশে লিপিড ও এনজাইম বহন করা
iii. কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
২৩. নাড়ির গতি নির্ধারণ হয়—
i. শিরার মাধ্যমে
ii. কৈশিকনালীর মাধ্যম
iii. ধমনীর মাধ্যমে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i খ. ii
গ. iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. iii
২৪. রক্তের কাজ –
i. হরমোন পরিবহন
ii. দৈহিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ
iii. শ্বাসকার্য
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
২৫. প্রোটিনধর্মী জৈব পদার্থগুলো হলো–
i. গ্লুকোজ
ii. অ্যালবুমিন
iii. প্রোথ্রম্বিন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
২৬. হৃদযন্ত্র ভালো রাখার উপায়—
i. শর্করা বেশি খেতে হবে
ii. অতিভোজন হতে বিরত থাকা
iii. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
২৭. অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর –
i. ভ্রূণের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে
ii. ভ্রূণ বিনষ্ট করে
iii. জন্মের পর হাম রোগ সৃষ্টি করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
২৮. রেচন পদার্থ কোনটি?
i. ইউরিয়া
ii. অ্যামোনিয়া
iii. ক্রিয়েটিনিন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
২৯. শ্বেত কণিকার জন্য সত্য—
i. জীবাণু ভক্ষণ করে
ii. আকারে বড়
iii. দেহের পাহারাদার বলা হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৩০. শ্বেত রক্তকণিকা–
i. প্লীহা থেকে উৎপন্ন হয়
ii. হেপারিন নিঃসৃত করে
ii. কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
৩১. প্লাজমার জৈব পদার্থ হলো–
i. গ্লুকোজ, অ্যামিনো এসিড
ii. ফাইব্রিনোজেন, অ্যালবুমিন
iii. ক্যালসিয়াম, কার্বন-ডাইঅক্সাইড
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
৩২. লোহিত কণিকার কাজ হলো—
i. O2 পরিবহন করা
ii. CO2 পরিবহন করা
iii. অম্ল ক্ষারের সমতা করা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩৩ ও ৩৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
মিজান সাহেবের বয়স ৫০ বছর। নিয়মিত ব্যায়াম না করায় ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করায় তার ওজন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে।
৩৩. উদ্দীপকে কোন রোগটির কথা বলা হয়েছে?
ক. ডায়রিয়া খ. উচ্চ রক্তচাপ
গ. ডায়াবেটিস ঘ. নিউমেনিয়া
উত্তর: গ. ডায়াবেটিস
৩৪. উদ্দীপকের রোগটির লক্ষণ —
i. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
ii. মাথা ব্যথা হওয়া
iii. শরীরের কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে দেরিতে শুকানো
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. i ও iii
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩৫ ও ৩৬ নং প্রশ্নের উত্তর দাওঃ
আশার শিশু অবস্থা থেকেই রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দেয়। তার প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়। ডাক্তার বলেছেন এটি একটি বংশগত রোগ।
৩৫. আশা কোন রোগে আক্রান্ত?
ক. লিউকেমিয়া খ. থ্যালাসিমিয়া
গ. পারপুরা ঘ.পলিসাইথিমিয়া
উত্তর: খ. থ্যালাসিমিয়া
৩৬. আশার উক্ত রোগের কারণ কী?
i. হিমোগ্লোবিনের অস্বাভাবিকতা
ii. তার অটোজমে অবস্থিত দুটি প্রচ্ছন্ন জিন
iii. তার মাতা-পিতার অটোজমে অবস্থিত প্রচ্ছন্ন জিন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
৩৭. কোনটি রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
ক. ভিটামিন খ. আমিষ
গ. খনিজ লবণ ঘ. শর্করা
উত্তর: গ. খনিজ লবণ
৩৮. অণুচক্রিকা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাওয়াকে কী বলে?
ক. থ্রম্বোসাইটোসিন খ. লিউকেমিয়া
গ. থ্যালাসেমিয়া ঘ. পারপুরা
উত্তর: ক. থ্রম্বোসাইটোসিন
৩৯. রক্তনালির অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়াকে কী বলে?
ক. থ্রম্বোসিস খ. অ্যানিমিয়া
গ. লিউকেমিয়া ঘ. থ্যালাসিমিয়া
উত্তর: ক. থ্রম্বোসিস
৪০. রক্তে কোলেস্টরলের স্বাভাবিক পরিমাণ কত?
ক. ৫০-১০০mg/dl খ. ১০০–২০০mg/dl
গ. ২০০-২৫০mg/dl ঘ. ২৫০-৩০০mg/dl
উত্তর: খ. ১০০–২০০mg/dl
৪১. কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডের কোন অংশে প্রথমে প্রবেশ করে?
ক. ডান অ্যাট্রিয়াম খ. বাম অ্যাট্রিয়াম
গ. ডান ভেন্ট্রিকল ঘ. বাম ভেন্ট্রিকল
উত্তর: ক. ডান অ্যাট্রিয়াম
৪২. শ্বেত রক্তকণিকার কাজ কোনটি?
