প্রথম অধ্যায়–রসায়নের ধারণা
Concepts of Chemistry

প্রশ্নঃ রসায়ন বিজ্ঞান কী? রাসায়নের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের নানা ধরনের পরিবর্তন যেমন-সৃষ্টি, ধ্বংস, বৃদ্ধি, রূপান্তর, উৎপাদন ইত্যাদির নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।
প্রশ্নঃ রাসায়নের ধারণা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : রসায়ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন: কয়লা একটি পদার্থ, কয়লার ভেতরে রয়েছে কার্বন। রসায়ন প্রাচীন ও প্রধান বিজ্ঞানগুলাের মধ্যে অন্যতম। রসায়নকে জীবনের জন্য বিজ্ঞান বলা হয়।
প্রশ্নঃ রাসায়নের গুরুত্ব লিখ।
উত্তর : রসায়ন পাঠের গুরুত্ব : আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে রসায়নের ব্যবহার করে আসছি। আমাদের সকল কর্মকান্ডই মূলত রসায়ন সংশ্লিষ্ট। রসায়নের গুরুত্ব অরিসীম। নিম্নে কিছু তত্ত্ব উল্লেখ করা হলো:
১. মানুষের মৌলিক চাহিদার উপকরণ যেমন-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা জোগানে রসায়ন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত।
২. আমাদের সকল ব্যবহার্য পানি, খাবার, প্রসাধন সামগ্রী, জামা-কাপড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি বস্তুই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। উৎপাদিত।
৩. বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ঔষধ রসায়নেরই অবদান।
৪. আমাদের দেহও গঠিত হয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক মৌলের সমন্বয়ে।
৫. ঘুম থেকে ওঠে আমরা নিঃশ্বাস গ্রহণ করি তাতে রয়েছে রসায়নের সংশ্লিষ্টতা।
৬. পোকামাকড়কে শস্যহানি প্রতিরোধ করার জন্যে কীটনাশক ব্যবহৃত হয়।
৭. খাবারের প্রক্রিয়াজাত বিশেষ করে ফলের জুস, সস, কেক, বিস্কুট ইত্যাদি রং রক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয়।
৮. স্বল্প পরিমাণ বায়ুর উপস্থিতিতে কাঠ বা প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ালে মারাত্মক ক্ষতিকর কার্বন-মনোঅক্সাইড গ্যাস তৈরী হয়।
৯. কলকারখানা ও যান্ত্রিক যানবাহন থেকে উৎপন্ন কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাস পরিবেশের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর। কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এ সম্পর্কে ধারনা পেতে রসায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. রসায়ন পাঠের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থের বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব।
১১. রসায়ন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ব্যবহার নিশ্চিত করে সমাজ ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক রাখা যায়।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে দেখা যায় যে, রসায়ন পাঠের মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থের ক্ষতিকারক দিক ও ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব, যা আমাদেরকে। সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
সুতরাং রসায়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
রসায়ন পাঠের গুরুত্ব : মানুষের মৌলিক চাহিদার উপকরণ জোগানো থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার জীবনকে করেছে সহজ ও সুন্দর। নিচে রসায়নের অন্তর্গত কতিপয় রাসায়নিক দ্রব্যাদির ব্যবহার দ্বারা রসায়ন পাঠের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়-
রাসায়নিক দ্রব্য | ব্যবহার |
১. কীটনাশক | পোকামাকড়ে শস্যহানি থেকে প্রতিরোধ করতে। |
২. কয়েল বা অ্যারোসোল | মশা তাড়াবার কাজে। |
৩. সাবান, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু | পরিষ্কার করার কাজে। |
৪. ঔষধ, অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন | শরীর ও স্বাস্থ্যরক্ষায়। |
৫. কাঁচা হলুদ, মেহেদি, কসমেটিকস, রং | সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে। |
৬. ভেষজ ওষুধপত্র | স্বাস্থ্যরক্ষা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে। |
প্রশ্ন: রসায়ন শব্দের উৎপত্তি ও জনককে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় আরবের রসায়ন চর্চাকে ‘আল-কেমি’ (Alchemy) বলা হতো আর গবেষকদের বলা হতো আলকেমিস্ট (Alchemist)। ‘আলকেমি’ শব্দ থেকে রসায়ন শব্দের উৎপত্তি। আলকেমি শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি আবার এসেছে কিমি (Chemi বা Kimi) শব্দ থেকে। এই Chemi শব্দ থেকেই Chemistry শব্দের উৎপত্তি, যার বাংলা প্রতিশব্দ হলো রসায়ন। আলকেমিস্ট জাবিরইবনে-হাইয়ান সর্বপ্রথম গবেষণাগারে রসায়নের গবেষণা করেন বলে কখনো কখনো তাঁকে রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে। অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়েকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়।
প্রশ্ন : রসায়নের অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: রসায়নের অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া : মানবসভ্যতার বিকাশে রাসায়নিক দ্রব্য ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজন অনুসন্ধান ও গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন রাসায়নিক দ্রব্যের উৎস, গঠন, ধর্ম ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে মানব কল্যাণে প্রয়োগ করা যায়। অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার ৭টি ধাপ রয়েছে। এগুলালো হলো:
- বিষয়বস্তু নির্ধারণ
- কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন
- পরীক্ষণ ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ
- বিজ্ঞান ও মানব কল্যাণে প্রভাব
- বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন
- ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণাকরণ
- তথ্য-উপাত্ত এর। সংগঠন ও বিশ্লেষণ
রসায়ন নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্নঃ রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ অনেক রাসায়নিক পদার্থই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। অনেক দ্রব্য আছে যারা অতি সহজেই বিস্ফোরিত হতে পারে, বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্য সংবেদনশীল এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি সর্বজনীন নিয়ম চালুর বিষয়কে সামনে রেখে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাসায়নিক দ্রব্য কোথায়, কীভাবে সংরক্ষণ করলে রাসায়নিক দ্রব্যের মান ঠিক থাকে ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায় তা এ সম্মেলনে আলোচিত হয়।
প্রশ্নঃ ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তন বলতে কি বুঝ? উহাদের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
উত্তরঃ ভৌত পরিবর্তনঃ যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয়, কিন্তু তা কোন ভিন্নধর্মী নতুন পদার্থে পরিণত হয়। না, তাকে ভৌত পরিবর্তন বলে। যেমন- পানির বরফে পরিণত হওয়া।
রাসায়নিক পরিবর্তনঃ যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু স্বীয় সত্ত্বা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুতে পরিণত হয় তাকে। রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যেমন- লোহায় মরিচা (Fe2O3.nH2O) পড়া। ভৌত পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলো:
ভৌত পরিবর্তন | রাসায়নিক পরিবর্তন |
১. কোনো নতুন ধরনের বস্তু সৃষ্টি হয় না। | ১. সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক বা একাধিক বস্তু সৃষ্টি হয়। |
২. বস্তুর ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়। | ২. বস্তুর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরির্বন হয়। |
৩. বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয় না। | ৩. বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়। |
