বিজ্ঞান
দ্বিতীয় অধ্যায়-জীবনের জন্য পানি
WATER FOR LIFE
- পানি : পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবীপৃষ্ঠের শতকরা ৭৫ ভাগই পানি। বিশুদ্ধ পানি স্বাদহীন, গন্ধহীন ও বর্ণহীন হয়।
- স্ফুটনাঙ্ক : বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো তরল পদার্থ যে তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয় তাকেই স্ফুটনাঙ্ক বলে।
- গলনাঙ্ক : যে তাপমাত্রায় কোনো পদার্থ গলতে শুরু করে সেটিই হলো গলনাঙ্ক। যেমন- বরফের গলনাঙ্ক 0° সেলসিয়াস।
- পানির স্ফুটনাঙ্ক : পানির স্ফুটনাঙ্ক হলো ৯৯.৯৮° সেলসিয়াস, যা ১০০° সেলসিয়াসের খুব কাছাকাছি। তাই পানির স্ফুটনাঙ্ক আমরা ১০০° সেলসিয়াস বলে থাকি।
- পানির ঘনত্ব : ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সর্বোচ্চ হয়, আর সেটি হলো ১ গ্রাম/সি.সি।
- পানির তড়িৎ পরিবাহিতা : বিশুদ্ধ পানি সাধারণত তড়িৎ পরিবহন করে না তবে এতে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ (যেমন : লবণ, এসিড) থাকলে তড়িৎ পরিবহন করে।
- পানির সংকেত : পানির সংকেত হলো H2O অর্থাৎ পানি দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত।
- Marine water বা লোনা পানি : যে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে সেটিই হলো Marine water বা লোনা পানি। যেমন : সমুদ্রের পানি হলো লোনা পানি।
- pH : pH হলো এমন একটি রাশি, যার দ্বারা বােঝা যায় পানি বা জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ।
- মরা নদী (Dead River) : যে নদীতে অক্সিজেনের অভাবে মাছসহ সকল প্রাণী মারা যায় এবং নদী শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে যায় সেই নদী হলো মরা নদী (Dead River)।
- পরিস্রাবণ : পরিস্রাবণ হলো কঠিন ও তরল পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া।
- ETP অর্থ : ETP অর্থ হলো Effluent Treatment plant অর্থাৎ, বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা।
- পরিবেশ সংরক্ষণে পানির ভূমিকা : পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান ও প্রক্রিয়া যেহেতু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পানির ওপর নির্ভরশীল তাই পরিবেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে পানি অপরিহার্য। পানি না থাকলে গাছপালা জন্মাবে না, ফসল উৎপাদন হবে না ফলে আমাদের অস্তিত্ব তথা পুরো পরিবেশই ধ্বংস হয়ে যাবে।
- রামসার কনভেনশন (Ramsar Convention) : ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে ইরানের রামসারে ইউনেস্কোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া জলাভূমি-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তসমূহ হলো রামসার কনভেনশন।
* জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর *
১। স্ফুটনাঙ্ক কী?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোনো তরল পদার্থ যে তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয় তাকেই ফুটনাঙ্ক বলে।
২। গলনাঙ্ক কাকে?
উত্তর : যে তাপমাত্রায় কোনো পদার্থ গলতে শুরু করে সেটিই হলো গলনাঙ্ক। যেমন : বরফের গলনাঙ্ক ০° সেলসিয়াস।
৩। সর্বজনীন দ্রাবক কাকে বলে?
উত্তর : পানি বেশির ভাগ অজৈব যৌগ এবং জৈব যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে। এজন্য পানিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলে ।
৪। বিশুদ্ধ পানির pH এর মান কত?
উত্তর : বিশুদ্ধ পানি পুরোপুরি নিরপেক্ষ অর্থাৎ, এর PH এর মান হলো
৫। মরা নদী (Dead River) কাকে বলে?
উত্তর : যে নদীতে অক্সিজেনের অভাবে মাছসহ সকল প্রাণী মারা যায় এবং নদীর পানি শুকিয়ে পানিশূন্য হয়ে যায়, সেই নদী হলো মরা নদী (Dead River)।
নবম দশম শ্রেণি সকল বিষয় নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
৬। পানির স্ফুটনাঙ্ক কত?
উত্তর : পানির স্ফুটনাঙ্ক হলো ৯৯.৯৮° সেলসিয়াস, যা ১০০° সেলসিয়াসের খুব কাছাকাছি। তাই হিসাবের সুবিধার জন্য পানির স্ফুটনাঙ্ক আমরা ১০০° সেলসিয়াস বলে থাকি।
৭। পানির স্ফুটনাঙ্ক কাকে বলে?
উত্তর : বায়ুমণ্ডলীয় চাপে পানি যে তাপমাত্রায় বাষ্পে পরিণত হয়, তাকে পানির স্ফুটনাঙ্ক বলে।
৮। ব্লিচিং পাউডারের সংকেত কী?
উত্তর : ব্লিচিং পাউডারের সংকেত Ca(OCl)Cl,
৯। আর্সেনিক কী?
উত্তর : আর্সেনিক পানিতে মিশ্রিত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। এর প্রভাবে আর্সেনিকোসিস, ত্বক ও ফুসফুসে ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ হতে পারে।
১০। পানিতে দ্রবীভূত কোন গ্যাসের সাথে গুকোজ বিক্রিয়া করে?
উত্তর : পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্যাসের সাথে গ্লুকোজ বিক্রিয়া করে CO2, পানি ও তাপ উৎপন্ন করে।
১১। বাংলাদেশে সাধারণত কোন মাসে টর্নেডো হয়ে থাকে?
উত্তর : বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ মাসে (এপ্রিল-মে) টর্নেডো হয় ।
১২। পাতন কাকে বলে?
উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় কোনো তরল পদার্থকে উত্তাপে বাষ্পীভূত করে পরে ঐ বাম্পকে ঘনীভূত করে বিশুদ্ধ তরলে পরিণত করা হয় তাকে পাতন বলে।
১৩। বিশুদ্ধ পানি কাকে বলে?
উত্তর : বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন জীবাণুমুক্ত পানিকে বিশুদ্ধ পানি বলে।
১৪। পানি কী?
উত্তর : পানি হলো দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত একটি তরল পদার্থ।
১৫। পানির ঘনত্ব কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : পানির ঘনত্ব সাধারণত তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে।
১৬। পানির ঘনত্ব কত?
উত্তর : ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সর্বোচ্চ হয়, আর সেটি হলো ১ গ্রাম/সি.সি।
১৭। পানির ঘনত্ব ১ গ্রাম/সি.সি অর্থ কী?
উত্তর : পানির ঘনত্ব ১ গ্রাম/সি.সি অর্থ হলো ১ সি.সি পানির ভর ১ গ্রাম।
১৮। পানির ঘনত্ব ১০০০ কেজি /মিটার৩ অর্থ কী?
উত্তর : পানির ঘনত্ব ১০০০ কেজি/মিটার৩ অর্থ হলো ১ কিউবিক মিটার পানির ভর হলো ১০০০ কেজি।
১৯। পানির তড়িৎ পরিবাহিতা কেমন?
উত্তর : বিশুদ্ধ পানি সাধারণত তড়িৎ পরিবহন করে না তবে এতে তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ (যেমন : লবণ, এসিড) থাকলে তড়িৎ পরিবহন করে।
২০। পানির সংকেত লেখ।
উত্তর : পানির সংকেত হলো H2O অর্থাৎ পানি দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত।
২১। পানির সবচেয়ে বড় উৎস কী?
উত্তর : পানির সবচেয়ে বড় উৎস হলো সাগর, মহাসাগর বা সমুদ্র। পৃথিবীতে যত পানি পাওয়া যায় তার শতকরা ৯০ ভাগেরই উৎস হলো সমুদ্র।
২২। Marine water বা লোনা পানি কী?
উত্তর : যে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে সেটিই হলো Marine water বা লোনা পানি। যেমন : সমুদ্রের পানি হলো লোনা পানি।
২৩। বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী পানির পরিমাণ শতকরা কত ভাগ?
উত্তর : বাংলাদেশে যে পানি আছে তার মধ্যে ব্যবহার উপযোগী পানির পরিমাণ হলো শতকরা ১ ভাগ।
২৪। জলজ উদ্ভিদ কোথায় জন্মে?
উত্তর : বেশির ভাগ জলজ উদ্ভিদ পানিতে জন্মায় কিন্তু কিছু কিছু জলজ উদ্ভিদ (কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম) পানিতে ও মাটিতে দু’জায়গাতেই জন্মায়।
২৫। পানি ঘোলা হওয়ার মূল কারণ কী?
উত্তর : পানি ঘোলা হওয়ার মূল কারণ হলো পানিতে অদ্রবণীয় পদার্থ যেমন ; মাটি, বালি, তেল, গ্রিজ ইত্যাদির উপস্থিতি।
২৬। জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য পানিতে কী পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন?