ক. রোগ জীবাণু ধ্বংস করা খ. অক্সিজেন পরিবহন করা
গ. রক্ত জমাটবদ্ধ করা ঘ. কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহন করা
উত্তর: ক. রোগ জীবাণু ধ্বংস করা
৪৩. সর্বজনীন দাতা গ্রুপের রক্ত কোনটি?
ক. A খ. B
গ. AB ঘ. O
উত্তর: ঘ. O
৪৪. ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ কোনটি?
ক. চোখে ঝাপসা দেখা
খ. খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়
গ. শরীরে অত্যধিক ঘাম নিঃসরণ হয়
ঘ. মনঃসংযোগ নষ্ট হয়
উত্তর: ক. চোখে ঝাপসা দেখা
৪৫. কোন গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন নাই?
ক. A খ. B
গ. AB ঘ. O
উত্তর: ঘ. O
৪৬. মানবদেহে কয় ধরনের অ্যামাইনো এসিড রয়েছে?
ক. ২০ খ. ১৮
গ. ১৬ ঘ.১৪
উত্তর: ক. ২০
৪৭. অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টরের প্রভাবে নবজাতকের কোন রোগ হয়?
ক. নিউমোনিয়া খ. ডায়রিয়া
গ. যক্ষ্মা ঘ. জণ্ডিস
উত্তর: ঘ. জণ্ডিস
৪৮. কোন রোগটির কারণে অণুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়?
ক. পলিসাইথিমিয়া খ. অ্যানিমিয়া
গ. লিউকোমিয়া ঘ. পারপুরা
উত্তর: ঘ. পারপুরা
৪৯. লিউকোমিয়া কী?
ক. নিউমোনিয়া খ. প্লেগ
গ. কলেরা ঘ. ব্লাড ক্যান্সার
উত্তর: ঘ. ব্লাড ক্যান্সার
৫০. একটি পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে প্রায় কত লিটার রক্ত থাকে?
ক. ২-৩ লিটার খ.৩-৪ লিটার
গ. ৪-৫ লিটার ঘ. ৫-৬ লিটার
উত্তর: ঘ. ৫-৬ লিটার
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১: রাফিন ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তার আব্বা সুঠাম দেহের অধিকারী। রাফিন লক্ষ করছে, তার আব্বার দেহে ক্ষত সৃষ্টি হলে শুকাতে দেরি হচ্ছে, চামড়া শুকিয়ে যাচ্ছে, সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছেন। এসব কারণে রাফিনের আব্বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তার পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার উপদেশ দিলেন।
ক. রক্তচাপ কাকে বলে?
খ. সিস্টোলিক রক্তচাপ বলতে কী বোঝায়?
গ. রাফিনের আব্বা কী রোগে আক্রান্ত হয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ডাক্তার সাহেব রাফিনের আব্বাকে সুস্থ থাকার জন্য কী উপদেশ দেন? ব্যাখ্যা কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে ধমনি প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি করে তাকে রক্তচাপ বলে।
খ. হৎপিণ্ডের সংকোচনকে সিস্টোল বলে। হৃৎপিণ্ডের সংকুচিত অবস্থায় ধমনিতে যে চাপ বিদ্যমান থাকে তাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বলে। সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপ পারদস্তরে ১১০-১৪০ মিলিমিটার (mm Hg)।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাফিনের বাবার যে ধরনের লক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তাতে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় যে, তিনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। কারণ ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দেখা যায়-
i. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
ii. খুব বেশি পিপাসা লাগা।
iii. বেশি ক্ষিদে পাওয়া এবং অতিমাত্রায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।
iv. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া এবং শীর্ণতা।
v. সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা।
vi. চামড়া শুকিয়ে যাওয়া।
vii. চোখে ঝাপসা দেখা।
viii. শরীরের কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে দেরিতে শুকানো।
যেহেতু উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যের সাথেই রাফিনের বাবার শারীরিক উপসর্গের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, তিনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রাফিনের বাবার ডায়াবেটিস রোগের জন্য ডাক্তার ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের উপদেশ দেন। ডাক্তার সাহেব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যেসব নিয়ম-শৃঙ্খলা মানতে বলেন সেগুলো হলো :
i. নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে।
ii. নিয়মিত ও পরিমাণমতো ব্যায়াম করতে হবে।
iii. নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা ও ফলাফল লিখে রাখতে হবে।
iv. মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ ছাড়তে হবে।
v. ডায়াবেটিসের মাত্রা অধিক হয়ে গেলে সঠিক সময়ে ইনসুলিন নিতে হবে।
ডাক্তার রাফিনের বাবাকে উপরোক্ত নিয়ম-শৃঙ্খলাগুলো মানতে বলার কারণ এটাই যে ডায়াবেটিস রোগকে দমিয়ে রাখতে খাদ্যের ভূমিকা অসামান্য। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগের জন্য ঔষধ সেবন করলেও রোগীকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সেহেতু নিয়ন্ত্রিত খাদ্যব্যবস্থা থাকলে ঔষধ সেবন করেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেক্ষেত্রে রোগীকে এমন খাদ্যদ্রব্য নিতে হবে, যা তার ন্যূনতম ক্যালরির চাহিদা পূরণ করবে এবং খাদ্যের দ্বারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তবে এর পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়ামও করতে হবে, যাতে শরীরে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকে।
প্রশ্ন-২ : নিচের চিত্র তিনটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. রক্ত কাকে বলে?