৪. বস্তুর রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয় না। | ৪. রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয়। |
৫. এ পরিবর্তন অস্থায়ী। সাধারণ পরিবর্তনের কারণ (যেমন: তাপ ও চাপ) সরিয়ে নিলে বস্তু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে | | ৫. এ পরিবর্তন স্থায়ী। বস্তুকে পূর্বের অবস্থায় সহজে ফিরিয়ে আনা যায় না। |
৬. তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ ঘটতে পারে,নাও ঘটতে পারে। | ৬. তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ অবশ্যই ঘটবে। |
প্রশ্নঃ জৈব এসিডের চার্টঃ
ক্রঃনং | জৈব এসিডসমৃদ্ধ ফল/বস্তু | উপস্থিত এসিড | ক্রঃনং | জৈব এসিডসমৃদ্ধ ফল/বস্তু | উপস্থিত এসিড | |
১. | আঙুর/কমলা/ওয়াইন | সাইট্রিক এসিড় | ১১. | দই | ল্যাকটিক | |
২. | টমেটো | অক্সালিক এসিড | ১২. | কালজাম | আইসোসাইট্রিক ও ম্যালিক | |
৩. | আম | সাক্সিনিক, ম্যালিক এসিড। | ১৩. | তেঁতুল | টারটারিক এসিড | |
৪. | লেবু | সাইট্রিক, অ্যাসকরবিক, অক্সালিক, ম্যালিক | ১৪. | চেরি | ম্যালিক, সাইট্রিক, টারটারিক, সাক্সিনিক, কিউনিক। | |
৫. | আমলকি | অ্যাসকরবিক এসিড | ১৫. | স্টবেরি | সাইট্রিক, ম্যালিক। | |
৬. | পেঁপে | ম্যালিক এসিড | ১৬. | কলা | ম্যালিক, সাইট্রিক, এসিটিক, টারটারিক এসিড | |
৭. | আনারস | ম্যালিক, সাইট্রিক এসিড। | ১৭. | কোমল পানীয়। | কার্বনিক, সাইট্রিক | |
৮. | ক্যান্ডি/জেলী | সাইট্রিক এসিড | ১৮. | আপেল/ট্যাংফল | ম্যালিক এসিড | |
৯. | চা | ট্যানিক এসিড | ১৯. | ভিনেগার | এসিটিক এসিড | |
১০. | আচার | এসিটিক এসিড | ২০. | পিঁপড়ার মুখে | ফরমিক এসিড |
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন: রসায়নের ক্ষেত্রসমূহ ও অন্যান্য বিষয়ের সাথে সম্পর্ক বর্ণনা কর।
উত্তর : রসায়নের ক্ষেত্রসমূহ : রসায়নের বিস্তৃতি ব্যাপক। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সকল কর্মকান্ডে রয়েছে রসায়ন। আমাদের নিঃশ্বাসে গৃহীত বায়ু, পানি, খাবার, পরিধেয় বস্ত্র, গৃহস্থালি ও শিক্ষা সরঞ্জাম, কৃষি, যোগাযোগ, গাছে ফল পাকা, লোহায় মরিচা ধরা, আগুন জ্বালানো সবকিছুতেই রসায়ন এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়া জড়িত।
রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের সম্পর্ক : জীববিজ্ঞানে আলোচিত সালোকসংশ্লেষণ, জীবের জন্ম ও বৃদ্ধি প্রভৃতি জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধিত হয়। আবার, জীবের দেহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য যেমন : প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়ামের যৌগ, DNA, RNA প্রভৃতির সাথে রসায়ন জড়িত। সুতরাং, জীববিজ্ঞান ও রসায়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক : বিদ্যুৎ, চুম্বক, কম্পিউটার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের তত্ত্ব, উৎপাদন ও ব্যবহারের আলোচনা পদার্থ বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের গুণাবলির সমন্বয় ঘটিয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পদার্থবিজ্ঞানের এসব বস্তু ও শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার সম্ভব হয়েছে। রসায়নের বিভিন্ন পরীক্ষণ যন্ত্রনির্ভর। এসব যন্ত্রের মূলনীতি বা পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। তাই, রসায়নচর্চার মাধ্যমেই পদার্থবিজ্ঞানের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব।
রসায়নের সাথে গণিতের সম্পর্ক : রসায়নে হিসাব-নিকাশ, সূত্র প্রদান ও গাণিতিক সম্পর্ক সবই গণিত। কোয়ান্টাম ম্যাকানিকস, যা মূলত গাণিতিক হিসাব-নিকাশের সাহায্যে পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করে।
রসায়নের সাথে ভূগর্ভস্থ ও পরিবেশ বিজ্ঞানের সম্পর্ক : উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ পচনের পর ভূগর্ভের তাপ ও চাপের প্রভাবে তাদের রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। ফলে এরা পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানিতে পরিণত হয়। আবার বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তরের ক্ষয়কারী গ্যাসসমূহের শনাক্তকরণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে রাসায়নিক পদ্ধতির বিকল্প নেই।
প্রশ্ন: গবেষণা কী?
উত্তরঃ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার চেষ্টাই হলো গবেষণা।
প্রশ্নঃ জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়া?
উত্তরঃ জীবদেহে যেসব রূপান্তর বা পরিবর্তন সাধিত হয়, তাদেরকে জীব রাসায়নিক প্রক্রিয়া বলে।
প্রশ্নঃ ফুড প্রিজারভেটিভস কী?
উত্তরঃ নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহৃত খাদ্যের পচন রোধক রাসায়নিক পদার্থসমূহকে ফুড প্রিজারভেটিভস বলে।
প্রশ্নঃ পেটে এসিডিটির জন্য এন্টাসিডজাতীয় ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড জমা হলে পেটে এসিডিটির সমস্যা হয়। এন্টাসিডে থাকে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। এ দুটি ক্ষারীয় যৌগ এসিডকে প্রশমিত করে। তাই পেটে এসিডিটির জন্য এন্টাসিডজাতীয় ঔষধ খাওয়া হয়।
প্রশ্নঃ কাঁচা আম টক কিন্তু পাকা আম মিষ্টি হয় কেন?
উত্তরঃ কাঁচা আমে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড থাকে যেমন: সাক্সিনিক এসিড, ম্যালেয়িক এসিড প্রভৃতি থাকে, ফলে কাঁচা আম টক। কিন্তু আম যখন পাকে তখন এই এসিডগুলোর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে গ্লুকোজ ও ফুক্টোজের সৃষ্টি হয়। তাই পাকা আম মিষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ ফল পাকলে মিষ্টি হয় এবং কাঁচা ফল টক হয় কেন?
উত্তরঃ পাকা ফলে চিনি থাকে। তাই পাকা ফল মিষ্টি লাগে। কাঁচা ফলে জৈবিক এসিড থাকে। পাকা ফলে জৈবিক এসিড চিনিতে পরিবর্তিত হয়। ফলের প্রধান উপাদান শ্বেতসার বা স্টার্চ। স্টার্চ মিষ্টি নয়। ফল পাকলে স্টার্চ চিনিতে পরিণত হয়। তাই পাকা ফল সাধারণত মিষ্টি লাগে। কাঁচা ফলে চিনি থাকে। পাকা ফলে চিনি থাকে। তাছাড়া কাঁচা ফলে বিভিন্ন প্রকার জৈব এসিড যেমন-অ্যাসকরবিক এসিড, ফরমিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং কোনো কোনো ফলে সামান্য পরিমাণে অজৈব এসিডও পাওয়া যায়। কাঁচা ফলে pH এর পরিমাণ কম থাকে। তাই কাঁচা ফল টক হয়।
প্রশ্নঃ কেরোসিন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও মোমের দহন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কেরোসিন, প্রাকৃতিক গ্যাস, মোম এগুলোর মূল উপাদান হাইড্রোকার্বন। হাইড্রোকার্বন হচ্ছে কার্বন আর হাইড্রোজেনের যৌগ। তাই যখন এগুলোর দহন ঘটে তথন বাতাসের অক্সিজেনের সাথে এগুখের বিক্রিয়া হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প, আলো আর তাপশক্তি সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ দহন কী? বিকল্প জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ দহন ও অক্সিজেন দ্বারা কোনো পদার্থকে জারিত করাকে দহন বলে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের অবস্থান ও সম্ভাব্য বিকল্প জ্বালানির মধ্যে হাইড্রোজেনের অবস্থান সবার উপরে। কারণ,
১. এটি প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় ।
২. অন্যান্য জ্বালানিসমূহ বায়ুদূষণ ঘটায়। কিন্তু হাইড্রোজেন কোনোরূপ দুষণ না ঘটিয়ে বরং বিভিন্ন ক্ষতিকর দূষিত পদার্থের পরিমাণ হ্রাস করে।
৩. এটি গ্রিন হাউজ গ্যাসসমূহ অপসারণ করতেও সাহায্য করে।
৪. হাইড্রোজেন দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এটি অন্যান্য জ্বালানি | থেকে বেশি পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করে।
৫. যখন হাইড্রোজেনকে ইঞ্জিনে পোড়ানো হয় এটি কোনো | দূষিত পদার্থ নির্গমণ করে না।
৬. হাইড্রোজেনকে পারিবারিকভাবেও উৎপাদন করা যায়।
৭. এটি অন্যান্য জ্বালানির সাথে যুক্ত তা থেকে দূষণমুক্ত শক্তি উৎপাদন করাও সম্ভব।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্নঃ প্রিজারভেটিভস কী?