উত্তর : জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে ন্যূনতম ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন।
২৭। পানিতে তাপমাত্রার প্রভাব কী?
উত্তর : পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে একদিকে যেমন দবীভূত অক্সিজেন কমে যায়, অন্যদিকে জলজ প্রাণীসমূহের প্রজনন থেকে শুরু করে নানা শারীরবৃত্তীয় কাজেও সমস্যা হয় ।
২৮। pH কী?
উত্তর : pH হলো এমন একটি রাশি, যার দ্বারা বোঝা যায় পানি বা জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ।
২৯। পানি বিশুদ্ধকরণ কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : পানি বিশুদ্ধকরণ কীভাবে করা হবে তা নির্ভর করে মূলত এটি কোন কাজে ব্যবহৃত হবে তার ওপর।
৩০। পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়াসমূহ কী কী?
উত্তর : যে সমস্ত প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ করা হয় সেগুলো হলো : পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন, স্ফুটন, পাতন ইত্যাদি।
৩১। পরিস্রাবণ কী?
উত্তর : পরিস্রাবণ হলো কঠিন ও তরল পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া। |
৩২। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য কী ধরনের জীবাণনাশক ব্যবহার করা হয়।
উত্তর : পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য নানা রকম জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে অন্যতম হলো ক্লোরিন গ্যাস (Cl2)। এছাড়া ব্লিচিং পাউডার Ca(OCl)CI বা ক্লোরিন আছে এমন কিছু পদার্থও ব্যবহার করা হয়।
৩৩। সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডের সংকেত লেখ।
উত্তর : সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইডের সংকেত হলো NaOCl. এটি মূলত পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩৪। কয়েকটি পানিবাহিত রোগের নাম লেখ।
উত্তর : টাইফয়েড জ্বর, কলেরা, আমাশয়, সংক্রামক হেপাটাইটিস-বি ইত্যাদি হলো কয়েকটি পানিবাহিত রোগের নাম।
৩৫। পানিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর ধাতব পদার্থসমূহের নাম উল্লেখ কর।
উত্তর : পানিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর ধাতব পদার্থসমূহ হলো : মারকারি, সিসা, আর্সেনিক ইত্যাদি।
৩৬। আর্সেনিকের প্রভাবে মানুষের শরীরে কীরূপ প্রভাব দেখা দেয়?
উত্তর : আর্সেনিকের কারণে মানুষের ত্বক ও ফুসফুসের ক্যান্সার, পাকস্থলীর রোগ ইত্যাদি হতে পারে।
৩৭। কয়েকটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের নাম লেখ।
উত্তর : তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ হলো : ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, সিজিয়াম, রেডন ইত্যাদি।
৩৮। তেজস্ক্রিয় পদার্থ জীবদেহে কী ধরনের প্রভাব ফেলে।
উত্তর : তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ জীবদেহে নানা প্রকার ক্যান্সার ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ সৃষ্টি করে।
৩৯। ETP অর্থ কী?
উত্তর : ETP অর্থ হলো Effluent Treatment plant অর্থাৎ, বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা।
৪০। নদীভাঙনের ফলে সৃষ্ট মাটি কোথায় যায়?
উত্তর : নদীভাঙনের ফলে সৃষ্ট মাটি পানির স্রোতে মিশে যায় এবং এক পর্যায়ে নদীর তলায় জমা হয় ও নদী ভরাট হয়ে যায় ।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১। পানির পুনঃআবর্তন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : দিনের বেলা সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং এক পর্যায়ে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ ও পরে তা বৃষ্টি আকারে ফিরে আসে। আবার এই বৃষ্টির পানির বড় একটি অংশ নদ-নদী, খাল-বিলে ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যায় ও বৃষ্টি আকারে ফিরে আসে। পানির এই চক্রকেই পানির পুনঃআবর্তন বলে।
২। গ্রিন হাউস গ্যাস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : কার্বন ডাইঅক্সাইডসহ ওজোন, মিথেন, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প গ্রিন হাউস গ্যাস নামে পরিচিত। গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩। জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেসে যায় না কেন?
উত্তর : জলজ উদ্ভিদসমূহ সারা দেহের মাধ্যমে পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। এসব জলজ উদ্ভিদের কাণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খুবই নরম প্রকৃতির হয়। শুরু থেকেই এসব জলজ উদ্ভিদ স্রোতের সাথে খাপ খাইয়ে বেড়ে ওঠে। তাই জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেসে যায় না।
৪। ক্লোরিনেশন বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : ক্লোরিনেশন হচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া। ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়ায় ক্লোরিনযুক্ত বিভিন্ন পদার্থ যেমন ক্লোরিন গ্যাস (Cl2), ব্লিচিং পাউডার [Ca(OCl)Cl] প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। পানিতে বিদ্যমান বিভিন্ন জীবাণু ধ্বংস করতে এসব পদার্থ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বন্যার সময় পানি বিশুদ্ধকরণে ব্যবহৃত ট্যাবলেট বা সোডিয়াম হলো হাইপোক্লোরাইড। এতে বিদ্যমান ক্লোরিন পানিতে থাকা রোগজীবাণুকে ধ্বংস করে। এভাবে ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধ করা হয়।
৫। পানির নির্দিষ্ট মান বজায় থাকা জরুরি কেন?
উত্তর : পানির মানদণ্ড বলতে মূলত এর বর্ণ, স্বাদ, ঘোলাভাব, পানিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি, এতে বিদ্যমান ময়লা-আবর্জনা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, PH প্রভৃতিকে বোঝায়। পানি অত্যন্ত মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। পানি জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আশ্রয়স্থল। আমরা কৃষিকাজ থেকে শুরু করে জীবনযাপনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পানি ব্যবহার করে থাকি। যদি পানির নির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকে তাহলে এসব কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে অর্থাৎ জীবজগৎ বা পরিবেশের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত হবে। তাই পানির নির্দিষ্ট মানদণ্ড বজায় থাকা প্রয়োজন।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৬। পানির বিশুদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন জীবাণুমুক্ত পানিকে বিশুদ্ধ পানি বলে। ভূপৃষ্ঠে যে পানি পাওয়া যায় তাতে নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এমনকি রোগ সৃষ্টি করে এ ধরনের জীবন ধ্বংসকারী জীবাণুও থাকে। আবার ভূগর্ভস্থ পানি সাধারণত রোগজীবাণুমুক্ত হলেও এ পানিতে নানা রকম ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের (যেমন- আর্সেনিক) উপস্থিতি এখন সর্বজনবিদিত। তাই ব্যবহারের পূর্বে পানি বিশুদ্ধকরণের প্রয়োজন হয়। পানি বিশুদ্ধকরণ নির্ভর করে মূলত এটি কোন কাজে ব্যবহূত হবে তার ওপর। যেসব প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ করা হয় সেগুলো হলো পরিস্রাবণ, ক্লোরিনেশন, স্ফুটন, পাতন ইত্যাদি।
৭। পানিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয় কেন?
উত্তর : পানির একটি বিশেষ ধর্ম হলো এটি বেশির ভাগ অজৈব যৌগ ও অনেক জৈব যৌগকে দ্রবীভূত করতে পারে। এজন্য একে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয়।
৮। ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় মিঠা পানিতে আসে কেন?
উত্তর : ইলিশ সামুদ্রিক তথা লবণাক্ত পানির মাছ হলেও ডিম ছাড়ার সময় অর্থাৎ প্রজননের সময় মিঠা পানিতে আসে, কারণ হলো সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে যা ডিমকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে ওই ডিম থেকে আর পোনা মাছ তৈরি হতে পারে না। তাই প্রকৃতির নিয়মেই ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় হলে মিঠা পানিতে আসে।
৯। জলজ উস্কিদের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না কেন?
উত্তর : সাধারণত জলজ উদ্ভিদসমূহ পানিতে জন্মায়। জলজ উদ্ভিদগুলোর কাণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যা জলজ প্রাণীর পানির স্রোতে চলাচলের জন্য মানানসই। পানি ছাড়া স্থলভাগে এদের জন্ম হলে এরা ভেঙে পড়ত এবং বেড়ে উঠতে পারত না, এমনকি বাচতেও পারত না। জলজ উদ্ভিদসমূহ সাধারণত অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করে থাকে। পানি না থাকলে এটি বাধাগ্রস্ত হতো। অতএব আমরা বলতে পারি, জলজ
উদ্ভিদসমূহের বেড়ে ওঠার জন্য পানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০। রামসার কনভেনশন বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে ইরানের রামসারে ইউনেস্কোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেওয়া জলাভূমি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তসমূহ হলো রামসার কনভেনশন। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এই সমঝোতা চুক্তিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে স্বাক্ষর করে। তবে পরবর্তীতে ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে রামসার কনভেনশন সংশোধন করা হয়।
১১। মাছ ধরে পানির বাইরে রেখে দিলে কী হয় এবং কেন?