খ. কৈশিক জালিকা বলতে কী বোঝায়?
গ. মানবদেহে চিত্রের B চিহ্নিত কোষের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রের A ও C একই যোজক কলায় অবস্থিত হলেও এদের কাজ ভিন্ন- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রক্ত এক ধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ, আন্তঃকোষীয়, লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক কলা।
খ. ধমনি ও শিরার সংযোগস্থলে অবস্থিত কেবল এক স্তরবিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়াম দিয়ে গঠিত যেসব সূক্ষ্ম রক্তনালি জালকের আকারে বিন্যস্ত থাকে, সেগুলোকে কৈশিক জালিকা বলে। কৈশিক জালিকায় রক্ত ও কলারসের মধ্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ার দ্বারা পুষ্টিদ্রব্য, খাদ্যসার, শ্বসন বায়ু, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, রেচন পদার্থ ইত্যাদির আদান-প্রদান ঘটে।
গ. চিত্রের B চিহ্নিত কোষটি হলো শ্বেত রক্তকণিকা। মানবদেহে শ্বেত রক্তকণিকার গুরুত্ব বা ভূমিকা অপরিসীম। মানবদেহে শ্বেত রক্তকণিকার ভূমিকা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
মানবদেহে লিম্ফোসাইট নামক শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি গঠন করে এবং দেহে এই অ্যান্টিবডি প্রবেশ করে রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মনোসাইট ও নিউট্রোফিল নামক শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় রোগজীবাণুকে ভক্ষণ করে। ইওসিনোফিল ও বেসোফিল শ্বেত রক্তকণিকা হিস্টামিন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে দেহের অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। এছাড়া বেসোফিল রক্তকণিকা হেপারিন নিঃসৃত করে রক্তকে দেহের ভেতরে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
ঘ. চিত্র A ও C হলো- লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা। এরা উভয়ই তরল যোজক কলা রক্তের অংশ। একই যোজক কলায় অবস্থিত হলেও এদের কাজ সম্পূর্ণ ভিন্ন। লোহিত রক্তকণিকা যে কাজগুলো করে সেগুলো হলো:
i. দেহের প্রতি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
ii. নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডকে টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করা।
iii. লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করে।
আবার অণুচক্রিকা নিম্নলিখিত কাজগুলো করে থাকে—
i. রক্ত তঞ্চন করতে সাহায্য করা।
ii. কাটা স্থানে থ্রম্বোপ্লাসটিন নামক পদার্থ সৃষ্টি করা।
ii. রক্তের প্রোটিন ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা একই যোজক কলায় রক্তে অবস্থিত হলেও এদের কাজের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
প্রশ্ন–৩ : নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. সিরাম কাকে বলে?
খ. একই ধরনের এন্টিজেন ও এন্টিবডি একই ব্যক্তির রক্তে থাকে না কেন?
গ. A চিত্রের অঙ্গাণুটির গঠন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কার্যকারিতার দিক থেকে B ও C এর ভূমিকা কি একই? বিশ্লেষণপূর্বক মতামত দাও।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রক্ত জমাট বাধার পর রক্তের জমাট অংশ থেকে হালকা হলুদ বর্ণের এক ধরনের স্বচ্ছ রস নিঃসৃত হয় তাকে সিরাম বলে।
খ. একজন ব্যক্তির রক্তে যে ধরনের অ্যান্টিজেন থাকে, কোনোভাবেই সেই একই ধরনের অ্যান্টিবডি তার রক্তে থাকতে পারে না। কারণ একই ধরনের অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি থাকলে এই অ্যান্টিবডি নিজেই নিজের লোহিত কণিকাকে আক্রমণ করে মৃত্যুর কারণ হয়ে যাবে। তাই একই ধরনের অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি একই ব্যক্তির রক্তে থাকে না।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত A চিত্রটি মানবদেহের হৃৎপিণ্ড। মানুষের হৃৎপিণ্ডটি বক্ষগহ্বরে ফুসফুস দুটির মাঝখানে এবং মধ্যচ্ছদার উপরে অবস্থিত। হৃৎপিণ্ডের প্রশস্ত প্রান্তটি উপরের দিকে এবং ছুঁচালো প্রান্তটি নিচের দিকে বিন্যস্ত থাকে। হৃৎপিণ্ডটি দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম পর্দা দ্বারা বেষ্টিত থাকে। উভয় স্তরের মাঝে পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড থাকে যা হৃৎপিণ্ডকে সংকোচনে সাহায্য করে।
মানুষের হৃৎপিণ্ডটি চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম নিলয় নামে পরিচিত। অলিন্দ দুটি আন্তঃঅলিন্দ পর্দা দিয়ে এবং নিলয় দুটি আন্তঃনিলয় পর্দা দিয়ে পৃথক থাকে। অলিন্দের প্রাচীর পাতলা এবং নিলয়ের প্রাচীর পুরু ও পেশিবহুল ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের মধ্যে ডান অলিন্দ-নিলয় ছিদ্র থাকে। ঐ ছিদ্রপথ ‘ট্রাইকাসপিড বা ত্রিপত্রী কপাটিকা যুক্ত। অনুরূপভাবে বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের মধ্যে বাম অলিন্দ নিলয় ছিদ্রপথ বাইকাসপিড বা দ্বিপত্রী কপাটিকা যুক্ত। কপাটিকা থাকার ফলে ডান অলিন্দে উর্ধ্ব মহাশিরা ও নিম্ন মহাশিরা, বাম অলিন্দে ফুসফুসীয় শিরা যুক্ত থাকে। এছাড়া ডান নিলয়ে ফুসফুসীয় ধমনি ও বাম নিলয়ে মহাধমনির উৎপত্তি হয়।