উত্তরঃ প্রিজারভেটিভসঃ যে সব রাসায়নিক পদার্থের পরিমিত সব্যবহার করে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী যেমন-জুস, সস, কেক, বিস্কুট প্রভূতিকে প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায় তাদের প্রিজারভেটিভস বলে। প্রজারভেটিভস রূপে সাধারণত বিভিন্ন জৈব এসিড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ ফল পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে কেন?
উত্তরঃ ফল পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করার কারণঃ রং এর সৃষ্টি মূলত রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। কাঁচা সবুজ ফলে ক্লোরোফিল নামক বর্ণের উপস্থিতির দরূন তা সবুজ দেখায়। পরবর্তীতে তা জীবরাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এস্টার জাতীয় পদার্থ সৃষ্টি হওয়ায় হলুদ হয়। ইথিলিনের প্রভাবে পরিপক্ক ফল। পাকতে আরম্ভ করে। ফল পাকার সময় ফলের অভ্যন্তরে অবস্থিত ক্লোরোপ্লাস্ট ক্যারোটিন সমৃদ্ধ ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরীত হয়। ফলে জ্যান্থোফিল নামক রঞ্জক পদার্থের আগমণ ঘটে। ফলে রঙের পরিবর্তন হয়। ফলে ক্যারোটিন বেশি থাকলে সবুজ ফল হলুদ বর্ণ ধারণ করে। জ্যান্থোফিল বেশি থাকলে সবুজ ফল কমলা রং ধারণ করে। লাইকোপিন বেশি হলে সবুজ ফল লাল রং ধারণ করে। বাণ্যিজিক ভিত্তিতে ফলের উৎপাদনের জন্য ইথিলিন ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্নঃ মোম কি ধরনের পদার্থ? মোমবাতি জ্বালালে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে –ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মোম : মোম হলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের যৌগ অর্থাৎ হাইড্রোকার্বন। সংকেত ( C20H42) মোম বাতি জ্বালালে উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এই গলিত মোম ঠান্ডা হলে পুনরায় পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ কঠিন মোমে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে পরিবর্তনটি অস্থায়ী হয় তথা ভৌত পরিবর্তন ঘটে। আবার কিছু অংশ বাতাসের অক্সিজেনের সাথে কোনাে কিছুর বিক্রিয়াকে দহন বলে। মোমবাতি জ্বালালে মোমের অধিকাংশই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয়বাষ্প উৎপন্ন করে। দহনে উৎপন্ন পদার্থদ্বয় মোম ও অক্সিজেন হতে সম্পূর্ণ পৃথক। কাজেই এক্ষেত্রে পরিবর্তনটি স্থায়ী হয় তথা রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।
অতএব উপযুক্ত যুক্তি সাপেক্ষে বলা যায়, মোমবাতি জ্বলনের ফলে ভৌত ও রাসায়নিক উভয় পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
প্রশ্নঃ জৈব যৌগ কী?
উত্তর জৈব যৌগঃ প্রধানত কার্বনের যৌগসমূহকে জৈব যৌগ বলে।
প্রশ্নঃ আমিষকে জৈব যৌগ বলা হয় কেন?
উত্তরঃ আমিষকে জৈব যৌগ বলার কারণ : আমিষ সাধারণত কার্বন ও হাইড্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত। কার্বন ও হাইড্রোজেন যুক্ত যৌগকে প্রধানত জৈব যৌগ বলা হয়। যেহেতু আমিষ কার্বন ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত তাই আমিষকে জৈব যৌগ বলা হয়।
প্রশ্নঃ জারক, জীবচক্র, তেজস্ক্রিয় রশ্মি, অণুজীব, অ্যারোসোল পরিশোধন এবং সার কী?
উত্তর: জারকঃ যে সকল পদার্থ অন্য পদার্থকে জারিত করে এবং নিজে বিজারিত হয় তাকে জারক বলে।
জীবচক্রঃ জীবস্তরের মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্যসমূহের চক্রাকার আবর্তনকে জীবচক্র বলে।
তেজস্ক্রিয় রশ্মিঃ তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে অনবরত যে সকল রশ্মি নির্গত হয় তাদের তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলে। যেমন-আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি।
অণুজীবঃ যে সকল জীব অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায় না তাদের অণুজীব বলে। যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদি।
পরিশোধন : অপরিশোধিত তেলের বিভিন্ন অংশকে পৃথক করার প্রক্রিয়াকে পরিশোধন বলে।
সার : কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজন, ফসফরাস প্রভূতি মৌলের সমন্বয়ে গঠিত রাসায়নিক পদার্থ যা মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে তাই সার।যেমন- ইউরিয়া, ট্রিপুলসুপার ফসফেট ইত্যাদি।
অ্যারোসোলঃ সাধারণত ক্লোরিনেটেড যৌগ অর্থাৎ ক্লোরিন যুক্ত যৌগ যা মশা তাড়াতে ব্যাবহার করা হয়।
প্রশ্নঃ মরিচা কী? লোহায় মরিচা পড়া রাসায়নিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মরিচা ও আর্দ্র আয়রন (III) অক্সাইডকে (Fe2O3.nH2O) মরিচা বলে। অর্থাৎ এক টুকরা লোহাকে দীর্ঘদিন যাবৎ আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে এটি বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে লালচে ফেরিক অক্সাইড নামক যৌগ গঠন করে এই যৌগকে মরিচা বলে।
বিক্রিয়ার সমীকরণটি : Fe+ O2 +H2O→ Fe2O3.nH2O লোহায় মরিচা পড়া রাসায়নিক পরিবর্তন কারণ- উল্লিখিত পরিবর্তনে মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও পানির ধর্ম হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন যৌগ উৎপন্ন হয়েছে। কাজেই লোহায় মরিচা পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
প্রশ্নঃ CO মারাত্মক ক্ষতিকর কেন?
উত্তরঃ CO হলো কার্বনের একটি বিশেষ অক্সাইড, স্বল্প বায়ুতে কার্বন বা কয়লা দহন করলে CO সৃষ্টি হয়। কার্বন মনোঅক্সাইড বর্ণহীন, গন্ধহীন, স্বাদহীন বিষাক্ত গ্যাস। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মানুষ যখন নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহন করে স্বভাবত কারণেই মানুষ বুঝতে পারে না। ফলে CO মানুষের অজান্তে প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বক্সি-হিমোগ্লোবিন নামক জটিল যৌগ গঠন করে। এতে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হয়। হৃদযন্ত্রের উপর চাপ বাড়ায় হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটে। তাই CO গ্যাসকে নীরব ঘাতক বলা হয়। সুতরাং CO মারাত্মক ক্ষতিকর।
প্রশ্নঃ CO2 গ্যাসটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর–ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ জীবাশ্ম জ্বালানি পােড়ানাের ফলে বায়ুমন্ডলে CO2 গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূর্যরশ্মি থেকে বিকিরিত তাপ এ CO2 গ্যাস ধরে রাখে। এভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে গ্রিন হাউজ প্রভাব সৃষ্টিকারী দায়ী গ্যাসসমূহের মধ্যে সব প্রধান গ্যাস। এটি বাতাসের জলীয়বাষ্পের সাথে মিশে একে বিষাক্ত করে তুলে। বৃষ্টির পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে এসিড বৃষ্টি ঘটায় যা উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া গ্রিন হাউজের প্রভাব সৃষ্টির কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। এতে সমুদ্রস্তরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীর নিম্নাঞ্চল সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এছাড়া এর প্রভাবে অসময়ে খরা, বন্যা প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। তাই CO2 গ্যাসটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
প্রশ্নঃ জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ জীবশ্ম জ্বালানি ও প্রচন্ড চাপ ও তাপে বায়ুর অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ হাজার হাজার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এক ধরনের জ্বালানিতে পরিণত হয়। এদের জীবাশ্ম জ্বালানি বলে। যেমন- পেট্রোলিয়াম, প্রকৃতিক গ্যাস, কয়লা, ইত্যাদি। অর্থাৎ ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুর পরিবর্তনে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ জলাভূমি ও বালুস্তরের নিচে ছিদ্রবিহীন শিলাখন্ডের দুটি স্তরের মধ্যে আটকা পড়ে। উচ্চ তাপ ও চাপে বায়ুর অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ হাজার হাজার বছরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এক ধরনের জ্বালানীতে পরিণত হয়। এদের জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।
প্রশ্নঃ সালোক সংশ্লেষণ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ সালোকসংশ্লেষণ : যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিয়ে পানি ও কার্বন ডাইঅক্সাইড হতে শর্করা ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে থাকে তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।
প্রশ্নঃ রসায়ন পরীক্ষাগার কাকে বলে?