উত্তর : মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে ফুলকার মাধ্যমে। আর ফুলকা এমনভাবে তৈরি যে এটি শুধু পানি থেকেই অক্সিজেন নিতে পারে, বাতাস থেকে নয়। তাই মাছ ধরে পানির বাইরে রাখা হলে, মাছ বাঁচতে পারে না।
১২। খর ও মৃদু পানির বৈশিষ্ট্যের তুলনা কর ।
উত্তর : খর পানি ও মৃদু পানির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। নিচে খর পানি ও মৃদু পানির বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
খর পানি | মৃদু পানি |
i. যে পানি সাবানের সঙ্গে সহজেই ফেনা উৎপন্ন করে না তাকে খর পানি বলে। | i, যে পানি সাবানের সঙ্গে সহজে ফেনা উৎপন্ন করে তাকে মৃদু পানি বলে। |
ii. খর পানি ব্যবহারে সাবান ও পানির অপচয় বেশি হয়। | ii. মৃদু পানি ব্যবহারে সাবান ও পানির অপচয় কম হয়। |
iii. খর পানি ব্যবহার করলে গৃহে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। | iii. মৃদু পানি যন্ত্রপাতি নষ্ট করে না। |
iv. খর পানি কাপড়ের রঙ নষ্ট করে। | iv. মৃদু পানি কাপড়ের রঙ নষ্ট করে না। |
১৩। হাইড্রোজেন মৌলের সাথে অপর পাঁচটি মৌল বিক্রিয়া করে গঠিত ৫টি যৌগের নাম লেখ।
উত্তর : হাইড্রোজেন মৌলের সাথে অপর পাঁচটি মৌল বিক্রিয়া করে গঠিত ৫টি যৌগ হলো:
H2O, NH3, HCI, H2SO4, H3PO4.
১৪। বস্তিবাসী শিশুরা অধিকাংশ সময় পেটের পীড়ায় ভোগে– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বস্তিবাসী শিশুরা অধিকাংশ সময় পেটের পীড়ায় ভোগে দূষিত পানি পানের কারণে। বস্তি এলাকা সাধারণত অপরিকল্পিত ও আবর্জনাময় হয়ে থাকে। এইসব এলাকায় থাকা প্রতিটি পানির উৎসই দূষিত হয়ে থাকে। এসব দূষিত পানির উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে রান্না করলে, পান করলে কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করলে তা থেকে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ও পেটের পীড়া সৃষ্টি হয়। যেহেতু বস্তি এলাকার অধিকাংশ পানির উৎস দূষিত হয়ে থাকে, সেহেতু বস্তিবাসী বিশেষ করে শিশুরা অধিকাংশ সময় পেটের পীড়ায় ভোগে।
নবম দশম শ্রেণি সকল বিষয় নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
১৫। গলনাঙ্ক বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পানি যখন কঠিন অবস্থায় থাকে তখন সেটিকে আমরা বরফ বলি। যে তাপমাত্রায় বরফ গলে যায় সেই তাপমাত্রা হলো গলনাঙ্ক। যেমন : বরফের গলনাঙ্ক হলো 0° সেলসিয়াস।
১৬। পানির ঘনত্ব বলতে কী বোঝ?
উত্তর : পানির ঘনত্ব তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব সর্বোচ্চ হয় আর সেটি হলো ১ গ্রাম/সি.সি বা ১০০০ কেজি/মিটার৩ অর্থাৎ ১ সি.সি পানির ভর হলো ১ গ্রাম বা ১ কিউবিক মিটার পানির ভর হলো ১০০০ কেজি।
১৭। পানি একটি উভধর্মী পদার্থ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পানি একটি উভধর্মী পদার্থ, অর্থাৎ এটি কখনো এসিড, কখনো ক্ষার হিসেবে কাজ করে। সাধারণ এসিডের উপস্থিতিতে পানি ক্ষার হিসেবে আর ক্ষারের উপস্থিতিতে পানি এসিড হিসেবে কাজ করে। যেমন :

সুতরাং আমরা বলতে পারি, পানি একটি উভধর্মী পদার্থ।
১৮। পানি গঠিত হয় কী দিয়ে?
উত্তর : পানি সাধারণত ২টি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত হয়। তাই আমরা পানির সংকেত H2O ব্যবহার করি। যেমন :

১৯। পানির উৎস উল্লেখ কর।
উত্তর : পানির সবচেয়ে বড় উৎস হলো সাগর, মহাসাগর বা সমুদ্র। পৃথিবীতে যত পানি আছে তার প্রায় শতকরা ৯০ ভাগেরই উৎস হলো সমুদ্র। পানির আরেকটি অন্যতম উৎস হলো হিমবাহ বা তুষার স্রোত, যেখানে পানি মূলত বরফ আকারে থাকে। এই উৎসে প্রায় শতকরা দুই ভাগের মতো পানি আছে। এছাড়া ব্যবহার উপযোগী পানির উৎস হলো নদ-নদী, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর ও ভূ-গর্ভস্থ পানি।
২০। বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎস বলতে কী বোঝ?
উত্তর : আমাদের দেশে ঝর্না তেমন একটি না থাকায় মিঠা পানির মূল উৎস হলো নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, হ্রদ ও ভূ-গর্ভস্থ পানি। বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ যেমন : আর্সেনিক থাকায় তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে পরিশোধন করে তা পান করা হচ্ছে।
২১। জলজ প্রাণীর জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রয়োজন কেন?
উত্তর : হাজারো জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ হলো অন্যতম। আমরা যেমন অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারি না, দম বন্ধ হয়ে যায়, মাছের ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে ফুলকার মাধ্যমে। আর ফুলকা এমনভাবে তৈরি এটি শুধু পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নিতে পারে, বাতাস থেকে নয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি, জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেন অত্যাবশ্যকীয়।
২২। পানি ঘোলাটে হলে উদি ও প্রাণীর কী অসুবিধা হয়।
উত্তর : পানি ঘোলাটে হলে পানিতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীর মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ পানি ঘোলা হলে সূর্যের আলো পানির নিচে পৌছাতে পারে না, ফলে সালোকসংশ্লেষণে বাধাগ্রস্ত হয়। এতে একদিকে যেমন পানিতে থাকা উদ্ভিদের খাবার তৈরি ব্যাঘাত ঘটে, যা তাদের বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয়, অন্যদিকে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে যে অক্সিজেন তৈরি হতো সেটাও বন্ধ হয়ে যায়, ফলে অনেক জলজ প্রাণী মারা যায়।
২৩। নদীতে লঞ্চ, স্টিমার আটকে পড়ে কেন?
উত্তর : নদীর পানিতে দ্রবণীয় পদার্থ যেমন মাটি, বালি ইত্যাদির পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে তা এক পর্যায়ে নদীর তলায় জমা পড়ে। ফলে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়। আর এই নাব্যতা কমে যাওয়ার কারণে নদীতে লঞ্চ-স্টিমার আটকে পড়ে।
২৪। pH বলতে কী বোঝ?
উত্তর : pH হলো এমন একটি রাশি, যার দ্বারা বোঝা যায় পানি বা জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ । pH এর মান ৭ হলে জলীয় দ্রবণ বা পানিকে আমরা নিরপেক্ষ বলি। pH এর মান ৭ এর কম হলে এটিকে এসিডিক এবং ৭ এর বেশি হলে এটিকে আমরা ক্ষারীয় বলি। এসিডের পরিমাণ যত বাড়ে pH এর মানও তত বাড়ে।
২৫। নদ–নদীর পানিতে pH এর প্রভাব কেমন?
উত্তর : নদ-নদীর জন্য pH এর মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদ-নদীর পানির pH যদি ৬-৮ এর মধ্যে থাকে তবে তা জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। তবে pH এর মান যদি খুব কমে বা বেড়ে যায়, তাহলে ঐ পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উজ্জিদের ক্ষতি হয়। মাছের ডিম, পোনা মাছ এরা খুব কম বা বেশি pH এর মধ্যে বাঁচতে পারে না।
২৬। পানির পুনঃআবর্তন না হলে কী ধরনের সমস্যা হতো?
উত্তর : পানির পুনঃআবর্তন না হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতো। এই পুনঃআবর্তন না হলে বৃষ্টিই হতো না, ফলে মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যেত পুরো পৃথিবী। প্রচণ্ড খরা হতো, ফসল উৎপাদন কমে যেত। মানুষের খাবার পানির পরিমাণ কমে যেত, ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে চরম বিপর্যয় দেখা দিত।
২৭। পরিবেশ সংরক্ষণে পানির ভূমিকা কী?