ঘ. উদ্দীপকে চিত্র- B হলো রক্তের লোহিত কণিকা এবং চিত্র- C হলো রক্তের অণুচক্রিকা। লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা উভয়েই রক্তকণিকা অর্থাৎ রক্তের উপাদান। তা সত্ত্বেও লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা দেহে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। লোহিত রক্তকণিকা দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা এর প্রধান কাজ। নিষ্কাশনের জন্য কিছু পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইডকে লোহিত রক্তকণিকা টিস্যু থেকে ফুসফুসে বহন করে। এছাড়া লোহিত রক্তকণিকা হিমোগ্লোবিনের সাহায্যে রক্তের অম্ল-ক্ষারের সমতা বজায় রাখার জন্য বাফার হিসেবে কাজ করে।
অপরদিকে, অণুচক্রিকার প্রধান কাজ হলো রক্ত তঞ্চন করা বা জমাট বাঁধানোতে সাহায্য করা। যখন কোনো রক্তবাহিকা বা কোনো টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কেটে যায়, তখন সেখানকার অনুচক্রিকাগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অনিয়মিত আকার ধারণ করে এবং থ্রম্বোপ্লাস্টিন তৈরি করে। থ্রম্বোপ্লাস্টিন রক্তের প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে পরিণত করে। পরবর্তীতে থ্রম্বিন রক্তরসের প্রোটিনের মাধ্যমে রক্ত জমাট বাধায়।
তাই বলা যায়, কার্যকারিতার দিক থেকে লোহিত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকার ভূমিকা একই নয় বরং ভিন্ন।
প্রশ্ন–৪: সুমন দীর্ঘদিন যাবৎ বক্ষগহ্বরের মাঝখানে, মধ্যচ্ছদার উপরে চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট অঙ্গে ব্যথা অনুভব করেন। আবার অসীমের রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা ৮০–১২০ মি.গ্রাম/ডেসি.লি এর চেয়ে বেশি। অন্যদিকে প্রবীরের দেহে এক ধরনের লিপিড বা স্টেরয়েড জাতীয় পদার্থ আছে যা যকৃত ও মগজে বেশি থাকে।
ক. প্লাজমা কাকে বলে?
খ. মানবদেহে দ্বি-অবতল ও চাকতি আকৃতির কণিকাটি অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সুমনের অঙ্গটি সুস্থ রাখার উপায়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রবীর ও অসীমের রোগ দুইটির মধ্যে কোনটি দীর্ঘস্থায়ী হলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? বিশ্লেষণ করো।
এসএসসি সকল বিষয় সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রায় ৯০% পানি ও ১০% বিভিন্ন রকমের জৈব ও অজৈব পদার্থ সমৃদ্ধ রক্তের তরল অংশকে প্লাজমা বলে।
খ. মানবদেহের দ্বি অবতল ও চাকতি আকৃতির কণিকাটি হলো লোহিত রক্ত কণিকা। এটি মূলত হিমোগ্লোবিন ভর্তি ভাসমান ব্যাগ ও চ্যাপ্টা আকৃতির। এ কারণে লোহিত কণিকা অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পরিবহনে সক্ষম।
গ. সুমন দীর্ঘদিন যাবৎ যে অঙ্গটিতে ব্যথা অনুভব করেন, সেটি হলো হৃৎপিণ্ড। গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গাটি কিছু নিয়ম মেনে চললে একে সুস্থ রাখা সম্ভব বলে আমি মনে করি। সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার ও পরিমিত আহার প্রণালি ও জীবন প্রণালী অনুসরণ করে হৃদযন্ত্রকে ঠিক রাখা যায়।
দেহের উচ্চতা ও বয়স অনুসারে কাঙ্ক্ষিত ওজন বজায় রাখতে হবে। দেহের ওজন বৃদ্ধি পেলে হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মিশ্রিত খাবার খেতে হবে। শর্করা, মিষ্টি ও স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। শাকসবজি ও আঁশ জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। উদ্ভিজ্জ তেল গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে। মাছ বেশি খেতে হবে। সামুদ্রিক মাছের তেল রক্তের কোলেস্টেরল কমায়।
ফলে খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ থাকা ভালো। ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা সুষম খাদ্যে যা আছে তাই গ্রহণ করতে হবে। খাবার লবণের। পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। রসুন, তেঁতুল, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ও অন্যান্য ফল নিয়মিত খেতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার মতো, নিয়মিত ও পরিমিত সুষম খাবার এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন প্রণালিই পারে হৃদযন্ত্র নামক অঙ্গটিকে সুস্থ ও সচল রাখতে।
এসএসসি সকল বিষয় নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. অসীম ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত এবং ডায়াবেটিস দীর্ঘস্থায়ী হলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
নিচে এগুলো ব্যাখ্যা করা হলো-