উত্তরঃ রসায়ন গবেষণাগার: যেখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা এবং গবেষণা করা হয় তাকে পরীক্ষাগার বা গবেষণাগার (Laboratory) বলে। তাই যেখানে রসায়নের পরীক্ষানিরীক্ষা বা গবেষণা করা হয় তাকে রসায়ন পরীক্ষাগার বা রসায়ন গবেষণাগার (Chemistry Laboratory) বলে।
প্রশ্নঃ সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ রাসায়নিক পদার্থসমূহ সরবরাহ বা সংরক্ষণ করতে হলে তার গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিহ্ন ব্যবহার করাহয়। ফলে ব্যবহারকারী সহজেই ঐ চিহ্ন সম্বলিত পদার্থ সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। এ ধরনের চিহ্নকে সাংকেতিক চিহ্ন বলা হয়। এ চিহ্নসমূহ পৃথিবীর সকল দেশে একইভাবে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। তাই এ চিহ্নগুলোকে সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন বলা হয়। এ চিহ্নগুলো ব্যবহারের ফলে কোনোরূপ অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে না।
প্রশ্নঃ রসায়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ব্যাখ্যা কর?
উত্তরঃ রসায়নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো:
খ্রিষ্টপূর্ব 380 অব্দের দিকে গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ঘোষণা করেন যে, প্রত্যেক পদার্থকে ভাঙতে থাকলে শেষ পর্যায়ে এমন এক ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে যাকে আর ভাঙা যাবে না। তিনি এর নাম দেন অ্যাটম (Atom অর্থ Indivisible বা অবিভাজ্য)।
- অ্যাস্টিটল এ ধারণার বিরোধিতা করেন। অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে তিনিও মনে করতেন সকল পদার্থ মাটি, আগুন, পানি ও বাতাস মিলে তৈরি হয়।
- খ্রিষ্টপূর্ব 3500 অব্দের দিকে কপার বা টিন ধাতুকে গলিয়ে তরলে পরিণত করে এবং এ দুটি তরলকে মিশিয়ে অত:পর মিশ্রণকে ঠান্ডা করে কঠিন সংকর ধাতুতে (alloy) পরিণত করা হয়। এ সংকর ধাতুর নাম ব্রোঞ্জ (কাসা)।
- মধ্যযুগীয় আরবে রসায়ন চর্চাকে আলকেমি (Alchemy) বলা হতো, আর গবেষকদের বলা হতো আলকেমিস্ট (Alchemist)। আলকেমি শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আল-কিমিয়া থেকে। আল-কিমিয়া শব্দটি আবার এসেছে কিমি (Chemi বা Kimi ) শব্দ থেকে। Chemi শব্দ থেকেই Chemistry শব্দের উৎপত্তি যার বাংলা প্রতিশব্দ হলো রসায়ন।
- আলকেমিস্ট জাবির-ইবনে-হাইয়ান সর্বপ্রথম গবেষণাগারে রসায়নে গবেষণা করেন।
- জাবির ইবনে হাইয়ানকে কখনো কখনো রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১ ॥ রসায়ন কী?
উত্তর : বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।
২ ॥ বিজ্ঞানী কে?
উত্তর : যিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার চেষ্টা করেন তিনিই বিজ্ঞানী।
৩ ॥ আল–কেমি শব্দটি কোথা থেকে উদ্ভূত?
উত্তর : আল-কেমি শব্দটি আরবি আল-কিমিয়া থেকে উদ্ভূত।
৪ ॥ প্রাচীনকালে রসায়ন চর্চাকারীদের কী বলা হতো?
উত্তর : প্রাচীনকালে রসায়ন চর্চাকারীদের আল-কেমি বলা হতো।
৫ ॥ আল কেমি কী?
উত্তর : আলকেমি হলো প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রসায়ন চর্চা।
৬ ॥ কালি কী?
উত্তর : কাঠ ও কয়লা পোড়ানো এক ধরনের ক্ষতিকর কার্বন কণা।
৭ ॥ পেট্রোলিয়ামের দহন কী?
উত্তর : পেট্রোলিয়ামের দহন হলো রাসায়নিক বিক্রিয়া।
৮ ॥ মশা তাড়াবার জন্য কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : মশা তাড়াবার জন্য কয়েল বা অ্যারোসল ব্যবহার করা হয়।
৯ ॥ যানবাহন থেকে প্রতিনিয়ত কী গ্যাস তৈরি হয়?
উত্তর : যানবাহন থেকে প্রতিনিয়ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়।
রসায়ন নোট PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
১০ ॥ মোম কী দ্বারা গঠিত?
উত্তর : মোম কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত।
১১ ॥ কোন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ শর্করা তৈরি করে?
উত্তর : উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরি করে।
১২ ॥ তন্তু কী?
উত্তর : তন্তু হলো আঁশ জাতীয় পদার্থ যা থেকে সুতা তৈরি হয়।
১৩ ॥ দহন কী?
উত্তর : বায়ুর অক্সিজেনের সাথে কোনো কিছুর বিক্রিয়াকে দহন বলে।
১৪ ॥ কাঠের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর : কাঠের প্রধান উপাদান সেলুলোজ।
১৫ ॥ আন্তর্জাতিক রশ্মি চিহ্নটি প্রথম কোথায় ব্যবহার করা হয়েছিল?
উত্তর : আন্তর্জাতিক রশ্মি চিহ্নটি প্রথমে আমেরিকায় ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৬ ॥ কত সালে আন্তর্জাতিক রশ্মির ব্যবহার শুরু হয়েছিল?
উত্তর : ১৯৪৬ সালে আন্তর্জাতিক রশ্মির ব্যবহার শুরু হয়েছিল।
১৭ ॥ গবেষণা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ কী?
উত্তর : গবেষণা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা।
১৮ ॥ অ্যান্টিবায়োটিক কী?
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক হলো অণুজীব ধ্বংসকারী ঔষধ।
১৯ ॥ অনুসন্ধান কাজের প্রধান শর্ত কী?
উত্তর : অনুসন্ধান কাজের প্রধান শর্ত হলো বিষয়বস্তু নির্ধারণ বা সমস্যা চিহ্নিত করা।
২০ ॥ বায়ুর তাপমাত্রা বাড়াতে কোন গ্যাস সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে?
উত্তর : বায়ুর তাপমাত্রা বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে CO2 গ্যাস।
২১ ॥ বৃত্তের ওপর আগুনের শিখা কিসের সংকেত?
উত্তর : বৃত্তের ওপর আগুনের শিখা জারক গ্যাস বা তরল পদার্থের সংকেত।
২২ ॥ নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হয় এমন একটি গ্যাসের নাম লিখ।
উত্তর : নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হয় এমন একটি গ্যাস হলো ক্লোরিন গ্যাস।
২৩ ॥ কীটনাশকের কাজ কী?
উত্তর : কীটনাশকের কাজ পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে শস্যহানি। প্রতিরোধ করা।
২৪ ॥ দাহ্য পদার্থ কী?
উত্তর : যেসব পদার্থে সহজেই আগুন ধরতে পারে তারা দাহ্য পদার্থ।
২৫ ॥ পোকামাকড় থেকে শস্য রক্ষায় কী ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : পোকামাকড় থেকে শস্য রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার করা হয় ।
২৬ ॥ রসায়নে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়?
উত্তর : রসায়নে নানা ধরনের পরিবর্তন যেমন- সৃষ্টি, ধ্বংস, বৃদ্ধি, রূপান্তর, উৎপাদন ইত্যাদির আলোচনা করা হয়।
২৭ ॥ প্রাণিকুলের খাদ্যের যোগানদাতা কোনটি?