উত্তর : পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান ও প্রক্রিয়া যেহেতু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পানির ওপর নির্ভরশীল, তাই পরিবেশকে টিকিয়ে | রাখতে হলে পানি অপরিহার্য। পানি না থাকলে গাছপালা জন্মাবে, ফসল উৎপাদন হবে না, ফলে আমাদের অস্তিত্ব তথা পুরো পরিবেশই ধ্বংস হয়ে যাবে।
২৮। পরিস্রাবণের মাধ্যমে কীভাবে পানিকে বিশুদ্ধকরণ করা হয়।
উত্তর : যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল ও কঠিন পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করা হয়, তাকে পরিস্রাবণ বলে। পানিতে অদ্রবণীয় ধূলিবালি কণা থেকে শুরু করে নানা রকম ময়লাআবর্জনা থাকে। এদেরকে পরিস্রাবণের মাধ্যমে পানি থেকে আলাদা করা হয়। এক্ষেত্রে বালির স্তরের মধ্যে দিয়ে পানিকে প্রবাহিত করা হয়। এতে করে পানিতে থাকা ময়লা-আবর্জনা কণাগুলো বালিস্তরে আটকে যায় এবং আমরা বিশুদ্ধ পানি পাই।
২৯। ফুটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানিকে কি জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব?
উত্তর : স্ফুটন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবশ্যই পানিকে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব। পানিকে খুব ভালোভাবে ফোটালে এতে বিদ্যমান জীবাণু মারা যায়। স্ফুটন শুরু হওয়ার পর ১৫-২০ মিনিট ফুটালে পানি জীবাণুমুক্ত হয়। বাসাবাড়িতে খাওয়ার পানির জন্য এটি একটি সহজ ও সাশ্রয়ী প্রক্রিয়া।
৩০। পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কীভাবে পানিকে বিশুদ্ধ করা হয়?
উত্তর : এই প্রক্রিয়ায় একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে তাপ প্রয়োগ করে বাষ্পে পরিণত করা হয় এবং ওই বাষ্পকে আবার ঘনীভূত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধকৃত পানিতে অন্য পদার্থ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
৩১। বাংলাদেশে পানিদূষণের কয়েকটি কারণ উল্লেখ কর?
উত্তর : বাংলাদেশে পানি দূষণের কারণসমূহ নিচে দেওয়া হলো :
i. গোসলের ও পায়খানার বর্জ্যসহ পানি।
ii. বাসাবাড়ির কঠিন বর্জ্য পদার্থ।
iii. জমিতে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার।
iv. শিল্প-কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ইত্যাদি।
৩২। পানিতে নাইট্রোজেন ও ফসফেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে কী ঘটনা ঘটে?
উত্তর : পানিতে নাইট্রোজেন ও ফসফেটের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে তা শ্যাওলা জন্মাতে সাহায্য করে। এই শ্যাওলাগুলো যখন মরে যায় তখন পানিতে থাকা অক্সিজেনের সাথে এরা বিক্রিয়া করে, ফলে পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা যায়। এই অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে মাছসহ সকল প্রাণী মারা যায় এবং একসময় মরা নদীতে পরিণত হয়।
৩৩।মিঠা পানিতে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব কেমন?
উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণতা হলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পানির তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। তাপমাত্রার সামান্য বৃদ্ধিতেই মেরু অঞ্চলসহ অন্যান্য জায়গার। সঞ্চিত বরফ গলতে শুরু করে। আর এই বরফ গলা পানি মূলত সমুদ্রে গিয়ে জমা হয়, ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। ফলে পৃথিবীতে যেসব দেশ নিচু সেগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাবে এবং সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, ভূ-গর্ভস্থ ওহ্রদের পানিতে মিশে পানির সকল উৎসই লবণাক্ত করবে।
৩৪। পানির সকল উস লবণাক্ত হলে কী কী অসুবিধা হবে?
উত্তর : পানির সকল উৎস লবণাক্ত হলে প্রথমে মিঠা পানিতে বসবাসকারী জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং একসময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কারণ পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে পানিতে দূরীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কমে যায়, যার ফলে জলজ প্রাণীসমূহ বাঁচতে পারে না আবার জলজ উদ্ভিদের বড় একটি অংশ লবণাক্ত পানিতে জন্মাতে পারে না এবং বেড়ে উঠতেও পারে না। যার ফলে পানিতে
জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
৩৫। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে বৃষ্টিপাতের ওপর কীরূপ প্রভাব পড়বে?
উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও ধরনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। আবার কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কমে যাবে, যা খরার সৃষ্টি করে এমনকি মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও ধরন পরিবর্তন হবে, যা অনেক সময় মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
১. কোন উদ্ভিদটি পানিতে এবং স্থলে উভয় জায়গায় জন্মে?
ক. শ্যাওলা খ. সিংগারা
গ. কলমি ঘ. ক্ষুদিপানা
উত্তর: গ. কলমি
[ব্যাখ্যা : কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে পানি–স্থলে দুই জায়গাতেই জন্মে। যেমন : কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম।]
২. পানির pH –এর মান খুব কমে গেলে জলজ প্রাণীর-
i. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে বিকশিত হবে না
ii. দেহাভ্যন্তরে খনিজ পদার্থ কমে যাবে।
iii. রোগব্যাধি সৃষ্টি হবে।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii
গ. ii ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
[ব্যাখ্যা : পানিতে এসিডের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে pH এর মান খুব কমে যায়। যার ফলে জলজ প্রাণীদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে বিকশিত হয় না। প্রাণীদের দেহ থেকে ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বাইরে চলে আসে এবং বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়। ]
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
অনিক ও তুষার দুজনে দুটি পুকুরে মাছ চাষ করে। অনিকের পুকুরের মাছের বৃদ্ধি সন্তোষজনক। আর তুষারের পুকুরের মাছগুলো দুর্বল; এদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি। পরীক্ষা করে দেখা গেল অনিকের পুকুরের পানির pH ৭.৫ ও তুষারের পুকুরের পানির pH ৫.৫।
৩. অনিকের পুকুরের পানি কোন ধরনের?
ক. এসিডিক খ. ক্ষারীয়
গ. নিরপেক্ষ ঘ. ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ
উত্তর: গ. নিরপেক্ষ
৪. তুষারের পুকুরের পানিতে নিচের কোনটি হ্রাস করা উচিত?
ক. এসিড খ. ক্ষার
গ. ক্যালসিয়াম ঘ. ফসফরাস
উত্তর: ক. এসিড
৫. মানবদেহের শতকরা কতভাগ পানি?
ক. ৭০-৯০ খ. ৬০-৭৫
গ. ৭০-৮০ ঘ. ৭৫-৮৫
উত্তর: খ. ৬০-৭৫
৬. পানির প্রধান উৎস কোনটি?
ক. পুকুর খ. নদ-নদী
গ. খাল-বিল ঘ. সমুদ্র
উত্তর: ঘ. সমুদ্র
৭. পানির ঘনত্ব কিসের উপর নির্ভরশীল?
ক. চাপ খ. তাপ
গ. আয়তন ঘ. তাপমাত্রা
উত্তর: ঘ. তাপমাত্রা
৮. শাপলা ফুলের গাছ মারে আঘাতে ভেঙে যায় না কেন?
ক. কাণ্ড অত্যন্ত নরম
খ. এর পাতা সম্পূর্ণরূপে পানির উপরে ভেসে থাকে
গ. সারা দেহ দিয়ে পানি শোষণ করে
ঘ. মূল মাটির সাথে দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে
উত্তর: ক. কাণ্ড অত্যন্ত নরম
৯. কোন জলজ উদ্ভিদ জলজ প্রাণীদের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে কাজ করে?
ক. হাইড্রিলা খ. হেলেঞ্চা
গ. সিংগারা ঘ. শ্যাওলা
উত্তর: ঘ. শ্যাওলা
১০। মিঠা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যেতে পারে-
i. বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে
ii. লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে
iii.জলজ উদ্ভিদ বৃদ্ধিতে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ক. i ও ii
১১। ১ কিউবিক মিটার ভর হলো-
ক. ১০০০ কেজি খ. ৫০০ কেজি
গ. ২০০ কেজি ঘ. ১০০ কেজি
উত্তর: ক. ১০০০ কেজি
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১২ ও ১৩ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
পানির বাষ্পীভবন + পানির ঘনীভবন = পানির বিশদ্ধকরণ প্রক্রিয়া।
১২। উদ্দীপকের পানি বিশদ্ধকরণ প্রক্রিয়াটির নাম কী
ক. স্ফুটন খ. পরিস্রাবণ
গ. পাতন ঘ. ক্লোরিনেশন
উত্তর: গ. পাতন
১৩। উদ্দীপকের পানি বিশুদ্ধ করা প্রক্রিয়াটি-
i. ঔষধ তৈরীর কারখানায় ব্যবহৃত হয়
ii. বাসাবাহিতে পানি বিশুদ্ধকরণে ব্যবহৃত হয়
iii. ব্যবহারে খুব বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: গ. i ও iii
১৪। পানি ও মাটিতে জন্মে-
i. কলমি ii. হেলেঞ্চা iii. কেশরদাম
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
১৫। আমাদের মোট সঞ্চিত পানির শতকরা কত ভাগ মিঠা পানি?