- খাদ্য নিয়ন্ত্রণ : ওজন বেশি হলে ওজন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। একটুও চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না। এমন খাবার খাওয়া উচিত যা প্রোটিনসমৃদ্ধ (গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, বরবটি, মাশরুম, বাদাম, ডিম, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ইত্যাদি) আর যাতে শ্বেতসার কম থাকে।
- ওষুধ সেবন : খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক রোগীদের এ দুটি নিয়ম যথাযথভাবে পালন করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। কিন্তু ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হয়।
- জীবন শৃঙ্খলা : শৃঙ্খলা বহুমূত্র রোগীর জীবন কাঠি। বিশেষ নজর দিতে হবে নিম্নোক্ত বিষয়ে-
i. নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে।
ii. নিয়মিত ও পরিমাণমতো ব্যায়াম করতে হবে।
iii. নিয়মিত প্রসাব পরীক্ষা এবং ফলাফল লিখে রাখতে হবে।
iv. মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ ছাড়তে হবে।
ডায়াবেটিস রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য রোগ নয় বলেই উপরে উল্লিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
প্রশ্ন-৫ : নিচের চিত্রগুলো লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. ধমনি কাকে বলে?
খ. কার্ডিয়াক চক্র বলতে কী বোঝায়?
গ. চিত্র-A এর গঠন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. চিত্র-B মানবদেহে কী ভূমিকা রাখতে পারে? বিশ্লেষণ করো।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে রক্তনালির মাধ্যমে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয় তাকে ধমনি বলে।
খ. হৃৎপিণ্ড একবার সংকোচন ও একবার প্রসারণের মাধ্যমে হৃদস্পন্দন বা হার্টবিট সম্পন্ন হয়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ ব্যক্তির হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে প্রায় ৭০-৮০ বার। প্রতি হৃদস্পন্দন সম্পন্ন করতে সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে যে চক্রাকার ঘটনা ঘটে তাকে কার্ডিয়াক চক্র বা হৃদচক্র বলে। প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তির গড়ে ৭৫ বার হার্ট বিট হয়, কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল ০৮ সেকেন্ড।
গ. উদ্দীপকের চিত্র-A হলো লোহিত রক্তকণিকা। নিচে এর গঠন ব্যাখ্যা করা হলো-
লোহিত রক্তকণিকা দ্বি-অবতল ও চাকতি আকৃতির। হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে এটি লাল বর্ণের হয়। লোহিত কণিকা প্রকৃতপক্ষে হিমোগ্লোবিন ভর্তি ভাসমান ব্যাগ এবং চ্যাপ্টা আকৃতির। লাহিত কণিকাগুলোর বিভাজন হয় না। এ কণিকাগুলো সার্বক্ষণিকভাবে প্রতি মিনিটে অস্থিমজ্জার ভিতরে উৎপন্ন হয় এবং রক্তরসে চলে আসে। মানুষের লোহিত কণিকার আয়ু প্রায় চার মাস অর্থাৎ ১২০ দিন। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের লোহিত রক্তকণিকাগুলো উৎপন্ন হওয়ার পর রক্তরসে আসার পূর্বে নিউক্লিয়াসবিহীন হয়ে যায়। অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে এরকম ঘটে না অর্থাৎ এদের লোহিত কণিকাগুলোতে নিউক্লিয়াস থাকে লোহিত কণিকা প্লিহা তে সঞ্চিত থাকে।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্র-B হলো অণুচক্রিকা। অণুচক্রিকা মানবদেহে রক্ততঞ্চনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে দেহের কোনো অংশ কেটে গিয়ে রক্তক্ষণ হওয়া শুরু হলে অনুচক্রিকা তা জমাট বাধায় ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। এ প্রক্রিয়াকে বলে রক্ততঞন প্রক্রিয়া। দেহের ক্ষতস্থানে অনুচক্রিকাগুলো ভেঙে গিয়ে থ্রম্বোপ্লাস্টিন তৈরি করে। এ পদার্থগুলো রক্তের আমিষ প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে পরিণত করে। থ্রমবিন পরবর্তীতে রক্তরসের প্রোটিন-ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে পরিণত করে রক্তের তঞ্চন ঘটায় । ফাইব্রিন এক ধরনের অদ্রবণীয় প্রোটিন, যা দ্রুত সুতার মতো জালিকা প্রস্তুত করে। এটি ক্ষত স্থানে জমাট বাঁধে এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করে।
অনুচক্রিকা না থাকলে রক্তজমাট বাঁধতো না। ফলে দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তা আর থামতো না। এতে মানুষ মৃত্যুবরণ করতো। তাই বলা যায়, মানবদেহে B এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন-৬ : ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতেই আশিক দম্পত্তি চোখে পড়ে দেয়ালে টাঙানো হাতে আঁকা হৃৎপিণ্ডের চিত্রের দিকে। যার মাধ্যমে সারা দেহে রক্ত সালিত হয়। এই দম্পতির প্রথম সন্তান সুস্থ হলেও পরবর্তী গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। ডাক্তার তাদের রক্ত পরীক্ষা করে Rh ফ্যাক্টরের জটিলতার কথা বললেন।
ক. রক্ত কণিকা কাকে বলে?