উত্তর : প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমগ্র প্রাণিকুলের খাদ্যের যোগানদাতা উদ্ভিদ।
২৮ ॥ যন্ত্রের মূলনীতি কোন বিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়?
উত্তর : যন্ত্রের মূলনীতি পদার্থবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
২৯ ॥ গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণে কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হয়?
উত্তর : গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণে সময় পরিবেশ, সামাজিক আচার বা ধর্মীয় অনুভূতির কথা বিবেচনা করতে হয়।
৩০ ॥ কোনদিক সর্বজনগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মনে করা হয়?
উত্তর : পরীক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ সর্বজনগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মনে করা হয়।
৩১ ॥ বিস্ফোরক দ্রব্য কী?
উত্তর : যেসকল দ্রব্য নিজে নিজেই বিক্রিয়া করতে পারে তাদেরকে বিস্ফোরক দ্রব্য বলে।
৩২॥ আলোচনার মাধ্যমে গবেষণা প্রক্রিয়ায় কী করা সম্ভব?
উত্তর : আলোচনার মাধ্যমে অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ায় বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
৩৩ ॥ খনিজ জ্বালানি কোনগুলো?
উত্তর : প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদিকে খনিজ জ্বালানি বলা হয়।
৩৪॥ রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে কী হয়?
উত্তর : রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারে গাছের ক্ষতি হয় বা গাছ মরে যায়।
৩৫॥ তাপ থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়?
উত্তর : তেল, গ্যাস, কয়লা পুড়িয়ে অর্থাৎ রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে উৎপাদিত তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়।
৩৬ ॥ প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান কোনটি?
উত্তর : প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন (CH4)।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ॥ ১ ॥ বর্তমান পৃথিবীতে গবেষণার গুরুত্ব কী?
উত্তর : বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ মানুষের জীবন হয়েছে সুন্দর, সহজ হয়েছে। সকল কাজ, উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মান। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের এ ভূমিকা সম্ভব হয়েছে একমাত্র গবেষণার দ্বারা। তাই প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। বৃত্তের উপর আগুনের শিখা চিহ্ন দ্বারা জারক গ্যাস বা তরল পদার্থ বোঝানো হয়। যেমন-ক্লোরিন গ্যাস। এসব পদার্থ নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বকে লাগলে ক্ষত হতে পারে, জারণ বিক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে রাখলে তীব্র বিক্রিয়া হতে পারে। অতএব, এ ধরনের বস্তু অর্থাৎ বৃত্তের উপর আগুনের শিখা দেখলে আমি সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করব।
প্রশ্ন ॥ ২ ॥ আমরা শক্তি পাই কোথা হতে?
উত্তর : খাবার হতে আমরা শক্তি পাই। জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) সালোকসংশ্লেষণ ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদন ও সঞ্চয় করে। খাবার খেলে আমাদের শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া ঘটে এবং আমরা শক্তি পাই।।
প্রশ্ন ॥ ৩ ॥ মোটর সাইকেলের চলার শক্তি কোথা থেকে আসে?
উত্তর : পেট্রোলিয়াম (জ্বালানি) দহনের মাধ্যমে মোটর সাইকেল চলার শক্তি অর্জন করে। বিভিন্ন ধাতু, প্লাস্টিক ইত্যাদি দিয়ে তৈরি নানা যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে নির্মিত হয় মোটর সাইকেল। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিভিন্ন আকরিক থেকে ধাতব পদার্থ আহরিত হয়। এই ধাতব পদার্থ ও পেট্রোলিয়াম তথা কেরোসিন বা ডিজেলের সাথে অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া অর্থাৎ দহন থেকে মোটর সাইকেলের চলার শক্তি আসে।
প্রশ্ন ॥ ৪ ॥ দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের ব্যবহার লেখ।
উত্তর : মানবজীবনে রসায়নের বিস্তৃতি ব্যাপক, যা মানব সেবায় নিয়ােজিত। মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে রসায়ন বিরাজমান। নিঃশ্বাস নিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠা এবং ব্রাশ করে পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে খাবার খাওয়া, পেন্সিল ও খাতা কলম নিয়ে পড়তে বসাসহ দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে রসায়নের ব্যবহার রয়েছে।
প্রশ্ন ॥ ৫॥ রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য সর্বজনীন নিয়ম কেন চালু হয়েছে?
উত্তর : সারাবিশ্বে পরীক্ষাগার, শিল্প-কারখানা, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জরুরি বলেই রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য সর্বজনীন নিয়ম চালু হয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যতীত রসায়নে পরীক্ষণ সাধারণত করা যায় না। অনেক রাসায়নিক পদার্থই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। অনেক দ্রব্য আছে যারা অতি সহজেই বিস্ফোরিত হতে পারে, বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্য সংবেদনশীল এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। সেসব দ্রব্যের সতর্কতা নির্দেশ প্রদান এবং তা যেন। পৃথিবীর সব দেশের, সব ভাষার মানুষ সহজেই বুঝতে পারে। সে উদ্দেশ্যেই রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য সর্বজনীন নিয়ম চালু হয়েছে।
৬ ॥ রাসায়নিক দ্রব্য সংবলিত পাত্রের গায়ে লেবেলের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : রাসায়নিক দ্রব্য সংবলিত পাত্রের গায়ে লেবেলের প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ :
১. রাসায়নিক দ্রব্যের কার্যকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ।
২. দ্রব্যটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিনা সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ।
৭ ॥ মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থের গায়ের লেবেলের তাৎপর্য কী?
উত্তর : বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার ও সংরক্ষণের পূর্বে সতর্ক করাই হলো। মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থের গায়ের লেবেলের তাৎপর্য। মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাসীয়, তরল বা কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে “বিপজ্জনক সাংকেতিক চিহ্নযুক্ত লেবেল ব্যবহার করা হয়। এ লেবেল দেখলে জানা যায় পদার্থটি প্রশ্বাসের সাথে গেলে, ত্বকে লাগলে অথবা খেলে মৃত্যু হতে পারে। তাই এ ধরনের পদার্থ অবশ্যই তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়।
প্রশ্ন ॥ ৮ ॥ গবেষণা কার্যক্রমে পরীক্ষণের ভূমিকা কী?
উত্তর : রসায়নে অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষণ নির্ভর। পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেই বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। পরীক্ষণ কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন হয় প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ। আর পরীক্ষণের ফলে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণের মাধ্যমেই ব্যাখ্যা প্রদান এবং ফলাফল নিশ্চিতকরণ সম্ভব।
প্রশ্ন ॥ ৯ ॥ ট্রিফয়েল বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ট্রিফয়েল একটি আন্তর্জাতিক চিহ্ন যা দ্বারা তেজস্ক্রিয়তা বোঝানো হয়। কোনো বস্তুর গায়ে ট্রিফয়েল চিহ্ন লাগানো থাকলে বুঝতে হবে বস্তুটিতে তেজস্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে। এ রশ্মি মানবদেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এ আন্তর্জাতিক চিহ্নটি ১৯৪৬ সালে অ্যামেরিকাতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল।
প্রশ্ন ॥ ১০ ॥ তামা পুনরুদ্ধার করে তার পুনর্ব্যবহার করা জরুরি কেন?
উত্তর : পরিবেশকে আসন্ন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে তামা পুনরুদ্ধার করে তার পুনর্ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। প্রকৃতিতে যতটুকু অব্যবহৃত কপার (তামা) মজুদ আছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ইতিমধ্যেই কম্পিউটার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে তামার ব্যবহার হলে তা একসময় ফুরিয়ে যাবে। তাছাড়াও নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশের পরিমাণ দিনে দিনে বাড়তে থাকবে এবং আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করবে।
প্রশ্ন ॥ ১১ ॥ বিপদজনক সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা কী বুঝানো হয়?
উত্তর : বিপদজনক সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা এমন কিছু মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থকে বুঝানো হয় যেগুলো নিঃশ্বাসে, ত্বকে লাগলে বা খেলে মৃত্যু হতে পারে। এসকল পদার্থ অবশ্যই তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়। ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক (গ্যাসীয় হলে) ব্যবহার করা উচিৎ। তাছাড়া, পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণের যথাযথ পরিশোধন করা উচিৎ।
প্রশ্ন ॥ ১২ ॥ গণিত ব্যতীত রসায়ন বিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রদান অসম্ভব কেন?