ক. ১ খ. ৪
গ. ৭ ঘ. ৯
উত্তর: ক. ১
১৬। পানি বিশুদ্ধকরণে জীবণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়-
i. Cl2 ii. Ca(OCl)Cl iii. NaOCl
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
১৭। সীসা মিশ্রিত পানি পান করার ফলে-
i. ফুসফুসে ক্যান্সার হয়
ii. শরীর জ্বালাপোড়া করে
iii. মেজাজ খিটখিটে হয়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: খ. ii ও iii
১৮। নিচের কোনটি উভধর্মী যৌগ?
ক. H2O খ. HCl
গ. H2SO4 ঘ. NaOH
উত্তর: ক. H2O
১৯। জলজ উদ্ভিদ বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী নদ-নদীর পানির pH মান কত?
ক. ৫-৬ এর কাছাকাছি খ. ৬-৭ এর কাছাকাছি
গ. ৬-৮ এর কাছাকাছি ঘ. ৭-৮ এর কাছাকাছি
উত্তর: গ. ৬-৮ এর কাছাকাছি
২০। মুখ ধোয়ার প্রসাধনীর ক্ষেত্রে pH এর মান কত?
ক. ০.৫ খ. ৫.৫
গ. ৬.৬ ঘ. ৭.৪
উত্তর: খ. ৫.৫
২১। পানির pH নিরপেক্ষ মান কত?
ক.৯ খ. ৮
গ.৭ ঘ.৬
উত্তর:গ. ৭
২২। ভূপৃষ্ঠের পানির শতকরা কত ভাগ লবণাক্ত?
ক. ৮০ খ. ৮৫
গ. ৯০ ঘ. ৯৭
উত্তর: ঘ. ৯৭
২৩। বোতলজাত পানি কোন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধকরণ করা হয়?
ক. পাতন খ. ক্লোরিনেশন
গ. পরিস্রাবণ ঘ. স্ফুটন
উত্তর: খ. ক্লোরিনেশন
২৪। কোন নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জন্য মরে গেছে?
ক. মনোজ খ. হামকুড়া
গ. বিবিয়ানা ঘ. করতোয়া
উত্তর: ক. মনোজ
২৫। আমেরিকার উত্তর ওহাইও অঙ্গরাজ্যের মানা হ্রদটির নাম কী?
ক. এরি খ. রিয়া
গ. নায়াগ্রা ঘ. নাব
উত্তর: ক. এরি
২৬। বরফের গলাঙ্ক কত ড্রিগ্রি সেলসিয়াস?
ক. ০০ খ.৪০
গ.৯৯.৯৮০ ঘ.১০০০
উত্তর: ক. ০০
নবম দশম শ্রেণি সকল বিষয় নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ২৭ ও ২৮ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
”তেজস্ক্রিয় পদার্থ পানিতে মিশে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে একটি রোগ সৃষ্টি করে, আবার পানিতে অনাকাঙ্খিত পদার্থের উপস্থিতি নদীর নাব্যতা হ্রাস করে।”
২৭। উদ্দীপকে কোন রোগের কথা বলা হয়েছে?
ক. কলেরা খ. টাইফয়েড
গ. জন্ডিস ঘ. ক্যান্সার
উত্তর: ঘ. ক্যান্সার
২৮. উদ্দীপকে নাব্যতা হ্রাসকারী উপাদান সমূহ-
i. সিালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত করে
ii. নৌযান চলাচলে অসুবিধা ঘটায়
iii. পানি ঘোলাটে করে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. ii ও iii
গ. i ও iii ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ঘ. i, ii ও iii
২৯। কত সালে রামসার কনভেনশন চুক্তি হয়?
ক. ১৭৭৫ খ. ১৯৭১
গ. ১৯৭২ ঘ. ১৯৭৫
উত্তর: খ. ১৯৭১
৩০। রামসার কনভেনশন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত?
ক. বৈশ্বিক উষ্ণতা খ. জলবায়ু পরিবর্তন
গ. জলভূমি সংক্রান্ত ঘ. আকাশসীমা নির্ধারণ
উত্তর: গ. জলভূমি সংক্রান্ত
৩১। জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য ১ লিটার পানিতে ন্যূনতম কত মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন?
ক. ৫ মিলিগ্রাম খ. ১০ মিলিগ্রাম
গ. ১৫ মিলিগ্রাম ঘ. ২০ মিলিগ্রাম
উত্তর: ক. ৫ মিলিগ্রাম
আরও গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন–১ : নিচের চিত্রটি দেখ এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. পানিতে দ্রবীভূত কোন গ্যাসের সাথে গ্লুকোজ বিক্রিয়া করে?
খ. পানির পুনঃআবর্তন বলতে কী বোঝায়?
গ. নদীটি কোন ধরনের নদীতে পরিণত হতে পারে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর নদীটিকে জলজ প্রাণী বসবাসের উপযোগী করা সম্ভব? যুক্তিসহ মতামত দাও।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্যাসের সাথে গ্লুকোজ বিক্রিয়া করে CO2, পানি ও তাপ উৎপন্ন করে।
খ. যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দিনের বেলা সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং এক পর্যায়ে বাষ্প ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ ও পরে তা বৃষ্টি আকারে ফিরে আসে। আবার এই বৃষ্টির পানির বড় একটি অংশ নদ-নদী, খাল-বিলে ও সমুদ্রে গিয়ে পড়ে এবং বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে যায় ও বৃষ্টি আকারে ফিরে আসে। সেই প্রক্রিয়াকে পানির পুনঃআবর্তন বলে।
গ. উদ্দীপকের চিত্রটিতে দেখা যাচ্ছে যে, নদীতে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার বা জাহাজ চলছে এবং নদীর পাশে শিল্প-কারখানা থেকে দূষিত বর্জ্য নদীর পানির সাথে মিশছে। উল্লিখিত বিষয়গুলো নদীর পানিকে দূষিত করছে। এসব কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত দূষিত বর্জ্য নদীর পানির সাথে মিশছে। এছাড়া নদীতে চলমান নৌকা, স্টিমার, লঞ্চ থেকে ফেলা মলমূত্র ও তেলজাতীয় পদার্থের মাধ্যমে নদ-নদীর পানি দূষিত হচ্ছে।
এর ফলে নদীতে বসবাসকারী বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে এক সময় সেখানে কোনো জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ কিছুই থাকবে না। এর ফলে নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হবে। নদীর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হবে। উপরোক্ত, আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে উদ্দীপকে উল্লিখিত নদীটি আস্তে আস্তে দূষিত নদীতে পরিণত হবে এবং এর ফলে শুধু জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদই নয় বরং মানবজাতিও চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
ঘ. একটু সচেতন হলেই উক্ত নদীটিকে জলজ প্রাণী বসবাসের উপযোগী করা সম্ভব। এজন্য প্রথমে যে কাজ করতে হবে তা হলো- যেসব কারণে নদীর পানি দূষিত হয় সেগুলো শনাক্ত করা।
উদ্দীপকের চিত্র হতে আমরা দেখতে পাই যে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি থেকে নিষ্কাশিত বর্জ্য নদীর পানিকে দূষিত করছে। এছাড়া নদীর পাশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীর পানি দূষিত করছে। শিল্পকারখানার সৃষ্ট বর্জ্য পানি বিশেষ করে নদীর পানি দূষণের অন্যতম কারণ। এই দূষণ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কলকারখানার সৃষ্ট বর্জ্য পানি পরিশোধন করে তারপর নদীতে ফেলা।
চেষ্টা করতে হবে কারখানার বর্জ্য যেন নদীর পানিতে না মেশে। এর পাশাপাশি নদীতে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার ‘চলাচল সীমিত করতে হবে এবং চললেও এদের দ্বারা নিঃসৃত তেল যেন নদীর পানি দূষিত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া অন্যান্য কারণে নদীর পানি দূষিত হলে সেগুলো শনাক্ত করে তা নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নদী দূষণের কুপ্রভাব ও প্রতিকারে করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই উক্ত নদীতে জলজ প্রাণী বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হবে।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–২ : জমিলা খাতুন বাড়ির পাশের পুকুরের ঘোলা পানিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রান্নার উপযোগী করেন। অপরদিকে রতন সাহেব তার পানি বোতলজাতকরণ কারখানায় ও ঔষধ তৈরির কারখানায় পানিকে জীবাণুমুক্ত ও বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করেন।
ক. পানির স্ফুটনাঙ্ক কাকে বলে?