খ. থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত হলে দেহে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় কেন?
গ. উদ্দীপকের অঙ্গের সঞ্চালন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ডাক্তারের বলা কথাটি আশিক দম্পতির জন্য কতটুকু যৌক্তিক? বিশ্লেষণ করো।
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. রক্তরসের মধ্যে ছড়ানো বিভিন্ন রকমের কোষকে রক্ত কণিকা বলে।
খ. থ্যালাসিমিয়া এক ধরনের বংশগত রক্তের রোগ। এ রোগটি মানুষের অটোজোমে অবস্থিত প্রচ্ছন্ন জিনের দ্বারা ঘটে। থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকা হিমোগ্লাবিনের অস্বাভাবিকতায় লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যায়। ফলে লোহিত কণিকার অভাবে রোগীর দেহে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অঙ্গটি হলো মানব হৃৎপিণ্ডের। মানব হৃৎপিণ্ড চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট। উপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম অলিন্দ এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে ডান ও বাম নিলয় বলে। এ প্রকোষ্ঠগুলোর সংকোচন ও প্রসারণের ফলেই হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন হয়ে থাকে ।
এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন হলে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনি পথে দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয়। আবার হৃৎপিণ্ডে যখন প্রসারণ ঘটে তখন দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত শিরা পথে হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে আবার হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে সঞ্চালিত হয়। হৃৎপিণ্ডের প্রসারণ অবস্থায় দেহের উর্ধ্বাঙ্গ থেকে উর্ধ মহাশিরা, নিম্নাঙ্গ থেকে নিম্ন মহশিরা পথে কার্বন ডাইঅক্সাইডযুক্ত রক্ত প্রথমে ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। অপর পক্ষে ফুসফুসীয় শিরা ফুসফুস থেকে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত প্রথমে বাম অলিন্দে বহন করে নিয়ে আসে। বাম অলিন্দ থেকে বাম নিলয়ে ঐ রক্ত পরে প্রবেশ করে। নিলয়দ্বয় রক্তপূর্ণ হলে সংকুচিত হয় এবং নিলয়ে রক্তের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে অলিন্দ নিলয় কপাটিকা যথা দ্বিপত্রী ও ত্রিপত্রী কপাটিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতি কপাটিকাগুলো খুলে যায়। ফলে ডান নিলয় থেকে ফুসফুসীয় ধমনি পথে দৃষিত রক্ত ফুসফুসে এবং বাম নিলয় থেকে বিশুদ্ধ রক্ত মহাধমনিতে প্রবেশ করে এবং দেহের বিভিন্ন অংশে চলে যায় । নিলয়দ্বয়ের সংকোচন অবস্থায় অলিন্দদ্বয়ের প্রসারণ ঘটে, ফলে রক্ত আবার অলিন্দে প্রবেশ করে।
এভাবে অলিন্দ ও নিলয়ের সংকোচন এবং প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালিত হয়।
ঘ. উদ্দীপকে ডাক্তার আশিক দম্পতির বিবাহিত জীবনে Rh-ফ্যাক্টরের জটিলতা সম্পর্কে বললেন। Rh ফ্যাক্টর লোহিত রক্তকণিকায় অবস্থিত এক ধরনের অ্যাগ্লুটিনোজেন। যেসব মানুষের রক্তে Rh ফ্যাক্টর উপস্থিত, তাদের Rh+ (Rh পজিটিভ) এবং যাদের রক্তে Rh ফ্যাক্টর অনুপস্থিত, তাদের Rh– (Rh ফ্যাক্টর নেগেটিভ) বলে। সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন Rh– (Rh নেগেটিভ) মহিলার সঙ্গে Rh+ ( Rh পজিটিভ) পুরুষের বিয়ে হলে তাদের প্রথম সন্তান হবে Rh+, কারণ Rh+ একটি প্রকট বৈশিষ্ট্য। ভ্রূণ
অবস্থায় সন্তানের Rh+ ফ্যাক্টরযুক্ত লোহিত কণিকা অমরার মাধ্যমে রক্তে এসে পৌঁছাবে ফলে মায়ের রক্ত Rh– হওয়ায় তার রক্তরসে অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর (অ্যান্টিবডি) উৎপন্ন হবে। অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর মায়ের রক্ত থেকে অমরার মাধ্যমে ভ্রূণের রক্তে প্রবেশ করে ভ্রূণের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে। ফলে ভ্রূণও বিনষ্ট হয় এবং গর্ভপাত ঘটে। এ অবস্থায় শিশু জীবিত থাকলেও তার দেহে প্রচণ্ড রক্তস্বল্পতা এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়। যেহেতু Rh বিরোধী অ্যান্টিবডি মাতৃদেহে খুব ধীরে ধীরে উৎপন্ন হয়, তাই প্রথম সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না এবং সুস্থ জন্মায়। কিন্তু পরবর্তী গর্ভধারণ থেকে জটিলতা শুরু হয় এবং ভ্রূণ এতে মারা যায়। সুতরাং উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় রক্তে উপস্থিত Rh ফ্যাক্টর বিবাহিত দম্পতির সন্তানের সুস্থতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্ন–৭: রাতুলের রক্তের গ্রুপ A পজেটিভ। তার বন্ধু রাহির রক্তের গ্রুপ O নেগেটিভ। তাদের অপর বন্ধু রাজিবের ইদানিং ঘনঘন প্রস্রাব, বেশি পিপাসা, ক্ষত দেরিতে শুকানো, ডাক্তার পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর নিয়মিত ঔষধ ও শৃঙ্খলাবোধ জীবনযাপনের পরামর্শ দিলেন।
ক. হার্ট অ্যাটাক কাকে বলে?