উত্তর : গাণিত ব্যতীত রসায়ন বিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রদান বা তত্ত্বীয় জ্ঞানার্জন অসম্ভব কেননা, রসায়ন হিসাব-নিকাশ, সূত্র প্রদান ও গাণিতিক সম্পর্ক প্রতিপাদন সবই গণিতের সাহায্যে করা হয়। কোয়ান্টাম ম্যাকনিকস (Quantum mechanics), যা মূলত গাণিতিক হিসাব-নিকাশের সাহায্যে পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা কর।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ॥ ১৩ ॥ জারক পদার্থসমূহের ব্যবহারে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
উত্তর : জারক পদার্থ (ক্লোরিন গ্যাস) নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এজন্য এধরনের পদার্থ ব্যবহারে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলো মেনে চলা উচিত।
- গ্যাস হলে, (নিচ্ছিদ্রভাবে) জারণ বিক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে না রাখা উচিত।
- ব্যবহারের সময় হাতে সুনির্দিষ্ট দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকেমুখে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
প্রশ্ন ॥ ১৪ ॥ রাসায়নিক দ্রব্যের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি কেন?
উত্তর : অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি। পরীক্ষণ ছাড়া রসায়নে যেমন অনুসন্ধান ও গবেষণা করা কঠিন, তেমনি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যতীত রসায়নে পরীক্ষণ করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ রাসায়নিক পদার্থই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক। আবার, অনেক রাসায়নিক দ্রব্য আছে যারা অতি সহজেই বিস্ফোরিত হতে পারে, বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্য সংবেদনশীল এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী।
গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর :
১। অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার ষষ্ঠ ধাপ কোনটি?
ক. কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন খ. ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণা
গ. পরীক্ষণ ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ঘ. তথ্য ও উপাত্তের সংঘটন ও বিশ্লেষণ
উত্তর: ঘ. তথ্য ও উপাত্তের সংঘটন ও বিশ্লেষণ
২। বিস্ফোরক পদার্থ কোনটি?
ক. জৈব পারঅক্সাইড খ. অ্যারোসোল গ. পেট্রোলিয়ায় ঘ. ক্লোরিন গ্যাস
উত্তর : ক. জৈব পারঅক্সাইড
৩. নিচের কোন হ্যালোজেনটি ত্বকে লাগলে ক্ষতি হতে পারে?
ক. ফ্লোরিন খ. ক্লোরিন গ. ব্রোমিন ঘ. আয়োডিন
উত্তর : খ. ক্লোরিন
৪। অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ কোনটি?
ক. বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন খ. ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণাকরণ
গ. পরীক্ষণ ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ঘ. কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন
উত্তর : ঘ. কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন
৫. কাঠের প্রধান রাসায়নিক উপাদান কোনটি?
ক. মিথেন খ. মোম গ. সেলুলোজ ঘ. হাইড্রোজেন
উত্তর : গ. সেলুলোজ
৬. আলকেমি শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
ক. বাংলা খ. ফারসি গ. ইংরেজি ঘ. আরবি
উত্তর : ঘ. আরবি
৭. আলকেমি শব্দটি দ্বারা কোন সভ্যতা বোঝানো হয়?
ক. সিন্ধু খ. মিশরীয় গ. পাশ্চাত্য ঘ. ভারতীয়
উত্তর : খ. মিশরীয়
৮. কাঠ পোড়ালে যে পদার্থগুলো তৈরি হয়-
i. কার্বন-ডাই অক্সাইড
ii. জলীয় বাষ্প
iii. মিথেন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii খ. i ও iii গ ii ও iii ঘ i, ii ও iii
উত্তর : ক. i ও ii
নিচের উদ্দীপকটি থেকে ৯ ও ১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :

৯. চিত্র-১নং সাংকেতিক চিহ্ন দ্বারা কি প্রকাশ করে?
ক. বিস্ফোরক পদার্থ খ. দাহ্য পদার্থ গ. তেজস্ক্রিয় রশ্মি ঘ. আগুনের শিখা
উত্তর: খ. দাহ্য পদার্থ
১০. চিত্রের কোন চিহ্নটি তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্দেশ করে?
ক. ১নং খ. ২নং গ. ৩নং ঘ. ৪নং
উত্তর: ঘ.৪নং
আরও গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করুন
গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন –১ : নিচের চিত্রদ্বয় লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. গবেষণা কী?
খ. পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে কেন?
গ. উদ্দীপকের A নং চিত্রে রসায়ন কীভাবে সম্পর্কিত- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের কোনটির অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যুক্তিসহ লিখ।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনো কিছু জানার চেষ্টাই হলো গবেষণা।
খ. কাঁচা অবস্থায় আমে বিভিন্ন ধরনের জৈব এসিড থাকে। যেমন-সাক্সিনিক এসিড, ম্যালেয়িক এসিড। তাই কাঁচা আম টক লাগে। কিন্তু আম যখন পাকে তখন আমে বিদ্যমান এই এসিডগুলো রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্লুকোজ ও ফ্রূকটোজে (মিষ্টি) পরিণত হয়। ফলে পাকা আম হয় মিষ্টি।
গ. উদ্দীপকের A নং চিত্র ঔষধ ও ঔষধ সেবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঔষধ একটি রাসায়নিক যৌগ। এতে বিভিন্ন ধরনের জৈব বা অজৈব যৌগ বিভিন্ন মাত্রায় সংমিশ্রিত থাকে যা পরীক্ষাগার ও ঔষধ কারখানায় নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিমাপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। জীবনক্রিয়ার ধারা বজায় রাখার জন্য জীবদেহের বৃদ্ধি ও পুষ্টিসাধন, সংরক্ষণ ও ক্ষয়পূরণ, চলাচল করার ক্ষমতা, দেহের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়া, বংশবৃদ্ধি ও বংশধারা রক্ষণ প্রভৃতি প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ অংশগ্রহণ করে। এ কার্যক্রমের কোথাও বিঘ্ন সৃষ্টি হলে আমরা অসুস্থ হই এবং ঔষধ সেবন করি । বর্তমানে বেশিরভাগ ঔষধ কৃত্রিম উপায়ে পরীক্ষাগারে তৈরি করা হয়। এসব ঔষধের ব্যবহারিক গুণ জেনে মানুষ সেবন করে এবং দেহ অভ্যন্তরের নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক কার্যক্রম দ্বারা আরোগ্য লাভ করে।
সুতরাং উদ্দীপকের A নং চিত্রে রসায়ন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
ঘ. উদ্দীপকের A নং চিত্রে ঔষধ সেবন ও B নং চিত্রে সবজিক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর ছবি দেখানো হয়েছে। এই দুইটি ছবি পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, B নং চিত্রে প্রদর্শিত সবজিক্ষেতে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সবজিক্ষেতে পোকামাকড় দমনের জন্য যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে গ্যামাক্সিন, ডিডিটি, অ্যালড্রিন, ক্লোরডেন, ডিলঞ্জিন অন্যতম। এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। জমিতে ছিটানো হলে এগুলো বাতাসে মিশে বাতাসকে দূষিত করে যা মানুষ প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। শুধু তাই নয়, কীটনাশক মাটিতে মিশে মাটিকেও দূষিত করে। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে এসব কীটনাশক পুকুরে, নদীনালা ও জলাশয়ের পানির সাথে মিশে পানিকে দূষিত করে তোলে। কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার পোকামাকড়ের অনিষ্ট থেকে ফসলকে রক্ষা করলেও এটি মাটি, পানি, বায়ু কে দূষিত করে তাহলে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আবার এসব কীটনাশক যখন সবজি ক্ষেতে বিদ্যমান পোকা মাকড়, কীটপতঙ্গ মারা জন্য ব্যবহার করা হয়, তখন পোকামাকড় দমনের পাশাপাশি উপকারী পোকামাকড় এবং পরিবেশেরও ব্যপক ক্ষতি হয়। উপযুক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, কীটনাশকের ব্যবহারে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফসলের উৎপাদন কমে যায়। মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় এবং মাটি দূষিত হয়ে যায়। এ দূষিত মাটিতে উৎপন্ন শাকসবজি খাওয়ার ফলে ক্ষতিকর পদার্থ রক্তের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। আবার পানিতে থাকা মাছ ও বৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই বলা যায়, কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার সমগ্র পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এসএসসি সাজেশন পেতে এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন– ২ নিচের চিত্রদ্বয় লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক. রসায়ন কী?