খ. জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না কেন?
গ. জমিলা খাতুন পুকুরের পানিকে কীভাবে রান্নার উপযোগী করেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রতন সাহেব তার দুই কারখানার কাজে ব্যবহার করা পানি কি একইভাবে জীবাণুমুক্ত ও বিশুদ্ধ করেন? যুক্তিসহ মতামত দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয় তাকে পানির স্ফুটনাঙ্ক বলে।
খ. জলজ উদ্ভিদসমূহ সারা দেহের মাধ্যমে পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। এসব জলজ উদ্ভিদের কাণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম প্রকৃতির হয়। শুরু থেকেই এসব জলজ উদ্ভিদ স্রোতের সাথে খাপ খাইয়ে বেড়ে ওঠে। তাই এগুলো স্রোতে ভেঙে যায় না।
গ. জমিলা খাতুন বাড়ির পাশের পুকুরের ঘোলা পানিকে পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করে রান্নার উপযোগী করেন। পরিস্রাবণ হলো তরল ও কঠিন পদার্থের মিশ্রণ থেকে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া। পানিতে অদ্রবণীয় ধূলি-বালির কণা থেকে শুরু করে নানা রকম ময়লা-আবর্জনার কণা থাকে। এদেরকে পরিস্রাবণের মাধ্যমে পানি থেকে দূর করা হয়।
এক্ষেত্রে বালির স্তরের মধ্য দিয়ে পানিকে প্রবাহিত করা হয়। এতে করে পানিতে অদ্রবণীয় ময়লার কণাগুলো বালির স্তরে আটকে যায়। বালির স্তর ছাড়াও খুব সূক্ষ্মভাবে তৈরি কাপড় ব্যবহার করে পরিস্রাবণ করা যায়। আর এভাবেই জমিলা খাতুন তার রান্না করার জন্য উপযুক্ত পানি প্রস্তুত করেন।
ঘ. রতন সাহেব তার দুই কারখানার কাজে ব্যবহার করার জন্য পানি একইভাবে জীবাণুমুক্ত করেন না। কারণ রতন সাহেব বোতলজাত কারখানায় ক্লোরিনেশন পদ্ধতিতে পানি জীবাণুমুক্ত করেন। এ পদ্ধতিতে পানির মধ্যে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করা হয়। এছাড়া ব্লিচিং পাউডার এবং আরও কিছু পদার্থ যার মধ্যে ক্লোরিন আছে যা জীবাণু ধ্বংস করতে পারে তা ব্যবহার করা হয়। এসব ব্যবহার করলে পানির ভেতরে থাকা জীবাণু ধ্বংস হয়।
অপরদিকে রতন সাহেব ঔষধ তৈরির কারখানায় পাতন পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধ করেন। কারণ এখানে খুব বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাপ দিয়ে বাষ্পে পরিণত করা হয়। পরে এ বাষ্পকে আবার ঘনীভূত করে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিশুদ্ধকৃত পানিতে অন্য পদার্থ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
অর্থাৎ রতন সাহেব তার দুই কারখানায় দুইভাবে পানি জীবাণুমুক্ত ও বিশুদ্ধ করেন।
প্রশ্ন-৩ : শিফন সাহেবের ফ্যাক্টরি হতে নির্গত ধোঁয়ায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। আবার গণি মিয়া লাঙ্গল দিয়ে ধান চাষ করার ফলে জমির উর্বরতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিহারদের এলাকার নদীটি প্রায় ভরাট হওয়ায় এর পানি ধারণক্ষমতা কমে এলাকার চারদিকে পানি ছড়িয়ে পড়ায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ক. পরিস্রাবণ কাকে বলে?
খ. ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে নদীতে আসে কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. শিফন সাহেব দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাটি নদী ও বিলের পানিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের গণি মিয়া ও নিহারের এলাকায় সৃষ্ট সমস্যা দুইটিই কী পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ? বিশ্লেষণ করো।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. তরল ও কঠিন পদার্থের মিশ্রণ হতে কঠিন পদার্থকে আলাদা করার প্রক্রিয়াকে পরিস্রাবণ বলে।
খ. ইলিশ লবণাক্ত পানির মাছ। জীবনের বেশিরভাগ সময় সমুদ্র বা লোনা পানিতে কাটালেও প্রজননের ঋতুতে ডিম ছাড়বার জন্য ইলিশ মাছ নদীতে বা মিঠা পানিতে আসে। কারণ হচ্ছে সমুদ্রের পানিতে প্রচুর লবণ থাকে যা ইলিশের ডিমকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে ঐ ডিম থেকে আর পোনা উৎপাদিত হয় না। ডিমকে এই লবণাক্ততা থেকে রক্ষা করতেই ইলিশ সমুদ্র ছেড়ে নদীর মিঠা পানিতে আসে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিফন সাহেবের ফ্যাক্টরি হতে নির্গত ধোঁয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার অন্যতম কারণ। মিঠা পানি অর্থাৎ নদী ও বিলের পানিতে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব ব্যাপক রূপে দেখা যায়। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পানির তাপমাত্রাও বেড়ে যাবে। মাত্র ১° সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেই মেরু অঞ্চলসহ অন্যান্য জায়গায় সঞ্চিত বরফ গলতে থাকে। এর ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে আর নদী কিংবা বিলের পানিতে সমুদ্রে গিয়ে মিশতে পারবে না তাই সেখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে যাবে। নদী কিংবা বিল অর্থাৎ মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে গেলে তাতে বসবাসকারী জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীসমূহ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং এক পর্যায়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এছাড়াও পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বাড়লে তাতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যার ফলে জলজ প্রাণীসমূহ বাঁচতে পারবে না। জলজ উদ্ভিদের বড় একটি অংশ লবণাক্ত পানিতে জন্মাতে কিংবা বাড়তে পারে না, যে কারণে নদী ও বিলের পুরো জীববৈচিত্র্যই হুমকির মুখে পড়বে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটি স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, শিফন সাহেব দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাটি নদী ও বিলের পানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ঘ. উদ্দীপকের তথ্যানুযায়ী গণি মিয়ার কর্মকাণ্ড ও নিহারের এলাকায় সৃষ্ট সমস্যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। নিচে তা যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করা হলো গণি মিয়া লাঙ্গল দিয়ে তার জমিতে বছরের পর বছর ধান চাষ করছে অর্থাৎ একই ফসল বার বার চাষ করছে। ফলশ্রুতিতে সেখানকার মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয় ধান চাষে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে সংলগ্ন জলাশয় দূষিত করছে।
অপরদিকে, নিহারদের এলাকায় নদী প্রায় ভরাট হওয়ার ফলে এর পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া ও নদীর গতিপথ সরু হয়ে যাওয়ায়, ভারী বর্ষণ হলেই বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি নিষ্কাশিত না হবার কারণে এলাকার চারিদিকে পানি ছড়িয়ে পরছে। এলাকার বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পানির সাথে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও দূষিত পানির পানি মাটির তলদেশে জমা হয়ে মাটিও দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও নদী ভরাট হওয়ার ফলে নদীর গতিমুখ পরিবর্তিত হতে পারে ফলে অদূর ভবিষ্যতে তা মরা নদীতে পরিবর্তিত হতে পারে, যা পুরো পরিবেশের জন্যেও হুমকিস্বরূপ।
প্রশ্ন-৪ : নিচের চিত্রের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

ক. পানির পুনঃআবর্তন কাকে বলে?
খ. মানসম্মত পানির প্রয়োজন কেন?