খ, সন্তান সম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর গুরুত্বপর্ণ কেন?
গ. রাহি কি তার বন্ধু রাতুলকে রক্তদান করতে পারবে? বর্ণনা করো।
ঘ, রাজিবকে ডাক্তারের পরামর্শের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে হৃদপেশির রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে যে রোগ সৃষ্টি হয় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে।
খ. সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর মায়ের রক্ত থেকে অমরার মাধ্যমে ভুণের রক্তে প্রবেশ করে ভুণের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে। ফলে ভ্রূণ বিনষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটে। এ অবস্থায় শিশু জীবিত থাকলেও তার দেহে প্রচণ্ড রক্তস্বল্পতা এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়।
গ. উদ্দীপকের রাহি তার বন্ধু রাতুলকে রক্ত দান করতে পারবে । রাহির রক্তের গ্রুপ O নেগেটিভ আর রাতুলের A পজিটিভ। কোনো ব্যক্তির রক্তের লোহিত কণিকায় যে অ্যান্টিবডি রয়েছে সেই ধরনের অ্যান্টিজেনযুক্ত রক্ত তার দেহে প্রবেশ করালে অ্যান্টিবডি তখন লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে গুচ্ছবদ্ধ করে দেবে। যেমন A গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন A রয়েছে এবং B গ্রুপের রক্তে রয়েছে একই ধরনের অ্যান্টিবডি A। তাই A গ্রুপের রক্ত B গ্রুপের রক্তধারীকে দান করলে তার রক্ত গুচ্ছবদ্ধ হয়ে সে মারা যেতে পারে। এজন্য O গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন না থাকা এ রক্ত সবাইকে দান করা যায়। আবার AB গ্রুপের রক্তে A ও B উভয় অ্যান্টিজেন থাকায় তা AB গ্রুপের রক্তধারী ছাড়া কাউকে দান করা যায় না। আবার রক্ত দানের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। Rh ফ্যাক্টর পজেটিভ ও নেগেটিভ দুই ধরনের হয়। Rh+ রক্ত Rh+ রক্তধারীকে প্রদান করা গেলেও Rh– রক্তধারীকে প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। প্রথমবার কোনো প্রতিক্রিয়া না হলেও দ্বিতীয়বার প্রদানে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে, ফলে রক্ত জমাট বেধে যাবে। এক্ষেত্রে Rh– রক্ত যে কাউকে প্রদান করা যায়, এতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না। রাহির রক্তগ্রুপ O নেগেটিভ হওয়ায় তা সকলকে দান করা যাবে, অর্থাৎ এই রক্ত কারো দেহে অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি জাতীয় সমস্যাও সৃষ্টি করবে না এমনকি Rh ফ্যাক্টর জাতীয় জটিলতা সৃষ্টি করবে না। তাই রাহি তার বন্ধু রাতুলকে রক্ত দান করতে পারবে।
ঘ. ডাক্তার সাহেব রাজিবকে সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলার উপদেশ দিয়েছিলেন। যেহেতু রাজিবের বহুমূত্র রোগ হয়েছে সেহেতু তাকে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শৃঙ্খলা মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। ডাক্তার সাহেব তাকে শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিচে এগুলো ব্যাখ্যা করা হলো—
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ : রাজিবের ওজন বেশি হলে তাকে ওজন স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। তার একটুও চিনি বা মিষ্টি খাওয়া চলবে না। এমন খাবার তার খাওয়া উচিত যা প্রোটিনসমৃদ্ধ (গাঢ় সবুজ রঙের শাক-সবজি, বরবটি, মাশরুম, বাদাম, ডিম, মাছ, চর্বি ছাড়া মাংস ইত্যাদি) আর যাতে শ্বেতসার কম থাকে।
ওষুধ সেবন : রাজিবকে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স্ক রোগীদের এ দুটি নিয়ম যথাযথভাবে পালন করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। কিন্তু ইনসুলিন নির্ভর রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশনের দরকার হয়।
জীবন শৃঙ্খলা : শৃঙ্খলা বহুমূত্র রোগীর জীবন কাঠি। তাকে বিশেষ নজর দিতে হবে নিম্নোক্ত বিষয়ে-
i. নিয়মিত ও পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে।
ii. নিয়মিত ও পরিমাণমতো ব্যায়াম করতে হবে।
iii. নিয়মিত প্রসাব পরীক্ষা এবং ফলাফল লিখে রাখতে হবে।
iv. মিষ্টি খাওয়া সম্পূর্ণ ছাড়তে হবে।
বহুমূত্র রোগ সম্পূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য রোগ নয় বলেই ডাক্তার সাহেব রাজিবকে শৃঙ্খলা পালন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সুতরাং ডাক্তারের পরামর্শ সঠিক ও যৌক্তিক ছিল।
প্রশ্ন–৮: A– ব্লাড গ্রুপযুক্ত প্রজ্ঞার সাথে B+ ব্লাড গ্রুপযুক্ত ফাহাদের বিয়ে হয়। এদিকে প্রজ্ঞার বাবা রাস্তায় পড়ে গেলে পা কেটে যায়। কিছুদিন অতিবাহিত হলেও তার ক্ষতস্থান শুকায় না। তিনি আরও লক্ষ করেন যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও তার ওজন কমে যাচ্ছে।
ক. রক্ত কাকে বলে?