খ. পেটে এসিডিটির জন্য এন্টাসিড খাওয়া হয় কেন?
গ. চিত্র- 3 এর সাংকেতিক চিহ্নবিশিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ মানুষের কী ক্ষতিসাধন করে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্র-1 ও চিত্র- 2 এর সাংকেতিক চিহ্নবিশিষ্ট রাসায়নিক পদার্থসমূহের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।
খ. পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড জমা হলে পেটে এসিডিটির সমস্যা হয়। এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি লাভের জন্য তখন এন্টাসিড খাওয়া হয়। কারণ এন্টাসিডে থাকে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। এ দুটি ক্ষারীয় যৌগ পাকস্থলীর এসিডকে প্রশমিত করে এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। তাই পেটে এসিডিটির জন্য এন্টাসিডজাতীয় ঔষধ খাওয়া হয়।
গ. চিত্র-3 এর সাংকেতিক চিহ্নবিশিষ্ট রাসায়নিক পদার্থ হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত রশ্মি হলো তেজস্ক্রিয় রশ্মি।
ইউরিনিয়াম, রেডিয়াম ইত্যাদি হলো তেজস্ক্রিয় পদার্থ এসব পদার্থ হতে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্মি মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর কারণ এই ক্ষতিকারক রশ্মি ক্যাসারের মতো মরণব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে এমনকি একজনকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে।
তেজস্ক্রিয় রশ্মির তীব্রতা যা-ই হোক না কেন এটি সকল মাত্রায় ক্ষতিকর। তীব্র তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে সাথে সাথে শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। কিন্তু সামান্য তীব্রতার তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবও যথেষ্ট কেননা দীর্ঘ সময় ধরে এর প্রভাবে থাকলে এই রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব বা তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে ঢুকে মানবদেহের DNA ও কোষকলাকে আক্রমণ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ঘটায় এবং একজন মানুষকে ধীরে ধীরে ক্যান্সার বা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
ঘ. চিত্র-1 ও চিত্র-2 নির্দেশকারী রাসায়নিক পদার্থসমূহ হলো দাহ্য পদার্থ এবং বিষাক্ত পদার্থ। এসব পদার্থের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো -অ্যালকোহল, ইথার ইত্যাদি দাহ্য পদার্থ। এসব পদার্থে দ্রুত আগুন ধরে যায়। তাই এসব পদার্থকে আগুন, তাপ, ঘর্ষণ বা আগুনের উৎস থেকে দূরে রাখতে হবে। নতুবা যে কোনো মূহুর্তে অগ্নিকান্ড বা বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে দাহ্য পদার্থকে ব্যবহার করতে হবে।
আবার বিষাক্ত পদার্থসমূহ গ্যাস, তরল বা কঠিন হতে পারে। বেনজিন, ক্লোরোবেনজিন, মিথানল এ ধরনের পদার্থ। এ ধরনের পদার্থ নিঃশ্বাসে, ত্বকের সংস্পর্শে এলে বা খেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। তাই উন্মুক্ত স্থানে এই ধরনের বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার বা সংরক্ষণ করা যাবে না। অবশ্যই জলাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া ল্যাবরেটরীতে যখন এ সকল পদার্থ ব্যবহার করা হবে তখন। সীমিত পরিমাণে এবং যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়াও এ ধরনের পদার্থ ব্যবহারের সময় অ্যাপ্রোন, হ্যান্ড গ্লাভস, সেফটি গগলস ইত্যাদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রশ্ন –৩ নিচের ছকটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বিষয় | উপাদান | |
(ক) লোহায় মরিচা ধরা | লোহা + জলীয়বাষ্প + বায়ুর অক্সিজেন = মরিচা। | |
(খ) মোমে আগুন জ্বালানো | মোম + অক্সিজেন = CO2 + জলীয়বাষ্প + তাপ |
ক. বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে কোন ধাতু ব্যবহৃত হয়?
খ. প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা রসায়ন চর্চার মাধ্যমে কী করে মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছিল?
গ. ‘ক’ ও ‘খ’ তে রসায়নের উপস্থিতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘খ’ তে ভৌত ও রাসায়নিক উভয় ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয়- বিশ্লেষণ কর।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে তামা ব্যবহৃত হয়।
খ. প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় রসায়ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে খনিজ থেকে মূল্যবান ধাতু যেমন : স্বর্ণ, রৌপ্য, সিসা প্রভৃতি আহরণ করা হতো।
এসব ধাতু অভিজাত বলে অলংকার তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। এছাড়াও তৈজসপত্র নির্মাণ, অস্ত্র তৈরি ইত্যাদি নানা কাজে ধাতব অস্ত্রের ব্যবহার, লাঙল ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন, মূল্যবান ধাতু আহরণ ইত্যাদি দ্বারা প্রাচীন মিশরীয়রা মানুষের নানাবিধ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছিল।
গ. ‘ক’ ঘটনায় বিশুদ্ধ লোহা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে লোহার অক্সাইড নামক পদার্থে পরিণত হয়, যা সাধারণভাবে লোহার মরিচা (Fe2O3.nH2O) নামে পরিচিত। এ ঘটনার প্রতিটি বিষয় রসায়নে আলোচিত হয়। সুতরাং পরিবেশে ঘটে যাওয়া এ পরিবর্তনে রসায়ন উপস্থিত।
‘খ’ ঘটনায় মোমে আগুন জ্বালানো হয়। মোম (C20H42) হলো কার্বন ও হাইড্রোজেনের যৌগ। এতে আগুন জ্বালানোর অর্থ হলো কার্বন যৌগের দহন, অর্থাৎ মোম ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া। এর ফলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস, জলীয়বাষ্প ও তাপ উৎপাদিত হয়।
এ পরিবর্তনে রসায়নের উপস্থিতি লক্ষণীয়।
এসএসসি সাজেশন PDF পেতে এখানে ক্লিক করুন
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মোমবাতিটির দহনে ভৌত ও রাসায়নিক উভয় ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয়। মোমবাতিটি জ্বলার সময় উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এখানে গলিত মোম এবং কঠিন মোমবাতি উভয়ের আণবিক গঠন একই, কিন্তু পরিবর্তন বাহ্যিক তাই এটি ভৌত পরিবর্তন। আবার জুলার সময়ের মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয়বাষ্প নামক উৎপাদ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে উৎপাদ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্পের বৈশিষ্ট্য মোমবাতির বৈশিষ্ট্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই, এটি রাসায়নিক পরিবর্তন।

সুতরাং কঠিন মোম থেকে গলিত মোমে পরিণত হওয়া ভৌত পরিবর্তন আর মোমের সাথে বাতাসের অক্সিজেনের বিক্রিয়া রাসায়নিক পরিবর্তন।
এক্ষেত্রে উৎপাদ CO2 ও H2O এর বৈশিষ্ট্য বিক্রিয়ক (C, O2)-এর বৈশিষ্ট্য থেকে ভিন্ন। যেমন : O2 আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে আর CO2 আগুন নেভায়। সুতরাং এটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
অতএব, ‘খ’ তে ভৌত ও রাসায়নিক উভয় ধরনের পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে।
প্রশ্ন –৪ রসায়নের পরিধি বিবেচনার উদাহরণগুলো লক্ষ করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
বস্তু | উপাদান | ব্যবহার |
ক. পানি | হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন | পানীয়রূপে, গার্হস্থ্য কাজে, সেচরূপে, কারখানার উৎপাদন কাজে |
খ. খাবার | জৈব যৌগ ও খনিজ পদার্থ | জীবদেহের শক্তি উৎপাদন ও সঞ্চয় কাজে |
গ. পোশাক | জৈব যৌগ ও তন্তু | পরিধেয় বস্তু হিসেবে |
ক. ট্রিফয়েল কী?