গ. B-চিত্রের প্রাণীটি কমে গেলে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান সংকটে পড়বে কেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্র A এবং চিত্র B এর বেঁচে থাকা পরিবেশের একই উপাদানের মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে মূল্যায়ন করো।
৪ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে পানি পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হওয়ার প্রক্রিয়াকে পানির পুনঃআবর্তন বলে।
খ. হাত-মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে পান করা, গোসল করা, রান্না-বান্না করা প্রভৃতি কাজে পানি অপরিহার্য । এই পানি যদি মানসম্মত না হয় তবে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যহানি ঘটবে অন্যদিকে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধন হতে পারে। তাই দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেক কাজে মানসম্মত পানির প্রয়োজন হয়।
গ. ‘B’ চিত্রের প্রাণীটি হলো মাছ। হাজার হাজার জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ আমাদের সবচেয়ে পরিচিত জলজ প্রাণী। আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই আসে মাছ থেকে। প্রোটিন আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান। প্রোটিন প্রাণিদেহের গঠনে কাজ করে। দেহকোষের গঠনবস্তুর বেশিরভাগই প্রোটিনযুক্ত। নতুন কোষ উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে প্রোটিন। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে প্রোটিন কাজ করে। দেহ গঠনে সাহায্যকারী উৎসেচক ও হরমোন গঠনেও প্রোটিনের ভূমিকা রয়েছে।
প্রাণিকোষের গঠন ছাড়াও এর কার্যাবলিও প্রোটিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রাণিদেহের শুষ্ক ওজনের শতকরা ৫০ ভাগই প্রোটিন। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণে প্রধান ভূমিকা পালন করে বলে এটি আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। যেহেতু আমাদের প্রোটিন উৎসের সিংহভাগই মাছ থেকে আসে তাই মাছ (চিত্র-B) কমে গেলে আমরা গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য উপাদান প্রোটিন সংকটে পড়বো।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্র-A হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ এবং চিত্র-B হচ্ছে মাছ।
উভয়েরই বেঁচে থাকা পরিবেশের যে উপাদানটির মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে তা হলাে পানি। জলজ উদ্ভিদ এবং মাছের জীবনধারন পানির মানদণ্ডের উপর নির্ভর কিনা সে সম্পর্কে নিচে মূল্যায়ন করা হলোজীবের জীবনধারণে পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু এই পানির সুনির্দিষ্ট মান যদি বজায় না থাকে তাহলে এটি জীব ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। পানিতে বসবাসকারী জীবনের জন্য পানি স্বাদহীন ও বর্ণহীন হওয়াই উত্তম। ঘোলা পানি উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি ও বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই পানির ঘোলাত্ব দূর না হলে জীবের জীবনধারণ ও বৃদ্ধি ব্যহত হবে।
পানি তেজস্ক্রিয়তামুক্ত না থাকলে ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ দ্বারা জলজ জীব আক্রান্ত হতে পারে। ময়লা আবর্জনা থেকে জীবন ধ্বংসকারী জীবাণু সৃষ্টি হয় বলে প্রাকৃতিক পানি ময়লা আবর্জনাযুক্ত থাকলে জলজ জীব বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে। পরিমিত পরিমাণ অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকতে হবে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম হলে জলজ জীবদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত না। অধিক তাপমাত্রায় দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যায় এবং জলজ প্রাণীর প্রজননসহ শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাঘাত ঘটে। পানি অধিক ক্ষারীয় বা অ্যাসিডিয় হওয়া যাবে না। তাই pH এর মান ৬-৮ এর মধ্যে থাকা দরকার। পানির pH কম বা বেশি হলে জলজ জীবের জীবন বিপন্ন হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, মাছের ডিম ও পোনা মাছ বাঁচতে পারে না। লবণাক্ত পানি কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজননে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই পানি বেশি লবণাক্ত হওয়া যাবে না।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের জলজ উদ্ভিদ (চিত্র-A) এবং মাছের (চিত্র-B) বেঁচে থাকা অবশ্যই পানির মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে।
প্রশ্ন-৫ : শামীমা বাড়ির সব কাজে এবং রান্নার কাজেও নদীর পানি ব্যবহার করে। কিন্তু নদীর পানিতে জীবাণু থাকায় এক সমাজকর্মী তাকে এই পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করেন। সমাজকর্মী বলেন যে, “নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং তা রোধ করতে জনসচেতনতাই একমাত্র পন্থা।“
ক. লোনা পানি কাকে বলে?
খ. পানিকে উভধর্মী পদার্থ বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের পদার্থকে বোতলজাত করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সমাজকর্মীর শেষ উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
৫ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পানিতে লবণ বেশি পরিমাণে থাকে তাকে লোনা পানি বলে।
খ. উভধর্মী পদার্থ কখনও এসিড, আবার কখনও ক্ষার হিসেবে কাজ করে। পানি সাধারণত এসিডের উপস্থিতিতে ক্ষার হিসেবে, আবার ক্ষারের উপস্থিতিতে এসিডের মতো ক্রিয়া করে। এজন্যই পানিকে উভধর্মী পদার্থ বলা হয়।
গ. উদ্দীপকের পদার্থটি হলো নদীর দূষিত পানি। এই পানি কারখানায় জীবাণুমুক্ত করে বোতলজাত করা হয়। বোতলজাতকরণ কারখানায় পানিতে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু ধ্বংস করতে সাধারণত ক্লোরিনেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে CI2 গ্যাস, ব্লিচিং পাউডার বা ক্লোরিনযুক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ওজোন (O3) গ্যাস দিয়ে অথবা অতিবেগুনি রশ্মি দিয়েও বোতলজাতকরণ পানির কারখানায় পানিকে জীবাণুমুক্ত করে বাজারজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধকৃত পানিতে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
ঘ. সমাজকর্মীর শেষ উক্তিটি হচ্ছে, “নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং তা রোধ করতে জনসচেতনতাই একমাত্র পন্থা।“ আমাদের প্রতিনিয়ত ব্যবহার্য গোসলের পানি, পায়খানার বর্জ্যপানি কিংবা অন্যান্য কাজে ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত পানির একটি বড় অংশ নর্দমার নলের ভেতর দিয়ে নিয়ে নদ-নদীতে ফেলা হয় এবং সেগুলো নদীর পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে। আমরা যখন আমাদের বাড়িঘরে ব্যবহৃত কঠিন বর্জ্য অবিবেচকের মতো যেখানে সেখানে ফেলি, তা ২/১ দিনের মধ্যে পচে বৃষ্টির পানির সাথে নদীতে গিয়ে পানিকে দূষিত করে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে মিশে নদীর পানিকে দূষিত করে।
শিল্প কারখানার সৃষ্ট বর্জ্য নদীর পানি দূষণের একটি বড় কারণ। এছাড়া বিভিন্ন জলযান থেকে ফেলা মলমূত্র, আবর্জনা, তেলজাতীয় পদার্থের দ্বারা এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণেও প্রতিনিয়ত নদীর পানি দূষিত হয়।
নদীর পানির এ দূষণ রোধ করতে আমাদের সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। আমরা অ্যারোসল, পেইন্টস, পরিষ্কারক, কীটনাশক ও নানা ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহারের পর অবিবেচকের মতো খালি কৌটা যেখানে সেখানে না ফেলে যদি যথাযথভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি, তাহলেও কিন্তু পানিদূষণ অনেক কমে যাবে।
এভাবে দূষণ কমাতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কৃষকরা যদি জৈব পদ্ধতিতে ফসল ফলান তাহলে উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি দূষণ রোধ হবে। শিল্পকারখানায় ETP ব্যবহার করলে দূষিত বর্জ্য নদীর পানিতে মিশবে না, ফলে পানি দূষণ রোধ হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেতন করতে হবে। সকলে সচেতন হলেই নদীর পানি দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।
তাই বলা যায়, সমাজকর্মীর শেষ উক্তিটি অশেষ গুরুত্ব বহন করে।
প্রশ্ন–৬ : পৃথিবীতে প্রাপ্ত সকল তরল পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে | সহজলভ্য হলো পানি। তার একটি মানদণ্ড হলো pH। কিন্তু বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে তা মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
ক. Marine water কী?
খ. নদীর পানিতে ইলিশ মাছ ডিম পাড়ে কেন?
গ. উদ্দীপকের মানদণ্ডটি জলজ জীবের জন্য কীভাবে কাজ করে?
ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদার্থটির দূষণরোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়? বিশ্লেষণ করো।
৬ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. সমুদ্রের পানিই হচ্ছে Marine water।
খ. ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় নদীর পানিতে আসে। ইলিশ সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ লবণাক্ত পানির মাছ হলেও ডিম ছাড়ার সময় অর্থাৎ প্রজননের সময় নদীর পানিতে আসে কারণ হলো সমুদ্রের পানিতে প্রচুর পরিমাণে লবণ থাকে যা ডিমকে নষ্ট করে ফেলে। ফলে ঐ ডিম থেকে আর পােনা মাছ তৈরি হতে পারে না। তাই প্রকৃতির নিয়মেই ইলিশ মাছ ডিম পাড়ার সময় হলে নদীর পানিতে আসে।
গ. উদ্দীপকের মানদণ্ডটি হলো pH। pH এমন একটি রাশি, যেটি দ্বারা বোঝা যায় পানি বা অন্য কোনো জলীয় দ্রবণ এসিডিক, ক্ষারীয় না নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ হলে pH হয় ৭, এসিডিক হলে ৭ এর কম, আর ক্ষারীয় হলে ৭ এর বেশি। পানির pH মান জলজ জীবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদ-নদীর পানির pH যদি ৬-৮ এর মধ্যে থাকে, তাহলে সেটা জলজ উদ্ভিদ কিংবা প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কোনো অসুবিধার সৃষ্টি করে না। তবে pH-এর মান যদি এর চাইতে কমে যায় বা বেড়ে যায়, তাহলে ঐ পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী আর উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মাছের ডিম, পোনামাছ পানির pH খুব কম বা বেশি হলে বাঁচতে পারে। পানিতে এসিডের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে, অর্থাৎ pH-এর মান খুব কমে গেলে জলজ প্রাণীদের দেহ থেকে ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ বাইরে চলে আসে, যার ফলে মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে।
তাই বলা যায়, জলজ জীবের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের মানদণ্ডটি অর্থাৎ পানির pH মানের ভূমিকা অপরিসীম।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পদার্থটি হলো পানি। কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পানি দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-
i. আবর্জনা ও নর্দমার আবর্জনাসমূহ নদীতে গড়িয়ে পড়ার আগে শোধন করতে হবে।
ii. জীবজন্তুর মৃতদেহ পানিতে পড়ে পানি যেন দৃষিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
iii. শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে পড়ার আগেই তা | দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
iv. তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকার হতে তেল যাতে না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
v. প্লাস্টিক, পলিথিন ও রাবার জাতীয় পদার্থ নদীতে ফেলা যাবে না।
vi. পরিবেশ বিপর্যকারী শিল্প-কারখানা বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে এবং নদীতে যেকোনো আবর্জনা ফেলা রোধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
vii. সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে পানি দূষণবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে হবে।
উপযুক্ত ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে পানি দূষণ অনেকাংশে কমানো যাবে বলে আমি মনে করি। তাই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
প্রশ্ন–৭ : তথ্য–১ : বাংলাদেশের পানির উৎসসমূহ ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে।
তথ্য-২:

ক. গলনাঙ্ক কাকে বলে?
খ. জলাভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন কেন?
গ. চিত্রের উদ্ভিদগুলো বেঁচে থাকার জন্য পানি আবশ্যক- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের তথ্য-১ এর কারণগুলো বিশ্লেষণ করো।
৭ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয়, তাকে ঐ পদার্থের গলনাঙ্ক বলে।
খ. জলাভূমি হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। জলাভূমি একদিকে পানি ধারণ করে যেমন বন্যা নিয়ন্ত্রণ করে, অন্যদিকে তেমনি ক্ষতিকর পদার্থ শোষণ করে, ভূগর্ভে এবং নদীতে বিশুদ্ধ পানি সঞ্চালন করে এবং বন্যপ্রাণীদের সাহায্য করে। তাই জলাভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন।
গ. উদ্দীপকে চিত্রের উদ্ভিদগুলো হলো জলজ উদ্ভিদ। এদের বেশিরভাগই পানিতে জন্মে এবং কিছু কিছু যেমন- কলমি, হেলেঞ্চা, কেশরদাম ইত্যাদি পানিতে ও মাটিতে দু’জায়গাতেই জন্মে।
স্থলজ উদ্ভিদসমূহ মূলত মূলের মাধ্যমে পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। কিন্তু জলজ উদ্ভিদসমূহ সারা দেহের মাধ্যমে পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান বিশেষ করে খনিজ লবণ সংগ্রহ করে থাকে। তাই এদের সমগ্র দেহ পানির সংস্পর্শে না এলে এদের বেড়ে ওঠায় ব্যাঘাত ঘটে। জলজ উদ্ভিদের কাণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যা পানির স্রোত ও জলজ প্রাণীর চলাচলের সাথে মানানসই।
পানি ছাড়া স্থলভাগে এদের জন্ম হলে, এরা ভেঙে পড়ত এবং বেড়ে উঠতে পারত না। এমনকি বাঁচতেও পারত না। জলজ উদ্ভিদসমূহ সাধারণত অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করে থাকে। পানি না থাকলে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতো। অর্থাৎ পানির অভাবে বেশিরভাগ জলজ উদ্ভিদ জন্মাতই না, অথবা কিছু কিছু জন্মালেও বেঁচে থাকতে ও বেড়ে উঠতে পারত না।
অতএব আমরা বলতে পারি, জলজ উদ্ভিদের জীবনধারণে পানির ভূমিকা অপরিসীম।
ঘ. উদ্দীপকে তথ্য-১ এ বাংলাদেশের পানির উৎসসমূহের দূষণের কথা বলা হয়েছে। পানির উৎস হলো নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর, সাগর, মহাসাগর, সমুদ্র ইত্যাদি। এগুলো দূষণের নানারকম কারণ রয়েছে।
বর্জ্যপানির বড় একটি অংশ নর্দমার নলের মাধ্যমে নদ-নদীতে নিয়ে ফেলা হয় এবং তা পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে। বৃষ্টি হলে রোগ জীবাণুসহ নানা রকম পচা বর্জ্য বৃষ্টির পানির সাথে মিশে নদ-নদী, খাল-বিল বা লেকের পানিকে দূষিত করে। বৃষ্টি অথবা বন্যার সময় কৃষি জমি প্লাবিত হলে কৃষি জমিতে রাসায়নিক ও জৈবসার এবং কীটনাশক বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে। শিল্পকারখানা থেকে প্রচুর বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়ার ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। স্টিমার বা জাহাজ থেকে ফেলা মলমূত্র ও তৈল জাতীয় পদার্থের মাধ্যমে নদ-নদী ও সমুদ্রের পানি দূষিত হয়। নদীর ভাঙন, ঝড় ইত্যাদির দ্বারা মাটি, ধূলিকণা বা অন্যান্য পদার্থ পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে। পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক কারণের চেয়ে মানবসৃষ্ট কারণেই পানি
বেশি দূষিত হয়ে থাকে।
নবম দশম শ্রেণি সকল বিষয় নোট-PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন–৮ : হিমেলদের গ্রামের পাশ দিয়ে একটি ছোট নদী বয়ে গেছে। নদীর পাড়ে কিছু শিল্প কারখানা থাকায় নদীর পানি সবসময় ঘোলাটে থাকে। পানিতে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পদার্থ ভাসমান থাকে। নদীর পানির pH পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৫ এর কম।
ক. লোনা পানি কাকে বলে?
খ. নদীতে বাঁধ নির্মাণ পানির জন্য হুমকি হতে পারে কেন?
গ. হিমেলদের গ্রামের পাশের নদীর পানি কীভাবে দূষণমুক্ত রাখা যাবে?
ঘ. উদ্দীপকের নদীতে জলজ প্রাণী বসবাসের উপযুক্ত কিনা মতামত দাও।
৮ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি তাকে লোনা পানি বলে।
খ. নদীতে বাঁধ নির্মাণ পানির জন্য হুমকী হতে পারে কেননা এর কারণে নদীর শাখা-প্রশাখায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পরে। ফলশ্রুতিতে নদীগুলো শুকিয়ে যাবার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নদীর পানি কতকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পানি দূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেমন-
i. আবর্জনা ও নর্দমার আবর্জনাসমূহ নদীতে গড়িয়ে পড়ার আগে শোধন করতে হবে।
ii. জীবজন্তুর মৃতদেহ পানিতে পড়ে পানি যেন দৃষিত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
iii. শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে পড়ার আগেই তা | দূষণমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
iv. তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকার হতে তেল যাতে না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
v. প্লাস্টিক, পলিথিন ও রাবার জাতীয় পদার্থ নদীতে ফেলা যাবে না।
vi. পরিবেশ বিপর্যকারী শিল্প-কারখানা বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশনে এবং নদীতে যেকোনো আবর্জনা ফেলা রোধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
vii. সব ধরনের গণমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে পানি দূষণবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে হবে।
উপযুক্ত ব্যবস্থাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে পানি দূষণ অনেকাংশে কমানো যাবে বলে আমি মনে করি। তাই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীদের আশ্রয়স্থল পানি হলেও নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড বজায় না থাকলে সে পানিতে উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। পানির গুরুত্বপূর্ণ দুটি মানদণ্ড হলো- পানি পরিষ্কার হওয়া এবং pH মান ৬-৮ এর মধ্যে থাকা ।
উদ্দীপকের বর্ণনায় দেখা যায়, শামীমদের গ্রামের পাশের নদীটির পানি ঘোলাটে এবং pH মান ৫ এর কম। পানি ঘোলাটে বলে সূর্যের আলো পানির নিচে থাকা উদ্ভিদ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে সালোকসংশ্লেষণ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে করে জলজ উদ্ভিদ খাবার তৈরি করতে না পেরে মারা যায় । ঘোলা পানিতে মাছ ও অন্য প্রাণীও খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে মারা যায়।
অন্যদিকে pH কম হলে সে পানিতে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকা কষ্টকর হয় । যেহেতু নদীটির পানির এ দুটো মানদণ্ড ঠিক নেই। তাই ধারণা করা যায় অন্যান্য মানদণ্ডেও সমস্যা আছে। আর মানদণ্ডের অসংগতির কারণেই নদীটি জলজ প্রাণী বসবাসের উপযুক্ত নয়।