খ. হার্ট অ্যাটাক উচ্চ রক্তচাপের কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. প্রজ্ঞার বাবা কোন রোগে আক্রান্ত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ, সন্তানলাভের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা ও ফাহাদ দম্পত্তির ভবিষ্যতে কী সমস্যা হতে পারে বলে তুমি মনে করো?
জেএসসি ও এসএসসি সকল বিষয়ের নোট পেতে এখানে ক্লিক করুন
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাণিদেহের এক ধরনের লাল বর্ণের অস্বচ্ছ আন্তঃকোষীয় লবণাক্ত ও ক্ষারধর্মী তরল যোজক কলাকে রক্ত বলে।
খ. হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপের প্রভাবে সৃষ্ট চাপের দ্বারা হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্ত চলাচল মন্থর হয়ে যায়। ধমনিতে চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থ জমে রক্ত চলাচলের পথকে সংকীর্ণ করে দেয়। এসব পদার্থ জমে রা রক্ত জমাট বেধে ধমনি বন্ধ হয়ে গেলে হৃদপেশিতে রক্ত সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।
গ. প্রজ্ঞার বাবার লক্ষণগুলো দেখে বুঝা যায় যে, তার বহুমূত্র রোগ হয়েছে। বহুমূত্র এক প্রকার বিপাকজনিত রোগ। মানবদেহের রক্তে গ্লুকোজের স্বাভাবিক মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এ রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়। এ রোগের লক্ষণসমূহ হলো-
i. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে ।
ii. খুব বেশি পিপাসা লাগা।
iii. খুব ক্ষিদে পাওয়া এবং অতিমাত্রায় শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা।
iv. যথেষ্ট খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া।
v. সামান্য পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া এবং দুর্বল অনুভব করা।
vi. চামড়া শুকিয়ে যাওয়া।
vii. চোখে ঝাপসা দেখা।
vi. শরীরের কোথাও ক্ষতের সৃষ্টি হলে দেরিতে শুকানো।
এছাড়াও বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন-হৃৎপিণ্ড, বৃক্ক, চোখ ইত্যাদির স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি হয়।
ঘ. উদ্দীপকের প্রজ্ঞার রক্তের গ্রুপ A– (নেগেটিভ) এবং ফাহাদের রক্তের গ্রুপ B+ (পজেটিভ)। রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হবে নাকি নেগেটিভ হবে তা নির্ভর করে আর এইচ ফ্যাক্টরের (Rh factor) ওপর। স্বামী ও স্ত্রীর ক্ষেত্রে রক্তের Rh factor এক রকম থাকতে হয়। স্বামীর Rh+ হলে স্ত্রীরও Rh+ হতে হবে। তবে স্ত্রীর Rh+ হলে এবং স্বামীর Rh– হলে কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং উদ্দীপকের প্রজ্ঞার সাথে ফাহাদের বিয়ে হলে তাদের প্রথম সন্তানের রক্ত Rh+ হবে, কারণ এটি প্রকট বৈশিষ্ট্য। সন্তান প্রসব করার সময় Rh+ রক্ত অমরার মাধ্যমে প্রজ্ঞার রক্তে এসে পৌছাবে এবং তার দেহে Rh+ অ্যান্টি ফ্যাক্টর উৎপন্ন হবে। দ্বিতীয় সন্তান গ্রহণের সময় এই অ্যান্টিফ্যাক্টর প্রজ্ঞার রক্ত থেকে অমরার মাধ্যমে তার ভ্রূণে প্রবেশ করলে ভ্রূণের লোহিত কণিকাকে ধ্বংস করে ভ্রূণকে নষ্ট করে। ফলে গর্ভপাত হয়। শিশু যদি জীবিত থাকে তবে তার দেহে প্রচণ্ড রক্ত স্বল্পতা ও জন্মের পর জণ্ডিস রোগ দেখা দেবে।
সুতরাং সন্তানলাভের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা ও ফাহাদ দম্পতি উপরোক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে পারে বলে আমি মনে করি।