খ. রাসায়নিক দ্রব্যাদির সঠিক ব্যবহার না হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?
গ. ‘ক’ ও ‘খ’ বস্তুর ওপর রসায়নের নির্ভরশীলতা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘গ’ এর উৎপাদনে রসায়নবিজ্ঞানের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ট্রিফয়েল হলো আন্তর্জাতিক রশ্মি চিহ্ন যা দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মিকে (শক্তি) বুঝানো হয়।
খ. রাসায়নিক দ্রব্যাদির সঠিক ব্যবহার না হলে যে যে ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নরূপ :
১. রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
২. এসব দ্রব্যাদির সঠিক ব্যবহার না হলে আমাদের দেহত্বকে অ্যালার্জি, একজিমা, ঘা ইত্যাদি হতে পারে।
৩. উৎকট গন্ধের রাসায়নিক দ্রব্যাদি আমাদের ঘ্রাণ ও শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৪. স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে অস্থিরভাবসহ বেশ কিছু অস্বাস্থ্যকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
গ. ‘ক’ ও ‘খ’ যৌগ হলো পানি ও খাবার। এদের ওপর রসায়ন অনেকাংশেই নির্ভরশীল। ব্যবহারিক কাজে পানি বিশেষভাবে দরকার।
রসায়নের বিভিন্ন যৌগ যেমন- ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, পটাশ পারম্যাঙ্গানেট, ক্লোরিন, সোডিয়াম হাইপো-ক্লোরাইট ইত্যাদি যৌগ পানি বিশুদ্ধকরণে ব্যবহার করা হয়। অতি বিশুদ্ধ পানির দরকার হলে পাতন প্রক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়। এটি রসায়নের একটি বিশেষ পরীক্ষা পদ্ধতি। দ্রাবক পানি বহু কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। এজন্য পানিকে সার্বজনীন দ্রাবক বলা হয়।
রসায়নের একটি অন্যতম বিষয় হলো তড়িৎ বিশ্লেষণ। পানির তড়িৎ পরিবাহিতা ব্যাখ্যার সাহায্যে এটি প্রমাণ করা যায়। দেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য আমরা খাবার গ্রহণ করি। এর প্রধান উপাদান হলো জৈব যৌগ।
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের প্রায় সবগুলোই জটিল জৈব যৌগ দ্বারা গঠিত। এসব খাদ্য দেহে আবিশ্লেষিত হয়ে রক্তের সাথে মিশে গিয়ে দেহের পুষ্টি সাধন করে। অর্থাৎ খাবারের রাসায়নিক বিক্রিয়া দেহে তাপ সৃষ্টি করে এবং শক্তি জোগায়। এসব বিষয়ের সবকিছুই রসায়নের সাথে জড়িত।
সুতরাং ‘ক’ ও ‘খ’ যৌগের ওপর রসায়ন অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
ঘ. উদ্দীপকে ‘গ’ হলো পোশাক। যার উৎপাদনের প্রতিটি স্তরেই রসায়নবিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে। পোশাক তৈরির প্রধান উপকরণ হলো সুতা। এ সুতা গঠিত হয় অসংখ্য ক্ষুদ্র আঁশের সমন্বয়ে। এসব ক্ষুদ্র আঁশকে তন্তু বলা হয়।
কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক তন্তুর সাথে রঞ্জকের সমন্বয়ে টেক্সটাইল-ফেব্রিকস শিল্পে পোশাক তৈরি করা হয়। প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা প্রক্রিয়ার সাহায্যে তন্তু থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এ সুতা তৈরি করার প্রতিটি ধাপ যেমন : সুতাকে বিশুদ্ধ করা, বিরঞ্জন করা, ধৌত করা, শুষ্ক করা ইত্যাদি স্তরের সাথে রসায়ন জড়িত। এতে যেসব রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয় তা রসায়ন থেকেই আহরিত।
সুতা তৈরির পর বিভিন্ন বুনন পদ্ধতির সাহায্যে তা কাপড়ে পরিণত করা হয়। স্পিনিং কারখানায় কাপড় তৈরির যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় সেখানেও বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। কাপড়কে আকর্ষণীয় করার জন্য রং ব্যবহৃত হয়। কাপড়ে যেসব রং ব্যবহৃত হয় সেগুলো উৎপত্তিগত কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন : অন্ন জাতীয় রং, ক্ষার জাতীয় রং, এজোইক রং, পিগমেন্ট রং ইত্যাদি। এগুলোর সবগুলোর সাথে রসায়ন জড়িত।
অতএব, ‘গ’ এর উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসায়নবিজ্ঞানের ভূমিকা জড়িত।
প্রশ্ন –৫ নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
আরিফ তার আব্দুর সাথে গাড়িতে চড়ে খালার বাসায় যাচ্ছিল। একটা ট্রাক কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তাদের গাড়িকে অতিক্রম করে গেল। আরিফ ঘটনাটি বলার জন্য আব্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। সে আপুকে কিছু না বলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল একটা দশতলা বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছে।
ক. অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ কোনটি?
খ. রসায়নকে জীবনের জন্য বিজ্ঞান’ বলা হয় কেন?
গ. আরিফের দেখা ঘটনাগুলোতে রসায়নের উপস্থিতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ধোঁয়া হিসেবে যে গ্যাস বের হচ্ছে পরিবেশের উপর তার বিরূপ প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপ হলো- বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা।
খ. জীবনের প্রতিটি ঘটনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত বলে রসায়নকে জীবনের জন্য বিজ্ঞান বলা হয়। মানুষসহ সৃষ্টির সকল জীব এমনকি অজীব পদার্থের সৃষ্টি, বৃদ্ধি, ধ্বংস, রূপান্তর, উৎপাদন ইত্যাদির আলোচনা করা হয় রসায়নে। মানুষের জীবনেও সময়ের সাথে রসায়ন জড়িত। বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে রসায়নের যোগসূত্র রয়েছে। আমাদের পরিবেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে রসায়ন কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ, যেখানেই জীবন, সেখানেই রসায়ন।
এ কারণেই রসায়নকে ‘জীবনের জন্য বিজ্ঞান বলা হয়।
গ. আরিফের দেখা ঘটনাগুলোতে রসায়নের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষণীয়। ট্রাক থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় রসায়নের উপস্থিতি রয়েছে। ট্রাকে জ্বালানি ব্যবহৃত হয়েছে। তাতে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের উপস্থিতিতে দহন প্রক্রিয়ায় কালো ধোঁয়া উৎপন্ন করে।
কালো ধোঁয়া উৎপন্ন প্রক্রিয়াটি রসায়নের অন্তর্ভুক্ত। আরিফের আলু যে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিলেন তা মূলত লেড সঞ্চয়ী কোষ দ্বারা চালিত। ল্যাপটপে ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহৃত লেড সঞ্চয়ী কোষের ক্রিয়াকৌশলও রসায়ন পাঠের অন্তর্গত।
আবার, বিল্ডিং তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন : রড, সিমেন্ট, বালি প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। লোহা খনি থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়া দ্বারা শক্ত রডে পরিণত হয়। সিমেন্ট, বালি প্রভৃতিও রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয়।
তাই বলা যায় যে, আরিফের দেখা ঘটনাগুলোতে রসায়নের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে ধোঁয়া হিসেবে CO2 গ্যাস বের হচ্ছে। পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব রয়েছে। CO2 বায়ুর অন্য উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে অধিক ক্ষতিকর গ্যাসীয় ও কঠিন পদার্থ উৎপন্ন করে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তাছাড়া, CO2 তাপ ধারণ করে রাখতে পারে এবং এ গ্যাস ওজনে ভারী হওয়ায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থান করে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, যাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়। এ প্রক্রিয়াটিকে গ্রিনহাউজ প্রভাবও বলা হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে অনাকাঙিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা আমাদের পৃথিবীকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
CO2 গ্যাসের কারণে বায়ু দূষণ বাড়ছে। বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়ায় বিরুপ ভাব বিরাজ করছে। চোখজ্বালা করা, বুক ধড়ফড় করা, অস্থিরভাব ইত্যাদি সমস্যায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
অতএব, উদ্দীপকের ধোঁয়া হিসেবে নির্গত গ্যাসটি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।